উপন্যাস                    :        ভাঙা বোতাম
লেখক                       :        ঋক্ষ/এফ এ শাহেদ
গ্রন্থ                          :          
প্রকাশকাল                 :        

এফ এ শাহেদ (ঋক্ষ)র “ভাঙা বোতাম” শিরোনামের এই উপন্যাসটি তার অনুরোধক্রমে কবিয়াল ডট কমে প্রকাশ করা হল। আজ প্রকাশিত হলো এই উপন্যাসটির প্রথম পর্ব।
ভাঙা বোতাম || ঋক্ষ (২য় পর্ব)
 ভাঙা বোতাম || ঋক্ষ (২য় পর্ব)

ভাঙা বোতাম || ঋক্ষ

২য় পর্ব



দরজা খুলে যা দেখল তা দেখার জন্য প্রস্তুত ছিল না লাবু! এক অজানা আতঙ্কে শীতল স্রোত হাড় হিম করে নেমে গেল তার পিঠ বেয়ে। দরজার ওপাশে দাড়ানো যে মানবমূর্তিটি তার রক্ত বর্ণ চোখের ভ্রু’তে কুয়াশা জমে আরো ভয়ংকর রুপ ধারণ করেছে। লেদারের কোর্টের ভিতর থেকে বরফজমা হাতের কবজীটা দেখে মনে হল রক্ত শুণ্য ফ্যাকাশে একটা ধাতব বস্তু যা ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে লাবুর দিকে। লাবুর ঘোর কাটার আগেই, মূর্তিটা এলিয়ে পড়ল তার গায়ের উপর। মূর্তিটা আর কেউ না সেটি অর্ক। ওর এমন অবস্থা দেখে মুর্হুতেই পাথরের মত জমাট বেঁধে গেছে লাবু।

খুব কষ্টে ধরে বেডে শুইয়ে দিল লাবু, এরপর গরম পানিতে তোয়ালে ভিজিয়ে সারাটা শরীর মুছিয়ে দিল। সাথে হাত পায়ের তাপমাত্রা বারাতে চলল তেল মালিশ। এরই মাঝে কখন যে ভোর হয়ে গেছে বুঝতে পারেনি লাবু, হঠাৎই আযানের সু-মধুর ধ্বনীতে সে যেন সজ্ঞা ফিরে বাস্তবিক জগতে এল। অর্কের এমন অবস্থা তাকে এতক্ষণ স্বাভাবিক জগৎ থেকে রেখেছিল অনেক দুরে, কারণ তার জগতের আর এক নাম অর্ক।

অঘোরে ঘুমাচ্ছে অর্ক, শরীরের তাপমাত্রা এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। দিনের আলো ফুটতে শুরু করছে ধরায়, রাতের নিকষ কালো আধার মুছে যাবার সাথে সাথে তার মনের গতরাতের ভয়ংকর কালো দুঃস্বপ্নটাও মুছে গেছে।  

সকালের খাবারের কথা মনে পড়তেই কম্বলটা আর একটু অর্কের বুকের দিকে টেনে দিয়ে রান্নাঘরের দিকে তাকাল লাবু। ঠিক সে সময়ই একটা মিষ্টি গন্ধ নাকে গেল লাবুর, গন্ধটা লেডিস পারফিউমের, সেটি আসছে আসলে ওরই নিজের বুক থেকেই। তার মনে হল গন্ধটা আসলে তখনই নয়, আরো আগেই তাদের ঘরে যুক্ত হয়েছে।

অর্কের ওই পরিস্থিতে আসলে তার চেতনা শক্তি সেটা উপলদ্ধি করার মত অবস্থাতে ছিল না। কিন্তু, এ ধরনের কোন সুগন্ধী সে বা অর্ক কেউই ব্যবহার করে না। কিছুক্ষন এদিক সেদিক করতেই বুজতে পরল গন্ধটা আরো গাড় ভাবে আসছে কম্বলের নিচ থেকে।

আবারও বেডের উপর বসে অর্কের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে আলতো করে কপালে চুমু খেয়ে রান্নার জন্য বের হল সে। আজ লাবু রান্না করবে অর্কের পছন্দের শরিষা ইলিশ আর গরুর মাংসের ভূনা।

সকাল ১০টা, খাবার টেবিলে বসে অর্ক ও লাবু। গত রাতে লাবুর উপর যে কি রকম ধকল গেছে তা বুঝতে পারছে অর্ক। এক রাতেই ওর চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট। লাবু অর্কের প্লেটে শরিষা ইলিশ তুলতে তুলতে প্রশ্ন করল গত রাতে কি হয়েছিল তোমার ? এমন উৎভ্রান্তের মত গভীর রাতে বাসায় ফিরেছ, শেষ শক্তিটুকুও যেন হারিয়ে ফেলেছিল তুমি!

অর্ক চেয়ারটা সরিয়ে লাবুর কপালে চুমু দিয়ে, ঢোক গিলে বলতে শুরু করে গত রাতের ঘটনা, “গত রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে একাই বের হয়েছিলাম একটা মাদক চোরাকারবারির আস্তানাতে তথ্য নিতে। ঠিক আমি যখন সেখান থেকে বের হব, এমন সময় তাদের এক জনের চোখে পরি, আর সেখান থেকে আসতেই আমার এ অবস্থা।”

গোয়েন্দাদের কিছু বিধি নিষেধ আছে, তাই চাইলেও বিস্তারিত জানতে পারে না লাবু। তবু ওর গতরাতের মিষ্টি গন্ধ সম্পর্কে খুব জানতে ইচ্ছে হচ্ছিল। হঠাৎই অর্ক চেয়ার ছেড়ে লাবুকে জড়িয়ে ধরল, ঝাপটে ধরে লাবুকে বলল তোমার ও চোখে আমার জন্য যে ভালবাসা দেখেছি তাতে তোমাকে পেয়ে আমি ধন্য। আর কখনো এমন কোন অভিযানে আমি একা যাব না, কথা দিলাম। লাবু হাসি মুখে তার হাত ছাড়িয়ে বলল “হুম... হয়েছে স্যার, এখন আপনার খাবার শেষ করেন, অনেক কষ্টে আপনার পছন্দের খাবার গুলো রান্না করেছি।”

অর্ক বরাবরই লাবুর খাবারের ভক্ত, খুব তৃপ্তি নিয়ে খাবার শেষ করে টেবিল ছেড়ে উঠতে উঠতে বলল, “আগামী বুধবার আমি দেশের বাইরে যাব, তিন বা চার দিন থাকব। কোন দেশে যাচ্ছি এয়ারপোর্টে যাবার পর তোমাকে বলব।”

অর্ক প্রতি মাসেই এক-বার দেশের বাইরের যায়। তবে, প্রতিবারই লাবুর মনে কেমন একটা অশুভ ছায়া পাখি ডাকাডাকি করে। তার এই নিয়ম করে বাইরে যাওয়া নিয়ে নানা প্রশ্ন জাগে মনে।  

মাঝেই মাঝেই মনে হয় কোন কাজে না, বিশেষ কোন উদ্দেশ্য নিয়ে তিন-চার দিন পুরোপুরি আলাদা থাকে সে। হাজারো প্রশ্ন মনের ভিতর উকি দিলেও, অর্কের প্রতি ভালবাসার দমকা হাওয়া তা সাময়িক সরিয়ে দেয়। সাময়িক শান্তি পেলেও, দিন দিন সন্ধেহের বীজ অঙ্কুর থেকে ক্রমশ ডাল-পালা মেলছে।

কিন্তু পরক্ষনেই অর্কের মায়া-ভরা মুখ চোখে ভাসতেই নিজেই নিজেকে ধিক্কার দেয় লাবু । যে মানুষটি এত ভালবাসে তাকে নিয়ে এসব ভাবাও পাপ । কিন্তু, কিছু বিষয় জানার আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে লাবুর।  

বুধবার সকাল দশটা। লাবু আর অর্ক ঢাকা বিমানবন্দরে পৌছাল। লাবুকে জড়িয়ে তাদের ছেলের মুখে চুমু দিয়ে বিদায় জানাল অর্ক। লাবুও তার খাবার-দাবার সহ নিজের প্রতি খেয়াল রাখতে বলে বিদায় জানাল। ভি আই পি গেটের কাছে গিয়ে পিছন ফিরে হাত নাড়াল অর্ক, লাবুও হাত নাড়িয়ে বের হল বিমানবন্দর থেকে। অর্ক এবার নেপাল যাবে, প্রতিমাসেই সে ভিন্ন ভিন্ন দেশে যায়, তবে সে তালিকায় এশিয়ার দেশগুলোই বেশি।

এয়ারপোর্ট থেকে বের হতেই জ্যামে পড়ল লাবুর গাড়ি। ছেলেটা জ্যামের ভিতর গাড়িতে খুবই অস্থিরতা করে। ড্রাইভারকে গাড়ির এসি’টা কমিয়ে গান ছেড়ে জুস আনতে বলে লাবু। সাত-সকাল জ্যামের কারণ জানল সে, বিমানবন্দরে কোন এক দেশের প্রধানমন্ত্রীর আগমণ ঘটেছে যার জন্যই রাস্তা বন্ধ রেখে চলছে জোর সুরক্ষা ব্যবস্থা। তাদের অপর পাশের রাস্তা পুরোটাই ফাকা, হঠাৎই লাবুর যেন মনে হল পাশের ফাকা রাস্তাটি ধরে যে গাড়িগুলো সজোরে ছুটে চলছে তারই একটি সাদা গাড়ির .................

(চলবে)

৩য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন


লেখক সংক্ষেপ : 

কবিয়াল

কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন