কবিতা : শেষ চিঠি
কবি : তিতাস মন্ডল
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
![]() |
শেষ চিঠি || তিতাস মন্ডল |
তিতাস মন্ডলের “শেষ চিঠি” শিরোনামের এই কবিতাটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক একাউন্টের দেয়াল থেকে নেওয়া হয়েছে। এই লেখার অবস্থান, প্রেক্ষাপট ও প্রকাশকাল এখন অবদি জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে তা অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের সামনে তুলে ধরা হবে।
শেষ চিঠি || তিতাস মন্ডল
খবর পাওয়া গেল ওপাড়ার একটি মেয়ে নাকি আত্মহত্যা করেছে।
কি নির্মম ভাবে শেষ করেছে 'সে' নিজেকে।
চিরতরে ঘুমন্ত নিশ্চল দেহের পাশে রয়েছে ছোট্ট একটি কাগজ।
হিজিবিজি অক্ষরে লেখা আছে, - "আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়।"
হঠাৎ উর্দ্ধশ্বাসে দৌড়ে হাঁপাতে হাঁপাতে এলো একটি ছেলে।
ভীড় ঠেলে ধীরে ধীরে বসল তার মাথার কাছে,
তারি উদ্দেশ্যে নাকি মেয়েটি
রেখে গেছে একটি চিঠি,
সাদা খামে মোড়া একান্ত ব্যক্তিগত তার "শেষ চিঠি "।
ছেলেটি সকলের অন্তরালে গিয়ে, আস্তে আস্তে খুলল চিঠিটাকে।
তারই উদ্দেশ্যে চিঠিটিতে লেখা আছে -
প্রিয়.......,
বিধ্বস্ত, বিক্ষিপ্ত
হৃদয় নিয়ে আজ তোমায় চিঠি লিখতে বসেছি।
আজ আমি একা, বড়ই একা।
রিক্ত, সিক্ত, ছিন্ন হৃদয়ের অধিকারীনি এক্কেবারে একা।
আমারও সুন্দর একটি হৃদয় ছিল।
প্রেম, আশা, আকাঙ্খা ভরা পরিপূর্ণ একটি হৃদয়।
আমিও বাঁচতে চেয়েছিলাম আর পাঁচ জনের মত।
আনন্দ আর খুশিতে ভরিয়ে দিতে চেয়েছিলাম তোমার জীবন।
হঠাৎ একদিন সুন্দর স্বপ্নগুলো কুৎসিত আকার নিয়ে সামনে এসে দাঁড়াল,
আমার দিকে আঙ্গুল তুলে বলতে লাগল সব ভূল, সব মিথ্যে।
অবাক চোখে বিস্ময়ে, হতবম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলাম তার দিকে, কারণ -
যাকে আমি ভালোবেসে ছিলাম, বিশ্বাস করেছিলাম নিজের থেকে বেশী।
আপন হৃদয় উৎসর্গ করেছিলাম নির্দ্বিধায়,
নারী জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ লজ্জা সমর্পণ করেছি যার এক ইশারায় -
সেই 'তুমি' আজ আবলীলাক্রমে অস্বিকার করে গেলে আমাদের সম্পর্ক।
তোমার কাছে ভালোবাসা নয়, ভালোলাগা, বন্ধুত্বই এই সম্পর্কের বাহক।
এক মুহূর্তে আমার স্বপ্নময় হৃদয়কে ছিন্ন-ভিন্ন করে পদতলে পিষে দিয়ে গেলে।
আমর সদ্য আঘাতপ্রাপ্ত হৃদয়টা যন্ত্রনায় ছটফট করতে লাগল।
তুমি ফিরেও তাকালেনা।
নিঃস্ব, লুন্ঠিত হৃদয়িনী আমি নিরবে চোখের জল ফেলে চলেছি,
মুখে সামান্য উঃ পর্যন্ত করিনি,
তবু মনে জিজ্ঞাসা রয়েই গেছে,
কেন এই অপমান? কেন এত অবহেলা?
কামনার তাগিদে কেন এই ভালোবাসার খেলা?
জীবনের সমস্ত সত্ত্বা দিয়ে ভালোবেসেছি তোমায়
এতোটুকু ফাঁকি নেই,
এতোটুকু নেই ছলাকলা।
কিন্তু তুমি আমার ভালোবাসা, বিশ্বাসকে গলা টিপে খুন করেছ।
ভালোবাসার মুখোশ পরে চরম ভাবে ঠকিয়েছ।
তুমি আমাকে বাঁচতে দিলেনা এই পৃথিবীতে।
কেন এমন করলে এই প্রশ্ন নিয়ে চলে যাব আমি মৃত্যুর হাত ধরে।
তোমার জন্য রেখে গেলাম আমার এই "শেষ চিঠি"।
যখন তুমি এ চিঠি পাবে, তখন - এই পৃথিবী থাকবে,
সমাজ থাকবে, তুমি থাকবে,
থাকবনা শুধু আমি।
সবাই বলবে আমি আত্মঘাতী, চোখে-মুখে ফুটে উঠবে অজস্র প্রশ্ন ।
কৌতুহলের সঙ্গে খুঁজে বেরাবে আমার অকাল মৃত্যু রহস্য।
কেউ জানবে না, কেউ না ।
শুধু তুমি জেনে রেখ........
এ আমার আত্মহত্যা নয়, এযে তোমার হাতেই হল আমার মরণ।
সুখে থেকো ।।
ইতি............
ছেলেটি চিঠিটিকে ভাঁজ করে পকেটে রাখল।
বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ মেয়েটির মুখের দিকে তাকিয়ে কি যেন ভেবে নিল,
তারপর চোখের জল মুছে হন্তদন্ত হয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
ছেলেটি সেদিন কি ভেবেছিল, কোথায় গিয়েছিল?
কিছুই আমি জানিনা, জানতেও চাইনা ।
মনে মনে একটাই প্রার্থনা করি,
এমন মর্মান্তিক ঘটনা যেন আর কোথাও না ঘটে।
এমন "শেষ চিঠি" যেন কেউ আর কখনো না লেখে।।
কবি সংক্ষেপ : কবি তিতাস মন্ডল এমনই কোনো এক বছরের ১৪ই অক্টোবর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। পরিবারের সদস্যদের কাছে তিনি উমা নামেই পরিচিত। পশ্চিমবঙ্গের সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষাজীবন সমাপ্ত করেছেন তিনি। ২০১০ সালের ১৫ আগষ্ট তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ব্যক্তিজীবনে ঘুরে বেড়াতে ও রান্না করতে পছন্দ করেন কবি তিতাস মন্ডল।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন