উপন্যাস : নিবেদিতা
লেখিকা : মুন্নি আক্তার প্রিয়া
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১০ই মে, ২০২৪ ইং
লেখিকা মুন্নি আক্তার প্রিয়ার “নিবেদিতা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২৪ সালের ১০ই মে থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
নিবেদিতা || মুন্নি আক্তার প্রিয়া |
১৯ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
নিবেদিতা || মুন্নি আক্তার প্রিয়া (পর্ব - ২০)
জীবনকে সহজ কিংবা কঠিন বলে আখ্যায়িত করার ভাবনাটা করা যায় নিজের খারাপ সময়ে। তখন ভাবার মতো যথেষ্ট সময় না থাকলেও সময় আপনা-আপনি বের হয়ে যায়। নতুবা জীবন নিয়ে আমাদের এত ভাবারই বা সময় কোথায়? খারাপ সময়টাই উপযুক্ত সময় জীবনকে নিয়ে ভাবার জন্য। এই ভাবনা শেষে কখনো মন শক্ত হয়, কখনো বা ভেঙে পড়ে। আবার কখনো বুকচিরে বেরিয়ে আসে ভারী দীর্ঘশ্বাস। কখনো মনে হয় এই সময়টা আমি পার হতে পারব, আবার কখনো মনে আমি ভীষণ একা। এই সংগ্রাম, এই লড়াই আমার জন্য নয়। আমি আর পারছি না। আচ্ছা ভালোবাসা শব্দটার এত জোর কেন? এত প্রভাব কীভাবে সে একটা মনুষ্য জীবনে ফেলতে পারে? নিজের পরিবার, নিজের লাইফ, ক্যারিয়ার সমস্ত কিছু কেন তুচ্ছ হয়ে যায় এই ভালোবাসা নামক শব্দটার কাছে? কেন? নিবেদিতা উত্তর খুঁজে পায় না। এত ভাবনা-চিন্তার পর তারও বুক থেকে কেবল ভারী দীর্ঘশ্বাসটাই বেরিয়ে এলো। চেয়ারে হেলান দিয়ে বসল সে। দৃষ্টি দূরে থাকা ঝকঝকে পরিষ্কার আকাশপানে স্থির। একঝাঁক পাখি কী সুন্দর মনের আনন্দে দলবেঁধে উড়ে বেড়াচ্ছে। তাদের গন্তব্যস্থান কোথায়? নিবেদিতা বিষয়টা নিয়ে আর ঘাঁটাল না। পাখিদের দলবেঁধে উড়ে যাওয়া দেখছে চুপচাপ।
তিন দিন সে ক্লাসে যায়নি, বেকারিতেও যায়নি। সাবিহা সময় করে একবার দেখা করতে এসেছিল। সে ভেবেছিল নিবেদিতা হয়তো অসুস্থ। মন খারাপ দেখে একবার ঘুরতে যাওয়ার কথাও বলেছিল, নিবেদিতা শরীর খারাপের অজুহাত দেখিয়ে ঘুরতেও যায়নি। তবে সাবিহা যথেষ্ট চেষ্টা করেছে নিবেদিতার মন ভালো করার। সে পলকে কল দিয়ে অনেকগুলো খাবার-দাবার আনিয়ে একটা সুন্দর বিকেল কাটিয়ে গেছে। স্বীকার করতে অসুবিধা নেই যে, ঐটুকু সময় নিবেদিতার আসলেই ভালো কেটেছিল।
এই তিনদিন যখন যখনবাড়িতে কথা বলার সময় হয়েছে শুধু তখনই ফোন ওপেন করত নিবেদিতা। কথা বলা শেষ করে বাকিটা সময় আবার বন্ধ করে রাখত। এখনো সে রুমে গিয়ে বিছানার ওপর থেকে ফোন নিয়ে আবার বারান্দায় এলো। নাসিমা বেগমকে ভিডিয়ো কল দিল। কল রিসিভ করে নাসিমা বেগম প্রথমেই জিজ্ঞেস করলেন,
"তোর ফোন বন্ধ কেন?"
"চার্জ ছিল না।" মিথ্যে বলল নিবেদিতা।
"আমি যখনই ফোন দিচ্ছি শুধু বন্ধ পাচ্ছি।"
"আসলে মা ফোনে যেন কী হয়েছে। ঠিক করা লাগবে।"
"ওহ! টাকা আছে নাকি পাঠাব?"
"আছে।"
"লাগলে বলিস। এখন তো খরচ তেমন নিচ্ছিসই না। তুই চলিস কীভাবে?"
"ঐতো পার্ট টাইম জবের টাকা দিয়ে হয়ে যায়।"
"আজ যাসনি?"
"উঁহুঁ! কেমন যেন জ্বর জ্বর লাগছে। তাই ছুটি নিয়েছি।" এবারও মিথ্যে বলল নিবেদিতা।
নাসিমা বেগম অস্থির হয়ে শুধালেন,
"বলিস কী! বেশি জ্বর? ডাক্তার দেখিয়েছিস? ওষুধ খেয়েছিস?"
মায়ের অস্থিরতা দেখে হেসে ফেলল নিবেদিতা। বলল,
"আস্তে মা! তুমি এত অস্থির হইও না তো। জ্বর অল্পই।"
"তুই বললেই তো আর আমি চিন্তা ছাড়া থাকতে পারি না। আমি তো মা, মায়ের চিন্তা তুই বুঝবি না। যখন মা হবি তখন বুঝবি।"
"আচ্ছা বাবা ঠিক আছে! এখন বলো বাড়ির সবাই কেমন আছে?"
"সবাই ভালো আছে। এই ভালো কথা নিবু, নির্ণয়ের কী খবর? কথাটথা হয় তোর সাথে?"
মুহূর্তেই মুখটা মলিন হয়ে গেল নিবেদিতার।তবুও যথাসম্ভব নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করে বলল,
"হয় মাঝে মাঝে।"
"আপার সাথে কথা হলো সেদিন। সুখীর নাকি অন্য জায়গায় বিয়ে হয়ে গেছে।"
নিবেদিতা অবাক হয়ে বলল,
"কী! কেন?"
"নির্ণয় আর সুখীই নাকি ডিসিশন নিয়েছে যে ওরা বিয়ে করবে না। বিয়ে তো হলো নির্ণয়ের অফিসের কলিগের সাথেই।"
সবটা নিবেদিতার মাথার ওপর দিয়ে গেল। কোথাও কিছু একটা রহস্য তো আছে যেটা ওরা কেউই জানে না। কলিংবেলের শব্দ পেয়ে ফোনে কথা বলতে বলতেই নিবেদিতা গিয়ে দরজা খুলে দিল। ওকে পাশ কাটিয়ে ঝড়ের বেগে ভেতরে প্রবেশ করল নির্ণয়। চুপটি করে বিছানার ওপর বসল। ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে নিবেদিতা। ফোনের অপরপ্রান্তে নাসিমা বেগম 'হ্যালো, হ্যালো' করছেন। হুঁশে এসে নিবেদিতা বলল,
"আমি তোমাকে একটু পরে ফোন দিচ্ছি, মা।"
এরপর কল কেটে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে নির্ণয়ের দিকে তাকাল। নির্ণয় বেশ স্বাভাবিক কণ্ঠেই বলল,
"কথা শেষ?"
নিবেদিতা এ কথার জবাব না দিয়ে প্রশ্ন করল,
"আপনি এখানে কেন?"
"তোমার সঙ্গে কথা বলতে এসেছি।"
"কী কথা?"
"অনেক কথা। তুমি ফোন বন্ধ করে রেখেছ কেন? ক্লাসে যাচ্ছ না, বেকারিতেও যাচ্ছ না। কেন?"
"আমার ইচ্ছে।"
"পালিয়ে বেড়াচ্ছ?"
"পালাব কেন? আমি কি চোর?"
"অবশ্যই তুমি চোর।"
কপালে ভাঁজ পড়ল নিবেদিতার। ভ্রু কুঁচকে বলল,
"মানে কী?"
"চোর অনেক ধরনের হয়। যে মন চুরি করে সেও একজন চোর। তুমিও তা-ই করেছ।"
"আমি আপনার কথা কিছু বুঝতে পারছি না।"
নির্ণয় বসা থেকে উঠে দাঁড়াল। নিবেদিতার মুখোমুখি হয়ে বলল,
"আমার চোখের দিকে তাকাও।"
নিবেদিতা তাকাল না। নির্ণয় ফের বলল,
"তাকাও।"
নিবেদিতা তাও তাকাল না। তার দৃষ্টি অন্যদিকে। নির্ণয় এবার ধমক দিয়ে বলল,
"আমি বলেছি, আমার চোখের দিকে তাকাও!"
ধমক খেয়ে কিছুটা কেঁপে উঠল নিবেদিতা। নির্ণয়ের চোখে চোখ রাখল। নির্ণয় বলল,
"আমাকে তুমি ভালোবাসো।"
নিবেদিতা দৃষ্টি সরিয়ে নিল। আচমকা অসম্ভব একটা কাজ করল নির্ণয়। নিবেদিতাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
"আমার এই দূরদেশে আসার একটাই কারণ। শুধু তুমি! আমি তোমাকে ভালোবাসি, নিবেদিতা।"
নিবেদিতার দুচোখে মুহূর্তেই অশ্রু জমা হলো। শরীর থরথর করে কাঁপছে তার। মুখে কোনো রা নেই। শুধু কাঁপান্বিত দুহাত সে নির্ণয়ের পিঠে রাখল। উত্তর মুখে না দিলেও উত্তর পেয়ে গেছে নির্ণয়।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
Follow Now Our Google News
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
২১ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
“মুন্নি আক্তার প্রিয়া” বাল্যকাল থেকেই কল্পনা ও সাহিত্য বিলাসী। লেখা লেখিটা মূলত শখের বশে শুরু করলেও, পরবর্তীতে তা একসময় নেশায় পরিণত হয় তার। লেখালেখির পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান ও অনুপ্রেরণা পেয়েছেন ফেসবুকের ফলোয়ারদের থেকে। তাদের ভালোবাসা ও অনুপ্রেরণাই তাকে সাহিত্য জগতে টিকে থাকার ক্ষেত্রে অদম্য সাহস ও ইচ্ছে শক্তি বাড়িয়ে দিয়েছে। এইভাবেই সাহিত্য জগতে তার প্রথম “সাঁঝের কন্যা” বইটি প্রকাশিত হয়। এর মাধ্যমেই প্রকাশণা জগতে পদার্পন।
তার লেখা প্রথম বইটি ব্যাপক সাড়া ও সফলতার ধারাবাহিকতায় তার দ্বিতীয় বইটি “চক্ষে আমার তৃষ্ণা” প্রকাশিত হয়। সফলতার পথে অগ্রসর হওয়া এই লেখিকার জন্ম শরিয়তপুর জেলায়, কিন্তু বেড়ে ওঠা ও সপরিবারে বাস করেন গাজীপুরে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন