উপন্যাস        :         রোদ শুভ্রর প্রেমকথন
লেখিকা        :          নৌশিন আহমেদ রোদেলা
গ্রন্থ             :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ১১ নভেম্বর, ২০২০ ইং

লেখিকা নৌশিন আহমেদ রোদেলার “রোদ শুভ্রর প্রেমকথন” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি তার ফেসবুক পেজে ২০২০ সালের ১১ নভেম্বর থেকে লেখা শুরু করেছেন।
রোদ শুভ্রর প্রেমকথন || নৌশিন আহমেদ রোদেলা
রোদ শুভ্রর প্রেমকথন || নৌশিন আহমেদ রোদেলা


১১ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

রোদ শুভ্রর প্রেমকথন || নৌশিন আহমেদ রোদেলা (পর্ব - ১২)


ইফতার শেষে শুভ্র ভাইয়ের রুম গুছাচ্ছিলাম। মামানি উনাকে বাইরে কিছু কিনতে পাঠিয়েছেন। বুক সেল্ফের বইগুলো গুছানো যখন শেষের দিকে ঠিক তখনই কানে এলো ফোনের একটা টোন। টোনটা কানে যেতেই ভ্রু কুঁচকে পেছন ফিরে তাকালাম। বিছানার উপর শুভ্র ভাইয়ার ফোন। কৌতূহল নিয়ে স্ক্রিনের দিকে তাকাতেই চোখে পড়লো "A message from Anika" উনার পাসওয়ার্ড জানা ছিলো আমার। কয়েকমুহূর্ত দ্বিধাদ্বন্দে ভুগে ম্যাসেজটা সিন করেই ফেললাম আমি। ম্যাসেজটা দেখে কেমন একটা অনুভূতি হচ্ছিলো আমার। কেমন অনুভূতি হচ্ছিলো জানি না। শুধু মনে হচ্ছিলো এই মুহূর্তে শুভ্র ভাইকে মেরে ফেলি আমি। মাত্র কয়েকটা লাইনের ম্যাসেজ ছিলো ওটা কিন্তু এ কটা লাইনই অনেক কিছু বুঝিয়ে দিয়েছিলো আমায়। সেখানে লেখা ছিলো,
"
❤
অনেকটা বছর কাটিয়ে দিলাম একসাথে। দেখতে দেখতে পেরিয়ে গেলো পুরো ভার্সিটি লাইফ। তোমার হাতে হাত রেখে এতোটা দিন পাড়ি দিয়েছি ভাবতেই অবাক লাগে এখন। তোমার দেওয়া শিউলি ফুলের মালা খোপায় জড়িয়ে অনভ্যস্ত হাতে শাড়ি পড়ে কতটা অজানা পথ পাড়ি দিয়েছি আমরা। এখনও তুমি হাত ধরলে কেঁপে উঠি আমি। মনে হয় এটাই সেই প্রথম স্পর্শ।। দিনগুলো ধীরে ধীরে স্মৃতিগুলোকে পুরাতন করে তুললেও ভালোবাসাটাকে কিন্তু আরো গভীর করে তুলছে। তাই এতো বছর পরও কতো শিহরণ নিয়ে বলছি তোমায়। " ভালোবাসি, খুব ভালোবাসি শুভি।"
ম্যাসেজটা পড়েই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম আমি। চোখ দুটো উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরছে এদিক সেদিক। চোখের পানি পড়তে যে মানা আমার। ফোনটা হাতে নিয়েই ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছি। হঠাৎই শুভ্র ভাইয়া রুমে ঢুকলেন। আমাকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললেন,
-- কি রে? এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?
কান্নায় চোখ ভেঙে আসছিলো আমার। তবু কন্ঠ পরিষ্কার করে ফোনটা বিছানায় ছুড়ে ফেলে শক্ত গলায় বলে উঠলাম আমি,
-- ঘর গুছাচ্ছিলাম শুভ্র ভাই।
কথাটা বলেই পাশ কাটিয়ে বুক সেল্ফের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। বাকি বইগুলোও তাড়াহুড়ো করে গুছাতে লাগলাম আমি। যেন কাজ ফুরালেই রেহাই আমার। এই লোকটাকে আমার এক মুহূর্ত সহ্য হচ্ছে না আর! এক সেকেন্ডের জন্যও না। উনি ফ্যানের সুইচ দিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লেন। ফোনটা হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে শুয়ে থেকে চট করে ওঠে বসে শীতল কন্ঠে ডাকলেন,
-- রোদ!
আমি কোনো কথা না বলে বই গুলো গুছানো শেষ করে বললাম,
-- উফফ, শেষ! আপনার ঘর গুছানো শেষ শুভ্র ভাই। এবার আসি আমি। দেরী হয়ে গেছে...বাসায় যাবো।
কথাটা বলে ঘুরে দাঁড়িয়ে দরজার দিকে পা বাড়াতেই খপ করে হাত ধরে ফেললেন উনি। করুণ গলায় বলে উঠলেন,
-- তুই আমার কথাটা শোন।
-- শুভ্র ভাই আমার দেরী হচ্ছে, হাত ছাড়ুন।
-- তততুই যেমনটা ভাবছিস তেমন কিছু নয়। আমি...
-- আপনার কাছে কোনো এক্সপ্লেইনেশন চাই নি আমি শুভ্র ভাই। আপনার লাইফে কে থাকবে আর কে থাকবে না সেটা নিতান্তই আপনার ব্যাপার। প্লিজ ছাড়ুন আমায়। আর হ্যা, ফোন টাচ করার জন্য সরি!
-- দেখ রোদ। তুই কিন্তু আমাকে ভুল বুঝছিস।
-- আশ্চর্য! আমি আপনাকে ভুল বুঝবো কেনো? ছাড়ুন তো...জাস্ট লিভ মি! আপনাকে আমার সহ্য হচ্ছে না। ছাড়ুন।
কথাটা বলে উনার হাতটা ছাড়িয়ে দরজার দিকে পা বাড়াতেই টেনে দরজার সাথে দাঁড় করিয়েই গালে বসালেন চড়। আমি হতভম্ব হয়ে উনার দিকে তাকালাম। মুহূর্তেই চোখদুটো টলমল করতে লাগলো জলে। না ব্যাথা নয়...এই কান্না তো লজ্জার! চরম লজ্জার! উনি দু'হাতে নিজের চুল খামচে ধরে জোড়ে শ্বাস টেনে কিছুটা শান্ত হয়ে আমার গালে হাত রেখে বলে উঠলেন,
-- সরি! কাঁদিস না প্লিজ। দরকার হলে আমায় দুটো মার তবু প্লিজ কাঁদিস না। সবসময় এত জেদ কেন করিস তুই? কখনো তো আমার কথাটা শোন।
আমি আচমকা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম উনাকে। আমাকে আবারও ধরার আগেই রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম আমি। ড্রয়িংরুমে যেতেই দেখা হলো মামানির সাথে। উনি অবাক চোখে বললেন,
-- কোথায় যাচ্ছিস? আর গালে ওমন লাল হয়ে আছে কেন?
-- বাসায় যাচ্ছি মামানি। এলার্জির সমস্যা হচ্ছে খুব। টেবলেট নিতে হবে। দেখো না গাল চুলকিয়ে লাল করে ফেলেছি। অন্য একদিন এসে থাকবো, আজ যাই।
-- একা যাবি নাকি? শুভ্রকে পাঠাই ও গিয়ে টেবলেট আনুক। তোর যেতে হবে না।
-- না মামানি। আমি বাসায় যাবো।
কথাটা বলে সামনে এগুতেই আমাকে আর মামানিকে অবাক করে দিয়ে আবারও হাত চেপে ধরলেন শুভ্র ভাই। মামানি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছেন। আমি রাগী চোখে তাকাতেই বলে উঠলেন উনি,
-- দেখ রোদ। ওর সাথে আমার সম্পর্কটা...
-- হাতটা ছাড়ুন শুভ্র ভাই।
-- রোদ প্লিজ।
-- আমি বাসায় যাবো শুভ্র ভাই। হাতটা ছাড়ুন। ( ঠান্ডা গলায়)
শুভ্র ভাই কি ভেবে মাথা নিচু করে হাতটা ছেড়ে দিলেন। হয়তো মামানিকে খেয়াল করেন নি এতোক্ষণ। আমি আর কিছু না বলে চুপচাপ বাসা থেকে বেরিয়ে গেলাম। চারদিকে জমাট অন্ধকার তারসাথে অন্ধকার আমার চোখে মুখেও। রাস্তায় পথচারী খুবই কম যেন, বিলুপ্ত প্রায় কোনো শহর। এই নিস্তব্ধতা বড্ড প্রয়োজন ছিলো আমার। বড্ড বেশিই প্রয়োজন। বাসায় এসেই দরজায় ছিটকানি টেনে শুয়ে পড়লাম আমি। সবকিছু ভেঙেচুড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে আমার। সেই ভাঙাচুরা আটকাতেই এই ভাঙাচোরা মন নিয়ে কাঁথার নিচে ঠাঁই নিলাম আমি। ফুঁপিয়ে কেঁদে কমিয়ে নিলাম এক আকাশ সমান কষ্ট। তারসাথে করে নিলাম আরো একটা প্রতীজ্ঞা! এ জীবনে আর উনার ধারে কাছে যাবো না আমি। কিছুতেই না।


আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

১৩ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


নৌশিন আহমেদ রোদেলা’র গল্প ও উপন্যাস:

লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা নৌশিন আহমেদ রোদেলা সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে তা অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হবে।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন