উপন্যাস        :         কেয়া পাতার নৌকা
লেখিকা        :          রাজিয়া রহমান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ২২ই ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ইং

লেখিকা রাজিয়া রহমানের “কেয়া পাতার নৌকা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি  ২০২৪ সালের ২২ই ফেব্রুয়ারী থেকে লেখা শুরু করেছেন। 
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান


৩৭ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান (পর্ব - ৩৮)

ফাইজান বাড়ি ফিরলো ২ দিন পর।বাড়িতে গিয়ে দেখে মা বসে বসে বাবার পাঞ্জাবীর বোতাম সেলাই করছে।ছেলেকে দেখে সাজেদা ছুটে এলো।ছেলেকে জড়িয়ে ধরে মরা কান্না জুড়ে দিলো সাজেদা।ফাইজান অবাক হলো মায়ের ব্যবহার দেখে।
সাজেদা কেঁদেকেটে বললো, "আব্বা রে,তুই কই ছিলি আব্বা?কেনো তুই পালাইয়া গেলি?তোর যদি সত্যি সত্যি অন্য কাউকে এতটা পছন্দের ছিলো কেনো বুঝাই বললি না আমারে।তুই জানস না তোর বাপ কতো ভেঙে পড়ছে।আমার দুই ছেলে দেশের বাহিরে থাকে।তুই ই তো এখন আমাগো দুই জনের অন্ধের যষ্টি। এক্স
ফাইজান বুঝতে পারে না এটা বাবা মায়ের নতুন কোনো চাল কি-না।
কালাম হোসেন ফাইজান আসার খবর পেয়ে ছুটে এলেন।এসেই ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরে খানিকক্ষণ কাঁদলেন।
ফাইজান তার এইটুকু জীবনে কখনো দেখে নি বাবাকে কোনো কারণে এতটা ভেঙে পড়তে।
সবসময় গম্ভীর আর ত্যাঁদড় মানুষটা কি-না কাঁদছে!
কালাম হোসেন ছেলেকে বললেন, " তুই যে ওই মেয়েটাকে এতটা ভালোবাসিস আমি বুঝি নাই আব্বা।আগে জানলে আমি এরকম ভুল সিদ্ধান্ত নিতাম না।আমি একটা ভ্রমে ছিলাম।তোদের সংসার, তোরা যেভাবে ইচ্ছে সেভাবে করবি।যার সাথে ইচ্ছে তার সাথে করবি।আমি কখনো আর বাঁধা হয়ে দাঁড়াবো না।তবুও আমাদের এভাবে ছেড়ে চলে যাস না তুই।"
ফাইজান বাবার কাছে ক্ষমা চেয়ে বললো, "আমাকে মাফ করে দিয়েন আব্বা।আমার জন্য আপনারা অনেক অপমানিত হয়েছেন।আপনাদের উপর প্রচন্ড রাগ,ক্ষোভ থেকেই আমি এরকম একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।"
"তোর উপর আমার কোনো রাগ নাই বাবা।তুই ঠিক কাজই করেছিস।মান সম্মান গেলে যাক,তবুও তো তোর জীবনটা নষ্ট হয় নি।আমার ছেলের সুখের কাছে মান সম্মান কিছু না।"
ফাইজান বাবার এরকম আমূল পরিবর্তন দেখে হতবাক। বাবা এতটা বদলে গেলো!
এ ও কি সম্ভব!
কালাম হোসেন বললো, "আমি তরুর সাথে তোর বিয়ে দিবো বাপ।তুই খুশি থাকলেই আমাদের শান্তি। "
ফাইজান মলিন হেসে, "তরু আমার থেকে অনেক দূরে সরে গেছে আব্বা।তরুকে হয়তো আমার আর কখনোই পাওয়া হবে না।"
কালাম হোসেন ছেলের কাঁধে হাত রেখে বললো, "আমি যখন তোর জীবন থেকে তোর ভালোবাসা কেড়ে নিয়েছি,আমি-ই আবার ফিরিয়ে দিবো বাপ।একটু সময় দে আমাকে।"
ফাইজান কিছু বললো না।গত রাতে তরুকে দেখেছে।এই কয়দিনে মেয়েটার শরীর ভেঙে গেছে, চোখ গর্তে ঢুকে গেছে।চোখের নিচে কেমন কালো দাগ।
দুঃখী মেয়েটাকে ফাইজান ভীষণ কষ্ট দিয়েছে।
রাতে ফাইজানের বড় ভাই কল দিলো ফাইজানকে।দ্বিধান্বিত হয়ে ফাইজান কল রিসিভ করলো।
ফয়সাল বললো, "এক সপ্তাহের মধ্যে ভিসা পেয়ে যাবো,তুই চিন্তা করিস না।"
ফাইজান কিছুটা সময় নিরব থেকে বললো, "আমি বিদেশ যাবো না ভাই।"
ফয়সাল অবাক হয়ে যায় ভাইয়ের কথা শুনে। নিজে থেকেই তো বললো দেশে তার দমবন্ধ হয়ে আসছে।সবকিছু থেকে পালিয়ে বাঁচতে চায় সে।তাহলে এখন কেনো সিদ্ধান্ত বদলালো?
ফাইজান বললো, "আমি ভেবেছিলাম সব পিছুটান ছেড়ে দেশ ছেড়ে চলে যাবো।কিন্তু যতই দিন যাচ্ছে আমার মনে হচ্ছে এই দেশ ছেড়ে আমি কোথাও যেতে পারবো না ভাই।এখানে আমার মা আছে,বাবা আছে।আমার ভালোবাসার মানুষ আছে।
আমি তরুকে না দেখে থাকতে পারবো না ভাই।
আমি চলে গেলে তরু একা হয়ে যাবে।"
"এসব তোর আগে মনে ছিলো না? "
"মনে ছিলো কিন্তু এতটা কষ্ট হবে সেটা বুঝতে পারি নি।দেশ ছেড়ে গেলে তরুকে আমি আজীবনের জন্য হারিয়ে ফেলবো ভাই।আমি তরুকে ছাড়া থাকতে পারবো না। "
"আব্বা কি মেনে নিবে তোর ভালোবাসা? "
"আব্বা মেনে নিয়েছে ভাই।আমি এখন বাড়িতে আছি।আব্বা নিজেই বলেছে উনি সব ঠিক করে নিবেন।"
ফয়সাল হেসে ফেললো। আদুরে সুরে ভাইক বললো, "কালাম হোসেনকে তুই এখনো ভালো করে চিনতে পারিস নি ফাইজান।স্বার্থ ছাড়া কালাকম হোসেন এক পা ও আগানোর মানুষ না।তোকে ফাঁদে ফেলে ঠিকই লতার সাথে বিয়ে করিয়ে নিবে।"
ফাইজান হেসে বললো, "কালাম হোসেন আমার মাথাব্যথা না ভাই।আমি ও কালাম হোসেনের ছেলে।তাই আমাকে অন্ধকারে রেখে স্বার্থসিদ্ধি করে নিবে এতটা ও সোজা না।আমি এখন আমার তরুকে নিয়ে চিন্তিত। তরু যে কষ্ট পেয়েছে, আমাকে কি তরু আবারও মেনে নিবে এতো সহজে? তরু যদি আমাকে আর না চায় তার জীবনে তাহলে আমি বাঁচবো কিভাবে ভাই?"
ফয়সাল উত্তর দেয় না।এই প্রশ্নের উত্তর তরু ছাড়া আর কে দিতে পারবে!
কালাম হোসেন সকালে ঘুম থেকে উঠে নাশতা করে তৈরি হয়ে বের হলো।এই মুহূর্তে কালাম হোসেনের লক্ষ্য আলমগীর। আলমগীরকে ম্যানেজ করে নিতে পারলেই সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে।
যেতে যেতে কালাম হোসেন মাথায় স্ক্রিপ্ট সাজিয়ে নিলো।
তরুর সম্পূর্ণ মনযোগ পড়ার মধ্যে। গত রাতের পর থেকে তরু আর রুমের জানালা খুলে বসে না।যাকে মন থেকে মুছে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার সাথে কথা বলে মায়া বাড়ানোর কোনো মানে হয় না।
যদিও বেহায়া মনটা বারবার সেই স্বার্থপর মানুষটার কাছে ছুটে যেতে চায়।তরু তবুও সামলায় মনকে।
তরু পড়ার মাঝখানে আমেনা আসে তরুর রুমে। তরুর উপর আমেনার রাগ অনেক। এই মেয়েটাই সব নষ্টের মূল।আমেনা এসে তরুর বইখাতা সব ছুঁড়ে ফেলে দেয়।বিশ্রী ভাষায় গালি দিয়ে তরুকে বলে,"আজকেই তুই আমার বাড়ি থেকে বের হয়ে যাবি।তোর এই অপয়া মুখ আমি দেখতে চাই না।তোরে আমি খু ন কইরা ফালামু নয়তো। "
তরু শান্ত সুরে বললো, "মাথা গরম করে লাভ নেই চাচী।আমাকে যদি দেখতে না চান তাহলে আপনারা বাড়ি ছেড়ে চলে যান।এই বাড়ি আমার। আমার কোনো খানে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না।"
আমেনা তরুর গলা টিপে ধরে বললো, "গায়ে অনেক তেল হইছে তোর না?আমারে আইন শেখাস তুই?"
তরু অনেক কষ্টে নিজেকে মুক্ত করে বললো, "আইন সবার জন্যই এক রকম। শেখানোর কিছু নেই।আমি যে ভুল বলছি না তা আপনি ও জানেন।আমাকে ঘাটাতে আসবেন না।আমি আমার বাপের ঘরে থাকি,আপনার বাপের ঘরে না।আর একটা কথা বলবেন আমি সব রেকর্ড করে রাখবো। "
আমেনা ফুঁসতে ফুঁসতে বের হয়ে গেলো ঘর থেকে।মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো তরুর জন্য লতাকে যতটা কাঁদতে হচ্ছে তার দ্বিগুণ তিনি তরুকে ফিরিয়ে দিবেন।"


 আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

 Follow Now Our Google News

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

৩৯ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা রাজিয়া রহমান বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর জেলায় জন্মগ্রহন করেন। লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন তিনি। তরুণ এই লেখিকা বৈবাহিক সূত্রে লক্ষ্মীপুরেই বসবাস করছেন। বর্তমানে তিনি একটি পুত্র সন্তানের জননী। পেশাগতভাবে তিনি গৃহিনী হলেও লেখালেখির প্রতি তার ভিষন ঝোক। আর তাই শত ব্যস্ততার মাঝেও শখের বশে ধারাবাহিকভাবে লিখে যাচ্ছেন একের পর এক উপন্যাস। ২০২২ সালের মধ্যদিকে গর্ভকালিন সময়ে লেখিকা হিসেবে হাতেখড়ি নিলেও এরই মধ্যে লিখে ফেলেছেন “তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর” ও “শালুক ফুলের লাঁজ নাই” -এর মতো বহুল জনপ্রিয় উপন্যাস।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন