উপন্যাস        :         কেয়া পাতার নৌকা
লেখিকা        :          রাজিয়া রহমান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ২২ই ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ইং

লেখিকা রাজিয়া রহমানের “কেয়া পাতার নৌকা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি  ২০২৪ সালের ২২ই ফেব্রুয়ারী থেকে লেখা শুরু করেছেন। 
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান


৪৯ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান (পর্ব - ৫০)


রবিবার সকাল বেলা।ফজরের পর তরু একটু শুয়েছিলো।কখন যে তার চোখ লেগে এলো।তরু বুঝতে পারলো না। তরুর যখন ঘুম ভাঙ্গলো তখন সকাল সাড়ে নয়টা।ফাইজান বিছানায় নেই।তরুর বুক কেঁপে উঠে। তড়িঘড়ি করে উঠে তরু চারদিকে খোঁজে ফাইজানকে। কোথাও নেই ফাইজান।
পরক্ষণে তরুর মনে পড়লো আজ তো রবিবার। ফাইজানের অফিস আছে।
ফাইজান কি অফিসে চলে গেছে!
তরুর ভীষণ অপরাধবোধ অনুভব হলো।ফাইজান কি না খেয়েই চলে গেছে!
মন খারাপ করে তরু বারান্দায় গেলো।বারান্দায় বসে নিরবে তাকিয়ে রইলো বাহিরের দিকে।
জীবনটা কোথা থেকে মোড় নিয়ে কোথায় চলে এলো। তরু কি ভেবেছে সে এতো দ্রুত বিয়ে করে সংসারী হবে?
দুই চোখ জুড়ে কতো স্বপ্ন ছিলো বড় হওয়ার, প্রতিষ্ঠিত হওয়ার, সফল হওয়ার।
অথচ নিজেই বেছে নিলো এই জীবন।
ভুল ঠিক কোনোটাই এখনো মাথায় ঢুকছে না।ফাইজান যতক্ষণ কাছে থাকে তরুর ততক্ষণ মনে হয় সে ভীষণ সুখী। জীবনে আর কিছুই চাওয়ার নেই।কিন্তু ফাইজান এখন অফিসে চলে যাওয়ার পর তরুর কেমন অসহায় লাগছে নিজেকে।
মনে হচ্ছে অনেক বড় ভুল করে ফেলেছে এতো দ্রুত বিয়ে করে।
কেনো এরকম দোটানায় ভুগছে তরু জানে না।
মন এমন দোলাচালে দুলছে কেনো?
তরু স্থির থাকতে চায়।
কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে বসে থাকে তরু।জীবনের কিছু সিদ্ধান্ত ভেবে নিতে হয়।একবার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললে তা আর শোধরাবার সুযোগ থাকে না।
অনেক ভাবনার পর আবার ভাবতে লাগলো কেনো এসব ভাবছে?
এসব ভেবে কি লাভ?
এমন তো নয় তরু কষ্টে আছে।তাহলে কেনো এসব আজেবাজে ভাবনা আসছে মনে?
তরু উঠে দাঁড়ায়। এসব এলোমেলো ভাবনাকে তরু কিছুতেই মাথায় জায়গা দিবে না।তরুর জীবনে কোনো কিছুই হয় নি।এখনো সে পড়াশোনা করতে পারবে।ফাইজান তো বলেছেই তরু যতটা চায় পড়বে।
তাহলে কেনো এসব আজেবাজে কথা ভাবছে তরু?
ডাইনিং রুমে গিয়ে দেখে গ্লাসের নিচে একটা টিস্যু রাখা আছে।
ফাইজান ছোট্ট করে লিখে গেছে, "একা থাকতে মন খারাপ করো না তএউ,আমার ভালোবাসা তোমার সাথে আছে।"
তরুর মন ভালো হয়ে যায়। সব এলোমেলো ভাবনা দূর হয়ে যায় নিমিষেই। তরুর মন যেনো হঠাৎ করেই বাঁধন হারা পাখির মতো হয়ে গেছে। উড়তে লাগলো হুট করে।
তরু ফোনে একটা মেসেজ এলো।তরু ছুটে গেলো।গিয়ে দেখে ফাইজান মেসেজ করেছে।তরু কল দিলো।ফাইজান রিসিভ করে বললো, "কাজে আছি তরু।পরে কথা হবে।নাশতা খেয়ে নিও।কিচেনে রাখা আছে। "
তরু কিচেনে গিয়ে দেখে ফাইজান নুডলস রান্না করে রেখে গেছে।যদিও নুডলসে লবণ বেশি হয়ে গেছে।
তবুও তরুর কেনো ভালো লাগলো তরু বুঝতে পারছে না।
নাশতা করে তরু মা'য়ের সাথে কথা বললো কিছুক্ষণ।
তারপর সিদ্ধান্ত নিলো রান্না করবে।ইউটিউব থাকতে রান্না কোনো ব্যাপারই না।তরুর দৃঢ় বিশ্বাস তরু চাইলে সব রান্নাই পারবে।
এই ভেবেই তরু সিদ্ধান্ত নিলো আজকে তাহলে ফাইজানের জন্য বিরিয়ানি রান্না করবে সে।
চিকেন দম বিরিয়ানি।
সেই ভেবেই তরু মাংস ভিজিয়ে রাখলো।
মাংস ভিজিয়ে তরুর মনে পড়লো একবার শ্বশুর শাশুড়ীর সাথে কথা বলা উচিত। তাদের ছেলেকে সে বিয়ে করেছে, তাদের যেহেতু লতাকে পছন্দ ছিলো একটু অভিমান থাকতেই পারে তরুর উপর।
তরুকে নিজের ভালোবাসা দিয়ে তাদের মন জয় করতে হবে।
তরু জানে না কিছু মানুষ ভালোবাসা পাবার মতো যোগ্যতা নিয়ে জন্মায় না।তাদের নিচু মনের জন্য কারো ভদ্রতা,ভালোমানুষি তাদের কাছে দুর্বলতা হিসেবে প্রকাশ পায়।
তরু কালাম হোসেনকে কল দিলো।
আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি,প্রথম বার রিং হতেই কালাম হোসেন কল রিসিভ করলেন।
ভয়ে তরুর গলা শুকিয়ে গেলো।কি বলবে এবার?
সাহস করে কল দিয়েছে ঠিক আছে কিন্তু কথা কি দিয়ে শুরু করবে?
সালাম দিয়ে তরু জিজ্ঞেস করলো কেমন আছে।
কালাম হোসেন নিরুত্তাপ কণ্ঠে জবাব দিলেন।
তরুর ধারণা ছিলো কালাম হোসেন তার সাথে কথাই বলবেন না সেখানে ৫ মিনিট যখন কথা বললেন তরু বিস্মিত হলো।
কালাম হোসেন কল রাখার সময় বললো, "বাসায় কি তুমি এখন একাই আছো?"
তরু হ্যাঁ বলতেই বললেন,"সাবধানে থেকো।দিন দুনিয়া ভালা না।একলা বাসায় একা থাকলে ফাইজান ছাড়া যে-ই আসুক দরজা খুলবা না।কোনো মহিলা আসলেও দরজা খুলবা না।আর ভয় পাইও না।"
কল রাখতেই তরুর মন ভালো হয়ে গেলো। এই মানুষটা তাকে অপছন্দ করে অথচ তবুও তার নিরাপত্তার কথা তার মাথায় আছে।
তরুর বিশ্বাস একদিন ঠিকই তরুকে তিনি পছন্দ করবেন।
দুপুরে তরু চা বানিয়ে খেলো।বিরিয়ানি রান্না করতে লাগলো সন্ধ্যার দিকে যাতে ফাইজান আসলে গরম গরম খেতে পারে।
ফাইজান ফিরলো সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায়।
তরু ফাইজান আসার আগে গোসল করেছে।বাসায় ঢুকতেই বিরিয়ানির ঘ্রাণ পেয়ে ফাইজান এগিয়ে এসে তরুকে জড়িয়ে ধরে। চুমু খেয়ে বলে, "আমার জান কি বিরিয়ানি রান্না করেছে না-কি? ঘ্রাণেই তো আমার ক্ষিধে পেয়ে গেছে। "
তরু হেসে বললো, "চেঞ্জ করে নাও।তারপর খাবে।"
ফাইজান চেঞ্জ করে নিলো।
খেতে বসে ফাইজান টের পেলো তরুর রান্নার হাত ভীষণ ভালো। একেবারে পারফেক্ট হয়েছে বিরিয়ানি।
খেতে খেতে তরু বললো, "তুমি চলে গেলে তো আমি একেবারে একা হয়ে যাই।"
ফাইজান খাওয়া থামিয়ে বললো, "এখন কি করতে চাও?"
তরু ঢোক গিলে বললো, "আব্বা আর আম্মাকে বলো না কিছুদিন এসে থাকতে। "
ফাইজান হেসে বললো, "তরু,সুখে থাকতে ভূতে কিলায় তোমাকে?আমার বাবা মা,আমি জানি ওরা কেমন। তোমাকে ওরা শান্তি দিবে না।বলতে খারাপ লাগছে তবুও বলছি,আমার বাবা মা দশটা কথা বললে তার মধ্যে ৮টা মিথ্যা কথা।
গতকাল আব্বা আমাকে কল করেছিলো।কল দিয়ে কি বলেছে জানো?
ওনারা নাকি নিজেদের রান্না নিজেরা করে খায়।মা'কে রান্না করতে হয়।ভাবীরা না-কি বলেছে তারা রান্না করতে পারবে না। তোমাকে আমি ঢাকায় এনেছি বলে না-কি ভাবীরা রেগে আছে।
আব্বার কল রাখার পর পরই আমি বড় ভাইজানকে মেসেজ দিয়ে বলি বড় ভাবীকে কল দিয়ে দেখতে কি করছে তারা।আমাকে একটু ভিডিও করে দিতে।
৫ মিনিট পর ভাই আমাকে ভিডিও পাঠালো।আব্বা মা আমার ছোট বোনের মেয়েকে নিয়ে খেলছে।ভাবীরা দুইজন রান্না করছে।আমার ছোট বোন টিভি দেখছে।
আমি ও প্রথমে আব্বার ইমোশনাল কথা শুনে গলে গেছিলাম।কিন্তু যখন ভিডিওটা দেখলাম নিজের বোকামির কথা ভেবে নিজেই হাসলাম"
তরু মন খারাপ করে বললো, "তবুও তুমি হিসেব করে দেখো,ওনাদের তিন ছেলে।বড় দুই ভাবী তো ওনাদের সেবাযত্ন করছেই।তুমি বা তোমার পক্ষ থেকে আমি কিছু করছি না।
ওনারা যতই খারাপ হোক তোমার তো বাবা মা।তুমি তাদের কাছে ঋণী। বছরের কিছু সময় ওনারা আমাদের সাথে থাকুক। "
"তুমি শাবানা হওয়ার চেষ্টা করো না তরু।তোমার বয়স কম।সংসারের নানা জটিলতা তুমি বুঝবে না।ওনারা ভীষণ ধুরন্ধর মানুষ। এমন কাজ করবে তুমি আমাকে, আমি তোমাকে অবিশ্বাস করে ফেলবো তাদের চক্রান্তে ফেঁসে গিয়ে। আমি চাই না কখনো তোমাকে ভুল বুঝতে। "
"কিন্তু আমার তো একা লাগে।আমি বাবার আদর পাই নি।আমি তোমার বাবাকে নিজের বাবার হিসেবে পেতে চাই।"
"শ্বশুর কখনো বাবা হতে পারে না তরু।শাশুড়ী কখনো মা না।এসব ন্যাকামির কথা বইতেই মানায়।৯৯% ক্ষেত্রেই হয় না।আর আমার বাবা মাকে তো আমি চিনি। আমি জানি ওরা তোমাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শেষ করে দিবে।"
"তবুও আমি চাই তারা কিছুদিন এসে থাকুক।"
"মানুষ খাল কেটে কুমির আনে,কিন্তু তুমি কুমির ভর্তি খালে ঝাঁপ দিতে চাচ্ছো তরু।তা কখনো হবে না আমি থাকতে।তুমি রাগ করলেও আমার কিছু করার নেই।আব্বা মা'কে আমি এখানে আনবো না।আমি ছুটি পেলে তোমাকে নিয়ে গিয়ে বেড়িয়ে আসবো।"
তরুর মুখ অন্ধকার হয়ে গেলো। ফাইজান তার কথা শুনছে না কেনো?
মন খারাপ করে তরু না খেয়ে উঠে গেলো। ফাইজান সেদিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে।
মনে মনে বলে, "আমি তোমাকে ভালো রাখার শপথ নিয়েছি তরু,তুমি সাময়িক কষ্ট পেলেও দীর্ঘস্থায়ী কষ্ট যাতে না পাও আমাকে তার দিকে খেয়াল রাখতে হবে।একদিন বুঝবে তোমার স্বামী তোমার কতটা ভালো চায়।"

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

 Follow Now Our Google News

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

৫১ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা রাজিয়া রহমান বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর জেলায় জন্মগ্রহন করেন। লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন তিনি। তরুণ এই লেখিকা বৈবাহিক সূত্রে লক্ষ্মীপুরেই বসবাস করছেন। বর্তমানে তিনি একটি পুত্র সন্তানের জননী। পেশাগতভাবে তিনি গৃহিনী হলেও লেখালেখির প্রতি তার ভিষন ঝোক। আর তাই শত ব্যস্ততার মাঝেও শখের বশে ধারাবাহিকভাবে লিখে যাচ্ছেন একের পর এক উপন্যাস। ২০২২ সালের মধ্যদিকে গর্ভকালিন সময়ে লেখিকা হিসেবে হাতেখড়ি নিলেও এরই মধ্যে লিখে ফেলেছেন “তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর” ও “শালুক ফুলের লাঁজ নাই” -এর মতো বহুল জনপ্রিয় উপন্যাস।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন