উপন্যাস        :         নিবেদিতা
লেখিকা        :          মুন্নি আক্তার প্রিয়া
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ১০ই মে, ২০২৪ ইং

লেখিকা মুন্নি আক্তার প্রিয়ার “নিবেদিতা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি  ২০২৪ সালের ১০ই মে থেকে লেখা শুরু করেছেন। 
নিবেদিতা || মুন্নি আক্তার প্রিয়া
নিবেদিতা || মুন্নি আক্তার প্রিয়া

২০ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

নিবেদিতা || মুন্নি আক্তার প্রিয়া (পর্ব - ২১)

(তৃতীয় পরিচ্ছেদ)
আকাশে আজ মেঘ করেছে। বৃষ্টি নামবে নামবে ভাব। সময় যায়, অপেক্ষার প্রহর আর শেষ হয় না। সূবর্ণলতা এবং মৌটুসী প্রায় এক ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছে বৃষ্টি আসার। মৌটুসীর সাথে সূবর্ণলতার বেশ ভাব হয়েছে। সে কয়েকদিন ধরেই মিদহাদদের বাড়িতে গেস্ট হিসেবে থাকছে। প্রথমে ভেবেছিল হয়তো বোরিং লাগবে। কিন্তু মৌটুসীর সঙ্গ পেয়ে বোর তো হবে দূরের কথা, সময় যে কোনদিক দিয়ে চলে যায় সে নিজেও জানে না।
অধৈর্য ও বিরক্ত হয়ে সূবর্ণলতা বলল,
"ধুর ছাই! বৃষ্টি বোধ হয় আসবে না। চলো নিচে যাই।"
মৌটুসীরও ভীষণ মন খারাপ হয়ে গেল। মাকে কত বলেকয়ে আজ বৃষ্টিতে ভেজার জন্য রাজি করিয়েছিল। অথচ বৃষ্টিই কিনা শেষমেশ এভাবে ধোঁকা দিল? সে মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে বলল,
"তাই তো মনে হচ্ছে। চলো চলেই যাই।"
ছাদ থেকে নিচে নামার মুহূর্তে মিদহাদের সঙ্গে সিঁড়িতে দেখা হয়ে গেল। আজকাল তাকে ভীষণ উদাস ও বিষন্ন দেখায়। সেই হাসি-খুশি, প্রাণোচ্ছল স্বভাবটা আর নেই। মিদহাদকে দেখে মৌটুসী বলল,
"ভাই, ছাদে যাচ্ছ? লাভ নেই।"
মিদহাদ ভ্রু কুঁচকে বলল,
"কেন? কী হয়েছে?"
"হয়নি। আর হবেও না।"
"আরে কীসের কথা বলছিস?"
"বৃষ্টির কথা বলছি। বৃষ্টি হবে না। তাও তুমি ছাদে যেও না। তোমাকে দেখে বৃষ্টি আপা না আসলেও বজ্রপাত ভাই চলে আসতে পারে।"
"ফাজিল!"
বলে মৌটুসীকে ধরতে গেলেই মৌটুসী দৌঁড়ে আবার ছাদে চলে গেল। ওকে ধরতে পেছন পেছন মিদহাদও দৌঁড়ও দিয়েছে। সুবর্ণলতা একা একা সিঁড়িতে কী করবে বুঝতে পারছে না। ছাদে যাবে আবার নাকি একাই নিচে নেমে যাবে সেটা নিয়েও দোটানা কাজ করছে। কিন্তু ওদের ভাই-বোনের টম এন্ড জেরির দুষ্টু-মিষ্টি ঝগড়াও মিস করতে ইচ্ছে করল না। তাই সে ছাদেই গেল। গিয়ে দেখল মিদহাদ মৌটুসীর দুইহাত চেপে ধরেছে। সুবর্ণলতাকে দেখেই মৌটুসী চিৎকার করে বলল,
"আপু, আপু হেল্প মি!"
সুবর্ণলতাকে দ্বিধান্বিত দেখাল। সে মিদহাদের হাত থেকে মৌটুসীকে কীভাবে ছাড়াবে? তবে তাকে কিছু করতে হলো না। মিদহাদ নিজেই মৌটুসীকে ছেড়ে দিয়ে বলল,
"আর যদি দেখেছি আমার সাথে ফাইজলামি করতে!"
দৌঁড়ে হয়তো হয়রান হয়ে গেছে মৌটুসী। সে ফ্লোরে বসে পড়ল। গাল ফুলিয়ে বলল,
"একবার শুধু ভাবি আসুক। তারপর দেইখো কী করি?"
"কী করবি?"
"আগে আসুক না! ভাবি-ননোদ মিলে ডাবল শক্তি নিয়ে তোমাকে অ্যা'টা'ক করব দেখে নিও।"
মিদহাদ ফিচেল হাসল। ওদের দুই ভাই-বোনের ঝগড়া দেখে হাসছে সূবর্ণলতা। মৌটুসী বলল,
"ওভাবে হাসলে কেন? মশকরা মনে হচ্ছে? সূবর্ণ আপু, তুমি কিন্তু সাক্ষী রইলে।"
সূবর্ণলতা বিস্ময় নিয়ে বলল,
"মাঝখানে আবার আমি কেন? আমি কীসের সাক্ষী হবো?"
"এখানে তুমি আর গাছ ছাড়া তো কিছু নেই। এখন গাছ তো আর জবানবন্দি দিতে পারবে না। কিন্তু তুমি পারবে। তাই তোমাকেই সাক্ষী রাখলাম। বিয়ের পর ভাইয়া বাঘ থেকে কেমন বিড়াল হয় সেটার সাক্ষী।"
সুবর্ণলতা হাসল। বলল,
"ঠিক আছে।"
মৌটুসী বসে আছে এখনো। সুবর্ণলতা নিরবতা কাটাতে মিদহাদকে জিজ্ঞেস করল,
"অফিসে যাননি আজ?"
মিদহাদ রেলিঙের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। প্রশ্ন শুনে বলল,
"না। ছুটি নিয়েছি।"
"ওহ। শরীর খারাপ নাকি মন?"
মিদহাদ ম্লান হেসে বলল,
"কেন?"
"এমনিই জানতে চাইলাম। আজকাল আপনাকে উদাস লাগে। কেন বলুন তো? যদিও খুব বেশিদিন আপনাকে দেখিনি বা চিনিনা।"
"কিছু কষ্ট যেমন থাকে কাউকে দেখানো যায় না, ঠিক তেমনই কিছু কথা থাকে যা কাউকে বলা যায় না।"
এ কথার পিঠে সূবর্ণলতা বলার মতো আর কোনো কথা খুঁজে পেল না। কেবল ঠোঁট টিপে জোরপূর্বক একটু হাসার চেষ্টা করল। যদিও এটাকে মোটেও হাসি বলা যায় না। উপরন্তু তাকে অপ্রস্তুত দেখাচ্ছিল।
________
নিবেদিতা বেকারি থেকে কাজ শেষ করে বের হয়ে দেখল বাইরের বেঞ্চে নির্ণয় বসে আছে। নিবেদিতাকে দেখেই এগিয়ে এলো সে।
"আপনি এখানে?" হেসে জানতে চাইল নিবেদিতা।
নির্ণয় নিবেদিতার পাশপাশি হাঁটতে হাঁটতে হাত ধরল। আঙুলের মাঝে আঙুল মিশিয়ে বলল,
"কেন? আমার আসতে বারণ?"
"ঠিক তা নয়। অফিস শেষ করে বাসায় রেস্ট নিতে পারেন।"
"রেস্ট করার জন্য সারা রাত পড়ে আছে। কিন্তু তোমাকে তো আর পরে পাব না।"
"আজকাল দেখি চুপ থাকা ছেলেটা বেশ কথা বলতে শিখে গেছে।"
"সবই তোমার কৃতিত্ব।"
নিবেদিতা অবাক হয়ে বলল,
"কী! আমার? আমি আবার কী করলাম?"
"এইযে তোমাকে ভালোবাসতে বাধ্য করেছ। মায়ায় ফেলেছ। তোমায় ভালোবেসেই তো আজ আমি এমন।"
"আমি মোটেও ভালোবাসতে বাধ্য করিনি। উলটো নিরবে দূরে সরে এসেছিলাম।"
নির্ণয় দাঁড়িয়ে পড়ল। যার দরুণ হাতে টান পড়ল নিবেদিতার। সে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে পিছু ফিরে নির্ণয়ের দিকে তাকাল। নির্ণয় শীতল কণ্ঠে শুধাল,
"তুমি কীভাবে পারলে দূরদেশে চলে আসতে? তোমার কি একটুও কষ্ট হয়নি আমার জন্য?"
"কোথায় যেন পড়েছিলাম, 'যখন মায়া বাড়িয়ে কোনো লাভ হয় না, তখন মায়া কাটানো শিখতে হয়।' এজন্যই ভেবেছিলাম দূরে সরে আসলে হয়তো আপনাকে ভুলতে পারব।"
"তাই বলে এতটাই দূরে যে দেশ ছেড়ে চলে আসলে?"
"তাতে আর বিশেষ লাভ কী হলো? যার জন্য দেশ ছেড়েছিলাম, সে তো এখন আমার চোখের সামনেই।"
"চলে যাব?"
"যেতে পারবেন?"
"পারব। তবে তোমাকে সাথে নিয়েই। একা এসেছি। কিন্তু যাব দোকা।"
নিবেদিতা হেসে বলল,
"এখন তাহলে আমরা হাঁটি?"
"ওহ, হ্যাঁ। চলো।"
মেট্রোতে উঠে দুজন পাশাপাশি বসল। নিবেদিতাকে ভীষণ ক্লান্ত দেখাচ্ছিল। নির্ণয় ওর মাথা নিজের কাঁধের ওপর রেখে নিবেদিতার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিল। মনে মনে হাসল নিবেদিতা। অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে নির্ণয় ডাকল,
"নিবেদিতা?"
নিবেদিতা চোখ বন্ধ করে বসে ছিল। তার ভীষণ ঘুম পাচ্ছে। সে জড়ানো কণ্ঠে বলল,
"হু?"
"মিদহাদের সাথে আর কথা হয়েছিল?"
নিবেদিতা চোখ মেলে তাকাল। দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল,
"না। কেন?"
"এমনিই। আ'ম সরি এগেইন।"
"সরি কেন?"
"সেদিন তোমাকে অনেক হার্ট করে ফেলেছিলাম। আসলে মিদহাদ তোমাকে এমনভাবে প্রাণ বলে ডেকেছিল যে, আমি ভেবেছিলাম তোমরা রিলেশনশিপে আছো।"
নিবেদিতা নির্ণয়ের কাঁধ থেকে মাথা উঠিয়ে হাত জড়িয়ে ধরে বলল,
"আমাদের সমস্যাটা এখানেই। আমরা যা শুনি, যা দেখি তৎক্ষণাৎ সেটাই বিশ্বাস করে ফেলি। অথচ আমাদের জানার এবং দেখার পেছনেও অজানা কোনো গল্প থাকতে পারে। আর উনি আমাকে আরো আগে থেকেই প্রাণ বলে ডাকেন।"
"কিন্তু কেন?"
"নিবেদিতা নাকি অনেক বড়ো নাম। তার এত বড়ো নাম ডাকতে ইচ্ছে করে না। এজন্য।"
"একটা কথা বলি?"
"শিওর।"
"বাই এনি চান্স, মিদহাদ কি তোমাকে পছন্দ করে কিংবা ভালোবাসে এমন কিছু?"
"আরে না! কী বলেন এসব? সে এমন না। বলতে পারেন সে একজন ভালো শুভাকাঙ্ক্ষী এবং খুব ভালো মন-মানসিকতার একজন মানুষ।"
নির্ণয় ছোটো করে বলল,
"হু।"
তার ভেতরকার মন বলছে নিবেদিতা না জানলেও সে জানে যে, মিদহাদ নিবেদিতাকে ভালোবাসে। আবার কে জানে তার জানাতেও হয়তো কোনো ভুল থাকতে পারে।
ওরা মেট্রো থেকে নেমে এবার বাড়ির পথে হাঁটা ধরল। নিবেদিতা নির্ণয়ের হাত ধরে রেখেছে। নির্ণয় বলল,
"ঐ পলের থেকে পারলে একটু দূরে দূরে থেকো তো।"
"কেন? সে আবার কী করেছে?"
"কিছু করেনি। কিন্তু তোমার পাশে তাকে আমার পছন্দ না। হিংসা লাগে।"
নিবেদিতা বিস্মিয় নিয়ে শুধাল,
"আপনি হিংসাও করতে পারেন?"
"উফ নিবেদিতা! মজা নিও না তো। হিংসা লাগলে আমি কী করব? আমি কি এমন ছিলাম? তোমার জন্যই তো হয়েছি।"
"হু, হু সব দোষ এখন নিবেদিতা ঘোষ।"
বাড়ির সামনে এসে নির্ণয় বলল,
"এত তাড়াতাড়ি চলে এলাম!"
"তাড়াতাড়ি? আমি একা আসলে আরো দ্রুত আসি। আজ তো অনেক সময় নিয়ে আস্তে হেঁটেছি।"
"তবুও মনে হচ্ছে সময় অনেক দ্রুত চলে গেল। অবশ্য তুমি পাশে থাকলে সময় কোনদিক যায় বলা মুশকিল।"
"আরে বাহ্! আপনি যে এত রোমান্টিক তা তো জানতাম না। আর আমি কিনা ভাবতাম আপনি কাঠখোট্টা স্বভাবের!"
"ভুল ভাবোনি আগে। আমি কাঠখোট্টা স্বভাবেরই। তবে সেটা তুমি ছাড়া পুরো দুনিয়ার কাছে। আর রোমান্টিকের কতটুকুই বা দেখলে? বিয়েটা হোক শুধু।"
নিবেদিতা লজ্জা পেয়ে গেল এই কথায়। এই ছেলে তো প্রেমে পড়ে এখন লাগামহীন কথাবার্তাও বলা শিখে গিয়েছে। নাকি সে আগে থেকেই এমন, নিবেদিতা তাকে ভুল চিনত? অবশ্য আগে তো আর নিবেদিতার সাথে তার প্রণয়ের সম্পর্ক ছিল না। এখন সে নির্ণয়ের প্রেমিকা। সূতরাং এজন্যই রোমান্টিসিজম রূপটা এখন বের হচ্ছে। সে লজ্জা এড়িয়ে যেতে বলল,
"আচ্ছা এখন তাহলে বাড়িতে যান। আমিও ভেতরে যাচ্ছি।"
"দাঁড়াও।"
নিবেদিতা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাল।
"ঐ দেখো চাঁদ।"
আঙুল দিয়ে আকাশের দিকে ইশারা করে দেখাল নির্ণয়। নিবেদিতা আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল,
"কই? আমি তো দেখ..."
কথা সম্পূর্ণ করার আগেই নির্ণয় নিবেদিতার গালে চুমু দিয়ে বলল,
"আকাশের চাঁদ আজ মেঘের আড়ালে। আমার চাঁদ চোখের সামনে। ভালোবাসি তোমাকে নিবেদিতা।"

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

 Follow Now Our Google News

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

২২ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
“মুন্নি আক্তার প্রিয়া” বাল্যকাল থেকেই কল্পনা ও সাহিত্য বিলাসী। লেখা লেখিটা মূলত শখের বশে শুরু করলেও, পরবর্তীতে তা একসময় নেশায় পরিণত হয় তার। লেখালেখির পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান ও অনুপ্রেরণা পেয়েছেন ফেসবুকের ফলোয়ারদের থেকে। তাদের ভালোবাসা ও অনুপ্রেরণাই তাকে সাহিত্য জগতে টিকে থাকার ক্ষেত্রে অদম্য সাহস ও ইচ্ছে শক্তি বাড়িয়ে দিয়েছে। এইভাবেই সাহিত্য জগতে তার প্রথম “সাঁঝের কন্যা” বইটি প্রকাশিত হয়। এর মাধ্যমেই প্রকাশণা জগতে পদার্পন। 
তার লেখা প্রথম বইটি ব্যাপক সাড়া ও সফলতার ধারাবাহিকতায় তার দ্বিতীয় বইটি “চক্ষে আমার তৃষ্ণা” প্রকাশিত হয়। সফলতার পথে অগ্রসর হওয়া এই লেখিকার জন্ম শরিয়তপুর জেলায়, কিন্তু বেড়ে ওঠা ও সপরিবারে বাস করেন গাজীপুরে।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন