উপন্যাস : রোদ শুভ্রর প্রেমকথন
লেখিকা : নৌশিন আহমেদ রোদেলা
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১১ নভেম্বর, ২০২০ ইং
লেখিকা নৌশিন আহমেদ রোদেলার “রোদ শুভ্রর প্রেমকথন” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি তার ফেসবুক পেজে ২০২০ সালের ১১ নভেম্বর থেকে লেখা শুরু করেছেন।
রোদ শুভ্রর প্রেমকথন || নৌশিন আহমেদ রোদেলা
১৪ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
রোদ শুভ্রর প্রেমকথন || নৌশিন আহমেদ রোদেলা (পর্ব - ১৫)
--- তুই রোদ? ওই পুচকিটা? আই কান্ট বিলিভ!
উনার কথার কোনো উত্তরই খুঁজে পাচ্ছিলাম না আমি। মনে মনে শুধু একটা দোয়ায় করছিলাম এই লোকটা যেনো আমাদের বাড়িতে আর কখনো না আসে। কখনোই না। কিন্তু আমার দোয়াটা হয়তো আল্লাহর পছন্দ হয় নি। তাই সেই দোয়ার উল্টো প্রতিক্রিয়ায় হয়ে চলেছে প্রায় তিন বছর যাবৎ। যায় হোক, এবার গল্পে ফেরা যাক। আমি যখন মনে মনে দোয়া দুরুদ পড়ছিলাম আর মনে প্রাণে চাচ্ছিলাম শুভ্র ভাই নামক প্রাণীটা এই মুহূর্তে আমার সামনে থেকে সরে যাক, এখনই যাক! ঠিক তখনই আমার নরম হাতটা আরো শক্ত করে চেপে ধরে আমাকে আরেকটু কাছে দাঁড় করিয়ে মাথাটা নিচু করে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন উনি। আমি চোখ পিটপিট করে ভয়ে ভয়ে উনার দিকে তাকাতেই চোখ ফিরিয়ে নিয়ে, অন্যদিকে তাকিয়ে হেসে উঠেছিলেন উনি। উনার সেই হাসির কারণটা এখনও আমার অজানা। একটু হেসে নিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে উনার ঘন পাঁপড়িতে ঢাকা চোখদুটো আমার মুখের দিকে স্থির করে বলে উঠেছিলেন,
--- রোদু? ছোট বেলা তো তুই পেত্নী ছিলিই এখন আরও ভয়ানক ধরনের পেত্নী হয়ে গেছিস। আচ্ছা? তোর স্কুলের বাচ্চা বাচ্চা ছেলে মেয়েরা তোকে দেখে অজ্ঞান টজ্ঞান হয়ে যায় না? প্রাইমেরি স্কুলে পড়িস নাকি প্রাইভেটে?
উনার কথায় মুখ ফুলিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিলাম তখন। সেই মুহূর্তে উনার সাথে মোটেও কথা বলতে ইচ্ছে করছিলো না আমার। আপু তো বলতো ছোট বেলায় আমি অনেক কিউট ছিলাম। ছোট ছোট আঙ্গুল আর কিউট কিউট ফেইস ছিলো আমার। কই কেউ তো আমায় বলে নি আমি দেখতে পেত্মীর মতো ছিলাম। কথাগুলো ভাবতেই মন খারাপ হয়ে গিয়েছিলো আমার। হা হা হা... বাচ্চাদের মতো কি বাচ্চা বাচ্চা চিন্তায় না করতাম তখন। আমাকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে দু'বেনীর একটিতে শক্ত করে টান দিয়ে বলে উঠেছিলেন উনি,
--- ওই কি জিগ্যেস করেছি? উত্তর দে।
আমি তখন মনে মনে ভাবছিলাম, "এই বিশ্রী লোকটার মাথায় একটা ইট মারতে পারলে কতো শান্তি পেতাম আমি। সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে গেলেও বেশ হতো।" কিন্তু মুখে বলেছিলাম,
--- আমি প্রাইমারিতে পড়ি না। এবার ক্লাস টেনে পড়ি। ১৮ -তে এসএসসি দিবো।
আমার কথা শুনে উনি যেনো অবাকের চরম মাত্রায় পৌঁছে গিয়েছিলেন । কিছুক্ষণ চুপচাপ তাকিয়ে থেকে বিরবির করে বলে উঠেছিলেন ,
--- পার্ফেক্ট!
--- জি?
--- নাথিং। তুই যে এসএসসি দিবি এটা শুনে আমার মিচিউয়াল হার্ট অ্যাটাক চলে এসেছিলো। মাই গড, এতো তাড়াতাড়ি টেন -এ কি করে উঠে গেলি বল তো? আমি তো ভেবেছিলাম বড়জোড় সিক্সে পড়িস। দেখেও তো তাই মনে হয়। তোর মধ্যে কিশোরী টাইপ কোনো ন্যাচারও চোখে পড়ছে না রে যা চোখে পড়ছে সবই নিতান্ত বাচ্চাদের ন্যাচার। এনিওয়ে, এদিকে আয় তো....কি হলো? এদিকে আয়!
উনার ধমকে দু'কদম এগিয়ে গেলাম আমি। আমি এগিয়ে যেতেই দুই হাতে আমার গাল গুলো টেনে দিয়ে বলে উঠলেন,
--- যখন বাবু ছিলি তখন তো তোর গাল শক্ত ছিলোই এখন আরো বেশি শক্ত। এটা কোনো কথা?
উনার এমন বিহেভে আমি ঝটপট উনার থেকে কিছুটা দূরে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম। গালে হাত দিয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে ছিলাম শুধু। উনার কোনো কথায় তখন পছন্দ হচ্ছিলো না আমার। ইচ্ছে হচ্ছিল ছেলেটাকে ছাঁদ থেকে ধাক্কা দিয়ে এক ধাক্কায় আল্লাহর কাছে পাঠিয়ে দিই। বেয়াদব! উনি কিন্তু আমার চাহনী বা বিরক্তির ধারও ধারেন নি সেদিন। যদিও এখনও ধারেন না। উনার কথা হলো, "আমি যা চাই তা চাই এবং সেটা আমি পাবো। তোর সেটা ভালো লাগলো কি না তা আমার দেখার বিষয় নয়। " সেবারও ঠিক তাই করেছিলেন। আমার বিরক্তির ধার না ধেরে আমার একদম কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে মাথা নিচু করে কানের কাছে এসে বলেছিলেন,
--- ছোট বেলা তো কোলে উঠলে নামতে চাইতি না। এখনও কোলে উঠার শখ আছে নাকি রোদপাখি? থাকলে বলতে পারিস.... আমি কিন্তু মাইন্ড করবো না। তুই এখনও আমার কাছে সেই পুচকিটাই আছিস। কি উঠবি নাকি কোলে?
উনার কথায় তেলে বেগুনে জ্বলে উঠেছিলাম সেদিন। মনে মনে ইচ্ছেমতো গালি দিয়ে পাকাপোক্তভাবে বিশ্বাস করে নিয়েছিলাম যে " এই ছেলেটা আস্ত এক অসভ্য তারসাথে চরম বেয়াদব।" যে বিশ্বাসটা এখনও আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করে চলেছি উনি আসলেই একটা অসভ্য এবং চরম রকম বেয়াদব। সেদিনই প্রথম আপুর কথা অবিশ্বাস করেছিলাম আমি। কেননা আপু বলেছিলো, শুভ্র ভাইয়ের মতো ভদ্র ছেলে দুনিয়া ছেঁকেও দ্বিতীয়টি পাওয়া যাবে না। আমার মতে আপুর ধারনাটা ভুল ছিলো উনার মতো ভদ্র নয়, উনার মতো অভদ্র ছেলে দুনিয়া ছেঁকেও দ্বিতীয়টি পাওয়া যাবে না। সেদিন উনাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে সিঁড়ির দিকে হাঁটা দিয়েছিলাম। কিন্তু নেমে যেতে পারি নি। সেখানেও বাঁধ সেধেছিলেন উনি। ডানহাতটা শক্ত করে মুচরে দিয়ে বলেছিলেন,
--- আমাকে ধাক্কা দেওয়া সাহস কোথায় পেলি? আমার শশুড়বাড়ি আমাকেই ধাক্কা মারিস। মারবো এক চড়। আমি তোর বড় সো সম্মান দিয়ে চলাচল করবি, মনে থাকবে?
উত্তরে কাঁদোকাঁদো মুখে বলেছিলাম,
--- ছাড়ুন ব্যাথা লাগছে।
--- ব্যাথা লাগার জন্যই তো দিচ্ছি। ব্যাথা লাগবে সেটাই স্বাভাবিক। এনিওয়ে আবার আপনি করে বল তো....তোর মুখে আপনিটা চরম লাগে।
আমি শুধু টলমলে চোখে তাকিয়েছিলাম সেদিন। সেই হাত ব্যাথার কথাটা এখনও মনে আছে আমার। পুরো দশ দশটা দিন হাত নাড়াতে পারি নি আমি। কি ভয়াবহ ব্যাথা, উফফ! বলতে গেলে প্রথমবারের সাক্ষাৎ এ আমার হাওয়া টাইট করে দিয়েছিলেন উনি। সেদিন থেকেই আমাদের দু'জনের মাঝে এক অদৃশ্য প্রতিযোগীতা শুরু হয়ে যায়। কে কাকে জ্বালাতে পারে তার এক অদৃশ্য প্রতিযোগীতা। যা এখনও চলছে। আমাদের দুজন নিজের ইচ্ছে থেকেই দুই ধরনের হাতিয়ার বেছে নিয়েছিলাম । একজন শারিরীক তো একজন মানুষিক। আমার হাতিয়ারটা ছিলো মানুষিক আর এজ ইউজাল উনার জ্বালানোটা ছিলো শারিরীক!! আর উনাকে আপনি বলে ডাকার শুরুটাও সেখান থেকেই। হঠাৎ দেখা হওয়া এতোবড় মামাতো ভাইকে তুমি বলে ডাকা পসিবল ছিলো না তখন। এখন তো সেটা রীতিমতো ইম্পসিবল হয়ে দাঁড়িয়েছে। যায়হোক, সেদিনের পর থেকে আজ পর্যন্ত আমাকে জ্বালানোর নিউ নিউ টেকনিক আবিষ্কার করে চলেছেন উনি। যেখানে বছরে মাত্র এক থেকে দু'বার বাড়ি ফিরতেন উনি। সেখানে এখন প্রায় প্রতি মাসেই উনার দেখা মিলে যায় ময়মনসিংহের এই শহরে। জ্বালানোর জন্য নতুন নতুন উপায়ে হাজির হোন উনি। কখনও বা গভীর রাতে....কখনো বা কাক ডাকা ভোরে! আর তখনই ফোনে বেজে উঠে আমার। আর ফোনের ওপাশ থেকে একটা কথায় ভেসে আসে প্রতিবার,
--- আমি রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি। দু'মিনিটের মধ্যে নিচে আয়। ইউর টাইম স্টার্টস নাও....দু'মিনিটের মধ্যে তোকে চোখের সামনে না পেলে ডিরেক্ট খুন করবো। মাইন্ড ইট!
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
১৬ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
নৌশিন আহমেদ রোদেলা’র গল্প ও উপন্যাস:
- আজ ওদের মন ভালো নেই
- মেঘের দেশে প্রেমের বাড়ি
- রোদ শুভ্রর প্রেমকথন
- তপোবনে যখন সন্ধ্যা নামে
- আরশিযুগল প্রেম
- নীল চিরকুট
- প্রিয়দের কাল্পনিক সাক্ষাৎ
- প্রেমিক অপ্রেমিকের গল্প
- আজি এই সন্ধ্যাক্ষণে
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা নৌশিন আহমেদ রোদেলা সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে তা অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন