উপন্যাস : কেয়া পাতার নৌকা
লেখিকা : রাজিয়া রহমান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ২২ই ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ইং
লেখিকা রাজিয়া রহমানের “কেয়া পাতার নৌকা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২৪ সালের ২২ই ফেব্রুয়ারী থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান |
৪২ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান (পর্ব - ৪৩)
ফাইজানের ইন্টারভিউর কথা শুনে তরু তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না।অনেকটা নির্লিপ্ত ভাব নিয়েই বললো, "ওহ আচ্ছা। "
ফাইজান ভেবেছিলো তরু একটুও হলেও উচ্ছ্বসিত হবে।কিন্তু তরু ফাইজানকে তেমন কিছুই বললো না।
ফাইজান ঘরের বাহিরে উঠানে বসে আছে।ঠান্ডা বাতাস এসে বারবার ফাইজানকে ছুঁয়ে যাচ্ছে।
অন্ধকার এই রাতটাই যেনো ফাইজানের জীবনের আরেক রূপ।সেই জীবনে আলো দেয়ার জন্য তরু ওই আকাশের চাঁদ।সবার
জীবনেই এরকম একজন মানুষ থাকে যাকে ছাড়া বেঁচে থাকা একেবারে অসম্ভব মনে হয়। কিংবা বেঁচে থাকলেও জীবনের অনেক কিছুই থমকে যায়।
বুকের ভেতর থাকা হৃৎপিণ্ডটাই যেনো সেই প্রিয় মানুষটা।
প্রিয় মানুষের ভালোবাসা যেমন সুন্দর, অভিমান তার চাইতে বেশি ভয়ংকর রকমের সুন্দর।
ফাইজানের ইচ্ছে করছে তরুকে বুকের ভেতর ঝাপটে ধরে তীব্র ভালোবাসা দিয়ে।
এই হালকা হীম বাতাসে তরুর উষ্ণতায় উষ্ণ হতে ইচ্ছে করে।
তরু কথা শেষ করে চার রাকাআত নফল নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে ফাইজানের জন্য দোয়া করে। ফাইজান এখন তার স্বামী। জীবনের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত মানুষটাই ফাইজান।
বাবা মা'য়ের পর ফাইজানের কাছেই তো পেয়েছে হৃদয় উজাড় করা ভালোবাসা।
পরদিন ফাইজান চাকরির ইন্টারভিউ দিতে যায়।
একটা কোম্পানিতে পিএ'র পোস্টে প্রার্থী চেয়ে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকেই আবেদন করে ফাইজান।
সকাল সকাল ফাইজান তৈরি হয়ে নিলো।কালাম হোসেন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ছেলের দিকে তাকিয়ে আছেন।ছেলের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছেন তিনি।যেই ছেলে বাবাকে দাম দেয় না সেই ছেলের সাথে কিসের কথা!
ফাইজান তৈরি হয়ে বাবার কাছে গেলো দোয়া নিতে।
কালাম হোসেন মুখ বিকৃত করে বললেন,"এখন আর বাবা মা'য়ের দোয়ার দরকার নাই।এখন বউয়ের দোয়া হলেই চলবে।"
ফাইজান হেসে বললো, "তা তো লাগবেই আব্বা।বাবা মা'য়ের পাশাপাশি বউয়ের দোয়া ও গুরুত্বপূর্ণ।"
সাজেদার ইচ্ছে করলো একটা বাজে গালি দিতে তরুকে। নেহাৎ ছেলে একটা ভালো কাজে যাচ্ছে বলে সাজেদা খারাপ কিছু বলছে না।
কালাম হোসেন বললেন,"বেতন কতো দিবো?"
"আগে তো ইন্টারভিউতে টিকতে হবে,জব হোক।আগেই বেতন কতো দিবে তা কিভাবে বলবো।,"
কালাম হোসেনের বিরক্ত লেগে গেলো। এই যুগে এক লাখ টাকা বেতন না হলে কি সংসার চালানো যায়?
বিদেশ থেকে দুই ছেলে মাসে ৫০ হাজার করে টাকা পাঠায়।কালাম হোসেনের ইচ্ছে ফাইজানকে ও বিদেশে পাঠিয়ে দেয়।তারপর একেবারে নিশ্চিন্ত। মাসে মাসে শুধু টাকা আর টাকা।
একটা আকাশীরং শার্ট আর ফরমাল প্যান্ট পরে ফাইজান রিসেপশনে অপেক্ষা করছে। তার সাথে আরো ২৭ জন ক্যান্ডিডেট। এতো প্রার্থী দেখে ফাইজান কিছুটা ভড়কে গেলো।
সবাই মনোযোগ দিয়ে ফাইলের দিকে তাকিয়ে আছে। ফাইজান তাকিয়ে আছে সামনের দিকে। অফিসের পিওন চা নিতে গিয়ে হুট করে হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলো। মুহূর্তেই ৬ টা কাপ ভেঙে গেলো।চা ছিটকে গিয়ে পড়লো কয়েকজন প্রার্থীর গায়ে।
সবাই ভীষণ বিরক্ত হয়ে গেলো এই কাজে।
একে তো চাকরির জন্য ভালো কাপড় পরে এসেছে সবাই তার উপর এখন চায়ের দাগ লেগে গেছে।
ফাইজানের আকাশীরং শার্টটায় ও দাগ লেগে গেছে।
সাদা থ্রিপিস পরা একটা মেয়ে ভীষণ রেগে গেলো।এগিয়ে গিয়ে পিওনকে বললো, "চোখে কি কম দেখো না-কি? দিলে তো আমার এতো দামী ড্রেসটা নষ্ট করে। সামান্য কাজ করতে পারো না?ষ্টুপিড লোক। "
বয়স্ক লোকটা ভয়ে কাঁপছে।
ভাঙা কাঁচ তুলতে গিয়ে হাতে লেগে গেলো পিওনের। ফাইজান এগিয়ে গেলো সেদিকে লোকটাকে সাহায্য করতে।
কয়েকজন নাক সিঁটকে ফেললো।
কাঁচ তুলে ফাইজান বললো, "লেখাপড়া করে শিক্ষিত হয়েছেন শুধু, ভদ্রতা শিখতে পারেন নি।
একজন মুরুব্বির সাথে কেউ এভাবে ব্যবহার করে না।"
মেয়েটা অগ্নিশর্মা হয়ে বললো, "ও হ্যালো, আপনার কাছে এডভাইস চাইতে আসি নি।নিজেকে কি ভাবছেন?আমাকে ভদ্রতা শিখতে বলার আপনি কে?যান নিজের চরকায় তেল দেন।"
ফাইজান কিছু বলার আগেই রিসিপশনের ছেলেটা বললো, "লুনা কে?ইন্টারভিউ শুরু। যান ভেতরে যান।"
মেয়েটা চলে গেলো।
মেয়েটা বের হয়ে এলো একেবারে হতাশ হয়ে।
ফাইজানকে ডাকা হলো একেবারে সবার শেষে। ভেতরে গিয়ে ফাইজান বসতেই একটা খাম দেওয়া হলো। খাম খুলে ফাইজান দেখে জয়েনিং লেটার।
কিছুটা আশ্চর্য হয়ে তাকায় ফাইজান।
সাজ্জাদ হোসেন মুচকি হেসে বললো, "ইন্টারভিউ আরো আধাঘন্টা আগেই হয়ে গেছে ইয়াং ম্যান।আমি আমার পিএ হিসেবে একজন মানবিক মানুষ চেয়েছি।সার্টিফিকেট এর যোগ্যতা সবারই থাকে,মানবিকতা সবার মধ্যে থাকে না।তোমার জয়েনিং লেটার তৈরি করতেই সময় লাগছিলো তাই তোমাকে সবার শেষে ডাকা।"
ফাইজান যারপরনাই বিস্মিত হলো এবার। এভাবেও চাকরি হয়ে যায়!
তার কেমন অবিশ্বাস্য লাগছে।
বাহিরে এসে ফাইজান বাবাকে কল দিয়ে জানালো তার চাকরি হয়েছে। তারপর সোজা ছুটলো তরুর কাছে।এতো ভালো একটা খবর তরুকে ফোনে দিতে ইচ্ছে করছে না।
এমনিতে তরুকে দেখার জন্য মন আনচান করছে।
ক্যান্ডেল লাইট রেস্টুরেন্টের একটা চেয়ারে বসে ফাইজান অপেক্ষা করছে তরুর।তরুর এখন স্কুল নেই।বাড়িতেও যেহেতু দেখা করা সম্ভব না তাই রেস্টুরেন্টেই আসতে বলেছে ফাইজান।যদিও তরু রাজি হচ্ছিলো না বের হতে।ফাইজানের জোরাজোরিতেই বের হলো।
ফাইজানের কেমন হাসি পাচ্ছে। নিজের বিয়ে করা বউয়ের সাথে দেখা করতেও কতো ভয়।মনে হচ্ছে যেনো প্রেম করছে এখনো। অথচ প্রেমের সময় ও এতটা ভয় নিয়ে দেখা করতে হয় নি।
তরু চায় না এখনই সবাইকে বিয়ের কথা জানাতে।বিশেষ করে লতাকে।
লতা জানতে পারলে ভীষণ ভেঙে পড়বে,পরীক্ষা খারাপ হবে লতার।পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগে তাই জানানো যাবে না কাউকে।
ফাইজান দীর্ঘ সময় নিয়ে অপেক্ষা করছে। এখনো খাবার খায় নি।
তরু এলো আরো বিশ মিনিট পরে।একটা মিষ্টি কালার থ্রিপিস পরে এসেছে তরু।মাথায় সাদা হিজাব। ফাইজানের বুকের ভেতর ঝড় উঠে গেলো তরুকে দেখে। যেনো কতো হাজার বছর পর দেখা হলো তরুর সাথে।
ফাইজান টের পেলো তরুকে দেখার কি তৃষ্ণা জমেছিলো তার বুকটাতে।
ফাইজানকে দেখে তরুর শূন্য বুকটায় আনন্দেরা জমতে শুরু করলো।ভালোবাসা এতো সুন্দর কেনো?
প্রিয় মানুষটার মাঝে এতো মায়া কেনো?
চেষ্টা করে ও তরু চেহারায় কাঠিন্য ধরে রাখতে পারছে না।
ফাইজান কোমল সুরে বললো, "তরু পাখি।"
তরু তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো, "এসব কথা বলতে নিষেধ করেছি না?"
ফাইজান হেসে বললো, " বউ,ও বউ।"
তরু চোখ বন্ধ করে ফেললো।
কি আশ্চর্য!
সামান্য একটা শব্দের এতো ক্ষমতা কেনো!
তরুর বুকের ভেতরটা এলোমেলো করে দিচ্ছে ভীষণভাবে!
ফাইজান তরুর একটা হাত বুকের উপর রেখে বললো, "আমার চাকরিটা হয়ে গেছে বউ।আর বেশিদিন তোমাকে আমার থেকে দূরে রাখবো না আমি।তোমার পরীক্ষা শেষ হলেই আমরা ছোট্ট একটা চড়ুই পাখির বাসা খুঁজে নিবো,সেখানে আমার তরু পাখি তার সংসার সাজাবে।"
তরুর দুই চোখ অশ্রুসজল হয়ে গেলো। ফাইজানের চাকরি হয়েছে!
আলহামদুলিল্লাহ বললো তরু মনে মনে।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
Follow Now Our Google News
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
৪৪ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা রাজিয়া রহমান বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর জেলায় জন্মগ্রহন করেন। লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন তিনি। তরুণ এই লেখিকা বৈবাহিক সূত্রে লক্ষ্মীপুরেই বসবাস করছেন। বর্তমানে তিনি একটি পুত্র সন্তানের জননী। পেশাগতভাবে তিনি গৃহিনী হলেও লেখালেখির প্রতি তার ভিষন ঝোক। আর তাই শত ব্যস্ততার মাঝেও শখের বশে ধারাবাহিকভাবে লিখে যাচ্ছেন একের পর এক উপন্যাস। ২০২২ সালের মধ্যদিকে গর্ভকালিন সময়ে লেখিকা হিসেবে হাতেখড়ি নিলেও এরই মধ্যে লিখে ফেলেছেন “তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর” ও “শালুক ফুলের লাঁজ নাই” -এর মতো বহুল জনপ্রিয় উপন্যাস।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
এত অনিয়মিত গল্প দেন কেন?
উত্তরমুছুনএই পর্বটা কবে পাব?
উত্তরমুছুনএকটি মন্তব্য পোস্ট করুন