উপন্যাস : তোমায় ঘিরে
লেখিকা : জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ০৬ অক্টোবর, ২০২২ ইং
লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরানের “তোমায় ঘিরে” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের অক্টোবরের ৬ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
তোমায় ঘিরে || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান |
৩৬তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
তোমায় ঘিরে || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান (পর্ব - ৩৭)
_তুমি কি সত্যিই বলছো আরাফ!মজা নিচ্ছো না তো।
_মজা নেয়ার মতো ব্যাপার না বাবা।
_আমার মনে হয় আমাদের কোনো বড় আলেম মাওলানা সাথে কথা বলা উচিত।
_আমি এটা চাচ্ছি না বাবা।
_কেন!!?
_বড় বড় আলেম মাওলানারা জ্বিন পালে বা বশে আনে।মেহরাব যদি সত্যিই জ্বীন জাতির রাজকুমার হয় তাহলে সবাই চাইবে তাকে বশে আনতে।আমি ওর জীবন নিয়ে ঝুঁকি নিতে পারবো না।
_তাহলে উনাকেই বলি যাকে এর আগে এনেছিলা।তোমার শিক্ষক।
_উনাকেতো আগেই বলতে পারতাম কিন্তু আমি এমনটা করি নেই।তোমার মনে আছে বাবা উনি কিন্তু পরিকে বন্দি করতে চেয়েছিল।সে এমনটা আমার ছেলেমেয়ের সাথে করবে না!!কোনো নিশ্চয়তা নেই।
_তার মানে এখন একটাই রাস্তা আছে।
_কি রাস্তা?
_তোমার বড় দাদু আমার বাবার বাবা একজন দ্বীনদার আলেম ছিলেন।তার মৃত্যুটা খুবই রহস্যজনকভাবে হয়েছিল।এটা আমি আমার বাবার কাছে শুনেছিলাম। কিন্তু বাবা কখনো আমাকে পুরোটা বলেননি। তার ঘরটা অনেক দিন যাবত বন্ধ করে রাখা হয়েছে।আর বাড়িটাও তালাবদ্ধ। আমার মনে হয় তোমার সেখানে যাওয়া দরকার। যদি কিছু পাওয়া যায়।
_তুমি কি আমাদের পরিত্যক্ত বাড়ির কথা বলছো?যেটা গ্রামে।
_হ্যা।দাদা মারা যাওয়ার পর সেটা বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল।আর আমরা ঢাকায় চলে আসি।
_আচ্ছা বাবা।আমি আজকেই রাওনা দিচ্ছি।
_আরাফ।সাবধানে যেও।আমরা কিন্তু এখনো জানি না।বাড়িটা কেন বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল।
_আল্লাহ ভরসা বাবা।আরাফাত চৌধুরী সকল রহস্য উন্মোচন করে ফিরবে। তুমি চিন্তা করো না।
_আই নো মাই সান।
_বাবা।
_হুম!
_মেহরাব বাংলাদেশের রাজনীতি চালাবে কোনো জ্বিন রাজ্যের না।এটা আরাফ চৌধুরির ওয়াদা।
আরাফ বের হয়ে গেলো।আদর চৌধুরী ভাবছে তিনি আরাফকে কথাগুলো বলে ভুল করেননিতো। কিন্তু এ ছাড়া আর কোনো উপায় ছিলো না।যতই নামকরা আলেমই হউক না কেন যত টাকা দিয়ে আনা হয়ই না কেন!মানুষের অন্তরে নিশ্চয়তা কেউই দিতে পারবে না।
আরাফ নিজের রুমে ফিরে দেখে নবনি শুয়ে আছে।আর বাবুদেরও কোনো সারাশব্দ নেই।
আরাফ নবনির কপালে চুমু দিলো।তারপর পেটেও চুমু দিলো।আরাফ নবনিকে জড়িয়ে ধরে পাশে শুয়ে পরলো।কালকের দিনটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ আরাফ এর জন্য।
সকাল বেলাঃ
বাবুদের ডাকে আরাফ এর ঘুম ভাংলো।
মেহরাবঃবাবা।উঠো না।আম্মুর পেট ব্যাথা করছে।
আদ্রিতাঃআম্মু কাদছে আব্বু।উঠো আব্বুউউ।
আরাফ হকচকিয়ে উঠলো। আরাফ উঠে দেখলো নবনি পেট ধরে কুকাচ্ছে।নবনিরর পেট অনেকটা ফুলে গিয়েছে।কালকে রাত থেকেও বেশি।
আরাফঃকি হয়েছে!নবনি পাখি??কাদছো কেন!
নবনিঃব্যাথা করছে খুব। আমি নিতে পারছি না।
আরাফ নবনিকে কোলে করে নিয়ে নিচে নামলো। আদর চৌধুরী গাড়ি ড্রাইভ করছেন।আরাফ আর আদর চৌধুরী নবনিকে হাসপাতালে নিয়ে গেলো।।
হাসপাতালের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে আরাফ।একটু আগেই ডাক্টার নবনিকে ভিতরে নিয়ে গেলো।এখনো পর্যন্ত কোনো খবর পায় নাই ভিতরে কি হচ্ছে।
আরাফ অস্থির হয়ে আছে।পুরো হাসপাতালে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পায়চারি করছে।
কিছুক্ষন পর ডাক্টার বের হয়ে আসলো।
আরাফঃডক্টর। Is She Alright?
ডক্টরঃআমি আপনাকে আগেই বলেছিলাম নবনি বেবিরা উলটো হয়ে গিয়েছিল।তাদেরকে ঠিক পজিশনে আনার জন্য সময় লাগবে।কিন্তু সেই সময়টা নবনি পাবে না।কারন আমি আমার সারাজীবন এ এমন কিছু দেখি নেই।বেবি গুলো অস্বাভাবিক ভাবে বড় হয়ে গিয়েছে।৭ মাস হলেও এরা ৯ মাস এর বাবুদের মতো ম্যাচিউর হয়ে গিয়েছে।আমাদের আজকেই ডিলেভেরি করতে হবে।নবনি আর ওদের পেটে রাখতে পারবেনা।দোয়া করেন নবনি যাতে সুস্থ ভাবে বাবুদের দুনিয়ায় আনতে পারে।ওর অবস্থা খুবই খারাপ।
আরাফ কথাটা শুনে স্থির হয়ে গেলো।ডক্টর ভিতরে চলে গেলো।
আদর চৌধুরীঃকিছু হবে না আরাফ। ধৈয্য ধরো।
আরাফঃআর কত ধৈয্য ধরবো বাবা।আর কত।একটার পর একটা সমস্যা আসতেই আছে।
আরাফ তার বাবাকে জড়িয়ে ধরলো।আরাফ এর শক্ত চোখগুলো থেকে এক ফোটা পানি তার বাবার কাধে পরলো।আদর চৌধুরীর মন ভেংগে চুরমার হয়ে যাচ্ছে।এমন একদিন নবনিকে আরাফ এর জন্য কাদতে দেখেছিলো।আজ আরাফকে নবনির জন্য। দুইজন দুইজনকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে।একজন এর আঘাতে আর এক জন এমনেতেই আহত হয়ে যায়।আল্লাহ না করে নবনির কিছু হয়।নবনির কিছু হলে আরাফকে বাচানো যাবে না।
আরাফ অপারেশন থিয়েটর এর বাতিটার দিকে স্থির ভাবে তাকিয়ে আছে।আদর চৌধুরী পাশেই আরাফকে ঘেষে বসে আছেন।
আরাফ এর কানে তার বাচ্চার আব্বু ডাকটা ভাসছে।ভাসছে দুষ্টুমি গুলো।নবনিকে ঘিরে সব স্মৃতি চোখের সামনে ভেসে উঠছে।যাদেরকে ঘিরে আমি তারা ভিতরে জীবন যুদ্ধ করছে আর আমি বসে আছি।
আরাফঃআমার ভালোবাসায় কি কমতি ছিল বাবা!!আমাকে কেন এমন শাস্তি দেয়া হলো।
আদর চৌধুরীর কাছে কোনো উত্তর নেই ছেলের প্রশ্নের।
নিলয় আর ওয়ারদা এসে দাঁড়ায় আরাফ এর সামনে। আরাফ এক পলক তাকিয়ে মুখ ফিরিয়ে নেয়।বড্ড অভিমান জমা হয়েছে আরাফ এর মনে।সে দিন ওয়ারদা নবনিকে বিপদে না ঢেলে দিলে আজ এই দিন দেখতে হতো না।নিলয়কেও আজকাল খুব একটা ভালো লাগে না।হয়তো ওয়ারদার স্বামী তাই।তাছাড়াও আরাফ এর এখন নিজেকেই দায়ী মনে হচ্ছে সবকিছুর জন্য।সে যদি রাগ দেখিয়ে বের না হতো তাহলে জ্বিনদের পাল্লায় পরতো না।সে যদি কাজ কাজ করে ব্যস্ততা না দেখাতো নবনিকে সেদিন একা সিয়াম তিশাকে ফেস করতে হতো না।
নিলয় আরাফ এর দিকে তাকিয়ে আছে কিন্তু কিছু বলার সাহস হচ্ছে না।কি করেই বা বলবে বন্ধু আমি আছি।সে কি আসলেই আছে!!ওই দিন সে দেশে থাকলে হয়তো ওয়ারদা নবনিকে বিপদে ফেলতো না।দোষটাতো তার নিজের ও আছে।
ওয়ারদা এক কোনে দাঁড়িয়ে আছে।নিজের কর্মগুলো চোখের সামনে ভাসছে।বাবা মা মারা যাওয়ার পর নবনি ওয়ারদাকে আপন বোন থেকেও বেশি ভালোবেসেছিল।সবসময় নিজের আগে ওয়ারদার ভালোটুকু ভাবতো। আজ সেই মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে।কারন একমাত্র সে নিজে।
তিনটা মানুষ নিজেকে সমানভাবে দোষী মনে করছে।আর ভিতরে যে মানুষটা মৃত্যুর সাথে লড়ছে সেই মানুষটা নিঃস্বার্থভাবে এদেরকে ভালোবেসে গেলো।বিনা দোষে সে আজ কঠিন শাস্তিতে দন্ডিত। সকলে চাতক পাখির মতো অপারেশন থিয়েটারের লাল বাতির দিকে তাকিয়ে আছে।একটু যদি আশার আলো খুজে পায়।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
চলবে ...
৩৮তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে তিনি নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, আমি আমার মতো। আমি কারো মতো না। আমি আমিতেই পারফেক্ট। যারা আমাকে এমনভাবে গ্রহণ করতে পারবে, তারাই আমার আপন।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন