উপন্যাস        :         বৌপ্রিয়া
লেখিকা        :          আভা ইসলাম রাত্রি
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল    :         
রচনাকাল      :          ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ইং

লেখিকা আভা ইসলাম রাত্রির “বৌপ্রিয়া” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি তার ফেসবুক পেজে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ২১ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
বৌপ্রিয়া || আভা ইসলাম রাত্রি
বৌপ্রিয়া || আভা ইসলাম রাত্রি

১৯ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

বৌপ্রিয়া || আভা ইসলাম রাত্রি (পর্ব - ২০)



উচ্ছ্বাস হেসে বলল, ‘ আমরা কিছু করিনি এটা আমরা জানি। কিন্তু ফুলি ভেবেছে,আমরা শুধু কিছু নয়, অনেক কিছু করেছি। আহারে! কই লুকাবে তুমি আজকে? ‘

কুসুম বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করল, ‘ অনেক কিছু বলতে? ‘

উচ্ছ্বাস কিছুটা ঝুঁকে এলো কুসুমের দিকে। কানের কাছে ফিসফিস করে বলল, ‘ লাইক লিপ-কিস! ‘

কুসুম এক মুহূর্তের জন্যে বোকা বনে গেল। চোখ পিটপিট করে চেয়ে হঠাৎ করে চেঁচিয়ে উঠল, ‘ কিহ! ‘

উচ্ছ্বাস এখনো হাসছে। কুসুম মুখটা ছোট করে বলল,

‘ ফুলি যদি এখন এসব সবাইকে বলে বাসার সবাই কি মনে করবে? উফ! আপনি এখনো হাসছেন? খারাপ লোক। এমন পরিস্থিতিতে আপনার হাসি আসছে কিভাবে? ‘

উচ্ছ্বাস হাসি থামালো। মুখখানা গুরুগম্ভীর করার চেষ্টা করে বুক উচু করে বলল,

‘ হাসি থামালাম। এখন কি বসে কাদব? স্বামী স্ত্রী আমরা। নিজেদের বেডরুমে কি করছিলাম সেটা নিয়ে বাড়ির লোকেদের মাথা ব্যথা কেন থাকবে? শান্ত থাকো। ওকে? ‘

কুসুম মাথা দোলালো। উচ্ছ্বাস বিছানার দিকে এগিয়ে গেল। বিছানার উপর থেকে সাদা ফাইল হাতে নিয়ে বেরিয়ে যাবার জন্যে উদ্যত হল। কুসুম এগিয়ে এল। হাতে উচ্ছ্বাদের সেলফোন। সেলফোন উচ্ছ্বাসের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,

‘ এটা কে নিবে? ‘

উচ্ছ্বাস মৃদু হেসে সেলফোন নিয়ে পকেটে রেখে দিল। আসছি বলে বেরিয়ে গেল রুম ছেড়ে। পেছনে পেছনে কুসুমও এলো। নিচে নামতেই ফুলির ভাবির সঙ্গে খুসুরফুসুর কানে এলো। কিছু কথা কুসুমের কানেও এলো। তাতেই লজ্জায় কেমন গুটিয়ে গেল কুসুম। ভাবি কুসুম এবং উচ্ছ্বাসকে আসতে দেখে চোখ রাঙালেন ফুলিকে। ফুলি বড় ভাবির গরম চোখ দেখে মিনমিন করে সেখান থেকে সরে গেল। যাবার আগে কুসুমের কানের কাছে অপরাধবোধ নিয়ে আবার বলে গেল, ‘ আমি সত্যি কিছু দেহি নাই তো ভাবি আফা। মাফ কইরেন আমারে। ‘

কুসুম এবার হেসে ফেলল। কিছু দেখি নি, দেখি নি বলে বলে সবাইকেই কি দেখেছে বলে বেড়াচ্ছে। বোকা মানুষ। ভাবি উচ্ছ্বাসকে ব্যাগ পত্র নিয়ে বেরিয়ে যেতে দেখে এগিয়ে এলেন। বললেন,

‘ কোথায় যাচ্ছ? ‘

উচ্ছ্বাস উত্তর দিল, ‘ হসপিটাল। জরুরী প্যাশেন্ট আছে। মাকে বলে রেখো। দুপুরে আসব। ‘

তারপর কুসুমের দিকে চেয়ে ভাবিকে বলল, ‘ ওকে দেখে রেখো একটু। আমি চলে যাচ্ছি। ওর একা একা লাগতে পারে। ‘

উচ্ছ্বাসের কুসুমকে নিয়ে চিন্তা হয় দেখে ভাবি মৃদু হাসলেন। কুসুমের পাশে দাড়িয়ে বললেন, ‘ আমি দেখে রাখব ওকে। তুমি যাও। কাজ শেষ করে আসো। ‘

উচ্ছ্বাস চলে গেল। ভাবি কুসুমকে নিয়ে একটা ফাঁকা রুমে এসে বসলেন। ফ্যান ছেড়ে কুসুমকে বললেন, ‘ চুলটা শুকিয়ে নাও। নাহলে মাথা ব্যথা করবে। ‘

কুসুম যেন হাফ ছেড়ে বাঁচল। শাড়ির আঁচল মাথা থেকে সরিয়ে চুল মেলে দিল। ভাবি কুসুমের পাশে এসে বসলেন। দুজন মিলে গল্প করলেন জমিয়ে। এতেই কুসুমের মন খারাপ হু হু করে পালিয়ে গেল এক ফাঁকে।

দুপুরে খাবারের সময়ও উচ্ছ্বাস এলো না। কুসুম উচ্ছ্বাস আসবে বলে না খেয়ে ছিল। সবাই খেয়ে নিতে বললেও খেলো না সে। বিকেল ৪ টায় উচ্ছ্বাস কল করল তার মাকে। সন্ধ্যায় আসবে এবং সে খেয়ে নিয়েছে জানিয়ে ফোন রেখে দিল। তার খানিক পরই কুসুমকে কল করল। কুসুম তখন অভিমানে, অভিযোগে গরম হয়ে আছে। উচ্ছ্বাসের কল রিসিভ করে কুসুম চুপ করে বসে রইল। কেন আসছে না, ক্খন আসবে কিছুই জিজ্ঞেস করল না। কুসুমকে চুপ থাকতে দেখে উচ্ছ্বাস নিজেই খানিক ঘাবড়ে যাওয়া কণ্ঠ নিয়ে বলল,

‘ দে-দেরি হবে আসতে। খেয়ে নাও প্লিজ। ‘

কুসুম উত্তর দিল না। শুধু জিজ্ঞেস করল, ‘ খেয়েছেন? ‘

উচ্ছ্বাস মৃদু স্বরে বলল, ‘ হু। ‘

কুসুমের আর কিছুই জিজ্ঞেস করার প্রয়োজনবোধ হল না। চট করে ফোন কেটে দিয়ে খেতে বসল। রাগ, অভিমান এবং অভিযোগে খাবার গলা দিয়ে নামল না। বিয়ের পরের দিন স্বামী কাজের বাহানায় বাইরে বাইরে ঘুরে বেরালে কার মন মেজাজ ঠিক থাকবে। বিয়ের জন্যে ছুটি নিয়েছে। অথচ ঠিকই হাসপাতাল যাচ্ছে। একে ছুটি নেওয়া বলে? যাচ্ছে যাক। তাই বলে সারাদিন সেখানে থাকবে? খাবার সময়েও বাসায় আসবে না? এ কেমন কাজ? কুসুম সবাই খারাপ মনে করবে দেখে চেষ্টা করল অনেকটা খাবার। খাওয়া শেষ হলে বাড়ির কাজের লোকেরা, ভাবি আর উচ্ছ্বাসের মা মিলে সব গোছগাছ করছিলেন। কুসুম নিজেও কিছুটা সাহায্য করল। রান্নাঘরে ভাবি আছেন শুধু। কুসুম ভাবির পাশে দাড়িয়ে উচ্ছ্বা সের বাবার জন্যে চা বানাচ্ছে। ভাবি কাজ করার ফাঁকে জিজ্ঞেস করলেন,

‘ মন খারাপ নাকি? ‘

কুসুম মৃদু স্বরে বলল, ‘ না। ‘

ভাবি বললেন, ‘ উচ্ছ্বাস ডাক্তার মানুষ। ডাক্তারদের সঙ্গে থাকলে এসব অভ্যাস করে নিতে হবে। ঠিকমত বাসায় না আসা, মধ্যরাতে হুট করে বিছানা ছেড়ে হসপিটাল যাওয়া, মাঝেমধ্যে নাইট আউট, ডিনার ক্যান্সেল করতে হবে। রোগী এলে পরিবার ছেড়ে রোগীর কাছে যেতে হবে। এটাই ডাক্তারদের জীবনে স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। মানিয়ে নাও। যত দ্রুত মানিয়ে নিতে পারবে তত ভালো থাকবে, সুখী থাকবে। নাহলে অযথা সংসারে ঝামেলা বাড়বে। ‘

কুসুম শুনল। কিন্তু কিছুই বললো না। চা বানিয়ে বেরিয়ে গেল রান্নাঘর থেকে।

যখন উচ্ছ্বাস এলো তখন রাত প্রায় ১ টা। কুসুম অপেক্ষা করতে করতে সবেই ঘুমিয়েছে। ঘুমন্ত কুসুমের হাতে মোবাইল। মোবাইলে ডায়াল করা উচ্ছ্বাসের নাম্বার। রাতে প্রায় কয়েকবার কুসুম কল করেছিল উচ্ছ্বাসকে। উচ্ছ্বাস কয়েকবার রিসিভ করলেও শেষবার ব্যস্ততার কারণে রিসিভ করতে পারেনি। উচ্ছ্বাস ঘরে এসে বুঝতে পারলো ঘরে এই মুহূর্তে বোম রাখা। কুসুম জেগে গেলেই বিপদ। বোম ফাটতে দু মিনিট সময় নেবে না। উচ্ছ্বাস শব্দ না করে ঘড়ি খুলে টেবিলে রাখল। শার্ট প্যান্ট পাল্টে হাফ ট্রাউজার আর টিশার্ট পরল। কুসুমের গায়ে কাথা টেনে নিজেও কুসুমের পাশে শুয়ে পরল। কুসুমের হাত থেকে ফোন নিয়ে বন্ধ করল। কুসুম প্রায় ঘেমে গেছে। তাই এসি চালিয়ে দিল। ঘুমানোর চেষ্টা করলে কুসুম ঘুমের ঘোরে এসে উচ্ছ্বাসের সঙ্গে ঘন হয়ে শুয়ে পরল। উচ্ছ্বাস কিছুটা ভরকাল। কুসুম যেন উচ্ছ্বাসের বুকের মধ্যে ঢুকে পরতে চায়। উম নিতে চায় উচ্ছ্বাস গায়ের। উচ্ছ্বাস মৃদু হাসল। হাত বাড়িয়ে কুসুমকে টেনে নিজের বুকের সঙ্গে মিশিয়ে নিল। কুসুমের মেয়েলি পিঠে হাত গলিয়ে জড়িয়ে নিল স্ত্রীকে নিজের সঙ্গে। কুসুম আরামে কয়েকবার গুঙিয়ে উঠল। উচ্ছ্বাস হেসে উঠল। বাচ্চাদের মত ঘুমায় কুসুম। শুরু থেকে বাচ্চা মেয়ে বলতে বলতে মুখে ফ্যানা তুলে ফেলা উচ্ছ্বাস আজ বুঝতে পারল কুসুম মোটেও বাচ্চা না। বরং বয়সের সঙ্গে সঙ্গে দায়িত্বশীল, বুঝদার একজন মেয়ে। কাল সকালে কি হবে ভাবতেই উচ্ছ্বাস কিছুটা শঙ্কিত। নিশ্চয়ই কালকে নিজেদের বেডরুমে কুসুম বোমা ফাটাবে। এবং সেই বোমাটা পরবে সোজা উচ্ছ্বাসের বুকে। ম্যাডাম রেগেমেগে আগুন হয়ে আছেন। আগুন থামাতে উচ্ছ্বাসকে কাল পানি হয়ে যেতে হবে। ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা পানি।
_____________________________
সকালে কুসুম আগেই উঠেছে। উচ্ছ্বাস তখনও ঘুমে কাহিল। উচ্ছ্বাসের বুকে নিজেকে দেখে কুসুম অবাক হল। পরপরই পুরোনো রাগ মাথাচাড়া দিতেই চট করে সরে এল উচ্ছ্বাসের থেকে। কুসুম আচমকা বাহুবন্ধন থেকে সরে যাওয়ায় ঘুম ছুটে গেল উচ্ছ্বাসের। পিটপিট করে চোখ মেলে তাকাল সে। কুসুম উঠে বসেছে ততক্ষণে। এলোমেলো চুল হাতখোপা করল। পেছনে শুয়ে থাকা উচ্ছ্বাসও উঠে বসেছে। খ্যাঁক-খ্যাঁক করে গলা কেশে কুসুমের মনোযোগ পাবার চেষ্টা করল। তাতে বিশেষ লাভ হল না। কুসুম একবারও তাকালও না উচ্ছ্বাসের দিকে। বিছানা থেকে নেমে শাড়ি নিয়ে বাথরুমে চলে গেল। উচ্ছ্বাস দীর্ঘশ্বাস ফেলল। মেয়েটা ভারী ক্ষেপেছে। যতটা ভেবেছিল তার থেকেও বেশি। কুসুম বাথরুম থেকে বের হয়েছে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ভেজা চুল ঝাড়ছে। হঠাৎ পেছন থেকে উচ্ছ্বাস কুসুমকে জড়িয়ে ধরতেই ভরকে গেল কুসুম। থরথর করে কেঁপে উঠল সর্বাঙ্গ তার। হাত থেকে টাওয়াল খসে পরে গেল। ঘাড়ে উচ্ছ্বাসের গরম নিঃশ্বাস অনুভব করল। সঙ্গে অনুভব করলে মৃদু নেশালো এক কন্ঠ,

‘ স-সরি কুসুম। ‘


 আপনার গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্যটি কমেন্ট বক্সে জানান

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে.....

২১ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আভা ইসলাম রাত্রি সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে তা অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হবে। তবে তিনি তার ফেসবুক পেজে নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, “গল্প লেখে সে, কলমের কালিতে কল্পনার চিত্র আঁকিবুকি করা তার নেশা! অক্ষরের ভাজে লুকায়িত এক কল্পপ্রেয়সী!”

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

1 মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন