উপন্যাস : কেয়া পাতার নৌকা
লেখিকা : রাজিয়া রহমান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ২২ই ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ইং
লেখিকা রাজিয়া রহমানের “কেয়া পাতার নৌকা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২৪ সালের ২২ই ফেব্রুয়ারী থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান |
৪৩ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান (পর্ব - ৪৪)
লতা রেস্টুরেন্টের উল্টো দিকের একটা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আছে। তরুকে ফলো করে এই পর্যন্ত এসেছে। তরু কার সাথে দেখা করতে এসেছে লতা সেই ব্যাপারে আগে নিশ্চিত হতে চায়।
কিন্তু ভেতরে গিয়ে তরুর সামনে পড়তে চায় না।
কোনো ভাবে যদি ফাইজান হয় তবে লতা আজকে একটা হেস্তনেস্ত করেই ছাড়বে।তরুকে আজকে খু ন ই করে ফেলবে লতা।
তরু বের হয়ে এলো প্রায় ঘন্টা খানেক পরে।তরুর মুখ কাঁদো কাঁদো হয়ে আছে।কান্না চেপে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে তরু রিকশায় উঠে বসে।
তরুর একটু পরেই ফাইজান বের হয়ে এলো। লতা স্থির তাকিয়ে আছে ফাইজানের দিকে। ফাইজান তাহলে সত্যি তরুর সাথে দেখা করেছে?
কি জন্য দেখা করেছে এরা?
লতার মন অস্থির হয়ে উঠে। নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করে লতা।ফাইজান রিকশা নিয়ে বিপরীত দিকে চলে গেলো।
লতা মধ্যখানে দাঁড়িয়ে ভাবছে এদের সমস্যা কি!
কি হচ্ছে দু-জনের মধ্যে?
তরুর কাছে মনে হচ্ছে সবটাই যেনো একটা মিথ্যে মায়া।ফাইজানকে সে ভালোবাসে,ভালোবাসে বলেই ফাইজানকে যেকোনো মূল্যে পেতে চেয়েছে। কিন্তু ফাইজানের বাবা মায়ের কথা শুনে তরুর কলিজা কেঁপে উঠে।
কি দরকার ছিলো এরকম একটা মিষ্টি মধুর সময়ে ফাইজানের আব্বা কল দেওয়ার!
অভিমানের পাহাড় সবেমাত্র গলতে শুরু করেছে সেই মুহূর্তে কালাম হোসেন কল দিলো ফাইজানকে।
ফাইজান রিসিভ করতেই কালাম হোসেন বললেন, "তুমি কি এখন তোমার বউয়ের সাথেই আছো?"
ফাইজান হ্যাঁ বলতেই সাজেদার অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল শুনতে পেলো।
সাজেদার ক্ষোভ হচ্ছে তরু সেদিন চলে গেলো অথচ আজকে ফাইজানের সাথে দেখা করেছে কেনো!
এই ব্যাপারটাই যতটা অশ্রাব্য ভাষায় বলা যায় সাজেদা বললো। ফাইজানের কান লাল হয়ে গেলো এই ধরনের নোংরা কথা শুনে।
ফাইজানের পাশের চেয়ারে বসে তরুও সবটা শুনলো।ফোনটা স্পিকারে না থাকলেও যেহেতু রেস্টুরেন্টের পরিবেশ ভীষণ নিরিবিলি ছিলো, তরু ফাইজানের গা ঘেঁষে বসা ছিলো সবটাই তরুর কানে গেলো।
চাইলেও ফাইজান অস্বীকার করতে পারলো না।
আর শুনতে না পেরে ফাইজান ফোন কেয়ে দিলো। তরুর দিকে তাকিয়ে দেখে তরুর দুই চোখে শ্রাবণ ধারা।
ফাইজান কিছু বলার আগেই তরু উঠে দাঁড়ায়। আর একটা কথা ও না বলে বের হয়ে যায়।
বুকের ভেতর তখন হাতুড়ি পেটা হচ্ছে। যন্ত্রণায় মনে হয় যেনো বুকটা ফেটে যাবে।
এতো অপমানিত তরুকে কেউ করে নি।এতো অশ্রাব্য ভাষায় বস্তির লোকদের শুনেছে গালাগাল দিতে।
তরুকে কেউ এধরণের কথা বলছে ভাব্লেই তরুর গা শিউরে ওঠে।
সমস্ত পৃথিবী যেনো থমকে গেছে।এই নিস্তব্ধ দুপুরের নিরবতা খানখান করে ভেঙে পড়লো তরুর বুকফাটা আর্তনাদে। বাড়িতে এসে তরু চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো। এতো লজ্জা তরু কোথায় রাখবে?
ফাইজান এখন তার স্বামী, অথচ তার কাছে যাওয়াতেই এত নোংরা কথা বললো তাকে?
এই পৃথিবীটা এতো নিষ্ঠুর হতে পারে এতিমের জন্য!
লতা ও তরুর পিছুপিছু চলে এসেছে। তরুর কান্না,চিৎকার সব শোনা যাচ্ছে বাহিরে থেকে।তরুর আর্তনাদ লতার বুকের আগুনে পানির মতো লাগছে।তরুর প্রতিটি চিৎকার লতাকে স্বস্তি দিচ্ছে ভীষণ।
লতার মনে হলো, ফাইজানের কাছে গিয়েছে তরু হয়তো আবারও সম্পর্ক ঠিক করে নেওয়ার জন্য কিন্তু ফাইজান হয়তো তরুকে নিয়ে আর থাকতে চায় না।
তাই তরু এভাবে কাঁদছে।
লতার মনে পড়ে যায় বিয়ের কথা বার্তার সময় ও তরু এরকম করেছে ফাইজানের সাথে কথা বলার জন্য।
পৈশাচিক আনন্দে লতার মন আনন্দিত হয়ে উঠে।
তার মানে ফাইজান এখনো তার আছে।এখনো সুযোগ আছে!
কালাম হোসেন সাজেদার দিকে তাকিয়ে বললো, "ঘটনা বুঝতেছো তো তুমি? তোমার পোলা কিন্তু হাতের বাইরে চইলা যাইতেছে। চাকরি হইতে না হইতে বউয়ের লগে দেখা করতে চলে গেছে। আমার সন্দেহ ভুল হয় না দেখলা।
এই পোলা তো বউয়ের গোলামী করবো শেষ পর্যন্ত। "
সাজেদা নাক ফুলিয়ে চোখ রাঙিয়ে বললো, "এতো সোজা!ওই খা*** বেটিরে আমি শান্তি দিমু?আমার পোলা আমার কাছ থাইকা কাইড়া নিবো?
আমি হাত পা গুটাইয়া বইসা থাকমু ভাবছেন?"
কালাম হোসেন চিন্তিত বোধ করলেন।
ছেলেদের টাকা পয়সা মেয়েদের সংসারে যদি আগের মতো দিতে না পারেন।ভেবেছিলেন বড় মেয়ের ঘরের বড় নাতনির বিয়ের গহনা ফাইজানের টাকা দিয়ে গড়াবেন।কিন্তু ছেলে যেভাবে হাত থেকে বের হয়ে যাচ্ছে, দ্রুত লাগাম টানা লাগবে।
কষ্ট করে ছেলে পালছেন কি টাকা পয়সা অন্যের মেয়ে খাওয়ার জন্য?
মাথায় আগুন লেগে যায় কালাম হোসেনের।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
Follow Now Our Google News
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
৪৫ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা রাজিয়া রহমান বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর জেলায় জন্মগ্রহন করেন। লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন তিনি। তরুণ এই লেখিকা বৈবাহিক সূত্রে লক্ষ্মীপুরেই বসবাস করছেন। বর্তমানে তিনি একটি পুত্র সন্তানের জননী। পেশাগতভাবে তিনি গৃহিনী হলেও লেখালেখির প্রতি তার ভিষন ঝোক। আর তাই শত ব্যস্ততার মাঝেও শখের বশে ধারাবাহিকভাবে লিখে যাচ্ছেন একের পর এক উপন্যাস। ২০২২ সালের মধ্যদিকে গর্ভকালিন সময়ে লেখিকা হিসেবে হাতেখড়ি নিলেও এরই মধ্যে লিখে ফেলেছেন “তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর” ও “শালুক ফুলের লাঁজ নাই” -এর মতো বহুল জনপ্রিয় উপন্যাস।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন