উপন্যাস        :         কেয়া পাতার নৌকা
লেখিকা        :          রাজিয়া রহমান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ২২ই ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ইং

লেখিকা রাজিয়া রহমানের “কেয়া পাতার নৌকা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি  ২০২৪ সালের ২২ই ফেব্রুয়ারী থেকে লেখা শুরু করেছেন। 
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান


৩৮ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান (পর্ব - ৩৯)

নজরুল দোকানে ভীষণ ব্যস্ত। বাজারের সব চাইতে চালু দোকান নজরুলের। নিজের সততা আর আন্তরিকতা দিয়ে নজরুল সবার মনে জায়গা করে নিয়েছে।
কালাম হোসেন দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ নজরুলের বেচাকেনা দেখলো।মুহূর্তেই কালাম হোসেনের হিসেবে মাথা হিসেব করে নিলো ডেইলি খুব কম করে হলেও নজরুলের ৫০ হাজার টাকার সেল হয়। সেখানে প্রফিট যে খুব ভালো একটা একাউন্ট হবে তা আর নতুন কি।
কালাম হোসেন চিন্তা করে নজরুলের ও একটা মেয়ে আছে, তাকে দেখবে না-কি!
পরমুহূর্তে মনে হলো না, এটা করতে গেলে তারপর আম ও যাবে,ছালা ও যাবে।
নজরুলের ব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়েই এসেছে কালাম হোসেন।
সৎ মেয়ে হলেও তরুকে নিজের মেয়ের চোখে দেখে নজরুল।
তরুর প্রতি তার ও একটা দায়িত্ব আছে।
বড় দুই ছেলের বউয়ের চাইতে তরু বেশি ভালো অবস্থানে আছে।
নজরুল ব্যস্ত থাকায় খেয়াল করে নি কালাম হোসেনকে।
দোকানে ঢুকে কালাম হোসেন বিগলিত হেসে সালাম দিলো নজরুলকে।নজরুল সালামের জবাব দিয়ে অবাক হলো কালাম হোসেনকে দেখে।
নিজের বিস্ময় প্রকাশ না করে নজরুল বললো, "জি কিছু লাগবে?"
"জি ভাইসাব।আপনার একটু সময় যদি এই অধমকে দিতেন।দুইটা ভাঙা হৃদয় জোড়া দেয়ার জন্য সাহায্য চাইতে আসছি আমি।"
নজরুল এবার একটু বেশি বিস্মিত হলো।এই লোকটা কি বলতে চাইছে তার মানে?
কালাম হোসেন নজরুলের হাত চেপে ধরে বললো, "ভাই রে,আমি জানতাম না ছেলে মেয়ে দুজনেই দুজনকে এতটা ভালোবাসে।আমি যদি জানতাম তাহলে কখনোই ছেলের বিয়ে অন্যখানে দিতে চাইতাম না।আমি ভাবছি অল্প বয়সের আবেগ,ঠিক হয়ে যাবে।কিন্তু এখন দেখি আমার ছেলের কাছে আপনার মেয়ের চাইতে গুরুত্বপূর্ণ কিছু নেই।আমার ছেলে এই দুই দিন না খাওয়া ভাইসাব।
ছেলের কষ্ট চোখে দেখা যায় না।আমার মতো কঠিন প্রাণ ও নরম হয়ে গেছে।
এজন্য ছুটে আসছি আপনার কাছে। আপনার মেয়েটা আমারে দিয়ে দেন ভাইসাব।আমি রাজরানীর মতো রাখমু আমার বাড়িতে।
আমার পোলা যেমন জ্বলতেছে আপনার মেয়ে ও কম পুড়তেছে না ভাইসাব।"
কথা বলতে বলতে কালাম হোসেনের চোখ সিক্ত হয়ে গেলো। নজরুল কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। কালাম হোসেন সেই মুহূর্তে নজরুলের দুই হাত চেপে ধরে বললো, "আমার অন্যায়ের শাস্তি আমার পোলারে দিয়েন না ভাই।লাগলে আমি তরু মা'য়ের কাছে হাত জোড় করে ক্ষমা চাইবো।"
নজরুল নরম মনের মানুষ। মানুষের এসব ছল চাতুরী নজরুল বুঝে না।নজরুলের মন ও নরম হলো।নরম হয়ে বললো, "আমি মেয়ের মায়ের সাথে কথা বলে জানাবো ভাইজান।মেয়ে আর মেয়ের মা যা সিদ্ধান্ত নিবে তাই হবে।"
কালাম হোসেন নাছোড়বান্দা। সাথে সাথে বললেন,"আমি তাহলে অপেক্ষা করি।আমি ও বিয়ানের সাথে কথা বলবো।লাগলে আমি বিয়ানের হাত পায়ে ধরে বলবো।আমার জন্য ওদের ভালোবাসা আমি নষ্ট হতে দিবো না।"
সত্যি সত্যি কালাম হোসেন রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করলো।নজরুল এক ফাঁকে রাবেয়াকে কল দিয়ে জানালো মেহমান আসবে রাতে।
নজরুলের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে কালাম হোসেন কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করলো।কথায় কথায় নজরুলের থেকে জেনে নিলো এই বাড়িটা নজরুল তরুর মায়ের নামে লিখে দিয়েছে। রাবেয়ার নামে আরো একটা দোকান ও আছে। কালাম হোসেন ক্যালকুলেশন করে ফেললো তাৎক্ষণাত।
তরু তো একেবারে সোনার ডিম পাড়া হাঁস। মায়ের বাবার সব কিছুর মালিক তো তরু ই হবে।
রাবেয়া কালাম হোসেনকে দেখে হতবাক হলো।সেই সাথে বিরক্ত ও হলো নজরুলের উপর। এই মানুষটার কি দরকার ছিলো লোকটাকে বাড়িতে আনার।
খাওয়ার পর কালাম হোসেন রাবেয়াকে ডাকে। রাবেয়া পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে বললো, "জি বলেন, শুনছি আমি।"
কালাম হোসেন কোমল সুরে বললেন,"আপা,আপনি আমার বোন লাগেন আপা।আমার ছেলেটা শেষ হয়ে যাবে আপা।আপনি তো মা,আপনার মেয়েটা কতো কষ্ট পাচ্ছে আপনি তো বুঝেন।আমার ছেলে যে তরুকে এতো বেশি ভালোবাসে আমি বুঝতে পারি নি।
যখন বুঝতে পারছি আমি আর একটু ও দেরি করি নি আপা।দরকার হলে আমি আপনার পা ধরে ক্ষমা চাইবো তবুও ছেলে মেয়েদের সম্পর্কটা আবারও জোড়া দিয়ে দিন।"
রাবেয়া গম্ভীর হয়ে বললো, "দেখেন ভাই,আমার মেয়ে সবে ক্লাস টেনে পড়ে। ইন্টার পাশ করে অনার্সে ভর্তি হবে,আরেকটু ভালো মন্দ বুঝতে শিখবে তারপর আমি মেয়ের বিয়ে দিবো।এখনই আমি এসব নিয়ে ভাবছি না।মেয়ের জীবন সবে শুরু।
এই বয়সটা ভুল করার বয়স আমি জানি।ও একটা ভুল করেছে। কিন্তু সেই ভুলের জন্য ওকে এখন ভীষণ বাজেভাবে মাশুল ও দিতে হচ্ছে।
যেই আঘাত আমার মেয়ে পেয়েছে আমি চাই সেই আঘাতের মুখোমুখি হোক ও,হয় হারবে নয় জিতবে।
হেরে গেলে ওর একটা অভিজ্ঞতা হবে,জিতে গেলে ও কঠোর হতে শিখবে।জীবন যে খুব সহজ না তরু জানে।আমি চাই ও সেভাবে নিজেকে তৈরি করে নিক।এখনই বিয়ে দিয়ে ওকে আমি বন্দী করে দিতে চাই না।"
কালাম হোসেনের মাথায় আগুন ধরে গেলো।তার সাথে এরকম করে কেউ কথা বলে না।রাবেয়াকে ভীষণ বাজেভাবে গালাগাল দিতে ইচ্ছে করছে কালাম হোসেনের। নিজেকে সংযত করে কালাম হোসেন আরো বেশি নরম সুরে বললো, "মেয়েকে বাস্তবতা শেখাতে গিয়ে, অভিজ্ঞ করতে গিয়ে ওর ছোট্ট মনটা যে ভেঙে দিচ্ছেন সেটা ভুলে যাবেন না আপা।ফাইজান যা করেছে আমার চাপে পড়ে করেছে। সেই ভুলের খেসারত দিতে হলে আমি দিবো।আপনি যা বলবেন তাই হবে।আপনি চাইলে আমরা এখন বিয়ে পড়িয়ে রাখবো আপা,মেয়ে অনার্সে উঠলে তুলে নিয়ে যাবো।
আপনি যা শর্ত দিবেন তাতেই রাজি আমি।তবুও আমাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দিয়েন না আপা।আমার ছেলেটা বাড়িতে অপেক্ষা করে থাকবে।আম যদি ভালো খবর নিয়ে যেতে না পারি ও যেকোনো ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে নিতে পারে।আমার বড় আদরের ছেলে।আমার ছেলেটা যদি নিজেকে শেষ করে দেয় বাবা হয়ে নিজেকে নিজে কখনো ক্ষমা করতে পারবো না আপা।
ফাইজান খারাপ কিছু করে ফেললে আপনার কি মনে হয় আপনার মেয়ে সুস্থ থাকবে?
ও কি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে তখন?
একটু অনুগ্রহ করুন।সব আপনার হাতে।আপনি চাইলে ওরা দুটো মানুষ আবার একটা সুখী জীবন কাটাতে পারে।"
রাবেয়া চমকে উঠে। লোকটা কি বলছে এসব!

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

 Follow Now Our Google News

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

৪০ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা রাজিয়া রহমান বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর জেলায় জন্মগ্রহন করেন। লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন তিনি। তরুণ এই লেখিকা বৈবাহিক সূত্রে লক্ষ্মীপুরেই বসবাস করছেন। বর্তমানে তিনি একটি পুত্র সন্তানের জননী। পেশাগতভাবে তিনি গৃহিনী হলেও লেখালেখির প্রতি তার ভিষন ঝোক। আর তাই শত ব্যস্ততার মাঝেও শখের বশে ধারাবাহিকভাবে লিখে যাচ্ছেন একের পর এক উপন্যাস। ২০২২ সালের মধ্যদিকে গর্ভকালিন সময়ে লেখিকা হিসেবে হাতেখড়ি নিলেও এরই মধ্যে লিখে ফেলেছেন “তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর” ও “শালুক ফুলের লাঁজ নাই” -এর মতো বহুল জনপ্রিয় উপন্যাস।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন