উপন্যাস        :         ফাগুন ছোঁয়া
লেখিকা         :         সারা মেহেক
গ্রন্থ              :         
প্রকাশকাল     :         
রচনাকাল      :         

লেখিকা সারা মেহেকের “ফাগুন ছোঁয়া” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ঠিক কবে নাগাদ লেখা শুরু করেছেন তা এখনাব্দি জানা যায়নি। তবে তা জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে।
ফাগুন ছোঁয়া || সারা মেহেক
ফাগুন ছোঁয়া || সারা মেহেক 

১ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

ফাগুন ছোঁয়া || সারা মেহেক (পর্ব - ০২)

"এক্ষুণি নিচে নামো। আমি তোমার হোস্টেলের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছি৷ "
অপরিচিত নাম্বার থেকে হঠাৎ কল রিসিভ করার পর এমন আদেশ শোনায় থতমত খেয়ে গেলো মিম। কণ্ঠটাও ঠিক চিনতে পারছে না। তাই তো তৎক্ষনাৎ জিজ্ঞেস করে বসলো,
"কে আপনি? আপনাকে চিনি না আমি। আর এভাবে আদেশ দিচ্ছেন কেনো আমায়?"
ওপাশে আদ্রিশ এক গাল হেসে বললো,
" কি মেয়ে তুমি! হবু বরের কণ্ঠটাও ঠিক চিনতে পারো না! "
মিম চমকালো। সাথে সাথে সে অনুভব করলো তার হৃৎস্পন্দন ধীরেধীরে বেড়ে চলছে। সে আশা করেনি আদ্রিশ তাকে এভাবে হুটহাট কল করে চমকে দিবে। এভাবে একের পর এক চমক পেয়ে মিম কিয়ৎক্ষণের জন্য হতবুদ্ধি হয়ে পড়লো। অতঃপর নিজেকে ধাতস্থ করে কয়েক সেকেন্ড পর বললো,
" আমার কোনো বর, হবু বর নেই। আপনার সাথে আজ কথা বলার পরও আপনি এমন করছেন কেনো?"
" আজকে তো কথা হয়নি ভালোভাবে। তোমার সাথে আরো বিস্তারিত কথা বলার ছিলো। কিন্তু তুমিই চলে গেলে। তাই বাধ্য হয়ে তোমার হোস্টেলে আসতে হলো। "
" আর কি বিস্তারিত কথা বলবেন? আমি তো বিয়েতে না বলে দিয়েছি। তাহলে এখানে দ্বিতীয় কোনো কথা বলার সুযোগ তো রইলো না৷ "
" কিন্তু আমি তো না করিনি। আমি এখনও আমার আব্বু আম্মুর সিদ্ধান্তে অটল আছি। এর মানে এই দাঁড়ায় যে, আমি তোমাকেই বিয়ে করবো। "
আদ্রিশের শেষোক্ত কথাটি মিমের কানে কর্তৃত্ব ফলানোর ন্যায় মনে হলো। এতে সে ভীষণ ক্ষি'প্ত হলো। খানিক রাগস সুরে জিজ্ঞেস করলো,
" জো'রজ'বর'দস্তি নাকি?"
মিমের রাগত স্বরের প্রশ্নের আদ্রিশ মৃদু হাসলো। কয়েক পা পিঁছিয়ে এসে হোস্টেল গেটের একেবারে সামনে অবস্থিত ফুলহীন চন্দ্রপ্রভা গাছের নিচে দাঁড়ালো। অতঃপর সিমেন্ট দিয়ে পাঁকা করা চার স্তরের ইটের গাঁথুনির উপর বসলো সে। ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো,
" তুমি জো'র'জ'বর'দস্তি মনে করলে জো'রজ'বর'দ'স্তিই।"
মিমের রাগ যেনো কমছেই না। আচ্ছা মানুষের পাল্লায় পড়লো তো সে! এ কেমন নাছোরবান্দা গোছের লোক! এর সাথে বিয়ে হলে যে সে সারাজীবনের দুঃখে কষ্টে জীবন অতিবাহিত করতে হবে তা ঢের বুঝতে পারছে সে। 
এভাবে রাগ দেখিয়ে যখন সে দেখলো আদ্রিশ কথা শোনার পাত্র নয় তখন সে অনিচ্ছা সত্ত্বেও মুখে মিষ্টি বুলি আনলো। পূর্বের তুলনায় বেশ নম্র কণ্ঠে বললো,
" দেখুন, আমি কিছুক্ষণ আগেই ওয়ার্ড থেকে ফিরেছি। এখন একটু রেস্ট নিবো। শরীরটা ক্লান্ত। আগামীকাল কথা বলি?"
আদ্রিশ পুনরায় হাসলো। মিম যে তার কথাবার্তা ও কর্মকাণ্ড দিয়ে আদ্রিশকে ভরপুর বিনোদন দিয়ে চলছে মিম নিজেও জানে না৷ জানলে বোধহয় এমন করতো না। কিন্তু আদ্রিশ যে তার কাজে ভীষণ মজা পাচ্ছে তা আদ্রিশ মিমকে বুঝতে দিতে চায় না। 
আদ্রিশ বললো,
" মিথ্যা বলো না। তুমি ওয়ার্ড থেকে ফিরেছো আরো এক ঘণ্টা আগে। সার্জারিতে আছি তার মানে এই না যে মেডিসিনের কোনো খোঁজখবর রাখি না। যাই হোক, কথা না বাড়িয়ে দ্রুত নিচে আসো। তোমার 'না' বলার আসল কারণটা না জানা পর্যন্ত আমি এখান থেকে এক পা-ও নড়বো না। সো দ্রুত নিচে নামো।"
এবার মিমের রা'গে দুঃখে মাথার চুল টেনে ছিঁড়তে মন চাইলো। হাতের মুঠো শক্ত করে দাঁতে দাঁত পিষে নিজের রা'গকে দমিত করার চেষ্টা করলো। আদ্রিশের এমন আচরণে সে যারপরনাই বিরক্ত। ফলে বিয়েতে 'না' করার সিদ্ধান্তটা সে পূর্বের তুলনায় আরো পাকাপোক্ত করে ফেললো সে। অতঃপর সে বললো,
" এই রাতে আমি নিচে নামতে পারবো না। কালকে কথা বলবো আমি। "
" আমি তোমার হোস্টেলের নিচেই দাঁড়িয়ে আছি। এমন নয় যে আমি হসপিটালে বসে তোমাকে ডাকছি। তাহলে আসতে কি প্রবলেম? আর আগামীকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করা আমার জন্য সম্ভব না। কারণ আমার কাজে কিছুতেই মন বসছে না। আর একজন মেডিকেল স্টুডেন্ট হয়ে তুমি নিশ্চয়ই চাও না যে আমার জন্য কোনো রোগীর ক্ষ'তি হোক?"
" অবশ্যই চাই না। কিন্তু কোনো রোগীর ক্ষ'তি হলে তার সম্পূর্ণ দায়ভার আপনার। আমাকে এর মধ্যে টানছেন কেনো?"
" কে বললো দায়ভার আমার? আমার এ সম্পূর্ণ অমনোযোগীতার কারণ তো তোমার ঐ একটা 'না'। এবার এতো না না করে নিচে নেমে আসো। এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে ভালো লাগছে না। স্টুডেন্টরা সব আসাযাওয়া করতে করতে আমাকে দেখছে। "
" তো কে বলেছে আপনাকে এভাবে আসতে?"
" আচ্ছা বাবা! কেউ বলেনি তো। আমিই নিজে এসেছি। এখন আমার আর ধৈর্য্যের পরীক্ষা নিও না। তুমি জানো আমার ধৈর্য্য আছে। কিন্তু এ ধৈর্য্যেরও একটা লিমিট আছে। আর আমি চাই না সে লিমিট ক্রস হোক। সো বি কুইক। "
এই বলে আদ্রিশ কল কেটে দিলো। প্রলম্বিত নিঃশ্বাস ছেড়ে বিড়বিড় করে বললো,
" এতো সহজে তোমাকে ছাড়ছি না মিশমিশ। বিয়ে করলে একমাত্র তোমাকেই করবো,এটাই ফাইনাল ডিসিশন। "
ওদিকে আদ্রিশ কল কেটে দিতেই মিম ক্ষু'ব্ধ হয়ে ফোনটা বিছানায় ছুঁড়ে ফেললো। কোন কুলক্ষণে সময় যে আদ্রিশের সাথে তার বিয়ে ঠিক হয়েছিলো আল্লাহ জানে। সে ভেবে পায় না এভাবে একটা মানুষকে কেউ কিভাবে বিরক্ত করতে পারে! সে তো বললো, সে বিয়ে করতে পারবে না। তাহলে এতে কিসের জোরাজুরি? নাহ, আজকে আদ্রিশের দফারফা করে তবেই সে দম ফেলবে। মুখের উপর সব কথা শুনিয়ে আসবে। 
এই ভাবনা নিয়েই সে বোরকা পরে রুমে তালা ঝুলিয়ে নিচে নেমে আসলো। তাকে নিচে দেখে আদ্রিশ উঠে দাঁড়ালো। মুচকি হেসে তার দিকে এগিয়ে এসে বললো,
" চলো কোথাও বসে কথা বলি। "
মিম ঝেঁঝে উঠা গলায় বললো,
" আমি অন্য কোথাও যাবো না৷ কথা বললে এখানেই বলুন। "
আদ্রিশ চোখ বুলিয়ে একবার চারপাশ দেখে নিলো। নাহ এখানে একান্তভাবে কথা বলার কোনো সুযোগ নেই। ডানে ফিরতেই তার নজর গিয়ে ঠেকলো দারোয়ানের রুমের উপর। সে এগিয়ে গিয়ে ভদ্রতাসূচক কণ্ঠে দারোয়ানকে অনুরোধ করলো,
" মামা? আমরা একটু কথা বলতে চাচ্ছিলাম। আশেপাশে কোনো জায়গা নেই তো তাই বলছিলাম আপনার বসার রুমটা আমাদের জন্য কিছু সময়ের জন্য ছেড়ে দিলে ভালো হতো। "
হোস্টেলের দারোয়ান আরামে বসে ফোনে নাটক দেখছিলো। হঠাৎ আদ্রিশের এমন অনুরোধ তিনি খানিক বিরক্ত হলেন বটে। এই শীতে এমন গরম গরম জায়গা ছেড়ে বাইরে বের হওয়া কষ্টকর একটা ব্যাপারস্যাপার। কিন্তু কি আর করার এভাবে অনুরোধ করলে কি আর ফেলা যায়? দারোয়ান উঠে দাঁড়ালো। তবুও উঠতে উঠতে মিমের দিকে সন্দেহের চাহনিতে চেয়ে রইলো। উনার এ চাহনি সংক্ষেপ চট করে বুঝে ফেললো আদ্রিশ। তৎক্ষনাৎ বললো,
" চিন্তা করবেন না মামা। বাসা থেকে আমাদের বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। কিছু কথা বলার জন্য এসেছিলাম এখানে। "
দারোয়ানের সন্দেহ এবার দূরে হলো। সে একগাল হেসে বললো,
" আচ্ছা আচ্ছা কথা বলেন মামা। সমস্যা নেই। আপনি এই হাসপাতালের ডাক্তার না?"
আদ্রিশ ভদ্রতাসূচক হাসি দিয়ে বললো,
" জি মামা। "
" আচ্ছা মামা কথা বলেন আপনারা। আমি একটু চা খেয়ে আসি। "
এই বলে দারোয়ান বেরিয়ে গেলো। তিনি বেরিয়ে যেতেই আদ্রিশ ও মিম সে রুমে বসে পড়লো। দুটো চেয়ারে দুজন মুখোমুখি বসে আছে। মিমের প্রতি আদ্রিশের চাহনি যতোটা মুগ্ধতায় ও প্রশান্তিতে ঘেরা, আদ্রিশের প্রতি মিমের চাহনি ঠিক ততোটাই বিরক্তি ও অশান্তিতে ঘেরা। এমন দুজন ব্যক্তিত্বের মানুষের বিয়ে কিভাবে হবে আর কিভাবেই বা তারা সংসার করবে তাই দেখার বিষয়।

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

৩য় পর্ব পড়তে এখানে ট্যাপ/ক্লিক করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা সারা মেহেকের মূল নাম সারা জাহান মেহেক। তিনি লেখালেখির ক্ষেত্রে শর্ট নাম হিসেবে ‘সারা মেহেক’ নামটি বেছে নিয়েছেন। এই লেখিকার ব্যাপারে এর বেশি কিছু এখন অবদি জানা যায়নি। জানতে পারলে অবশ্যই তা কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন