উপন্যাস        :         একটি নির্জন প্রহর চাই
লেখিকা         :         মৌসুমি আক্তার মৌ
গ্রন্থ               :          একটি নির্জন প্রহর চাই
প্রকাশনা       :          নবকথন প্রকাশনী 
প্রকাশকাল   :          বইমেলা ২০২৩
রচনাকাল     :         ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ইং

লেখিকা মৌসুমি আক্তার মৌ’র “একটি নির্জন প্রহর চাই” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি তার ফেসবুক পেজে ২০২২ সালের ৫ সেপ্টেম্বর থেকে লেখা শুরু করেছেন।
একটি নির্জন প্রহর চাই || মৌসুমি আক্তার মৌ
একটি নির্জন প্রহর চাই || মৌসুমি আক্তার মৌ 

৩য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

একটি নির্জন প্রহর চাই || মৌসুমি আক্তার মৌ (পর্ব - ৪)


উদীয়মান সূর্যের মোলায়েম আলো চোখের উপর পড়তেই ঘুম ভেঙে গেলো আমার।চোখের উপর হাত দিয়ে পিট পিট করে তাকালাম।সূর্যের বেগুনি রস্মির দিকে চোখ বোলালাম,আলোটা এ ঘরের পেছনের নারিকেল পাতার ফাঁক দিয়ে জানালা ভেদ করে সোজা এসে আমার মুখের উপর পড়েছে।মুহুর্তের মাঝেই বিরক্ত হলাম আমি।এই আলোটা চোখের উপর না পড়লে তো আর ঘুমটা ভাঙত না।মুহুর্তের মাঝে মুখের অদলে তীব্র বিরক্ত নিয়ে উচ্চারণ করলাম,
'কোন বেয়াক্কেল সাজ সকালে এইভাবে জানালা খুলে দিয়েছে।'
কথাটা বলতেই আবার ও ভড়কে গেলাম।চোখ উন্মুক্ত করে তাকিয়ে দেখি হ্যান্ডসাম রোশান স্যার তাকিয়ে আছেন।সাজ সকালে এমন হাই ভোল্টেজে ক্রাশ ট্রাশ না খেলেও তো পারতাম।পরণে সাদা টাওয়াল, গায়ে সাদা শার্ট,ভেজা চুল গুলো এলোমেলো হয়ে আছে। উনি বোধহয় কিছু একটা খুজছেন।আলমারি তছনছ করে ফেলছেন খুজতে খুজতে।আমাকে বেয়াক্কেল বলতে শুনে আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললেন,
'এ বাড়িতে তুমি ছাড়া বেয়াক্কেল কেউ নেই।কাল রাতে থু থু ফেলতে গিয়ে জানালা খুলেছিলে মনে আছে।'
'আপনি দিয়ে দেন নি ক্যানো?'
'ভাজ্ঞিস দেইনি!তাহলে কষ্ট করে তোমাকে ডাকা লাগত এখন।'
'তাতে কি মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যেতো।'
উনি আমার কথার উত্তর না দিয়ে আবার ও আলমারিতে খোজাখুজি চালিয়ে যাচ্ছেন।খুব মনোযোগ সহকারে খুজছেন।খুজে না পেয়ে আবার বিরক্ত ও হচ্ছেন।কি খুজছেন উনি।টাওয়াল পরা নিশ্চয়ই প্যান্ট খুজছেন।কিন্তু প্যান্ট তো বিছানায় রেখেছেন নিশ্চয়ই ওটা পড়বেন।তাহলে কি খুজে চলেছেন।ওহ মাই গড আন্ডারওয়্যার খুজছেন নিশ্চয়ই। ক্যানো ভাই অভাব নেইতো আরো তো কত গুলা আছে ওগুলো পরে নিলেই তো হয়।দেখি একটু খুচিয়ে নেই উনাকে।
'স্যার কিছু খুজছেন আপনি।'
'হু।'
'কি খুজছেন।'
'না কিছুনা।'
'বলুন না স্যার কি।'
'কাইন্ডলি ডোন্ট কল মি স্যার।'
'তাহলে কি বলে ডাকব।'
'তোমাকে কি আমি ডাকতে বলেছি।এ বাড়ির অন্য কারো কানে গেলে দৃষ্টিকটু শোনাবে খুব।'
'দেখুন আমি শাবানা আর ববিতার মতো হ্যাগো,ওগো করতে পারব না।তাছাড়া আপনার বয়স অনেক বেশী।এত বয়স্ক লোক কে তো তুমিও বলা যায় না।শিমুল স্যার এর বয়স তাও কম আছে।উনাকে কিন্তু বাচ্চা বাচ্চা লাগে।'
উনি এবার ভ্রু সম্পূর্ণ কুচকে বিস্ময়ের সাথে জিজ্ঞেস করলেন,
'শিমুল স্যার কে বাচ্চা বাচ্চা লাগে আর আমাকে বুইড়া লাগে?'
'জি স্যার মনের কথা বুঝে গিয়েছেন।'
'শিমুল স্যার আমার দুই বছর সিনিয়র। '
'দেখে তো বোঝা যায় না।শিমুল স্যার আর আমাকে প্রায় সমবয়সী লাগে।আর আপনাকে আমার ছোট কাকার বয়সী লাগে।'
'ওহ আচ্ছা!তা তোমার ছোট কাকার বয়স কত?'
'ছোট কাকা নেই তো।থাকলে আপনারই বয়সী হতো।'
'নেই মানে? '
'মানে আমার দাদি আর দাদা খুব সুন্দরভাবে ফ্যামিলি প্লানিং করেছিলো।আমার বাবারজন্মের পরে তার আর সন্তান হয়নি।তবে শুনেছি আমার বাবার আগে দাদী ১৪ বছর প্রেগনেন্ট ছিলো।'
'১৪ বছর প্রেগন্যান্ট ছিলো মানে?'
'আল্লাহ বোঝেন নি।খুব সহজ হিসাব আমার দাদীর ১৪ টা সন্তান মারা গিয়েছে এর আগে।তাহলে কি হলো ১৪ বছর প্রেগন্যান্ট ছিলো।'
'এটা হলো ফ্যামিলি প্লানিং এর নমুনা।শিহরিত হলাম শুনে।'
'মানে বাবার জন্মের পরে আরকি ফ্যামিলি প্লানিং করেছিলো।'
'তাহলে আমি তোমার ছোট কাকার বয়সী কিভাবে হলাম।'
'দেখুন আপনাকে আমার বাবার বয়সী লাগছে না।তার চেয়ে আরো খানিক টা কম আপনার বয়স।তার মানে বাবার খানিক টা ছোট বয়সে কোনো ভাই থাকলে তার বয়সী হতেন।'
'হাউ ইন্টারেস্টিং লজিক।তোমার আপুও কি বুড়ি।'
'মোটেও না।আমার আপু আমার থেকে মাত্র ৬ বছরের বড়।'
'আমি তোমার আপুর ইয়ারমেট। '
মনে মনে হেসে দিয়ে মনে মনেই বললাম,
আমি জানি কিন্তু ইচ্ছা করেই বললাম।আপনাকে কলেজের সব থেকে কম বয়সী স্যার লাগে।বাবাহ মানুষ বয়স নিয়ে এত সিরিয়াস হয়।এসব কথার ইতি টেনে আবার ও বললাম,
'কি খুজছেন বললেন না।'
'তোমাকে বলে অযথা কোনো লাভ নেই।'
'আমাকে বলুন আপনার চোখে হয়ত পড়ছেনা কিন্তু আমার চোখেও তো পড়তে পারে।'
'তুমি কাল রাতে এসছো এ বাড়িতে। কোথায় কি আছে কিছুই কি জানো?'
'জানিনা,জেনে নিবো।'
'চেঞ্জ করে নিয়ে বাইরে যাও ইমিডিয়েটলি। সবাই নতুন বউ এর মুখ দেখতে বেপরওয়া হয়ে আছে।'
ওয়াশ রুমে গিয়ে শাড়ি চেঞ্জ করে, মাথার চুল ঠিক করে ঘরের বাইরে গেলাম।উঠানে রোশান স্যার আর আমার দাদু দুজনে বসে খোশ গল্প করছে সাথে রোশান স্যারের বাবা ও আছেন সাথে একটা পিচ্চি ওর নাম রোহান।ও ওশানের ই ছেলে।আশে পাশে আর কাউকে দেখতে পাচ্ছিনা।এরই মাঝে তরী শাড়ির আঁচলে হাতে লাগা তেল হলুদ মুছতে মুছতে এগিয়ে এলো।আমাকে দেখেই হেসে বলল,
"ঘুম ভাঙল আপনার ভাবি।'
'এই দাঁড়াও!দাঁড়াও।আমাকে আপনি আপনি করছো কেনো তুমি।আমাকে অত সম্মান টম্মান করা লাগবেনা বুঝলে।আর শোনো যেহেতু তুমি আমার জা তাই আমাদের এক সাথেই থাকা লাগবে, একটা বিষয়ে ক্লিয়ার করে দেই তোমাকে।আমি কিন্তু একটু ছটফটে মেয়ে।দুই মিনিটে সবার সাথে মিশে যেতে পারি।এমন ভাবে মিশি যেনো বহুকাল আগে থেকে চেনা।আমার মনে কোনো হিংসা অহংকার নেই বুঝলে।একদম ফ্রি মাইন্ড আমি এবং খোলা মনের।আমার মন ও খুব ভালো বুঝলে।আমাকে আবার বাচাল ভেবোনা।যারা সহযে মানুষের সাথে মিশে যেতে পারে তারা একটু বেশী কথা বলে।যারা বেশী কথা বলে তাদের মন ও খুব সহজ সরল হয়।বাট কেউ যদি ভাব দেখায় আমিও তিনগুন ভাব দেখায়।বেশি ভাবওয়ালা মানুষ আমার পছন্দ নয়।যেমন তোমার ভাসুর জি।অতিরিক্ত ভাব বুজলে।'
আমার কথা শুনে তরী মুচকি হাসল।
হেসে বলল, 'আসলেই আপনার মন খুব ভালো ভাবি।'
'আবার ভাবি,আর একবার ও আপনি আপনি করবেনা বুঝলে।কেমন পর পর লাগে শুনতে।'
'বড় জা'কে আপনি বলতে হয়,না হলে খুব খারাপ শোনায়।'
'এই চুপ যাও তো।আমাকে তুমি ডাকবে সারাহ বুঝলে বেবি।'
'বেবি।'
'হ, ভালবেসে ডাকলাম।বান্ধবীদের ডাকি।'
তরী আবার ও মুচকি হাসল।মেয়েটাকে হাসানোর চেষ্টা করছি আমি।দেখে মনে হয় অনেক চাপা আর্তনাদ লুকিয়ে আছে।কাল রাতে যা ঘটল।কৌতুহলী মন তার জীবন বৃত্তান্ত জানতে চাইছে এখনি।কিন্তু একদিনেই কারো কাছে ব্যাক্তিগত কথা জিজ্ঞেস করা যায়না।তাছাড়া ও বলবেনা।তবে প্রমিস আমি তরীর জীবনের সব সমস্যার সমাধান করে দিবো।
তরী এবার বলল,
'গোসল করবে না।'
'আমি খুব অগোছালো মেয়ে।নায়িকাদের মতো সকালে ভোরে উঠে গোসল করিনা।আমি গোসল করি বিকাল চার টা পাঁচটা ওসবের ঠিক নেই।'
'সে গোসল আর এ গোসল এক নয়। '
'কোন গোসল।'
'কাল রাতে প্রেম ট্রেম হয়নি।'
'হাহাহা কাল রাতে যা হয়েছে তা শুনতে চেও না।একদিন দেখবে তোমার জা বাসর ঘরের দূর্দান্ত ঘটনার জন্য নোবেল পেয়েছে।'
'ক্যানো কি হয়েছে।'
'যায় হোক,ওসব গোসল টোসল এর ব্যাপার কিছুই ঘটেনি।কোনদিন ঘটার চান্স ও নেই।'
'আল্লাহ!কেনো?'
'উনি আমার টিচার হয়,সেটা বাসর ঘরে ঢুকে বুঝলাম।'
'কিহ!এতো দারুণ মিরাক্কেল।'
'বাট তোমার চুল ভেজা কেনো?রাতে কি বর আদর টাদর করল।মাফ টাফ চাইলো।'
'ওটাকে আদর বলে কিনা জানিনা। তার যখন শারীরিক ক্ষুদা পায় সে কাছে আসে।আমার কেমন লাগছে জানতেও চায়না।'
'কেনো?'
'পরে বলব তোমাকে।এ বাড়িতে থাকো বুঝে যাবে সব।সবাই নতুন বউ এর জন্য অনেক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছে।তাই তোমাকে ডাকতে এলাম।ওদিকে আমার অনেক কাজ।৩ কেজি বাইন মাছ আর দুই কেজি ছোট মাছ এনেছে কুটতে হবে।'
'এত মাছ কে কুটবে।'
'এসব আমাকেই করা লাগে।'
এরই মাঝে রোশান স্যার হনহন করে বেরিয়ে গেলেন।যাওয়ার সময় আমার গায়ে মৃদু বাতাস লাগল।তরীকে বললাম,
'তরী এক মিনিট আমি আসছি, যাবো আর আসব।'
ঘরে গিয়ে ভাবলাম রোশান স্যার যখন বেরিয়ে গিয়েছে তাহলে ওনার ওই জিনিস টা এখন জানালা দিয়ে ফেলে দেই।না হলে আরেক কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে উনি বুঝতে পারলে।জানালা দিয়ে উঁকি মেরে দেখলাম বিশাল এক কুয়ো।এবার আরো নিশ্চিন্ত হলাম।আন্ডারওয়্যার টা কে বললাম রেস্ট ইন পিচ ব্রো বলেই জানালা দিয়ে ছুড়ে মারলাম।সাথে সাথে ঘটল আরেক ভয়ানক ঘটনা।আমার হাতের বল কি সব পড়ে গেলো।ছুড়ে মারলাম বেশী দুর গেলো না। এটা গিয়ে রোশান স্যার এর মুখে পড়ল।উনাকে এক্ষুনি ঘরের পেছনে আসতে হলো।আমি বুঝলাম না আমার সাথে এটা হচ্ছে কি।রোশান স্যার আন্ডারওয়ার টা হাতে নিয়ে উচু করে কি অদ্ভুত চাহনিতে তাকালেন আমার দিকে।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

৫ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


মৌসুুমি আক্তার মৌ’র গল্প ও উপন্যাস:

নয়নে লাগিল নেশাআরশি



লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা মৌসুমি আক্তার মৌ-এর নড়াইলের ছোট্ট শহরে জন্ম আর সেখানেই বেড়ে ওঠা। তিনি নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে হিসাববিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করে বর্তমানে এম.এম. কলেজ থেকে এমবিএ করছেন। এর পাশাপাশি তিনি হেল্থ এন্ড ফ্যামিলি প্ল্যানিং-এ সরকারি চাকরি করছেন নিজ জেলাতেই। লেখিকার ছোটোবেলা থেকেই গল্প, উপন্যাসের বই পড়ার প্রতি প্রবল নেশা ছিল। পরিবার থেকে একাডেমিক বইয়ের বাহিরে অন্য কোনো বই অনুমোদন না থাকায় বন্ধুদের নিকট থেকে বইসংগ্রহ করে পড়তেন। তাঁদের ভয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে পড়তেন, এমনকি পাঠ্য বইয়ের ভাঁজে বই নিয়েও পড়তেন। আর বই পড়ার এই নেশা বা প্রেম থেকেই লেখালেখির প্রতি ঝোঁক সৃষ্টি হয়। ফেসবুকে অসংখ্য গল্প, উপন্যাসের পাশাপাশি ছাপাবই ও ইবুক সেক্টরেও তিনি কাজ করছেন। লেখিকার প্রথম বই "তুমি নামক প্রিয় অসুখ" ২০২২ সালে প্রকাশিত হয়। বইটি ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছিল।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন