উপন্যাস                    :        ভাঙা বোতাম
লেখক                       :        ঋক্ষ/এফ এ শাহেদ
গ্রন্থ                          :          
প্রকাশকাল                 :        

এফ এ শাহেদ (ঋক্ষ)র “ভাঙা বোতাম” শিরোনামের এই উপন্যাসটি তার অনুরোধক্রমে কবিয়াল ডট কমে প্রকাশ করা হল। আজ প্রকাশিত হলো এই উপন্যাসটির প্রথম পর্ব।
ভাঙা বোতাম || ঋক্ষ (১ম পর্ব)
ভাঙা বোতাম || ঋক্ষ (১ম পর্ব)

ভাঙা বোতাম || ঋক্ষ

১ম পর্ব


নভেম্বর এর ৭ তারিখ, পাখি ডাকা- সোনালী রোদ ঝলমেলে শীতের সকাল। কম্বলে মুখ গুজে আধো-ঘুম-জাগরণে ’অর্ক’ চোখ খুলেও খুলছে না। হৃদয় মোহীত করা শিং-মাছের ঝোলের গন্ধে ১৫ বছর আগের স্মৃতিতে লুটোপুটি খাচ্ছে অর্কের ছেলেবেলা। স্বপ্নের সুতো কেটে গরম কম্বলের ভিতর হঠাৎই বুকের উপর ঠান্ডা স্পর্শ অনুভব করল সে, সেটি শক্ত করে ধরে টান দিতেই বুকের উপর পড়ল ’লাবণী’। ভেজা চুল অর্কের মুখের উপর পড়তেই আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে, বলে উঠল- “তোমার ভেজা চুলের ঘ্রাণে, আমার হৃদয় আনমনে..”। নিজেকে ছাড়ানোর কোন ইচ্ছা না দেখিয়েই আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কানের নিচে কামড় বসিয়ে দিল লাবু।

অর্ক, লাবণী কে লাবু বলে ডাকে, ওদের বিয়ের সাত বসন্ত পার হলেও অর্কের ভালবাসায় লাবুর কাছে ৭ দিন মনে হয়। লাবুর সকাল শুরু হয় অর্কের আকস্মিক আলিঙ্গণের প্রলয় প্রেমের জোয়ারে ভেসে আসা সুখ-তরীর ডানায় ভর করে। রাত্রী নামে খাবার ঘরে ঘর্মাক্ত লাবুর খোলা পিঠে আচমকা চুমুর আকস্মিকতায় বা ঘুমঘুম চোখে কোলে তুলে, নগ্ন পায়ে আলতার ছোয়ায়। বিয়ের আগে লাবুর অনেক ভয় ছিল এরেঞ্জ ম্যারেজ নিয়ে, সে ভয় আজ আর নেই তার। অর্ককে তার জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া বলে মনে হয়। 

লাবণী 'ল'-এর ছাত্রী ওকালতীর তীব্র ইচ্ছা থাকলেও অর্কের তীব্র ভালবাসায় ভেসে গেছে সে স্বপ্ন। ওভারকোর্ট গায়ে জড়িয়ে দাপিয়ে বেড়াবে কোর্ট চত্ত্বরে, চারিদিকে ছড়িয়ে পড়বে তান নাম। সে গুলো শুধুই সুন্দর ফ্রেমে বাঁধা অতিত স্মৃতি। তার এখন স্বপ্ন শুধু অর্ক আর দু-বছরের ছেলে মুগ্ধ’কে নিয়ে। 

ইদানিং অর্ককে নিয়ে লাবু খুব চিন্তায় থাকে, দেশের রাজনৈতিক অবস্থা ভালো যাচ্ছে না। যেখানে সেখানে পুলিশ হত্যার মত ঘটনাও এখন সামান্য বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে, সাধারণ মানুষ সেখানে তো বড় অসহায়। এই বিষয়গুলো নিয়ে প্রায়ই দু-জনের তর্ক হয়। অর্ক এক সময় চুপ হয়ে যায়, শুধু হাসে। অর্ক হাসলে ওর মুখে একটা শিশু সুলভ ভাব আসে তখন লাবুর ইচ্ছে হয় ওর বুকে আছড়ে পরে লাল হয়ে উঠা নাকে কামড় বসাতে। কিন্তু তর্ক-ঝগড়া থামানোর এই চমৎকার কৌশলের কারণে অভিমান দেখিয়ে পাশের ঘরে ছেলে মুগ্ধ’র কাছে যায় সে। তবে লাবুর দুঃচিন্তা শুধু এই বিষয় গুলো নিয়ে নয়, তার চিন্তাতে নতুন কিছু যোগ হয়েছে আরো বছর তিনেক আগে। যে চিন্তাকে সে শুধু চিন্তা বলবে, না দুঃচিন্তা বলবে এখনো বুঝতে পারেনা। ওদের ছেলেটি হয়েছে অর্কের মত, যেমন সুন্দর তেমন মায়াবী। অর্ক যখন কোন বিপদজনক অপারেশনে যায় ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে কাঁদে লাবু।

অর্ক একজন ডিবির উর্দ্ধতন কর্মকর্তা। দেশের রাজনৈতিক ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশের উপর তাই তাদের সংসারের সুখ দুঃখ ভালবাসা অনেকটা নির্ভর করে। মুগ্ধ যখন থেকে তার গর্ভে ছিল সে সময় থেকেই প্রায় প্রতি মাসেই ৪-৫ দিনের জন্য দেশের বাইরে যায় অর্ক। প্রথম দিকে লাবু’র কষ্ট হলেও অর্কের ভালবাসার কাছে তা স্থায়ী হয় না। 

সে দিন শীতটা অনেক জাকিয়ে পড়ছে, তাপমাত্রা ১১ ডিগ্রীর নিচে, সাথে কুয়াশা ও হালকা বাতাস হাড়ের ভিতর অস্থিমজ্জা হীম করে দিচ্ছে। রাত ১২ টা পার হয়েছে, অর্ক আজ এখনো বাসায় ফেরেনি। লাবু, অর্কের ব্যক্তিগত নাম্বারে কল করলে, লাইন কেটে দিয়েছে। এর অর্থ হল সে গুরুত্বপূর্ণ কোন কাজে আছে, যতক্ষণ পর্যন্ত সে কল না করবে তাকে আর কল করা উচিত হবে না। সকালে অর্ক ঘড়িটা ভুল করে ফেলে গেছে আজ, সেটা হাতে নিয়ে টিকটিক শব্দের সাথে হৃদযন্ত্রের শব্দটা যেন মিলিয়ে নিচ্ছে লাবু।

মাঝে মাঝে লাবুর মানুষটা আর মানুষটার কাজের উপর খুব রাগ হয়। রাত নাই দিন নাই ব্যস্ত হয়ে যায়, এটা কি কোন জীবন..? প্রশ্ন তোলে নিজের মনের কাছে, আবার নিজেকে নিজেই বোজায় লাবু। দেশ ও মানুষের নিরপত্তা দেবার মত এমন মহৎ কাজ আর নাই, শুধু তাই নয়, অর্কের যে সম্মান তাতে সে খুবই মুগ্ধ হয়।

অর্ক রোজ রাত ৯ টায় বাসায় ফেরে। আজ ফিরতে দেরি করায় লাবু তাকে ৯ টা ৩০ এ কল করেছিল। শেষে বাধ্য হয়ে অফিসের নাম্বারে কল করে লাবু, একজন ডিউটি অফিসার রিসিভ করে, পরিচয় দিতেই সে বলে ‘ম্যাডাম, স্যার তো ৮ টার পরই বের হয়ে গেছে’। 

রাত ১ টা, লাবু -শীতের ভীতরও যেন ঘামছে, বিন্দু বিন্দু ঘাম ওর নাক আর কপাল জুড়ে চিকচিক করছে। নানা চিন্তা তার মনের কোঁণে উকি দিচ্ছে। হাতের ভিতর হাত ঘড়িটা শক্ত করে ধরে, একের পর এক বাংলা চ্যানেল সরাচ্ছে লাবু, চোখ স্থির হচ্ছে না কোন গান, নাটক বা সিনেমাতে। লাবু আবার বিদেশি কোন সিনেমা দেখে না। কিন্তু, দেশি সিনেমার অবস্থা যা নিম্ন মানের হয়ে গেছে তার সাথে প্রায়ই সোনাযায় নামকরা নায়িকা গুলো বিভিন্ন হোটেলে অপকর্ম করতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। হঠাৎই চোখ আটতে যায় একটি স্কলে, রাজধানীর মালীবাগে মাইক্র এক্সিডেন্টে ২ জন নিহত, পরিচয় জানা যাইনি। মনের অজান্তেই চোখ ঝাপসা হয়ে জলে ভরে ওঠে লাবুর, মুহুর্তেই তার মাথার ওজনটা অস্বাভাবিক মনে হয় নিজের কাছে । 

কিছু ভেবে উঠার আগেই দরজার কলিং বেল বেজে উঠে, এক লাফে উঠে দরজা খুলে দেয় লাবু.....

(চলবে)

পড়ুন পর্ব - ২



লেখক সংক্ষেপ : 

কবিয়াল

কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন