উপন্যাস       :         প্রেমাতাল
লেখিকা        :         মৌরি মরিয়ম
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল    :         
রচনাকাল     :         ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং

লেখিকা মৌরি মরিয়মের “প্রেমাতাল” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
প্রেমাতাল || মৌরি মরিয়ম
প্রেমাতাল || মৌরি মরিয়ম Ebook



৫৩ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

প্রেমাতাল || মৌরি মরিয়ম (পর্ব - ৫৪)

ঘুম ভাঙার পরও শুয়ে রইলো মুগ্ধ তিতির যদি আসে! যদি আগের মত এসে ওর ঘুম ভাঙায়! আজকের দিনটা কি না এসে পারবে? অবশ্য নাও আসতে পারে, এখন তো ওর এঙ্গেজমেন্ট হয়ে গিয়েছে। এখন তো চাইলেও এত সহজে আসতে পারবে না। যদি তিতির আসে সেই চিন্তা করে অফিস থেকে ছুটি নিয়েছে মুগ্ধ। আসলে ছুটি টা কাজে লাগবে আর না আসলেও রেস্ট নেয়া যাবে একটা দিন। কিন্তু মনে হচ্ছে আসবে। রাতে তিতির উইশ করেনি। যেহেতু উইশ করেনি, নিশ্চই কোন সারপ্রাইজ আছে। আবার নিজের মনকে সামলে নিল মুগ্ধ, এত বেশি ভাবলে পরে যদি না আসে তো খুব খারাপ লাগবে।

ওদিকে তিতির মুগ্ধর অফিসের সামনে গিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো। মুগ্ধ আসছে না। মুগ্ধ কি তাহলে আজ ছুটি নিয়েছে! মুগ্ধর বাসায় কি যাবে ? না না যাওয়াটা ঠিক হবে না। মুগ্ধর মা ব্যাপারটা ভাল চোখে নাও দেখতে পারে। কি করবে! অফিস টাইম ১০ টা কিন্তু মুগ্ধ সাধারণত :৩০-:৪৫ এর মধ্যে অফিসে আসে। টা থেকে অপেক্ষা করছে তিতির, যখন ১০:৩০ বেজে গেল তখন তিতির ফোন করলো মুগ্ধকে।

তিতিরের কল পেয়ে মুগ্ধর বুকের ভেতরটা নেচে উঠলো। ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে সেই মিষ্টি কন্ঠ ভেসে এল,

-"হ্যালো.."

-"হ্যালো, গুড মর্নিং।"

-"ব্যাড মর্নিং, তুমি আজ অফিসে যাওনি?"

-"না।"

-"কেন?"

-"ছুটি নিয়েছি।"

-"কেন? কোন কাজ আছে?"

-"নাহ তো। অফিস করতে করতে টায়ার্ড হয়ে গিয়েছি।"

-"ওহ। তুমি কি ফ্রি আছো?"

-"হ্যাঁ, দেখা করবে?"

-"হ্যাঁ, চাচ্ছিলাম।"

-"কোথায় আসব বলো? আর কখন?"

-"এখনি এসো.. বনানী ব্রিজ।"

-"ওয়েট ওয়েট, বাই এনি চান্স তুমি কি বনানীতে? অফিসে গিয়েছিলে?"

-"অফিসে না, অফিসের সামনে।"

-"শিট! সরি।"

-"তুমি কেন সরি বলছো? আমি তো তোমাকে জানিয়ে আসিনি। তোমার তো দোষ নেই।"

-"আচ্ছা, শোনো আমি ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে আসছি। তুমি ওদিকে একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকে বসো।"

-"আমি ব্রিজের দিকে যাচ্ছি। তুমি ওখানে এসে ফোন দিও। আমি কোথায় থাকি ঠিক নেই।"

-"আচ্ছা।"

মুগ্ধ লাফ দিয়ে বিছানা থেকে নেমে মিনিটের মধ্যে ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে আলমারি খুলে একটা শার্ট হাতে নিতেই খেয়াল হলো তিতির অফিসের সামনে গিয়েছিল তার মানে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিল, নিশ্চই শাড়ি পড়েছে! পাঞ্জাবি পড়াটা আজ ফরজ। সামনেই তিনটা পাঞ্জাবি ইস্ত্রি করা আছে। সাদা, লেমন, নীল। কোনটা পড়বে? আচ্ছা তিতির কি রঙের শাড়ি পড়েছে? কে জানে। যাই হোক, তিতিরের পছন্দের রঙ নীল। নীল পাঞ্জাবিই পড়া উচিৎ, আর এই নীল পাঞ্জাবিটা অনেক সুন্দরও। হাতের কাছে যে জিন্স পেল সেটাই পড়লো। পাঞ্জাবিটাও পড়লো, তারপর সাদা একটা কোটি পড়ে বোতাম লাগাতে লাগাতেই ঘর থেকে বের হলো। মা জিজ্ঞেস করলো,

-"কিরে মুগ্ধ, কোথায় যাচ্ছিস?"

-"ফ্রেন্ডরা এসেছে মা।"

-"ওহ, নাস্তাটাও করে যাবিনা?"

-"না, মা আমি খেয়ে নেব। ওদেরকে তো ট্রিট দিতেই হবে। তখন তো খাবই। তুমি খেয়েছো?"

-"হ্যা, স্নিগ্ধ ভার্সিটিতে যাওয়ার সময় নাস্তা করে গিয়েছে, ওর সাথে আমিও খেয়ে নিয়েছি।"

-"আচ্ছা মা, আসছি তাহলে।"

-"দাড়া। এত তাড়া কিসের?"

একথা বলে মা এগিয়ে গেল। মুগ্ধকে টেনে নিচু করে কপালে একটা চুমু দিয়ে বলল,

-"আমার সোনার ছেলের জীবনে এই দিনটা বারবার আসুক, হ্যাপি বার্থডে।"

মুগ্ধ মাকে জড়িয়ে ধরে বলল,

-"লাভ ইউ মা।"

-"হয়েছে এবার যা।"

-"হুম, শোনো রাত্রে মজা করে কিছু রান্না করো কিন্তু। পিউকেও আসতে বলো। একা জামাইয়ের হাত ধরে যেন চলে না আসে আবার, শশুরবাড়ির সবাইকে নিয়ে আসতে বলবে।"

-"আচ্ছা।"

-"আর প্লিজ অন্য কাউকেই বলবে না। আমি বার্থডে পার্টি করছিনা যে আত্মীয়স্বজন দিয়ে ঘর ভরে ফেলবে। আমার ভাল লাগে না।"

-"তোর ফুপীকেও বলবো না? পাশাপাশি বাড়িতে থেকে না বলে পারে কেউ?"

-"ফুপীকে বললে ইকরা আসবে।"

-"হ্যা, তাতে সমস্যা কি? ইকরাকে তুই সবসময় এত ভুল বুঝিস কেন বলতো?"

-"মা মা প্লিজ ওর কথা বলোনা, আমি গেলাম। সন্ধ্যার পর ফিরবো, এসে যদি ইকরাকে দেখি বাসা থেকে বের হয়ে যাব বলে দিলাম, টাটা।"

মা আর কথা বলল না। মুগ্ধ যেতে যেতে বলল,

-"পারলে ছানার মিষ্টি বানিও।"

১৫ মিনিটের একটু বেশি সময়ই লাগলো মুগ্ধর। ব্রিজের সামনে গাড়ি থামিয়ে নামলো। তিতিরকে কোথাও দেখতে পাচ্ছে না। ফোন দিচ্ছে কিন্তু তিতির ধরছে না। আবার ডায়াল করলো। হঠাৎ একটা বাচ্চা ছেলে(টোকাই) এসে মুগ্ধর সামনে / টা গোলাপ ধরলো। বলল,

-"হেপি বাড্ডে।"

মুগ্ধ হাসলো, তিতিরের কাজ। কিন্তু গেলটা কোথায় মেয়েটা। এরপর আরেকটা বাচ্চা ফুলহাতে এল। একই ভাবে ওকে গোলাপ দিল। সেটা নিতে না নিতেই আরেকটা বাচ্চা এল, ফুল দিল। সেই ফুল নিতে না নিতেই আরো দুটো বাচ্চা এসে ফুল দিল। সবাই ফুল দিয়ে দিয়ে বলছে, "হেপি বাড্ডে।" মুগ্ধ হাসতে হাসতে সেই ফুল নিচ্ছে। দূরে দাঁড়িয়ে সেই মনোমুগ্ধকর হাসি দেখছে তিতির। মুগ্ধ আশেপাশে তাকিয়ে তিতিরকে খুঁজছে। কিন্তু বাচ্চাগুলোর হইচইয়ের কারনে অন্য কোন দিকে তাকাবার জো নেই। এরা একে একে আসছে আর ফুল দিয়ে উইশ করছে।

সবার ফুল দেয়া শেষ হতেই তিতির মিষ্টি একটা হাসি মুখে নিয়ে মুগ্ধর সামনে গেল। তিতিরকে দেখে মুগ্ধ হা হয়ে গেল। মনে হচ্ছে কোন স্বর্গচূড়া থেকে দেবী নেমে এসেছে। তিতিরও নীল পড়েছে, কিভাবে মিলে গেল! ফুল দিয়ে সব বাচ্চারা হইহই করতে করতে চলে গেল। ওরা যখন যাচ্ছিল তখন মুগ্ধ খেয়াল করলো সবার হাতে একটা করে বিরিয়ানির প্যাকেট। তিতির মুগ্ধকে একটা গোলাপ দিয়ে বলল,

-"হ্যাপি বার্থডে, এটা ৩৪ তম ফুল।"

মুগ্ধ হেসে ফুলটা নিল। বলল,

-"ওহ, বাচ্চাগুলো সবাই মিলে কি আমাকে ৩৩ টা ফুল দিয়েছে?"

-"হ্যা।"

-"হায়রে! বুড়া হয়ে গেলাম। কেন তুমি আমাকে মনে করিয়ে দিলে যে এটা আমার ৩৪ তম বার্থডে?"

-"চিন্তা করোনা তুমি স্টিল অনেক ইয়াং আর হ্যান্ডসাম আছো।"

মুগ্ধ হেসে বলল,

-"বাই দ্যা ওয়ে, ওদের হাতে বিরিয়ানির প্যাকেট দেখলাম। তুমি কিনে দিয়েছো?"

-"হ্যা।"

-"আমি আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে! আমি খাওয়াতাম।"

-"তোমার ইচ্ছে হলে তুমি খাওয়াও গিয়ে, আমি ধরে রেখেছি নাকি? পথশিশুদের তো অভাব নেই। আমি অনেক কষ্টে ওদের জোগাড় করেছি, আমি প্ল্যান করেছি, আমি খাইয়েছি, তাতে তোমার কি?"

-"তাও ঠিক।"

-"থ্যাংকস ফর দ্যা সারপ্রাইজ।"

-"আমার সারপ্রাইজ তুমি নষ্ট করেছো আজ অফিসে না গিয়ে।"

মুগ্ধ হেসে বলল,

-"আচ্ছা, সরি।"

-"কিন্তু তোমাকে নীল পাঞ্জাবিতে দেখে আমিও সারপ্রাইজড হয়েছি।"

-"ওটা তো আমিও হয়েছি। তুমি নীল পড়ে আসেছো ভাবিওনি।"

তিতির হাসলো। মুগ্ধ বলল,

-"কিন্তু এখানে দাঁড়িয়ে থাকবে? চলো কোথাও যাওয়া যাক।"

গাড়িতে উঠেই মুগ্ধ বলল,

-"কোথায় যাবে?"

-"তুমি কতক্ষণ টাইম দিতে পারবে? আফটার অল টুডে ইউ আর দ্যা বার্থডে বয়। আজ সবাইকে টাইম দিতে হবে তোমার।"

-"রাতে বাসায় টাইম দিতে হবে। সারাদিন, সারা সন্ধ্যা ফ্রি।"

-"তাহলে পদ্মার পাড়ে যাব। নৌকায় চড়বো, পদ্মার ইলিশ আর শুকনো মরিচ ভাজা দিয়ে ভাত খাব।"

-"ইটস গ্রেট আইডিয়া কিন্তু নৌকায় চড়বে? ওদিকের নদীতে অনেক গ্যাঞ্জাম। ভাল লাগবে কি?"

-"যেদিকে গ্যাঞ্জাম নেই সেদিকে নিয়ে যাবে।"

-"আচ্ছা। কিন্তু তার আগে পেটে কিছু দিতে হবে। কিচ্ছু খাইনি। ঘুম থেকে উঠেই আসলাম। তুমি ব্রেকফাস্ট করে বেড়িয়েছো তো?"

-"হ্যা।"

একটা রেস্টুরেন্টের সামনে গাড়ি থামিয়ে মুগ্ধ বলল,

-"ভাল করেছো। কিন্তু আমার সাথে আবার খেতে হবে চলো।"

-"না না। আমি খাব না, আর তুমি খাবার নিয়ে গাড়িতে চলে আসো। রেস্টুরেন্টে যেতে ইচ্ছে করছে না।"

-"আহ, আচ্ছা ঠিকাছে।"

মুগ্ধ দুজনের জন্যই খাবার পার্সেল করে নিল। তারপর গাড়িতে উঠেই আরেকটা সারপ্রাইজ পেল। ওর প্রিয় রেড ভেলভেট চিজ কেক নিয়ে বসে আছে তিতির। মুগ্ধ অবাক হয়ে বলল,

-"রেড ভেলভেট চিজ কেক! ওহ মাই গড। কোথায় পেয়েছো? বানিয়েছো নাকি?"

-"হ্যা।"

-"মানে কি কিভাবে বানিয়েছো?"

-"যেভাবে বানায় সেভাবেই বানিয়েছি।"

-"সেটা তো বুঝলাম কিন্তু বাসায় কেউ দেখেনি? কি বলেছো?"

-"অনেক ভোরে সবাই ঘুম থেকে ওঠার আগে বানিয়েছি।"

-"সত্যি তিতির, এরকম সিচুয়েশনে আমার খুব বেশি আফসোস লাগে তোমাকে সারাজীবনের জন্য পাবনা বলে। তুমি সবার থেকে আলাদা তিতির। তুমি অনেক লক্ষী, অনেক পাগলী। এই শীতের মধ্যে ভোর রাতে উঠে কয়টা মেয়ে পারে এসব করতে? পাগল না হলে পারা যায় না।"

খুশি মুগ্ধর চোখমুখে ঝিলিক দিচ্ছিল। তিতির বলল,

-"ভালবাসলেই পারা যায়। এখন কি একটু খেয়ে দেখবে কেমন হয়েছে?"

-"হ্যা অবশ্যই।"

হঠাৎ মনে পড়তেই তিতির বলে উঠলো,

-"হায় হায়। আমি তো ছুরি আনিনি। এখন কি হবে? কাটবে কিভাবে?"

মুগ্ধ হেসে বলল,

-"নো প্রব্লেম। তুমি আছো না?"

একথা বলেই মুগ্ধ তিতিরের হাতটা টেনে নিয়ে তিতিরের আঙুল দিয়ে কেকটা কাটলো। যদিও কেকটা ছড়িয়ে গেল। কাটার বদলে ভাঙা হলো। তবুও ব্যাপারটা তিতিরের এত ভাল লাগলো যা বলার মত না। তিতির মুগ্ধকে কেক খাইয়ে দিল। মুগ্ধও তিতিরকে খাইয়ে দিল। মুগ্ধ কেক খেতে খেতে বলল,

-"উম্মম্মম্মম্মম্ম... বেস্ট রেড ভেলভেট চিজ কেক এভার।"

একবারেই মুগ্ধ অর্ধেকটা কেক খেয়ে ফেলল। তিতিরের তৃপ্তির নিঃশ্বাস ফেলল। জানতো, মুগ্ধ এমনই করবে। এই কেকটা মুগ্ধর খুব প্রিয়। কোন রেস্টুরেন্টে খেতে গেলে পেস্ট্রি থাকলেই খুঁজত রেড ভেলভেট চিজ কেক আছে কিনা। ভোর রাতে উঠে চোরের মত আতঙ্ক নিয়ে কেক বানানোটা সার্থক।

দুপুরবেলা মাওয়া ঘাটে গিয়ে একটা স্পিডবোট রিজার্ভ করলো মুগ্ধ। উঠতে উঠতে বলল,

-"তিতির, আমরা ওপাড়ে গিয়ে ভাত খাব। এপাড়ে গ্যাঞ্জাম বেশি।"

-"আচ্ছা।"

স্পীডবোট চলতে শুরু করলে তিতির অকারনেই বারবার হাসছিল। ভাল লাগছিল মুগ্ধর। ২০ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে গেল ওপাড়ে। ওপাড়ে গিয়েই ইলিশ মাছ ভাজা, শুকনো মরিচ ভাজা আর ভর্তা দিয়ে ভাত খেল ওরা। তারপর একটা ভ্যান ভাড়া করে গ্রামের ভেতর দিয়ে কিছুক্ষণ ঘুরলো। তারপর কিছুক্ষণ নৌকায়ও ঘুরলো। অনেক অনেক গল্প করলো ওরা কিন্তু খুব স্বাভাবিক সব গল্প। যেন ওদের সম্পর্ক স্বাভাবিক। যেন অনেকদিন পর দেখা হয়নি ওদের, প্রায়ই দেখা হয়।

ওপাড় থেকে ফিরতে ফিরতেই সন্ধ্যা হয়ে গেল। এখন তো টার সময়ই সন্ধ্যা হয়ে যায়। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে কিছুদূর যেতেই জ্যামে পড়লো। মুগ্ধ বলল,

-"তোমার বাসায় ফিরতে হবে কখন?"

-"দেরী হলেও প্রব্লেম নেই। বাসায় বলেছি আজ অফিসের পিকনিক।"

-"আচ্ছা। কি দুষ্টু মেয়ে রে বাবা।

তিতির হাসলো। মুগ্ধ বলল,

-"কিন্তু এই জ্যাম ছাড়তে তো মনে হচ্ছে অনেক দেরী লাগবে।"

আরো কিছুক্ষণ পর মুগ্ধ গাড়ি ঘুড়িয়ে গ্রামের ভেতরের রাস্তা দিয়ে যেতে লাগলো।

-"গ্রামের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছো কেন?"

-"মেইনরোডের যে অবস্থা দেখলাম রাত ১০/১১ টায়ও পৌঁছতে পারবো না। / টার দিকে আবার পিউরা আসবে। আমি বাসায় না থাকলে কেমন দেখায় না?"

-"হ্যা তা তো ঠিকই। কিন্তু তুমি এসব রাস্তা চেন তো?"

-"হ্যা, আগে সাইক্লিং করতাম না? এখানে অসংখ্যবার এসেছি।"

-"ও।"

এরপর হঠাৎ মনে পড়ায় মুগ্ধ বলল,

-"ওহো ভাল কথা তিতির, খুব ভাল একটা খবর আছে। আমি ভুলে গিয়েছিলাম তোমাকে বলতে।"

-"কি কথা?"

-"পিউয়ের বেবি হবে।"

-"ওয়াও। এই কথাটা তুমি আজ আমাকে বলছ?"

-"আরে আমাকে বলেনি তো এতদিন। পিউ অনেকদিন আসেনা তাই মাকে জিজ্ঞেস করলাম পিউ আসেনা কেন? তখন মা বলল পিউ অসুস্থ, চিন্তা করো তখনো বলছিল না। পরে আমি তো টেনশানে পড়ে গিয়েছিলাম যে কি হলো আবার। তখন মা আমার অস্থিরতা দেখে বলল।"

তিতির বলল,

-"এসব কথা কাউকে বলতে হয়না। যত কম মানুষ জানবে তত ভাল।"

-"বাহ রে তা বলে আমিও জানবো না?"

-"পিউ বোধহয় লজ্জায় বলতে পারেনি।"

-"আরে বাবা লজ্জা কিসের? এটা তো ন্যাচারাল ব্যাপার।"

-"তুমি বুঝবে না।"

-"ইশ এমনভাবে বলছো যেন তোমার কতবার বেবি হয়েছে!"

তিতিরের মন খারাপ হয়ে গেল। সেদিন যদি ওদের বিয়ে হতো। প্ল্যানমতো আজ তিতিরেরও বেবি হতো। মুগ্ধ ব্যাপারটা খেয়াল করলো। ধ্যাত, কি বলতে কি বললো! মজা করতে গিয়ে কষ্ট দিয়ে ফেলল। এখন সরি বলা মানে খুঁচিয়ে ঘা বাড়ানো। অন্যভাবে তিতিরের মনটা ভাল করে দিতে হবে। কি বলা যায় ভাবতে লাগলো।

তিতির অন্যমনস্ক হয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে ছিল। মুগ্ধ বলল,

-"আজ ড্রাইভ করতে ভাল লাগছে না।"

-"কেন?"

-"তোমাকে দেখতে পারছি না যে তাই।"

তিতির হেসে বলল,

-"সারাদিন তো দেখলে!"

-"আজ তোমাকে এতই সুন্দর লাগছে যে সারাদিন দেখেও আশ মেটেনি।"

-"সিলেটের সেই রাতের থেকেও বেশি সুন্দর?"

মুগ্ধ আচমকা ব্রেক করলো। সিটবেল্ট বেধে না রাখলে এক্ষুনি মাথায় ব্যাথা পেত তিতির। মুগ্ধ গাড়ি থামিয়ে অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো তিতিরের দিকে। তিতির লজ্জায় ব্লাশ করছিল, খুব ভালও লাগছে বোধহয় ওর। মেয়েরা বোধহয় এমনই, প্রিয় মানুষের এটেনশান পেলে খুশিতে ফুটতে থাকে। তিতির বলল,

-"এখানে গাড়ি থামালে কেন? কেমন জঙ্গল জঙ্গল! আমার ভয় করছে।"

মুগ্ধ বলল,

-"জঙ্গল না এটা একটা গ্রাম। আশেপাশে বাড়িঘর নেই এই যা।"

-"যাই হোক, একটু ভুতুরে টাইপ। চালাও তো। গাড়ি চললে ভয় করে না। না চললে মনে হয় এক্ষুনি গ্লাস ভেঙে ভুত ঢুকে পড়বে।"

-"তুমি মোটেও ভয় পাচ্ছো না তিতির, ভাব ধরো না। তুমি ভয় পাবার মত মেয়ে না। আর যা খুশি তা হোক কিন্তু আগে বলো, তুমি এটা কি বললে? কি মনে করালে?"

-"কই কিছু না তো।"

-"তুমি আসলে বুচ্ছো খুব দুষ্টু একটা মেয়ে। দেখলে মনে হয় ভাজা মাছ উলটে খেতে জানো না। আসলে তলে তলে বহুত..."

-"কি? থামলে কেন? বলো.."

-"বলছি।"

একথা বলেই মুগ্ধ গাড়ির লাইটটা বন্ধ করে তিতিরের কোমর জড়িয়ে কাছে টেনে আনলো। ঘুটঘুটে অন্ধকার, কিচ্ছু দেখা যাচ্ছে না। তিতির নিচু স্বরে বলল,

-"লাইট জ্বালাও ভয় করছে।"

অন্ধকারের যে নিজস্ব একটা আলো আছে সেই আলোতেই মুগ্ধ দেখলো তিতির তাকিয়ে আছে ওর চোখের দিকে। মুগ্ধর দৃষ্টিও তিতিরের চোখে। দুজন দুজনের খুব কাছে, একজনের নিঃশ্বাস আরেকজনের নিঃশ্বাসের সাথে মিশে যাচ্ছে। তিতির মনে মনে প্রার্থনা করতে লাগলো, মুগ্ধ যেন এটুকু কাছে এসে সরে না যায়। ওর বিবেক যেন এতটা নিষ্ঠুর আজ না হয়। এতদিনের অপূর্ণতা যেন একবার হলেও ভরিয়ে দেয় ও। মুগ্ধর দৃষ্টিটা চোখ থেকে নেমে তিতিরের ঠোঁটে চলে গেল। তিতির চোখ বন্ধ করলো। মুগ্ধ তিতিরের ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়ালো। তিতির ভেসে গেল।

এলিফ্যান্ট রোড দিয়ে বের হয়ে ধানমন্ডি নাম্বার দিয়ে ঢুকলো মুগ্ধ। তিতির বলল,

-"আমাকে নাম্বারে নামিয়ে দিও। ওখান থেকে রিক্সা নিয়ে নেব।"

-"আচ্ছা।"

নাম্বারে গিয়ে গাড়ি থামালো মুগ্ধ। তিতির বলল,

-"আজকে তোমার বার্থডে সেলিব্রেট করার জন্যই আমি দেখা করেছি। কাল থেকে আবার সবকিছু আগের মত হয়ে যাবে।"

মুগ্ধ একটা প্লাস্টিক হাসি দিয়ে বলল,

-"হুম, আমি জানি। কিন্তু আর এভাবে এসোনা তিতির। এবছরই তো তোমার বিয়ে! তারপর এরকম হুটহাট দেখা আর হবে না আমাদের। এখন থেকে অভ্যাস করাই ভাল। তুমি এখন একজনের বাগদত্তা। তবু কাছে এসেছ যখন মনে হয়েছে তুমি আমারই। তাই কাছে না আসাটাই ভাল।"

তিতিরের চোখে পানি এল। কিন্তু মুগ্ধর সামনে ভুলেও কাঁদবে না, আজকের দিনে তো নয়ই। হেসে বলল,

-"আচ্ছা ঠিকাছে। ভাল থেকো।"

-"হুম, টেক কেয়ার অফ ইওরসেল্ফ। চলো তোমাকে রিক্সা ঠিক করে দিচ্ছি।"

তিতির হাত ধরে থামালো মুগ্ধকে। বলল,

-"দাঁড়াও, একটু পর।"

-"কি?"

তিতির হেসে মুগ্ধর গালে একটা চুমু দিয়ে বলল,

-"হ্যাপি বার্থডে এগেইন।"

মুগ্ধ হেসে বলল,

-"আই লাভ ইউ মাই রসগোল্লা।"

তিতির একটু মোটা হবার পর থেকে মুগ্ধ মাঝে মাঝে ওকে রসগোল্লা বলে ডাকতো। অনেকদিন পর ডাকটা আবার শুনে ভাল লাগলো তিতিরের। হেসে বলল,

-"আই লাভ ইউ টু।"

 আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

৫৫ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা মৌরি মরিয়ম সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে। 

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন