উপন্যাস : নয়নে লাগিল নেশা
লেখিকা : মৌসুমি আক্তার মৌ
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ২৫ ডিসেম্বর, ২০২২ ইং
লেখিকা মৌসুমি আক্তার মৌ'র “নয়নে লাগিল নেশা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি তার ফেসবুক পেজে ২০২২ সালের ২৫ ডিসেম্বর থেকে লেখা শুরু করেছেন। এই উপন্যাসে গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক।
![]() |
নয়নে লাগিল নেশা || মৌসুমি আক্তার মৌ |
৪৫ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
নয়নে লাগিল নেশা || মৌসুমি আক্তার মৌ (পর্ব - ৪৬)
রজনি, লতিফা, অঞ্জুমান রান্নাঘরে ব্যস্ত আছে। আজ প্রিয়তা আর অন্ত আসবে। এক মাসের বেশী সময় ধরে ওরা দেশের বাইরে ছিল। বাড়িটা আজ আমেজময় হয়ে আছে।মাহবুব বাজারে যাচ্ছে আর একেক টা জিনিস হাতে করে নিয়ে আসছে। প্রান্তিক ও বার বার বাইরে যাচ্ছে আর একেক টা জিনিস হাতে করে নিয়ে আসছে। প্রান্তিকের দেশের সর্বোচ্চ ট্রিটমেন্ট চলছে। মাহবুব প্রান্তিক কে বিদেশ পাঠাতে চেয়েছে। কিন্তু বিদেশ পাঠিয়ে কোনো লাভ হবেনা। ভাল হলে এখান থেকেই হবে। না হলে পৃথিবীর কোনো জায়গা থেকেও হবেনা। ডাক্তার বলেছে এখন আগের চেয়ে অবস্থা বেশ ভাল।এখনের রিপোর্ট বেশ পজিটিভ।সব মিলিয়ে চৌধুরী বাড়িতে আজ আনন্দের শেষ নেই। গ্রাম থেকে রজনির মা-বাবা, ভাই এসছে। গ্রামের টাটকা সবজী, দেশী মুরগী, মুরগীর ডিম,গ্রামের বিভিন্ন ধরনের পিঠা নিয়ে এসছে। অন্তর মা-বাবা ও এসছে। ওদের আসতে আসতে বেশ রাত হবে। প্রান্তিক পাঁচ পাউন্ডের একটা কেক এনে ডিপ ফ্রিজে রাখল। ফ্রিজ থেকে একটা কোকাকোলার ক্যান বের করল। ডায়নিং এ পায়ের উপর পা তুলে বসে কোকাকোলার মুখ খুলল। তা থেকে ধোয়া বের হচ্ছে। প্রান্তিক কোকাকোলা উঁচু করে ঠান্ডা কোকাকোলা ঢক ঢক করে এক বারে অর্ধেকটা খেয়ে নিল। ডায়নিং থেকে কিচেনে উঁকি দিয়ে দেখল রজনি কোমরে ওড়না পেঁচিয়ে গ্যাসে তরকারি নাড়াচাড়া করছে।পরণে হলুদ জরজেট থ্রি-পিছ, চুপ উঁচু করে বাঁধা।ফার্সা ঘাড়ে ছোট ছোট অসংখ্য চুলে ঘাড় আরো মোহনীয় লাগছে। প্রান্তিক রজনীর দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসছে। আপাদমস্তক ঘন ঘন তাকিয়ে দেখছে।লতিফা বিষয় টা খেয়াল করল। আঞ্জুমান কে ইশারা করল।আঞ্জুমান আড়চোখে তাকিয়ে দেখল।দেখেও না দেখার ভান করে চুপ চাপ তিনজনে কাজ করছে।প্রান্তিক এর মনে অনেক্ষণ ধরে নিস পিস করছে রজনি যেন একবার পেছন দিকে তাকায়।কিন্তু তাকাচ্ছেই না। বাধ্য হয়ে রজনির নাম্বারে মেসেজ করল, " কি রান্না করছেন ম্যাডাম এত মনযোগ দিয়ে।"
মেসেজের সাউন্ডে রজনি ফোনটা হাতে নিল।রজনির ফোনের ওয়াল পেপারে প্রান্তিকের সাদা স্যুট পরা হাসি মাখা সুদর্শণ একটা ছবি।সেই ছবিটির উপর ভাষছে মেসেজটা। রজনি ডান হাতে খুন্তি চালাতে চালাতে বাম হাতে রিপ্লাই করল, " আপনার ফেভারিট কিছু।"
"উমমম! আমার ফেভারিট কিছু?"
"ইয়েস মাই ডিয়ার সুদর্শন বয়।"
"বাট সুইটহার্ট আমার ফেভারিট কিছু তুমি কড়াইতে কীভাবে রান্না করবে?"
"আ' গু' ন ছাড়া রান্না টা হবে কীভাবে শুনি।"
"আমার ফেভারিট কিছুতে যে আ-গু-ন আছে সেটা চুলার আ-গু-নের চেয়েও ভয়ংকর।রান্না করতে কড়াই নয় অন্য কিছু লাগবে?"
"মানে?"
"মানে তোমার লিপ।আমার ফেভারিট তোমার গরম চুমু।"
"চুমু আবার গরম হয় নাকি না ঠান্ডা হয়। চুমু তো চুমু ই।"
"গরম ঠান্ডা দু'টোই হয়! এতবার বুঝালাম এখনো বুঝলে না।এতবার এত স্টাইলে চুমু দিলাম তাও গরম আর ঠান্ডা বুঝলে না।"
"বুঝেছি এই আ'গু'ন ঠোঁটে চেপে ধরলে আ' গু' ন গরম চুমু হবে। আর ফ্রিজ থেকে বরফ এনে ঠোঁটে চেপে ধরে চুমু দিলে ঠান্ডা চুমু হবে।"
"ওরে বউরে! তোমার থিওরিতে আমি আবার ও ফিদা।পেছেন তাকাও।"
রজনি পেছনে তাকাল। প্রান্তিক সাদা থ্রি কোয়ার্টার আর কালো গেঞ্জি পরে সোফায় বসে ফোন গুতাচ্ছে।রজনি তাকাতেই ফ্লায়িং কিস ছুড়ে মেরে চোখ মারল।রজনি লজ্জা পেল।আঞ্জুমান লতিফাকে ইশারা দিয়ে নিয়ে বাইরে গেল।যাওয়ার সময় বলে গেল আমরা দু'জন আসছি তুমি একটু চুলাটা খেয়াল রাখো রজনি। রজনি ফোন টা সাইডে রেখে মিহি কন্ঠে বলল, " আচ্ছা আম্মা।"
রজনি মন দিয়ে প্রান্তিকের ফেভারিট সরষে ইলিশ রান্না করছে।ঘেমে নাকের ডগা লাল লাল হয়ে গিয়েছে।এমন সময় হঠাৎ পেটে কারো হাতের স্পর্শে কেঁপে উঠল রজনি।ঘাড় কাত করতে দেখল প্রান্তিক পেছন থেকে তাকে জড়িয়ে ধরেছে।রজনির ঘাড়ে থুতনি রেখে ঘন ঘন নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল, " সেই কখন থেকে ডাকছি, তুমি আসছি না কেনো? হুম! "
রজনি খুব তড়িঘড়ি করে বলল, " আপনার কি মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে হ্যাঁ। ছাড়ুন আমাকে।এখনি আম্মা আর লতিফা খালা চলে আসবে।বাড়িতে মেহমান কেউ চলে আসবে।ছাড়ুন আমায়।" বলেই রজনি খুন্তি নাড়াতে শুরু করল।
প্রান্তিক এক হাত সরিয়ে রজনির হাতের উপর রেখে খুন্তি সহ হাত চেপে ধরে খুন্তি নাড়াতে নাড়াতে বলল, " তোমাকে হেল্প করতে এসছি।দেখো তোমার জামাই কত ভাল খুন্তি চালাতে জানে।" বলেই রজনির ঘাড়ে চুমু দিয়ে বলল,
" সাথে ঠোঁট ও চালাতে জানে।অল রাউন্ডার বর তোমার। দেখলে কত কিছু পারে একসাথে।এইজন্য বলি রজনিগন্ধ্যা তুমি জিতেছো।"
"আপনি কি ছাড়বেন আমায়? ছিঃ কেউ দেখলে কি ভাববে।"
"তাহলে বেডরুমে যেতে পারি আমরা?"
"এখন?"
"ইয়েস।"
"আমি এখন গরমে ঘেমে অতিষ্ট,গোসল করব।ডায়নিং এ খাবার সাজাব।প্রিয়তারা আসবে।কত কাজ।আর আপনি কীনা৷ এখন এসব বাজে কথা বলছেন।"
" আমি বাজে কথা না বললে মা-বাবাকে কবে লজ্জা পেয়ে বলবে তোমরা দাদু-নানু হতে চলেছো।"
"সারাক্ষণ মাথায় এসব চলে তাইনা?"
"হুম এসব ই চলে।এসব রান্না বান্না ছাড়োতো। প্রিয়তারা আসবে আমাকে আর তুমি পাত্তাই দিবানা।এখন চলো এক সাথে সাওয়ার নিবো।"
" ইম্পসিবল আপনার মত অসভ্য লোকের সাথে আমি সাওয়ার নিবনা।আপনি একটা যা তা লোক। সুযোগ পেলেই।"
"থামলে কেনো বলো। মেয়েদের মুখে এসব শুনতে ভালোই লাগে কিন্তু।"
"এইবার কিন্তু সত্যি কেউ চলে আসবে ছাড়ুন আমায়।"
প্রান্তিক রজনির ঘাড়ে নাক ডুবিয়ে আলতো চুমু দিয়ে বলল, " তোমাকে পাওয়ার দাবি আমি মৃ'ত্যু'র পরেও ছাড়ব না রজনিগন্ধ্যা।"
প্রান্তিকের ওষ্টের ছোঁয়ার রজনির সমস্ত শরীর শির শির করে উঠল।কিছুটা দূর্বল হয়ে গেল রজনি।শরীরের বল হারাল।অনুভূতিরা ভীড় জমালো মস্তিষ্কে।প্রান্তিক বুঝতে পারল রজনি অনুভূতি প্রবণ হয়েছে।রজনিকে ঘুরিয়ে তার দিকে ফেরাল।রজনির দুই গালে হাত রেখে বলল,
"বড্ড জানতে ইচ্ছা করে কি আছে তোমার নয়নে রজনিগন্ধ্যা।আমি যতবার নয়ন মেলে তাকায় ততবার-ই নিজেকে হারিয়ে ফেলি।এমন নেশায় আমাকে জড়ালে আমি আর নিজেকে আটকে রাখতে পারলাম না।আমি যেদিন প্রথম তোমার চোখে চোখ রাখলাম ওইদিন ই আমার সর্বনাশ নিজ চোখে দেখলাম।"
রজনি শীতল কন্ঠে বলল, " লজ্জা করছে আমার।"
এমন সময় রজনির ফোন বেজে উঠল।চুলার পাশেই ফোন রাখা। ফোনের শব্দে দুজনেই কেঁপে উঠল।দুজনেই স্বাভাবিক হল।প্রান্তিক ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখল অফিসের নাম্বার থেকে ফোন।প্রান্তিক বিরক্ত কন্ঠে বলল,
" এই শালারা সময় বুঝেনা,অসময় বুঝেনা ফোন দিতে পারলেই বাঁচে। কি গুরুত্বপূর্ণ নিউজ দিতে ফোন দিস শালা তোরা।বাংলাদেশের কোন সুস্থ নাগরিক তোদের ফোন রিসিভ করে।আমাদের লতিফা খালা পর্যন্ত তোদের ফোন দেখে বিরক্ত হয়ে অতিষ্ট হয়ে ফোন কেটে দেয়।এর পর থেকে আমার আর আমার বউ এর রোমান্টিক মুহুর্তে যদি আর একটা বার ফোন দিস তোদের অফিসে গিয়ে এমন গালি দিয়ে আসব এ জন্মে আর ফোন দিবিনা।"
রজনি অগ্নি চোখে খুন্তি উঁচু করে প্রান্তিকের দিকে তাকিয়ে বলল, " আপনাকে এখন কি বলা উচিৎ তাই বলুন। কে বলেছিলো রান্নাঘরে এসে পাকনামি করতে।"
বউ এর হাতে খুন্তি,সাক্ষাত রমনি লুক,দেখে মনে হচ্ছে এখনি খুন্তির স্যাকা দিবে।প্রান্তিক চিন্তিত ভঙ্গিতে কপাল টান টান করে রজনির দিকে তাকিয়ে বলল,
"আমি আবার কি করলাম বউ।"
"তাকিয়ে দেখুন কড়াইয়ের দিকে।একটা ইলিশ মাছ ও আস্ত নেই।সব গুলা মাছ ভে'ঙে চু'রে যাচ্ছে তাচ্ছে হয়ে গিয়েছে।এখন আম্মা আসলে আমি কি জবাব দিব।"
প্রান্তিম উঁকি দিয়ে দেখল আসলেই মাছের অবস্থা যা তা।আত্মীয়দের সামনে দেওয়ার মত নেই।এইদিকে তার বউ অগ্নিমুডে তাকিয়ে আছে।প্রান্তিক বলল, " কুল! আমি সমাধান করে দিচ্ছি।"
" কি সমাধান দিবেন।"
প্রান্তিক এক টুকরো ইলিশের ডিম মুখে পুরে খেতে খেতে ফ্রিজের কাছে গেল।ফ্রিজ থেকে আর একটা মাছ বের করে কিচেনে ফিরে এল।রজনি বলল, " এখন এই মাছ কি হবে?"
"কি হবে আবার রান্না হবে।ইলিশ রান্না তো দশ মিনিটের কাজ।দেখো আমি কীভাবে তোমাকে ১৫ মিনিটে রান্না করে দিই।"
" আপনি সাওয়ারে যান, আমি করে নিচ্ছি।"
"আমার বউ কে এত কষ্ট আমি করতে দিবনা।তুমি সাওয়ারে যাও।"
প্রান্তিক বেসিং এর পানি ছেড়ে তার নিচে মাছ রেখে মাছের বিষ্টা ছুরি দিয়ে উঠিয়ে নিল।তারপর বড় ধারাল ছু* রি দিয়েই মাছ টা সাইজ মত কে* টে ধুয়ে নিল।রজনি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে প্রান্তিক এর দিকে।এই মানুষ টা তার জন্য কত কিছু করতে পারে। তাকে কত ভালবাসে।কীভাবে আগলে রাখে। এই মানুষটার কোনদিন কিছু হলে কে তাকে এত ভালবাসবে।দেখে বোঝায় যায়না মানুষ টা ভেতরে ভেতরে অসুস্থ।রজনির হঠাৎ মন খারাপ হল।প্রান্তিক রজনির মুখের দিকে তাকিয়ে মুড অফ দেখে বলল,
"কি ভাবছো আম্মু বকবে? কিছুই বলবেনা।ভাঙা মাছ গুলো রেখে দাও।পরে আমরা খেয়ে নিবো।এটা রান্না করে চলো একসাথে সাওয়ারে যায়।"
লতিফা আঞ্জুমান কে বলল, " আপা রান্নাঘরে যাবেন না।"
"চুপ করোতো।আমার ছেলের যেভাবে মন ভাল থাকে সেভাবেই থাকুক।মানুষ মন ভাল থাকলেই সুস্থ থাকে বুঝলে।ওরা বের হলে তুমি সব খাবার ডায়নিং এ রেখো।তোমার ভাই বড় ডায়নিং বানিয়েছে এনেছে দেখলেনা।পুরা পরিবার নিয়ে খাবে তাই।"
"হ ভাবি।আমার নিজের ই কেমন ইদ ইদ মনে হচ্ছে।"
সারাদিন শ্রাবণ বসে আছে এয়ারপোর্টে। সে খোজ পেয়েছে আজ প্রিয়তা ফিরবে।সারাদিন একটু পানিও খায়নি সে।চোখ মুখ একদম শুকিয়ে গিয়েছে।খুদার যন্ত্রণার চেয়ে প্রেয়সীকে এক নজর দেখার যন্ত্রণা মানুষকে বেশী যন্ত্রণা দেয়।যোগাযোগ এর তৃষ্ণা বড়ই ভয়াবহ তৃষ্ণা। শ্রাবণ বেদনাভরা ক্ষত-বিক্ষত হৃদয় নিয়ে বলছে, " জানিনা কোথায় আছো তুমি? যেখানেই থাকো ইচ্ছা করছে ছুটে যায়।তোমাকে নিয়ে হারিয়ে যায় কোথাও? আমি জানি প্রিয়তা তুমিও তাই করবে।আমাকে দেখলেই পা-গ-লে-র মত ছুটে আসবে।আমাকে ভালবাসবে।এই অপেক্ষাতেই বেঁচে আছি।"
বলতে বলতেই এয়ারপোর্ট এর ভেতর থেকে বের হল প্রিয়তা।মুখটা একদম ই মলিন দেখাচ্ছে।আজ কতদিন পর প্রিয়তার মুখ দেখল শ্রাবণ।হেলে দুলে হেঁটে আসছে।পরণে ব্লু জিন্স,গায়ে সাদা একটা কামিজ, গলায় ব্লু ওড়না।শ্রাবণ মাত্রই উঠে দাঁড়াল, ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটল সে প্রিয়তার সামনে যাওয়ার জন্য পা বাড়াল।এমন সময় অন্ত পেছন থেকে এসে প্রিয়তার হাত ধরল।হাসি মুখে বলল,
"এখন একটু ভাল লাগছে?"
প্রিয়তা মাথা নেড়ে বলল, "হুম।"
অন্ত প্রিয়তার মাথা তার কাঁধের সাথে রেখে প্রিয়তাকে নিয়ে সামনের দিকে এগোলো।প্রিয়তা ক্লান্তিতে চোখ বুজে আছে।দৃশ্যটা শ্রাবণ এর হৃদয় কে ক্ষত-বিক্ষত করল। জীবনে প্রথম বার সে প্রিয়তাকে অন্য কারো সাথে দেখল তাও এতটা ঘনিষ্ট ভাবে।বুকের মাঝে বাড়ি মেরে উঠল।মনে হল কি যেন একটা হারিয়ে গেল।যে অন্ত প্রিয়তার পাশে ঘেষতেও সাহস পেতনা সেই অন্তর কাঁধে আজ প্রিয়তার মাথা।শ্রাবণের মাথা কিলবিল করে উঠল।সে এই যন্ত্রণা সহ্য করতে পারছে।মস্তিষ্ক ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে।তার ধারণা ছিল প্রিয়তা অন্তর সাথে খারাপ ব্যবহার করে।কখনো অন্তকে কাছাকাছি আসতে দিবেনা।তার প্রিয়তা কি সত্যি পাল্টে গেল।কিন্তু শ্রাবণের প্রেমিক হৃদয় বলছে না এমন হতে পারেনা।হয়ত প্রিয়তা অসুস্থ তাই অন্তর কাঁধে মাথা রেখেছে।প্রান্তিক গাড়ি পাঠিয়েছে।অন্ত আর প্রিয়তা গিয়ে গাড়িতে উঠল।গাড়িটা ছেড়ে দিতেই প্রিয়তা খেয়াল করল গাড়ির আয়নায় শ্রাবণের সেই ঘোলা চোখ দু'টো।চোখ দু'টো অশ্রুসজল।প্রিয়তা চিৎকার দিয়ে বলল,
"চাচা গাড়ি থামান।"
প্রিয়তার চিৎকারে ড্রাইভার গাড়ি থামাল।অন্ত বলল,
"কি হয়েছে প্রিয়তা? কি হয়েছে?"
প্রিয়তা গাড়ির গাড়ির কাচ সরিয়ে মুখ বের করে এদিক -সেদিক তাকাল কেউ নেই।এটা কি তার মনের ভ্রম।বুকের মাঝে কেমন ধড়ফড় করছে প্রিয়তার।যন্ত্রণায় অশান্তি লাগছে।কাঁন্না পাচ্ছে।সে অকারণেই কেদে দিল।অন্ত বারবার জিজ্ঞেস করছে, " কি হয়েছে প্রিয়তা বলো।"
প্রিয়তা অন্তর কাঁধে মাথা রেখে কাদতে কাদতে বলল,
"ও কেনো আমার সামনে আসে।আমি কেনো আমার সব স্মৃতি ভুলে যেতে পারিনা অন্ত।"
"জোর করে ভুলে যেতে হবে কেনো শুনি।"
"না হলে আমি যন্ত্রণা পাচ্ছি।"
অন্ত মনে মনে বলল, "তোমার যন্ত্রণা গুলো আমাকে যন্ত্রণা দেয় প্রিয়তা।"
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
৪৭ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
মৌসুমি আক্তার মৌ’র গল্প ও উপন্যাস:
- নয়নে লাগিল নেশা
- আরশি
- একটি নির্জন প্রহর চাই
- এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা
- রৌদ্র মেঘের আলাপ
- এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা - ২
- তবুও বর্ষনের অপেক্ষা
- প্রণয়ের আসক্তি
- সংসার
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা মৌসুমি আক্তার মৌ-এর নড়াইলের ছোট্ট শহরে জন্ম আর সেখানেই বেড়ে ওঠা। তিনি নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে হিসাববিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করে বর্তমানে এম.এম. কলেজ থেকে এমবিএ করছেন। এর পাশাপাশি তিনি হেল্থ এন্ড ফ্যামিলি প্ল্যানিং-এ সরকারি চাকরি করছেন নিজ জেলাতেই। লেখিকার ছোটোবেলা থেকেই গল্প, উপন্যাসের বই পড়ার প্রতি প্রবল নেশা ছিল। পরিবার থেকে একাডেমিক বইয়ের বাহিরে অন্য কোনো বই অনুমোদন না থাকায় বন্ধুদের নিকট থেকে বইসংগ্রহ করে পড়তেন। তাঁদের ভয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে পড়তেন, এমনকি পাঠ্য বইয়ের ভাঁজে বই নিয়েও পড়তেন। আর বই পড়ার এই নেশা বা প্রেম থেকেই লেখালেখির প্রতি ঝোঁক সৃষ্টি হয়। ফেসবুকে অসংখ্য গল্প, উপন্যাসের পাশাপাশি ছাপাবই ও ইবুক সেক্টরেও তিনি কাজ করছেন। লেখিকার প্রথম বই "তুমি নামক প্রিয় অসুখ" ২০২২ সালে প্রকাশিত হয়। বইটি ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছিল।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন