উপন্যাস        :         কেয়া পাতার নৌকা
লেখিকা        :          রাজিয়া রহমান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ২২ই ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ইং

লেখিকা রাজিয়া রহমানের “কেয়া পাতার নৌকা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি  ২০২৪ সালের ২২ই ফেব্রুয়ারী থেকে লেখা শুরু করেছেন। 
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান


৪১ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান (পর্ব - ৪২)


তরু পুরো পথ নিশ্চুপ হয়ে বসে ছিলো।তরুর নিজেকে ভীষণ শক্ত মনের মানুষ ভাবতো।কিন্তু এখন ওর মনে হচ্ছে ও ভীষণ দুর্বল মনের।
নিজের উপর নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গেছে তরুর।
কেমন ঘোরের মধ্যে বিয়েটাও করে নিলো।আগেপিছে কিছুই ভাবে নি।
পরিস্থিতি এমন ছিলো যে মন বারবার বলতো ফাইজানকে ছাড়া বেঁচে থাকা আর জিন্দা লাশ হয়ে বেঁচে থাকা একই।
আজ গাড়িতে বসে ভাবছে এরকম হুট করে বিয়ে করে নেওয়া কতটা যৌক্তিক?
পরক্ষণেই তার মন বিদ্রুপ করে বলে, "জীবন কোনো অংক না তরু যে হিসেবনিকেশ করে সঠিক উত্তর খুঁজে বের করবে।ভালোবাসা এমন একটা জিনিস তাকে না পেয়ে আজীবন আক্ষেপ করার চাইতে পেয়ে হেরে যাওয়া ও ভালো। তবুও মনকে বুঝাতে পারবে আমি সবটা দিয়ে চেষ্টা করে তাকে পেয়েছি কিন্তু তা আমার জন্য উত্তম ছিলো না। কিন্তু যদি না-ই পাও,তবে বুঝবে কিভাবে তা উত্তম না-কি ভুল?
মনকে কি দিয়ে বুঝ দিবে!"
তরু নজরুলদের বাড়িতে থাকলো না।নিজের বাড়িতে চলে গেলো। রাবেয়া শত চেষ্টা করে ও তরুকে রাখতে পারে নি।
বাড়িতে আসতেই লতার মুখোমুখি হলো তরু।লতা মুচকি হেসে তরুকে বললো, "জানিস তরু,গত রাতে ফাইজানের সাথে কথা হয়েছে আমার। "
তরু প্রথমে চমকে উঠে। পরমুহূর্তেই বুঝে যায় ব্যাপারটা। বুঝতে পেরে তরু চোখে মুখে যন্ত্রণার ছাপ ফুটিয়ে তোলে।
লতার কেমন পৈশাচিক আনন্দ অনুভব হয় তরুর মুখের দিকে তাকিয়ে। তরুকে ভালো থাকতে দিবে না লতা।জ্বালিয়ে মারবে।
তরু মনে মনে হাসে আর ভাবে পাগলের সুখ মনে মনে। গত রাত তো তরুর সাথেই ছিলো ফাইজান।
গত রাতটা আর দশটা বিবাহিত দম্পতির ন্যায় ছিলো না তরু আর ফাইজানের জন্য।দুজন কাগজে কলমে স্বাক্ষর করে একে অন্যের হয়েছে ঠিকই কিন্তু তরুর মন থেকে অভিমানের পাহাড় এখনো গলাতে পারে নি ফাইজান।রাতভর ফাইজান অনেক ভাবে চেষ্টা করেছে তরুকে বুঝানোর। ফাইজানের ইচ্ছে ছিলো দেশের বাহিরে চলে যাবে একেবারে। তার আগে লতাকে একটা উচিত শিক্ষা দিতেই ফাইজান এই অভিনয় করেছে।লতাই তো ফোন করে বাবা মা'য়ের কাছে তরুর নামে অনেক আজেবাজে কথা বলেছে। যদিও নাম বলে নি তরুর শুধু বলেছে ফাইজান যার প্রেমে পাগল সেই মেয়ে জঘন্য রকম খারাপ।
যেসব কিছুর আশেপাশে ও তরু ছিলো না তাও বলেছে।
তরুর একটাই কথা ফাইজান কেনো লতার সাথে কথা বললো। লতার হেসে হেসে বলা প্রতিটি শব্দ তরুর বুকে কাঁটার মতো বিঁধেছে।সেই আঘাত যতদিন না সারবে ততদিন তরু ফাইজানকে কাছে ঘেঁষতে দিবে না।
লতা ধাক্কা দিয়ে বললো, "তোর দুই হাত ভর্তি মেহেদী কেনো রে?বিয়ে করেছিস না-কি? "
তরু হেসে বললো, "হ্যাঁ করেছি তো।"
লতা অট্টহাসে।হেসে বলে, "অবশ্য বিয়ে করে নেওয়ায় তোর জন্য ভালো। ফাইজানকে তো তুই জীবনে ও নিজের করে পাবি না।ফাইজান আমাকে বলেছে পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলে নিজেই বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসবে।"
তরু লতার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। তারপর বললো, "আচ্ছা লতা,তোর কি একবারের জন্য ও কখনো মনে হয় না যে ফাইজান যদি তোকে বিয়ে করেও তবুও তো ফাইজানের সাথে আমার একটা সম্পর্ক ছিলো । যেই মানুষের মনে আমি,তার সাথে সংসার করতে তোর খারাপ লাগবে না?"
লতার চেহারা আচমকা হিংস্র হয়ে উঠলো। হিসহিসিয়ে বললো, "না, একটুও খারাপ লাগবে না।কেনো জানিস,ফাইজানকে না হলেও আমার চলতো।এমন না যে ও ছাড়া আমার হৃৎপিণ্ড কাজ করবে না।কিন্তু যখন থেকে আমি বুঝতে পেরেছি যে ফাইজান তোকে ভালোবাসে সেদিন থেকে আমি ওর জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছি।এটা ভালোবাসা না,জেদ।আমি অন্তত এই খানে তোকে হারাতে চাই।সব সময় যে হেরে যায় না,শেষ বেলায় সে নিজের সর্বস্ব বাজি রাখে।আমি ও তেমন।
আমি তো শুধু তোকে একটা জনমের শিক্ষা দিতে চাই তরু।তোকে বুঝিয়ে দিতে চাই জীবনের সব কিছুতে তুই জিতলে আসল জায়গায় আমি তোকে হারিয়ে দিবো।"
তরু লতার দিকে তাকিয়ে আনমনে হেসে বলে, "লতা,অথচ তুই আর আমি ছোট বেলায় কতো ভালো বন্ধু ছিলাম তোর মনে আছে?"
লতার মনে আছে।সব স্পষ্ট মনে আছে লতার।একবার কুরবানির ঈদে আমেনা লতাকে নতুন জামা কিনে দিলো না।বললো, রোজার ঈদের জামা পরতে কুরবানির ঈদে।
লতা তখন ক্লাস থ্রিতে পড়ে।আগের ঈদের জামা লতা কিছুতেই গায়ে দিতে রাজি হয় নি।তাই সেই ঈদে জামা পরে নি।তরু যখন জানতে পারলো লতার জামা হয় নি,নিজের ঈদের মেইন ড্রেসটা লতাকে দিয়ে দিয়েছে তরু।
দুজনের কতো গলায় গলায় ভাব ছিলো। দুজন একসাথে সাজতে বসতো।কিন্তু সবাই তরুকে সুন্দর লাগছে বলতো।লতার মন খারাপ হতো তাকে কেউ সুন্দর লাগছে কথাটা না বলায়।তারপর তরু আর সাজতো না লতার মন খারাপ হবে ভেবে।তারপর ও মানুষ বলতো লতা এতো সেজে ও তরুর মতো স্নিগ্ধ লাগে না,তরুকে না সাজতেই অনেক স্নিগ্ধ লাগছে।
সব ক্ষেত্রে তরুর সাথে এভাবে হেরে যেতে যেতে লতার কাছে তরুই হয়ে গেলো জীবনের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী আর প্রতিপক্ষ।
তরুর বাবা মারা যাওয়ার পর লতা ভীষণ খুশি হয়।আস্তে আস্তে দুজনের বন্ধুত্ব ভেঙে যায়।লতার কাছে দিন দিন মনে হতো তরুর মা তাদের কাজের লোক,তরু কাজের লোকের মেয়ে।
এসব ভেবেই লতার আনন্দ হতো যে সে মালিক আর তরু তার চাকর।
তরু রুমে চলে গেলো। লতা যদি ফাইজানকে সত্যিই ভালোবাসতো তাহলে হয়তো তরু ফাইজানকে ও লতার করে দিতো কিন্তু লতা তো ভালোবাসে নি। বরং প্রতিযোগিতা করতে চেয়েছিলো তরুর সাথে।
তরুর ভাবনার মধ্যে ফাইজানের কল এলো।গলার সুর যথেষ্ট গম্ভীর করে তরু হ্যালো বললো।
ফাইজান বুঝতে পারলো বরফ গলতে অনেক সময় লাগবে।
ফাইজান হালকা হেসে বললো, "ডিনার করেছো?"
"না এখনো করি নি,করবো।আপনি? "
"না করি নি এখনো। "
"ঠিক আছে,খেয়ে নিন।রাখছি।পড়তে হবে।"
"আমার সাথে কি একটু আগের মতো করে কথা বলা যায় না তরু?"
"সময় হোক,নিশ্চয় বলবো।আপনার আর কিছু বলার না থাকলে রাখছি।"
"অন্যের বউয়ের সাথে কথা বললেও একটু হেসে কথা বলতো,শা লা এমন কপাল আমার, নিজের আপন বউয়ের সাথে কথা বলছি অথচ মনে হচ্ছে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে কথা বলছি।"
"অন্যের বউয়ের সাথে কথা বলার ব্যাপক অভিজ্ঞতা আছে দেখছি আপনার। জানা ছিলো না। যা-ই হোক, আমি রাখছি,যিনি মিষ্টি হেসে কথা বলেন তার সাথে কথা বলুন।কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই।"
টুক করে তরু ফোন রেখে দিলো।ফাইজান ফোন রাখতেই মনে পড়লো আসল কথাই তো তরুকে জানানো হয় নি।আগামীকাল ফাইজানের একটা ইন্টারভিউ আছে চাকরির।
তারপর ভাবলো রাতে আবার কল দিয়ে বলবে।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

 Follow Now Our Google News

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

৪৩তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা রাজিয়া রহমান বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর জেলায় জন্মগ্রহন করেন। লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন তিনি। তরুণ এই লেখিকা বৈবাহিক সূত্রে লক্ষ্মীপুরেই বসবাস করছেন। বর্তমানে তিনি একটি পুত্র সন্তানের জননী। পেশাগতভাবে তিনি গৃহিনী হলেও লেখালেখির প্রতি তার ভিষন ঝোক। আর তাই শত ব্যস্ততার মাঝেও শখের বশে ধারাবাহিকভাবে লিখে যাচ্ছেন একের পর এক উপন্যাস। ২০২২ সালের মধ্যদিকে গর্ভকালিন সময়ে লেখিকা হিসেবে হাতেখড়ি নিলেও এরই মধ্যে লিখে ফেলেছেন “তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর” ও “শালুক ফুলের লাঁজ নাই” -এর মতো বহুল জনপ্রিয় উপন্যাস।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন