আত্মজীবনী : জন্ম ও যোনির ইতিহাস
লেখিকা : জান্নাতুন নাঈম প্রীতি
গ্রন্থ : জন্ম ও যোনির ইতিহাস
প্রকাশকাল : ২০২৩, বইমেলা
রচনাকাল :
তরুণ লেখিকা জান্নাতুন নাঈম প্রীতির “জন্ম ও যোনির ইতিহাস” শিরোনামের এই আত্মজীবনীকা মূলক গ্রন্থটি অনলাইন মাধ্যম থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য এ গ্রন্থটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকার বিতর্কিত এ গ্রন্থটি ২০২৩ সালে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত হয়েছে।বইটির উৎসর্গে তিনি লিখেছেন, “সত্য কথা লেখা, বলা ও প্রকাশ করার দায়ে অভিযুক্ত প্রতিটি মানবাধিকার কর্মীকে, যারা না থাকলে মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে নতুন করে ভাবা হতো না আমাদের। যারা না থাকলে দুনিয়ার কারাগারগুলো জানতেই পারত না মত প্রকাশের অপরাধে একজন মানুষ হত্যাকারী আর একজন নিরীহ লেখক একই জায়গায় থাকার যোগ্যতা অর্জন করতে পারে!এবংসব ধর্মের ঈশ্বরকে যারা কেবল আমাদের যোনির ওপর খবরদারি করতে জন্মেছিলেন”
![]() |
জন্ম ও যোনির ইতিহাস || জান্নাতুন নাঈম প্রীতি |
জন্ম ও যোনির ইতিহাস || জান্নাতুন নাঈম প্রীতি (ভূমিকা পর্ব)
আমি এই পুরো বইটি লিখেছি একজন ভাসমান মানুষকে মনে রেখে। মানুষটির নাম জান্নাতুন নাঈম প্রীতি। মানুষটির সবচেয়ে বড় অপরাধ এই যে- সে তার সমাজে চলতে থাকা নানা অপরাধ আর অন্যায়ের কথা সবাইকে জানিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। এই অপরাধে তাকে এই পুরো বইটাই লিখতে হয়েছে নির্বাসনে নিজের দেশ থেকে হাজার মাইল দূরে অন্য মহাদেশে বসে যেখানে নিজের দেশের সরকার বা মৌলবাদী তার নাগাল পাবে না!
আবার সে নিজেও নাগাল পাবে না তার সমাজের, যেখানে তার একদিন অনেক কিছু ছিল। এমনকি সেখানে হয়তো আছে তার না থাকাটুকুও!
আর এই অদ্ভুত টানাটানির সম্পর্কের একটা দলিল এই বই। দেশে থাকলে সম্ভবত এই বইই তার জীবনের শেষ বই হতো। কারণ এটা লেখার পর হয় তাকে হয়তো সরকারের প্ররোচনায় জীবন্ত কুপিয়ে মারা হতো, কিংবা মধ্যরাতে বাসা থেকে সাদা পোশাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হতো কোনো নাম না জানা বধ্যভূমি বা টর্চার সেলে অথবা সবচেয়ে সম্মানজনক হতো জেলে নিয়ে গিয়ে শরীরের স্পর্শকাতর জায়গাগুলোতে ইলেকট্রিক শক দেওয়া অথবা পুলিশের দ্বারা ধর্ষণ !
এই বই লেখা শেষে তাই আমি কৃতজ্ঞ তাদের প্রতি যারা আমাকে নির্ভয়ে লেখার সাহসটুকু দিয়েছেন, পাশে দাঁড়িয়েছেন, বাংলাদেশ নামক জেলখানা থেকে উদ্ধার করে আমাকে নতুন এক পৃথিবীর সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। যেখানে আমার পরিচয়, মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে লেখালেখি করা একজন লেখক হিসেবে। যে নাম না জানা ভূখণ্ডে আমার কাঁধে হাত রাখার এত বন্ধু জুটে গেছে কাজের সুবাদেই !
বিশেষ ধন্যবাদ বিবলিওসিটির ডিরেক্টর স্টেফানিকে। আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করি না, কিন্তু মাঝে মাঝে যেসব কারণে বিশ্বাস করার সাধ হয়, সেসবের একটা অন্যতম উপলক্ষ্য সে। প্রিয় স্টেফানি, জেনে রাখো- প্যারিস আমাকে অকাতরে যেসব চমৎকার মানুষের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে, তুমি তাদের একজন। আমি জানি তুমি এইটুকু অংশ পড়েই একটা মিষ্টি হাসি দেবে। এই হাসির দাম আমার কাছে বাংলাদেশকে এক ঝলক দেখার আকুতির মতো!
বিশেষ কৃতজ্ঞতা আমার সবসময়ের সহযাত্রীকে। সে না থাকলে আমি পুরুষদের প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলতাম অনেক আগেই। যতদিন সে আমাকে এমন অকৃপণভাবে ভালোবাসবে, সবসময় বিপদের বন্ধুর এত পাশে থাকবে, ততদিন এই কৃতজ্ঞতা লিখে বোঝানো যাবে না।
কৃতজ্ঞতা আমাকে নতুন জীবন দেওয়া আইকর্ন সেক্রেটারিয়েটের প্রতিটি সদস্য- ম্যারিয়ান, এলিজাবেথ ডেইভিক, হেলজ লন্ড আর প্যারিস নামের শহরটির সাথে আমার প্রথম যোগাযোগ ম্যাগুলন, ইসাবেল সহ প্যারিসের মেয়র এন হিডেন্নো, ডেপুটি মেয়র জ লুক রোমেরো মিশেলকে যারা এই শহরের পক্ষ থেকে আমাকে নিরাপদে লেখালিখি করার ব্যবস্থা করে দিয়েছে।
আমার রেসিডেন্সি প্রোগ্রাম সিটি ইন্টারন্যাশনাল দেজ আর্টের ডিরেক্টর বেনেডিক্ট এলিয়ট, তুমি যতই মুখ গভীর করে রাখো, আমি জানি তুমি আমাকে অনেক পছন্দ করো!
অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অফিসের লরা, ভেরোনিক, ভিনসেন্ট, নাতাশা, এলিক্স, ম্যাথিউ আর আন্দ্রেই- আমি জানি এই অসমান্য থাকার জায়গাটা আমাকে ছেড়ে যেতে হবে, কিন্তু তোমাদের হৃদয় থেকে সরানো যাবে না।
আমার প্যালেস্টাইনের বন্ধু তাকি, ইমরানি, ক্রোয়েশিয়ার মিষ্টি মেয়ে নিভেস, মেসিডোনিয়ার ভিভেকা, জার্মানির নিনা, ইস্তাম্বুলের দিসেম, ইরান, ইরাক, আফগানিস্তানের ফাতিমাসহ দুনিয়ার সব প্রান্তের যে অসংখ্য বন্ধুর দেখা আমি এই বই লেখাকালে পেয়েছি তা ভুলবার নয়। ভোলার না- সারা দুনিয়ার যুদ্ধক্ষেত্রগুলো এড়িয়েও এমন এক চমৎকার জায়গায় জমায়েত হয়ে বলা 'ভিভে লা লিবার্তে ডি এক্সপ্রেশন!'
বাংলাদেশে থাকা উৎস, জুবায়ের কিংবা অবনী - জেনো তোমাদেরও কখনো ভুলিনা আমি। ভুলি না বাংলাদেশের একুশে বইমেলায় যারা অনেক দূর থেকে কষ্ট করে আসতেন আমার হাত থেকে অটোগ্রাফ পাওয়া, সামান্য কিছু বাক্য বিনিময় কিংবা একটা ছবি তোলার জন্য!
আর হ্যাঁ, এইসব প্রেরণাই আমাকে সেই প্রেরণা দেয় যার কারণে আমি বারবার বলতে চাই - বাকস্বাধীনতার জয় হোক, সব যুদ্ধ থেমে গিয়ে প্রতিটি দেশের সীমান্তে ফুল ফুটুক। তারা আকাশের দিকে মাথা উঁচু করে মানবসভ্যতার দিকে দীর্ঘশ্বাস ফেলে দ্বিখণ্ডিত পৃথিবীর অখণ্ডিত আকাশের দিকে তাকিয়ে বারবার বলুক - আকাশের কোথাও কাঁটাতার নেই, বাকস্বাধীনতা মূলত আকাশের উদার জমিনে 'স্বাধীনতা' লেখার এতই গভিড় আনন্দের!
বলতে শিখুক বাক্স্বাধীনতা এমন এক স্বাধীনতা, যেটা না থাকলে স্বাধীনতার কিছুই অবশিষ্ট থাকেনা।
জান্নাতবাসী নাঈম প্রীতি
১৬ ডিসেম্বর, ২০২২
দোতলার রিডিং রুম
শেক্সপিয়ার অ্যান্ড কোম্পানি
প্যারিস।আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
Follow Now Our Google News
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
১ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
জান্নাতুন নাঈম প্রীতি এসময়ের স্বাধীনচেতা তরুণ লেখক। পাশাপাশি শিক্ষার্থী ও শিল্পী। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চারুকলায় স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। পাশাপাশি ব্র্যান্ড এম্বাসেডর হিসেবে কাজ করছেন বিশ্বখ্যাত প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফট, সিআরআই (ইয়ং বাংলা), তরুণ স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন হিমু পরিবহণ ও জাতীয় পাঠাগার আন্দোলনের সাথে। জন্ম সেপ্টেম্বর ৪, ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দ, মাগুরা জেলায়।তিনি একাধারে ছোটোদের ও বড়দের জন্য উপন্যাস, ছোটোগল্প, প্রবন্ধ ও কবিতা লেখেন। পাশাপাশি চিত্রাংকন, বিতর্ক, আবৃত্তি ও সংগীতে বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। মাত্র সাত বছর বয়সেই ‘Anchor - প্রথম আলো গল্পলেখা প্রতিযোগিতা’য় সেরা গল্পকারের খেতাব জেতেন। উল্লেখযোগ্য পুরস্কারগুলোর মধ্যে ২০১৬ সালে আত্মজীবনী উনিশ বসন্ত'র জন্য সাহিত্যে 'বিপ্লবী চে গুয়েভেরা ইয়ুথ এ্যাওয়ার্ড, ২০১৫ সালে সংবাদ প্রতিবেদনের জন্য দ্বিতীয়বারের মতন ইউনিসেফ মীনা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড লাভ, 'জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ডে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সাহিত্যের জন্য সমগ্র সাহিত্যকর্মের উপর প্রথম পুরস্কার পাওয়া, ২০১৪ সালে ইউনিসেফ মীনা মিডিয়া এ্যাওয়ার্ড এর সৃজনশীল লেখা শাখার প্রথম পুরস্কার, Anchor - প্রথম আলো গল্পলেখা প্রতিযোগিতায় সেরাদের সেরার খেতাব; ২০০৫, ২০০৬, ২০০৮, ২০১০, ২০১১তে ঐতিহ্য আয়োজিত জাতীয় গল্পলেখা প্রতিযোগিতায় পাঁচবার অন্যতম সেরা গল্পকারের সম্মাননা, ব্রিটিশ কাউন্সিল আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতা ও আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসব আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায় পুরস্কার লাভসহ চিত্রকলা, আবৃত্তি, বিতর্ক ও সংগীতে তিনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন।পড়াশুনায় কৃতিত্বের জন্য পেয়েছেন বাংলাদেশ সরকারের সম্মাননা 'এসো বাংলাদেশ গড়ি'-এর জাতীয় পর্যায়ে কৃতী শিক্ষার্থী এ্যাওয়ার্ড, বিভাগীয় পর্যায়ে মেয়র পদকসহ বেশকিছু পুরস্কার। বেশকিছু চলচ্চিত্র ও প্রামাণ্যচিত্রেও তাঁর ভূমিকা রয়েছে- ২০১৪ সালে দিল্লির দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার জেতা 'পোস্টার' উল্লেখযোগ্য।তাঁর প্রথম গ্রন্থ শিশুদের জন্য লেখা মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বই- 'বাংলাদেশ নামটি যেভাবে হল। অন্যান্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- আত্মজীবনী “উনিশ বসন্ত', গল্পগ্রন্থ 'এইসব উড়ে আসা দিন ও শিশুতোষ গল্পগ্রন্থ 'পেন্সিলে আঁকা গল্প।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন