গল্প : পড়শি
গল্পকার : সিকদার ডায়মন্ড
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
তরুণ গল্পকার সিকদার ডায়মন্ড'র “পড়শি” শিরোনামের এই ছোট গল্পটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক একাউন্ট থেকে নেয়া হয়েছে। তবে অনবদ্য এ গল্পের অবস্থান ও প্রেক্ষাপট এখন অবদি জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে তা অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের সামনে তুলে ধরা হবে।
![]() |
পড়শি || সিকদার ডায়মন্ড |
পড়শি || সিকদার ডায়মন্ড
বায়ান্ন বাজার তিপান্ন গলির শহর ঢাকা। ঢাকা বলতে এখানে পুরান ঢাকাকেই বুঝানো হয়েছে। চারশো বছর বয়সের সেই ঢাকা আজ বড় হতে হতে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মেগাসিটির একটি। বাহান্ন বাজার ও তিপ্পান্ন গলির অলিতে গলিতে বাসায় ছাঁদে দেয়ালে রয়েছে হাজারো না বলা গল্প। এমনই একটি গল্প আজ আমরা আপনাদের সাথে শেয়ার করব।
আমি তিলোত্তমা। বাবা ও ছোটবোন নিয়ে আমাদের সংসার। মায়ের মৃত্যুর পর বাবা সংসার আগলে রেখেছেন। আমাদের মানুষ করেছেন। বাবা ব্যাবসা নিয়ে ব্যাস্ত থাকেন। ছোটবোন প্রমাকে দেখে রাখা ও সংসারের কাজ কর্ম ভালো মন্দ আমাকেই দেখতে হয়।
একদিন বিকেলে ছাঁদে গিয়ে দেখি, প্রমা পাশের বাসার একজনের সাথে খুব হেসে হেসে কথা বলছে। আমার সন্দেহ হয়। এটা ভুলের বয়স, ও আবার কোন ভুল করছে না তো? প্রমাকে আমি কিছুই বুঝতে দেইনা। পাশের বাসার ছাঁদে থাকা ছেলেটাকে ডেকে শাসিয়ে দেই। সে কিছুই বলেনা হাসে, তার হাসি দেখে আমার মেজাজ গরম হয়ে যায়। শেষে সে বলে আপনার কোথাও একটা ভুল হচ্ছে।
একদিন দুইদিন নয়, এরকম কয়েকদিন ঘটে। অবশেষে প্রমাকে আমি শাসাই। বাবাকে জানিয়ে দেব বলে ছেলেটিকেও ওয়ার্নিং দেই। কিন্তু ছেলেটির একই কথা। আপনি ভুল করছেন কোথাও। আমি রাগে ক্ষোভে ভুল সঠিকের হিসাব করতে যাইনা। শুধু বলি আর একবার উল্টাপাল্টা কিছু হলে আপনাকে বিচারের কাঠগড়ায় দাড়াতে হবে; মহল্লার সবাইকে জানিয়ে দেয়া হবে। তবুও ছেলেটির একই কথা। আপনি ভুল করছেন কোথাও।
প্রমাকে আমি চোখে চোখে রাখি। ছাঁদে যেতে দেইনা। ওর মন খারাপ হয়। একদিন ঘুম থেকে উঠে দেখি প্রমা নেই। চিরকুট রেখে গ্যাছে। প্রেমিকের হাত ধরে চলে গেলাম উল্লেখ করে। আমি দৌড়ে ছেলেটির বাসায় যাই। গিয়ে দেখি সে ঘুমাচ্ছে। আমি তাকে জাগাই, তাকে বকাঝকা করি। সে বলে আপনি এখনও বুঝতে পারলেন না, আমি যদি আপনার বোনকে নিয়েই পালিয়েছি; তবে আপনার সামনে কি আমার ভুত বসে আছে?
ছেলেটি আমার সাথে বের হয়, প্রমাকে খুঁজতে সহায়তা করে। সারাদিন খুজাখুজির পর যখন ক্লান্ত হয়ে ছাঁদে বসে আছি আমি আর পড়শি, তখন দেখি নিচে প্রমা আরেকটি ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ফিরছে। ওর গাঁয়ে ব্যান্ডেজ। আমরা দ্রুত ওদের তুলে নিয়ে আসি। প্রমা বলে, আপা তুমি আমার জন্যে অনেক করেছো। কিন্তু আমারও বয়স হয়েছে, আমার জন্যে তুমি নিজের ফিউচারের কথাও ভাবোনি। যতো সম্বন্ধ এসেছে ফিরিয়ে দিয়েছ। তাই চেয়েছিলাম আমার দায় থেকে তোমাকে মুক্তি দিতে। কিন্তু রাস্তায় বাইক এক্সিডেন্টের কারনে আমাকে ফেরত আসতে হল। প্রমা তার প্রেমিকের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় আমাকে।
ওরা বসার ঘরে যায়। আমি পড়শি ছেলেটাকে জরিয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদি। পরে খেয়াল হতেই লজ্জায় ডুবে যাই। তাকে বলি ও আমার বোন না, নিজের মেয়ের মতো। মা মরার পর এতোটুকু বাচ্চা ছিল। কখন বড় হয়ে গেছে বুঝতেই পারিনি। মাঝে আপনার সাথে অনেক খারাপ ব্যাবহার করেছি। ক্ষমা করবেন। ছেলেটি হাসে, হেসে চলে যেতে উদ্যত হয়। আমি তার নাম জিজ্ঞেস করি। সে জানায় সে কিন্তু একজনকে মনে মনে ভালোবাসে বলেই ছাঁদে দাঁড়াত। আমি জনাতে চাইলে সে আমার কাছে এসে আমার দুই বাহুতে হাত দিয়ে ধরে বলে, বিয়ে করবেন আমাকে? পড়শির ঘরের ঘরনি হবেন? ছাঁদে এলে বাবা ও বোনকে দেখতে পাবেন। আমি একটু ভাবনায় পড়ে যাই। বাবা এসে বলেন, পোলাডা খারাপ না; ওরে আমার পছন্দ অইছে। আমি বাবার কাধে মাথা রেখে আড়চোখে পড়শির দিকে তাকাই। আমি এখনও তার নাম জানিনা, আজ রাতেই আমার ও বোনের একসাথে বিয়ে। আমাদের জন্য দোয়া করবেন সবাই।
লেখক সংক্ষেপ :
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন