কবিতা : ভ্রমণযাত্রা
কবি : আবুল হাসান
গ্রন্থ : আবুল হাসানের অগ্রন্থিত কবিতা
প্রকাশকাল : ১৯৮৫ ইং
রচনাকাল :
ক্ষণজন্মা বিখ্যাত কবি আবুল হাসানের “ভ্রমণযাত্রা” শিরোনামের এই কবিতাটি তার মৃত্যুর পর ১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ‘আবুল হাসানের অগ্রন্থিত কবিতা’ কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে। তবে তিনি কবে নাগাদ এ কবিতাটি লিখেছেন তা এখন অবদি জানা যায়নি। জানতে পারলে অবশ্যই তা কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে।
![]() |
ভ্রমণযাত্রা || আবুল হাসান |
ভ্রমণযাত্রা || আবুল হাসান
এইভাবে ভ্রমণে যাওয়া ঠিক হয় নি, আমি ভুল করেছিলাম!
করাতকলের কাছে কাঠচেরাইয়ের শব্দে জেগেছিল সম্ভোগের পিপাসা!
ইস্টিশানে গাড়ির বদলে ফরেস্ট সাহেবের বনবালাকে দেখে
বাড়িয়েছিলাম বুকের বনভূমি!
আমি কাঠ কাটতে গিয়ে কেটে ফেলেছিলাম আমার জন্মের আঙুল!
ঝর্নার জলের কাছে গিয়ে মনে পড়েছিল শহরে পানির কষ্ট!
স্রোতস্বিনী শব্দটি এত চঞ্চল কেন, গবেষণায় মেতেছিলাম সারাদিন
ক্ষুধাতৃষ্ণা ভুলে!
আমি উপজাতি কুমারীর করুণ নশ্বর নম্র স্তনের অপার আঘ্রাণে
প্রাচীন অনাধুনিক হয়ে গিয়েছিলাম শিশুর মতো!
আমি ভুলে গিয়েছিলাম পৃথিবীতে তিন চতুর্থাংশ লোক এখনো ক্ষুধার্ত!
আমি ভুলে গিয়েছিলাম রাজনীতি একটি কালো হরিণের নাম!
আমি ভুলে গিয়েছিলাম সব কুমারীর কৌমার্য থাকে না, যেমন
সব করাতকলের কাছে কাঠমিস্ত্রির বাড়ি, সব বনভূমিতে
বিদ্যুৎবেগবতী বাঘিনী!
যেমন সব মানুষের ভিতরে এক টুকরো নীলরঙা অসীম মানুষ!
আমি ভুলে গিয়েছিলাম বজ্রপাতের দিনে বৃক্ষদের আরো বেশি
বৃক্ষস্বভাব!
যেমন আমি ভুলে গিয়েছিলাম সব যুদ্ধই আসলে অন্তহীন
জীবনের বীজকম্প্র, যৌবনের প্রতীক!
এইভাবে ভ্রমণে যাওয়া ঠিক হয় নি আমার হৃদয়ে হয়তো কিছু
ভুলভ্রান্তি ছিল,
আমি পুষ্পের বদলে হাতে তুলে নিয়েছিলাম পাথর!
আমি ঢুকে পড়েছিলাম একটি আলোর ভিতরে, সারাদিন আর
ফিরি নি!
অন্ধকারে আমি আলোর বদলে খুঁজেছিলাম আকাশের উদাসীনতা!
মধু-র বদলে আমি মানুষের জন্য কিনতে চেয়েছিলাম মৌমাছির
সংগঠনক্ষমতা!
পথের কাছে পাখিকে দেখে মনে পড়েছিল আমার হারানো কৈশোর!
পাহাড়ে দাঁড়িয়ে মনে হয়েছিল আমি আসলেই পথ হাঁটছি,
পথিক!
তবু ভ্রমণে আবার আমি ফিরে যাব, আমি ঠিকই পথ চিনে নেব!
অনন্তের পথিকের মতো ফের টের পাব
কে আসলে সত্যিই কুমারী, কে হরিণ কে রমণী কে-বা স্ত্রীলোক!
আর ঐ যে করাতকল, ওরা কেন সারারাত কাঠচেরাই করে!
আর ঐ যে অমৃত ঝর্না, ওকে কারা বুকে এনে এতটা স্বর্গীয় শব্দে
স্রোতস্বিনী ডাকে!
লেখক সংক্ষেপ:
বিখ্যাত কবি আবুল হাসান ১৯৪৭ সালের ৪ আগস্ট অধুনা বাংলাদেশের বরিশালে জন্মগ্রহন করেন। তার মূল নাম ছিলো আবুল হোসেন মিয়া। কবি জীবনের শুরুতে আসল নামে লিখতেন তিনি। চল্লিশ দশকে বংলা ভাষার একজন বিখ্যাত কবির নাম আবুল হোসেন হওয়ায় তিনি নাম পাল্টে হয়ে যান আবুল হাসান। বৈশিষ্টহীন এই কবি বেচে ছিলেন মাত্র ২৯ বছর। এই স্বল্প সময়ে তিনি রচনা করে গেছেন অসংখ্য কালজয়ী কবিতা। তার সংক্ষিপ্ত কাব্যচর্চায় তিনি উপহার দিয়েছেন ‘রাজা যায় রাজা আসে’, ‘যে তুমি হরণ করাে এবং ‘পৃথক পালঙ্ক’-এর মতাে তিনটি উজ্জ্বল কাব্যগ্রন্থ। পেশাগত সাংবাদিক এই কবি ১৯৭৫ সালের ২৬ নভেম্বর মৃত্যুবরন করেন।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন