উপন্যাস : অধ্যায়টা তুমিময়
লেখিকা : জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ২৯ অক্টোবর, ২০২২ ইং
লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরানের “অধ্যায়টা তুমিময়” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের অক্টোবরের ২৯ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
অধ্যায়টা তুমিময় || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান |
অধ্যায়টা তুমিময় || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান (পর্ব - ০১)
_আম্মু আজকে ঈদের দিন। এভাবে বাসায় পরে থাকতে ভালো লাগে না।তোমরাতো ঘুরতে নিয়ে যাবা না।আমাকেতো আপুদের সাথে ঘুরতে যেতে দাও।
_কোথাও যেতে হবে না।ঘরে কত কাজ আছে দেখেছিস!!ঘরের কাজ কর।ঈদ স্পেশাল কিছু না যে ঘুরে বেড়াতে হবে।
_সবসময় এমন করো। আমাকে খালি খাচায় বন্দি করে রাখো।ভাল্লাগেনা। কেন যে আমি এখানে জন্ম নিয়েছিলাম।
আমি কাদতে কাদতে নিজের রুমে চলে আসলাম।
(আমি জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান।সবাই আমাকে সিমরান নাম এই ডাকে। এইবার দশম শ্রেণিতে পড়ি।)
সিমরানঃকিছুদিন পরই ফাইনাল পরিক্ষা।এত বড় হয়ে গেলাম তবুও আমার জীবন চার দেয়ালে আটকানো।এর বাইরে জগৎটা আমার অচেনাই রয়ে গেলো।আম্মু আমাকে কোথাও যেতে দেয় না।আমার মামাতো বোনরা সবাই শহীদ মিনারে গিয়েছে।ঘুরতে আর আমি এখানে পরে আছি।
কখন কাদতে কাদতে ঘুমিয়ে পরলাম জানি না।কিছুক্ষন পর কে জানি আমাকে ডাকতে লাগলো।
সিমরানঃউফফ।এখন কি ঘুমাতেও দিবা না আম্মু!!
_আম্মু না আমিই।উঠ না।কত ঘুমাবি!!?
কাচা ঘুমটা ভেঙে দেওয়ায় আমি চরম লেভেলের বিরক্ত!!কিন্তু চোখ খুলে সামনে মানুষটাকে দেখে সব বিরক্ততা হাওয়ায় মিশে গেলো।
_আপু।তুমি!! তুমি না। শশুড়বাড়ি গিয়েছিলা।এত তাড়াতাড়ি কি করে এসে পরলে?!!
_আকাশ বলেছে এখানে কেক কাটবে। তাই এসে পরেছি।তুই তাড়াতাড়ি রেডি হ।আমার শশুড়বাড়ির মানুষ এসে পরবে।
_Oh no.আজকে তো তোমার জন্মদিন। হ্যাপি বার্থডে মিষ্টি আপু।
_তুই তো কালকে ফেসবুকে উইশ করেছিলি।
_কি করবো বলো।তোমাকে ফ্লাটে যেয়ে পাই না পরে কল দিয়ে পাচ্ছিলাম না।তাই ফেসবুকেই উইশ করে দিলাম।
_হ্যা।আসলে কালকে রাতে আকাশের সাথে ছিলাম তো। ওই বাসায় রাতে ১২ টায় কেক কাটা হয়।এখন এই বাসায় সন্ধ্যা সময় কাটবে।
_You are so lucky.
_তুই ও তো লাকি।কারন আমি তোকে আমার দেবরানি বানাবো।
_আমার বয়েই গেছে। তোমার দেবরানি হতে।
_আচ্ছা। আজকে তোকে ওর সাথে দেখা করাবো।আমি যাই ওরা এসে পরেছে।
আপু চলে গেল।আমিতো রেডি হয়েই ঘুমিয়ে ছিলাম। তাই উঠে চুলটা আচড়ে নিলাম।এতক্ষন যার সাথে কথা বলছিলাম সে হলো মিষ্টি আপু।আমার পাশের ফ্লাটে থাকে। বাড়িওয়ালার মেয়ে।আমাদের বাসা বানাচ্ছে। তাই আমরা এখানে ভাড়া থাকছি।ইনি হলেন আমার একমাত্র কথার বলার সাথী।ইনি না থাকলেতো আমি একা একা দম বদ্ধ হয়ে মারাই যেতাম।যাই হউক যেয়ে দেখে আসি।আর ভাইয়ার সাথে ও কথা বলে আসি।
আয়নার সামনে নিজেকে একবার দেখে নিলাম।
_আপু যেমন করে বললো মনে হয় আমাকে দেখতে আসছে।ঢং।
আপুর ফ্লাটে যেয়ে দেখি।খাটে আপুর শাশুড়ী শশুড় ভাইয়া বসে আছে। আর সোফায় আপুর দেবর।এক বার তাকিয়ে আর তাকাই নাই।
_রেড গাউন পরা, চুল গুলো খোপায় বাধা একটা মেয়ে ভাবির ফ্লাটে আসলো। কিন্তু মেয়েটাকে তো চিনছি না।কে এই মেয়ে!!একে তো আগে কখনো দেখি নেই।পরিচয়টা কি!!আচ্ছা এর পরিচয়টা পরে জানা যাবে।আপনাদের আমার পরিচয় দেই।
[আমি আফিফ আরহাম ফাইয়াজ।আমার মা বাবার ছোট ছেলে।বড়টা আকাশ ভাইয়া।যার স্ত্রী মানে আমার ভাবির জন্মদিনে আমরা এখানে এসেছি।]
এখন এই মেয়েটার পরিচয় জানা দরকার। ভাইয়াতো বউ নিয়ে ব্যস্ত।মেয়েটা এক কোনায় দাঁড়িয়ে আছে।আমি ভাইয়াকে খোচা মারলাম।
আফিফঃভাইয়া।
আকাশঃকি!!
আফিফঃওই মেয়েটাকে!!
আকাশঃআমি কি জানি!!
ভাইয়ার পাশ থেকে ভাবি বলে উঠলো~
মিষ্টিঃআরে ওইতো সিমরান।যার কথা তোমাকে বলেছিলাম আমি আকাশ।
আকাশঃওহ ওই মেয়েটা!!
আফিফঃকোন মেয়েটা????
ভাইয়া আমার কথা পাত্তা না দিয়ে মেয়েটার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে মারলো~
আকাশঃতো তুমিই সে যার কথা বলতে বলতে মিষ্টি আমার কান খেয়ে ফেলছে কাল থেকে।
সিমরানঃআমিও তো আপুর মুখে আপনার অনেক কথাই শুনেছি।ভাইয়া।
মিষ্টিঃআচ্ছা আমি পরিচয় করিয়ে দেই।
সিমরানঃনা। আমি বলি।
আমি জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান।আপুর ছোট বোনের মতো। আর আমি আপনাদের সবাইকেই চিনি। আপনি জিজু। আপনি আপুর শশুড়। আপনি আপুর শাশুড়ী। আর আপনি আপুর দেবর।
আফিফঃবাহহ!কি সুন্দর নিজের পরিচয়টা দিলো।যা বোঝা গেলো মেয়েটা খুব চঞ্চল টাইপের।(মনে মনে)
আফিফ মুচকি হাসলো।
আকাশঃইয়েস শালী সাহেবা।একদম ঠিক ধরেছো।
মিষ্টিঃচলো কেক কাটি।
সবাই কেক কাটা নিয়ে ব্যস্ত। আর আমি বোরিং ফিল করছি।
আপুর দেবর ছবি তুলছে সবার।আপু সবাইকে কেক খাওয়ানোর পর তার দেবরকে কেক খাওয়াচ্ছে।
_আমি ছবি তুলে দেই।আপনার আর আপুর। দিন ফোনটা।
_No thanks. আমি সেল্ফি নিয়ে নেই।
আফিফঃমেয়েটা ছবি তুলে দিতে চাইলো কিন্তু দরকার কি সেল্ফি তুলে নিলেইতো হয়।(মনে মনে)
অপমানে গাল লাল হয়ে গেলো আমার।
_এটিটিউড কি। আমার সাথে ভাব!! তোর সাথে জীবনেও আমার কিছু হবে না। আপুর দেবর।
এমনেই রেগে ছিলাম।তার মাঝখানে এমন একটা কান্ড ঘটলো।আমি রাগে ফেটে পরলাম।কোনো ছেলে আমার গায়ে হাত দিলে আমার প্রচন্ড রাগ উঠে এখানে আকাশ ভাইয়া আমার গালে কেক লাগিয়ে দিয়েছে।
_ভাইয়া। এটা কি করলেন।
_শালি মানে আধি ঘারওয়ালি।তা এটতো করাই যায়।
মিষ্টি আপু খিলখিল করে হাসছে।আর তার বদ দেবরটা আমার আর ভাইয়ার এই অবস্থায় একটা ছবি তুলে নিলো।
সিমরানঃতবে দেখাচ্ছি আপনাকে!!
আমি যেই লাগাতে যাবো।ভাইয়া দৌড়ে পালিয়ে গেলেন।
_ধ্যাত!
সিমরানঃআপু আমাকে টিস্যু দিলো।সেটা দিয়ে মুছেও কেমন জানি লাগছে। তাই গেলাম বেসিনে গাল পরিষ্কার করতে। ওমা এখানে দেখি আপুর দেবর আমার আগেই এসে পরেছে। আর আপুর বান্ধুবির সাথে গল্প করতে করতে হাত ধুচ্ছে তো ধুইয়েই যাচ্ছে।এখানে যে আমি দাঁড়িয়ে আছি এদের চোখেই পরছে না।ইনারা কি জানি প্রেমালাপ জুড়ে দিয়েছে। আমি এইবার রেগে নিজের ফ্লাটেই চলে গেলাম।
আমার দিকটাতো দেখলেন। চলুন এইবার আফিফ এর দিকটা দেখে আসি।
আফিফঃওই মেয়েটার সাথে ভাইয়া যা করলো তা দেখে হাসতে হাসতে পেট ফেটে যাওয়ার উপক্রম। মেয়েটা যে চেহারা বানিয়েছিল।মানে এখন যাকে পাবে তাকেই কাচা চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে মনে হচ্ছিল।তাই আমিও দেরি না করে কেটে পরলাম। বলা তো যায় না।ভাইয়ার রাগ আবার আমার উপর না ঝেড়ে দেয়।
এখানে এসে দেখি ভাবির বান্ধুবি হাত ধুচ্ছে।আমি হাত ধুইতে গেলে আমার সাথে আজিরা কথা বলতে শুরু করে।আমি ও সৌজন্য রক্ষার্থে দুই একটা উত্তর দিচ্ছি।
ঠিক সেই সময়ে আমি সেখানে গিয়েছিলাম।যা আফিফ খেয়াল করে নেই।আফিফকে দেখে রেগে আমি চলে আসি।আর আফিফ সেটা জানেও না।কারন আমি আফিফ এর উল্টো দিকে ছিলাম।
আফিফঃভাবি।বেসিনে সাবান ও নেই যে হাত ধুবো।
মিষ্টিঃদাড়াও আমি দিচ্ছি।
ভাবি হ্যান্ড ওয়াশ এনে দিলো।আমি হাত ধুয়ে সেখান থেকে কেটে পরলাম।
আফিফ হাত ধুয়ে সোফায় যেয়ে বসলো।
আফিফঃকি রে।ওই রেড গাউন এর মেয়েটা কই গেল!দেখছি না যে!!কি মেয়েরে বাবা হুট করে আসলো আবার হুট করে চলেও গেলো।
_আজকের দিনটাই খারাপ। সকাল থেকে একটার পর একটা ঘটনা হয়েই যাচ্ছে।আর আপু এটা কেমন ফ্যামিলিতে বিয়ে করেছে।আজিব প্রানি সব।আর যাবোই না।
কিন্তু এর মাঝেই এসে উঠলো আপু আর আপুর ফ্রেন্ডরা।
মিষ্টিঃসিমরান। গান ছাড় না আমরা ডান্স করি।
সিমরানঃতোমার শশুড় শাশুড়ী কিছু বলবে না!!
মিষ্টিঃআর এ আমি তো এই ফ্লাটে ডান্স করবো।
আমি আর কি করবো দিলাম গান লাগিয়ে। আপু আর আপুর ফ্রেন্ডরা ডান্স করছে।আর আমি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছি।
তারপর এরা আমাকে টেনে আবারো ওই ফ্লাটে নিয়ে গেলো। যেয়ে আমাকে ভুলেই গেলো।আপু আকাশ ভাইয়াকে নিয়ে ব্যস্ত।আর আপুর বান্ধুবিরা আপুর দেবরকে নিয়ে। সবাই মিলে তাকে ঘিরে রেখেছে। যেন সে কোনো সেলেব্রিটি। আর এদের মধ্যে একটা মেয়ে একটু বেশিই লাফাচ্ছে।যেন আপুর দেবর তার বয়ফ্রেন্ড।আমি এসব পাত্তা দিলাম না। আমারতো ইনার মধ্যে এক ফোটাও ইনটারেস্ট কাজ করছে না।আজাইরা যত্তসব। আমি বিরক্ত হয়ে আমার ফ্লাটে চলে আসলাম।
তার কিছুক্ষন পর আওয়াজ পেলাম।হয়তো তারা চলে যাচ্ছে।আম্মু সিড়ি ঘরেই ছিল।আম্মু ছেলেটাকে দেখে বললো~
ছেলেটা সুন্দর আছে।কথা বার্তায়ে ও কত মায়া।বড়টার থেকে ছোট ভাই বেশি সুন্দর।
আমার আম্মু সহজে কারো সুনাম করে না।আর যদি করে তার মানে আসলেই ছেলেটা খাটি সোনা।কারন আজ পর্যন্ত আমি আম্মুকে ছেলেদের দেখলে নাক ছিটকাতেই দেখেছি।আজকে প্রথম আম্মুর মুখ এমন কথা শুনলাম।
সিড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি। আপুর দেবর নামাজ পরতে যাবে।তাই আকাশ ভাইয়া আর উনি নামাজ পড়তে যাচ্ছেন।এতক্ষন এই ছেলেটাকে খেয়াল না করলেও কেন জানি এইবার দেখতে ইচ্ছে করলো।আমার আম্মু এপ্রুভ করেছে তাই হয়তো।
লুকিয়ে লুকিয়ে দেখলাম।ছেলেটা আসলেই দেখতে সুন্দর আর পরিপাটি। মিষ্টি কালার এর শার্ট পরায় ফর্সা গায়ের গড়ন ফুটে উঠেছে।হাতে ঘড়ি।দাড়িগুলো সুন্দর করে সেট করা।চোখে ক্লাসি চশমা। চোখে সমস্যা দেখে এই চশমা পরেছে নাকি ভাব দেখাতে ঠিক বোঝা যাচ্ছে না।বাট এক কথায় ক্রাশ খাওয়ার মতো ছেলেই বাট আমার তাতে কি।আমাকেতো সেলফি তুলতে দেয় নাই।এটিটিউড দিয়ে ভরা লোক। ভেংচি কেটে ভিতরে চলে গেলাম।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
চলবে ...
২ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে তিনি নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, আমি আমার মতো। আমি কারো মতো না। আমি আমিতেই পারফেক্ট। যারা আমাকে এমনভাবে গ্রহণ করতে পারবে, তারাই আমার আপন।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন