উপন্যাস : কেয়া পাতার নৌকা
লেখিকা : রাজিয়া রহমান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ২২ই ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ইং
লেখিকা রাজিয়া রহমানের “কেয়া পাতার নৌকা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২৪ সালের ২২ই ফেব্রুয়ারী থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান |
৩৯ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান (পর্ব - ৪০)
কালাম হোসেনের ছলচাতুরী রাবেয়া,নজরুল কেউ-ই বুঝতে পারে নি। রাবেয়া ভেবেছিল কালাম হোসেন সত্যি বুঝি অনুতপ্ত।
একটা মানুষ যে এতটা ছল করতে জানে নজরুল,রাবেয়ার ভাবনায় ছিলো না।
তাই কালাম হোসেনের মায়া কান্নায় রাবেয়া রাজি হয়ে যায়।
পরদিন তরু স্কুল থেকে ফিরে দেখে মা এসেছে। মায়ের মুখটা কেমন ভীতসন্ত্রস্ত লাগছে।
মায়ের মুখটা দেখে তরুর বুকটা কেঁপে উঠে। মা'য়ের কোনো অসুবিধা হয় নি তো?
তরু রাবেয়াকে জড়িয়ে ধরে। যেনো এক যুগ পরে মা'কে কাছে পেয়েছে।
রাবেয়া কুণ্ঠাবোধ করছে মেয়ের সামনে আজ।
তরু মা'য়ের হাত চেপে ধরে বললো, "কি হয়েছে তোমার মা?এমন শুকনো লাগছে কেনো তোমার মুখ?"
রাবেয়া ফ্যাকাশে হেসে বললো, "আজকে তোর কাছে নিজের একটা অপরাধ স্বীকার করতে এসেছি মা।"
তরু অবাক হয় মায়ের কথা শুনে।কি বলছে এসব মা!
রাবেয়া তরুর হাতে হাত রেখে বললো, "তুই যেদিন আমাকে ফাইজানের কথা জানালি,আমার সেদিন খুব রাগ হয়।আমি চাই নি এতো তাড়াতাড়ি তুই সংসারের বেড়াজালে নিজেকে আটকে ফেল।তোকে ঘিরেই তো আমার জীবনের সব স্বপ্ন। আমি চাইতাম তুই পড়াশোনা কর,অনেক বড় হ।
কিন্তু বেশিরভাগ মেয়েরাই বিয়ের পর নিজের ক্যারিয়ার গড়তে পারে না।
আমি কখনোই চাই নি তোকে অল্প বয়সে বিয়ে দিবো।কিন্তু তুই যখন নিজেই সিদ্ধান্ত নিলি বিয়ের আমি প্রচন্ড আঘাত পাই মানসিকভাবে।তুই এখনো বিয়ের যোগ্য না।
তুই কষ্ট পাবি জেনে তোকে কিছুই বলি নি আমি।কিন্তু ফাইজানের সাথে কথা বলি আমি।ফাইজানকে আমি অনুরোধ করি তোর সাথে যাতে কোনো সম্পর্ক না রাখে ও।তোর জীবন নষ্ট হয়ে যাবে ভেবেই ফাইজানকে আমি ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে কথা বলি।
আমার কথা রাখতেই ফাইজান নিজেকে তোর কাছে খারাপ করার জন্য লতার সাথে বিয়েতে সম্মত হয়।
আমি ভেবেছিলাম এটাই তোর জন্য সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত হবে।কিন্তু লতার বিয়ের দিন বুঝতে পারলাম তুই আসলে ভালো নেই।ফাইজান ও ভালো নেই।
আমি আসলে অপরাধবোধে ভুগছিলাম এতো দিন।গতকাল ফাইজানের বাবা নিজে আমার কাছে যায়।
ফাইজান না-কি একেবারে ভেঙে পড়েছে। উনি আমার কাছে তোকে ভিক্ষা চায়।এটাও বলে তোর অনার্স শুরু হলেই তোকে তুলে নিয়ে যাবে এখন শুধু বিয়েটা পড়িয়ে রাখতে চায়।
আমি জানি ভেতরে ভেতরে তুই ও ফাইজানের জন্য কষ্ট পাচ্ছিস।তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি ছোট পরিসরে তোদের বিয়ের আয়োজন করবো।তোর যদি আপত্তি না থাকে এতে।"
তরু এতটা বিস্মিত হবে ভাবে নি।মায়ের মুখ থেকে এই কথাগুলো শুনে তরুর দুই চোখ অশ্রুসজল হয়ে যায়।থমথমে সুরে বললো, "কেনো এমন করলে মা?আমার ভালো খুঁজতে গিয়ে আমার জীবনটা এভাবে স্তব্ধ করে দিলে কেনো মা?"
রাবেয়া কেঁদে উঠে। তিনি তো জানেন তরুর ভালোর জন্যই তিনি এসব করেছেন।মেয়েটাকে কষ্ট দিতে এসব করেন নি তিনি।
রাবেয়া আস্তে করে বললো, "আমাকে কি কখনো ক্ষমা করতে পারবি তুই মা?"
তরু মা'কে জড়িয়ে ধরে বললো, "তোমার উপর আমার কোনো রাগ নেই মা।তুমি ভালোই করেছো।তা না হলে আমি যে ফাইজানকে এতটা ভালোবাসি তা কখনোই বুঝতে পারতাম না মা।"
দুই দিনের মধ্যে নজরুল কালাম হোসেনের সাথে কথা বলে বিয়ের তারিখ ফাইনাল করে ফেললো।
কালাম হোসেন বিয়ের তারিখ পাকা করে ফেলতে পেরে আনন্দে ডগমগ করছে।
তরু সিদ্ধান্ত নিলো এই দুই দিন আর ফাইজানের সাথে যোগাযোগ করবে না।একেবারে বিয়ের সময় দেখা হবে।
রাবেয়া যাওয়ার সময় তরুকে নিয়ে গেলো সাথে। নজরুলের বাড়িতে বিয়ের আয়োজন হবে।
আলমগীর, আমেনা কোনো ঝামেলা করতে পারে ভেবে নজরুল কাউকে জানাতে নিষেধ করলো।
তরুর কাছে সবটা কেমন স্বপ্নের মতো লাগছে।সত্যি কি তার ভালোবাসা পূর্ণতা পেতে যাচ্ছে?
তরুর এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না কিছু।
বিয়ের দিন সকাল থেকেই বাবুর্চিরা রান্নায় লেগে গেলো।নজরুলদের বাড়ির মহিলারা এসে তরুকে মেহেদী পরাতে লাগলো। তরুর বারবার কান্না আসছে।স্বপ্ন পূরণের কান্না।
রাবেয়া নিজেও কাঁদছে।
এই বুঝি মেয়েটা একেবারে দূরে চলে যাচ্ছে!
আর চাইলেও পারবে না যখন তখন মেয়েকে দেখতে।মেয়েটা যখন তখন আর আসবে না।
এসব ভেবেই তো রাবেয়া মেয়েকে এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে দিতে চায় নি।কিন্তু ভাগ্যে যা আছে তা তো হবেই।
দুপুরের দিকে পাত্রপক্ষ এলো।বেশি মেহমান আসবে না বলে ও ৩০ জন আসলো পাত্রপক্ষ।
নজরুল মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে আয়োজন করেছে দরাজ হাতে।
দু'জনকে পাশাপাশি বসানো হলো যখন তরুর মনে হলো সে বুঝি এখনই জ্ঞান হারিয়ে ফেলবে।
জীবনের সব সুখ,আনন্দ, স্বপ্ন যেনো সত্যি হয়ে ধরা দিচ্ছে।
ভবিষ্যত কেউ দেখতে পায় না।তরু ও তাই জানে না সামনের দিনগুলোতে তার জন্য কতো উত্থান-পতন অপেক্ষা করে আছে।
ভালোবেসে যে হাত ধরেছে,সেই হাতে শেষ পর্যন্ত ধরে রাখার মতো সুযোগ পরিস্থিতি দিবে কি-না তরু জানে না।
তবুও তরু চায়,খুব করে চায় এই মানুষটাকেই যেনো সে পাশে পায়।
এখান থেকেই শুরু তরুর জীবনের নতুন এক অধ্যায়।
সেই অধ্যায়ের নাম প্রতিবাদ আর লড়াই।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
Follow Now Our Google News
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
৪১ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা রাজিয়া রহমান বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর জেলায় জন্মগ্রহন করেন। লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন তিনি। তরুণ এই লেখিকা বৈবাহিক সূত্রে লক্ষ্মীপুরেই বসবাস করছেন। বর্তমানে তিনি একটি পুত্র সন্তানের জননী। পেশাগতভাবে তিনি গৃহিনী হলেও লেখালেখির প্রতি তার ভিষন ঝোক। আর তাই শত ব্যস্ততার মাঝেও শখের বশে ধারাবাহিকভাবে লিখে যাচ্ছেন একের পর এক উপন্যাস। ২০২২ সালের মধ্যদিকে গর্ভকালিন সময়ে লেখিকা হিসেবে হাতেখড়ি নিলেও এরই মধ্যে লিখে ফেলেছেন “তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর” ও “শালুক ফুলের লাঁজ নাই” -এর মতো বহুল জনপ্রিয় উপন্যাস।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন