লেখিকা আরশি আয়াতের “তোমার পিছু ছাড়বো না” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশ করা হলো। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২৪ সালের ৬ই সেপ্টেম্বর থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
তোমার পিছু ছাড়বো না || আরশি আয়াত |
তোমার পিছু ছাড়বো না || আরশি আয়াত (পর্ব - ১)
প্রাক্তন প্রেমিকের বাচ্চা পেটে নিয়ে অন্য একজনের সাথে বিয়ের পীড়িতে বসেছি।কথাটা দুনিয়ার কেউ জানে না।এমনকি যার বাচ্চা সে-ও না।
আচ্ছা কথাটা জানাজানি হলে কি হবে?বিয়েটা কি ভেঙে যাবে?অন্যের অবৈধ বাচ্চাটা কি মেনে নিতে পারবে পাশে বসা মানুষটি?নাকি মে'রে ফেলবে এই নিষ্পাপ প্রাণটাকে?আর যদি সে জানতে পারে তাহলে কিভাবে দাড়াবো তার সামনে?
এসবই ভাবছিলো জিনি।তারপর মনে হলো পাশে বসা মানুষটিকে এখনই জানানো দরকার।
বিস্ফোরক বাক্য!কথাটা শুনে তাজওয়ারের চোখমুখ কঠিন হয়ে গেলো।একটু আগের মোলায়েম ভাবটা এখন আর নেই।জিনি ভেবেছে এই কথার পর বিয়েটা আর হবে না কিন্তু ওকে অবাক করে দিয়ে কোনো ঝামেলা ছাড়াই হয়ে গেলো বিয়েটা।তারমানে তাজওয়ার ওর কথাটার গুরুত্বই দেয় নি।মজা ভেবে উড়িয়ে দিয়েছে।
সব নিয়ম কানুন সম্পন্ন করে জিনিকে ঘরে দিয়ে গেছে ওর একমাত্র ননদ হিয়া।তাজওয়ারের বিশাল বড় রুমটায় এখন ও একাই উপস্থিত।এই ঘরটা একটু বেশিই সুন্দর,একদম মনের মতো ঘর তবে কমতিটা মনের মত বরের।
তাজওয়ার এলো ঘন্টাখানেক পর।জিনি তখনও একই ভঙ্গিতে হাঁটু মুড়ে বসে আছে বিছানায়।ওকে দেখে বিছানা থেকে নেমে দাড়ালো জিনি।সম্মুখে একটা রিপোর্ট হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল,'আপনি আমার কথা হয়তো বিশ্বাস করে নি।এই মেডিকেল রিপোর্ট'টা দেখুন তাহলে সব বুঝে যাবেন।'
তাজওয়ার রিপোর্ট'টা ছুঁয়েও দেখলো না।জিনি অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো,'আপনার কিছুই যায় আসছে না?'
শেরওয়ানির গলার কাছের বোতামগুলো খুলতে খুলতে তাজওয়ার বলল,'না।এই বিয়েটা শুধুমাত্র একটা বিজনেস ডিল হিসেবেই দেখি আমি।তাই তোমার পেটে কার বাচ্চা তাতে আমার কিছুই যায় আসে না।'
জিনি বিস্ময়ের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেলো।চোখজোড়া গোল গোল করে প্রশ্নোক্তি করলো,'তাহলে এই বাচ্চাটার কি হবে?ও কার পরিচয়ে বড় হবে?'
'যেহেতু তোমাকে বিয়ে করতে পেরেছি সেহেতু পরিচয় দেওয়াটা ব্যাপার না আমার কাছে।ও আমার পরিচয়েই পরিচিত হবে।'
জিনি অবাক হলো।শুধুমাত্র বিজনেস ডিল বলেই কি এত নির্লিপ্ততা?
জিনির বাবার সাথে তাজওয়ারের ব্যবসায়ীক সম্পর্ক ভালো।তাই সম্পর্কটাকে আরো পোক্ত করতেই এই বিয়ে।
নামে মাত্র বাসর রাত।ফ্রেশ হয়ে,কাপড় পাল্টে এসে বিছানার একপাশে শুয়ে পড়লো তাজওয়ার।ওকে বিছানায় শুতে দেখে জিনি চেঁচিয়ে বললো,'এ কি!আপনি এখানে শুয়েছেন কেনো?'
তাজওয়ার বিরক্ত হলো।বলল,'তাহলে কোথায় শোবো?'
'সোফায়।'
'বিছানা থাকতে সোফায় কেন শোবো?'
'বিছানায় আমি শোবো আপনি সোফায় শোবেন।'
'কেনো?বিছানায় জায়গা কম পড়েছে নাকি?'
'আমি আপনার পাশে শোবো না।'
তাজওয়ার তাচ্ছিল্যের সুরে বলল,'নিশ্চিন্তে শুয়ে পড়ো।তোমাকে ছোঁয়ার বিন্দুমাত্র রুচি নেই আমার।'
তাজওয়ারের কথায় ভীষণ অপমানিত বোধ করলো জিনি।লোকটা এভাবে কেন বললো?তার কি দোষ?দোষ যদি কারো হয়ই সেটা ইয়াসিনের।হঠাৎ করে সব যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে।বাচ্চার খবরটা বলার সুযোগও পায় নি জিনি আর এরমধ্যে বিয়েটাও হয়ে গেলো।
আর কোনো অভিযোগ না করে জিনিও শুয়ে পড়লো তাজওয়ারের পাশে।মস্তিষ্কে ইয়াসিনের ভাবনা।মানুষটা হুট করেই উধাও হয়ে গেলো।আর যাওয়ার আগে চিঠিতে লিখে গেছে এই সম্পর্ক ছিন্ন করেছে সে।তাকে আর কখনোই খুঁজতে না।চিঠির লেখাটা মনে হতেই কান্না পেলো জিনির।কোন অপরাধে এমন শাস্তি দিলো ইয়াসিন?
সকালে হিয়া ডেকে গেলো ওদের নাস্তা করার জন্য।হিয়ার ডাকে দু'জনেরই ঘুম ভাঙলো।অতঃপর ভীষণ অপরিচিতের মত দু'জনে ফ্রেশ হয়ে পৌঁছালো নাস্তার টেবিলে।তাজওয়ারের বাবা,মা,দাদী,বোন সবাই উপস্থিত।ওরা আসার পরই খাওয়া শুরু হলো।খাবার একটু মুখে দিতেই জিনির বমি চলে আসলো।সে চেয়ার ছেড়ে দৌড়ে গেলো ওয়াশরুমে।পেছনে তাজওয়ার এবং বাকিরাও এলো।হালকা একটু বমি করে দাঁড়াতে না দাঁড়াতেই পড়ে যেতে নিলো জিনি আর সাথে সাথেই ওকে ধরে ফেললো তাজওয়ার।তারপর কোলে করে নিয়ে বেডরুমে শোয়ানো হলো ওকে।তাজওয়ারের বাবা হাসান চৌধুরী দ্রুত পারিবারিক ডাক্তার ডাকলেন।
ডাক্তার মিনা শাহরিয়ার এসে কিছুক্ষণ পরীক্ষা নীরিক্ষা করে চিন্তিত মুখে তাজওয়ারের দিকে চেয়ে বললেন,'তাজওয়ার,তোমার স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা!'
কথাটায় তাজওয়ার বাদে বাকি সকলেরই শ্বাস আঁটকে এলো।এ কি করে সম্ভব?কাল বিয়ে হলো এখনো একদিনও হয় নি এরমধ্যেই অন্তঃসত্ত্বা!তাজওয়ারের মা হাফিজা বেগম বললেন,'ডাক্তার,এটা কিভাবে সম্ভব?ওদের তো বিয়েই হলো গতকাল?'
'কিভাবে সম্ভব হলো সেটা আপনার ছেলে এবং ছেলের বউই বলতে পারবে।'
সবাই আপাতত ভীষণ শকে আছে।এমন একটা খবর শুনবে কেউ আশাই করে নি।হাসান চৌধুরী ছেলেকে ডেকে বললেন,'এসব কি?'
'তুমি দাদা হচ্ছো!'
'বাচ্চাটা কি তোমার?'
'হ্যাঁ,আমার।'
'তাজওয়ার তোমার এত অধঃপতন হয়েছে আমি ভাবতে পারছি না।ছিঃ!'হাসান চৌধুরী ক্রোধিত গলায় বললেন।
এর মাঝেই হাফিজা বেগম এসে তাজওয়ারের গালে চড় মেরে দিলেন।কান্না কন্ঠে বললেন,'এই শিক্ষা দিয়েছিলাম আমি তোকে?কেন করলি এমন?এসব করার আগে আমাদের কথা একবার ভাবলি না?এখন মুখ দেখাবো কি করে?'
তাজওয়ার কিছু বলতে যাবে তার আগেই দাদী মেহরুন এসে নাতির পক্ষে বললেন,'কি শুরু করছো তোমরা?পোলটা নাইলে একটা ভুল করছেই।ওয় তো মাইয়াটারে ছাইড়া দেয় নাই।নিজের ঘরের বউ বানাইছে।'
হাফিজা বেগম কঠোর গলায় বললেন,'আম্মা,আপনি ওকে আদর দিয়ে মাথায় তুলবেন না।ও অপরাধ করেছে।'
বেডরুম থেকে বাইরের কথাবার্তা শোনো যাচ্ছে।সবাই মিলে ছেলেটাকে বকছে বলে ভীষণ খারাপ লাগছে জিনির।ওর জন্য ছেলেটা মিথ্যাও বলছে।তবে এই মিথ্যা না বললে অনেক কিছু শেষ হয়ে যেতো।
আজ থেকেই জিনির যত্নের কোনো ত্রুটি হচ্ছে না।শ্বাশুড়ি মা,দাদী শ্বাশুড়ি,ননদ সবাই মিলে ওর দেখভাল শুরু করেছে।তবে এত ভালোবাসায়ও ওর মন শান্ত হচ্ছে না শুধুমাত্র ইয়াসিনের একটা খোঁজ পাওয়ার আশায়।
কালকের মত আজও পাশাপাশি শুয়েছে ওরা।হঠাৎ মাঝরাতে পানির তেষ্টায় ঘুম ভেঙে যায় জিনির।ও পানি খেয়ে ফোনটা হাতে নিতেই দেখে অপরিচিত একটা নম্বর থেকে মেসেজ এসেছে।
'জিনি,আমি ইয়াসিন।তোমার সাথে জরুরি কিছু কথা আছে।কাল বিকেলে দেখা করো।'
জিনি নাম্বারটায় সাথে সাথেই ফোন করলো কিন্তু বন্ধ দেখাচ্ছে।এই একটা মেসেজে ভীষণ অস্থিরতা শুরু হয়েছে ওর।প্রায় দু’মাস পর মানুষটার সাথে দেখা হবে কাল।বাচ্চার কথা কি জানাবে ওকে?জানালে কেমন রিয়েকশন হবে ওরে?
এসব ভাবতে ভাবতেই আবার ঘুমিয়ে পড়লো জিনি।
ও ঘুমানোর পর পরই তাজওয়ার উঠে বসলো।নিজের ফোন থেকে কাউকে একটা মেসেজ করে ঘুমন্ত জিনির দিকে তাকিয়ে একবার হাসলো।কি মিষ্টি দেখাচ্ছে!কপালের ওপরের চুলগুলো সরিয়ে পরপর দু'টো চুমু খেয়ে বলল,'আমার বোকা বউ!'
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
Follow Now Our Google News
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
২য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
আরশি আয়াত’র গল্প ও উপন্যাস:
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আরশি আয়াত সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে অবশ্যই তা কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হইবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন