উপন্যাস : ফাগুন ছোঁয়া
লেখিকা : সারা মেহেক
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল :
লেখিকা সারা মেহেকের “ফাগুন ছোঁয়া” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ঠিক কবে নাগাদ লেখা শুরু করেছেন তা এখনাব্দি জানা যায়নি। তবে তা জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে।
![]() |
ফাগুন ছোঁয়া || সারা মেহেক |
৩য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
ফাগুন ছোঁয়া || সারা মেহেক (পর্ব - ০৪)
গতকাল সারারাত মিমের ঘুম হলো না। দু চোখের পাতা কিছুতেই একত্র হলো না। কারণ তার মন মস্তিষ্কে শুধু আদ্রিশের কথাগুলো ঢেউ তুলছিলো। বিয়ে নিয়ে পুনরায় ভাবনাগুলো ধাঁধা তৈরী করতে ব্যস্ত হচ্ছিলো। সে জানে, তার মনে বিয়ে নিয়ে তৈরী হওয়া এ ধাঁধার হর্তাকর্তা একমাত্র আদ্রিশ। কারণ আদ্রিশ তাকে ওসব কথা না বললে, তাকে তার যুক্তিতে সমর্থন না করলে সে এ বিয়ে নিয়ে দ্বিতীয়বার ভাবতো না। অথচ সে অবাধ্য মনের অদ্ভুত বাধ্যতায় বাধ্য হলো। কি আশ্চর্য!
আজ শুক্রবার। গতকাল রাতে দেরিতে ঘুম হওয়ায় আজ মিমের ঘুম ভাঙতে ভাঙতে প্রায় দশটা বেজে গেলো। ঘুম থেকে উঠেই তার কানে দরজায় কড়াঘাতের শব্দ ভেসে এলো। সে বিছানা হতে নেমে দরজা খুলতেই দেখলো ফারাহ দাঁড়িয়ে আছে। ফারাহ আর মিম রুমমেট। যদিও ফারাহ এর এ শহরেই বাসা। তবে পড়াশোনায় সাহায্যের জন্য সে হোস্টেলে উঠেছে। গতকাল দুপুরে ক্লাস করে সে বাসায় চলে গিয়েছিলো। কিন্তু রাতে মিম তাকে ফোন করে আদ্রিশের ব্যাপারে বলে। মিমের বিয়ে নিয়ে উৎসুক ফারাহ পারলে রাতেই চলে আসতো। কিন্তু তা সম্ভব নয় বলে আজ সকালে নাস্তা করেই হোস্টেলের উদ্দেশ্যে ছুট দিলো সে।
মিম দরজা খুলতে না খুলতেই ফারাহ হুড়মুড় করে রুমে ঢুকে পড়লো। হন্তদন্ত কণ্ঠে বললো,
" আমাকে ফাস্ট টু লাস্ট সব কিছু বলবি। কিচ্ছু যেনো মিস না যায়।"
মিম ফারাহ এর কান্ডে ভ্রুজোড়া কুঁচকিয়ে বললো,
" এতোকিছু মনে নেই। মেইন মেইন কথাগুলো বলবো শুধু। "
" উঁহু। আমি সব শুনতে চাই। এ টু জেড। "
" আচ্ছা বলছি বলছি। আগে হাতমুখ ধুয়ে আসি আমি। "
" আচ্ছা যা। তবে দেরি করবি না যেনো।"
মিম হাতমুখ ধুয়ে এসে ফারাহ এর মুখোমুখি বসে গতকালের সন্ধ্যা ও রাতের ঘটনা বললো। সবটা শুনে ফারাহ বিজ্ঞ ব্যক্তিতের ন্যায় মাথা নাড়ালো, মুখশ্রীর ঢঙ বদলালো। অতঃপর মিমকে ধমক দিয়ে বললো,
" তোকে ধরে চ'ড়া"নো দরকার। আদ্রিশ স্যারের এই রূপ দেখার পরও তোর চিন্তা করতে হয়! তোর জায়গায় আমি হলে তো তখনই উনাকে ডেকে বিয়েতে রাজি হয়ে যেতাম। উনার মতো সুপাত্র ছাড়তে চায় কোন পা'গ'লে?"
মিম শান্ত কণ্ঠে বললো,
" তুই ব্যাপারটাকে যতোটা সহজভাবে নিচ্ছিস আসলে এটা ততোটা সহজ না। তুই জানিস, আমি কি কারণে এসব থেকে পালিয়ে বেড়াই। আমি জানি, আদ্রিশ স্যার ভালো। কিন্তু মাঝেমধ্যেই সন্দেহ হয়, উনি কি সত্যিই ভালো নাকি সবার সামনে নিজেকে ভালো দেখানোর জন্য নাটক করছেন।"
" আশ্চর্য! সবার সামনে অলওয়েজ নিজেকে ভালো দেখিয়ে উনার লাভটা কি? তুইই বল, উনার এতে কি লাভ হবে।"
মিম নিশ্চুপ রইলো। সে জানে না এর সঠিক উত্তর। এবার ফারাহ শান্ত ও নম্র কণ্ঠে মিমকে বুঝানোর প্রয়াস চালালো,
" দেখ, মিম। আদ্রিশ স্যারের কোনো লাভ নেই সবসময় নিজেকে সবার সামনে ভালো প্রেজেন্ট করায়। উনি আসলেই ভালো। আমি এক বছরে উনাকে যতোটা দেখেছি,তাতে আমি বুকে হাত রেখে বলতে পারবো, উনি ওয়ান অফ দা বেস্ট একজন মানুষ। উনি একটা অপরিচিত পেশেন্টকে যেভাবে ট্রিট করে তা তো দেখেছিস। তাহলে ভাব, উনি উনার ওয়াইফকে কতোটা ভালোভাবে ট্রিট করবে! আমার চাচা যখন হ'স"পি'টা'লে ভর্তি হয়েছিলো তখন আদ্রিশ স্যার যতোটা সম্ভব উনাকে দেখে রেখেছে। যতটুকু সেবা যত্ন করা এবং করানো সম্ভব উনি সবটা করেছেন। এমন মানুষের আচরণ দেখে তো আর কোনো স'ন্দে'হই থাকা উচিত না।
আর আংকেল, আন্টী তো তোর ভালোই চায় তাই না? উনারা তো সব দেখেই বিয়ের কথাবার্তা এগিয়েছে। তাহলে তোর এতো চিন্তা, এতো সন্দেহ কেনো? একসময় না একসময় তো তোকে বিয়ে করতেই হবে, সংসার করতে হবে। তাহলে এখন আদ্রিশ স্যারকে রিজেক্ট করছিস কেনো? উল্টো তোর তো প্রথমেই বিয়েতে রাজি হয়ে যাওয়া উচিত। কারণ উনি তোর পূর্বপরিচিত। যদিও এজ আ স্যার। তারপরও আমি মনে করি, এতে তোর অনেক সুবিধা হবে। বিয়ের পর আনকম্ফোর্টেবল লাগবে না৷ উনাকে ইজিলি মেনে নিতে পারবি। এই যে হাজার হাজার বেনিফিট দেখার পরও কি তুই বিয়েতে রাজি হবি না?"
মিম ভাবনায় মশগুল হলো। এ মুহূর্তে কেনো যেনো তার মনটা বলছে, আদ্রিশের মতো ভালো পাত্র হাত ছাড়া করা উচিত নয়। আল্লাহ ভালোর জন্যই আদ্রিশকে তার জীবনে পাঠিয়েছে। আদ্রিশ যদি খারাপই হতো তাহলে এতোজনে এতো ইতিবাচক কথা কিভাবে বলছে। নিশ্চয়ই আদ্রিশ ভালো।
মিম এবার খানিক নড়েচড়ে বসলো। রয়েসয়ে বললো,
" ফারাহ? সত্যিই কি এ বিয়েতে আমার রাজি হওয়া উচিত?"
ফারাহের দৃষ্টি চকচক করলো। সে উৎফুল্ল হয়ে বললো,
" অবশ্যই। ভালো কাজে দেরি করতে নেই। "
" কিন্তু আমার কেমন যেনো ভয় করছে। বুকের ভেতর অস্থির লাগছে। অদ্ভুত এক অনুভূতি কাজ করছে। "
" ইশ! এতো চিন্তা কিসের? আংকেল আন্টি তো বিয়েতে রাজিই। তারা জানে, তুইও রাজি। তাহলে তাদের আর এক্সট্রাভাবে কিছু জানাতে হবে না। এবার আদ্রিশ স্যারকে কালকেই নিজের ডিসিশন জানিয়ে দে। "
" আমি পারবো তো?"
" কেনো পারবি না! এতে এতো ভয়ের কি আছে!"
মিম আর কথা বাড়ালো না। হাতের মুঠো শক্ত করলো। অতঃপর কুঞ্চিতভাব নিয়ে চোখজোড়া বন্ধ করে লম্বা নিঃশ্বাস টানলো। সিদ্ধান্ত নিলো, আল্লাহর উপর আস্থা নিয়ে এ বিয়ে করবে সে।
------------
গাইনি লেকচার ক্লাস শেষে সার্জারি ওয়ার্ডের ক্লাস চললো টানা দু ঘণ্টা। আজকের ক্লাস নিলো অন্য এক মেডিকেল অফিসার। আদ্রিশ একজন রোগীকে এটেন্ড করতে ব্যস্ত। টানা দু ঘণ্টার ক্লাস শেষে ছেলেমেয়েরা গোল হয়ে বসে রইলো। আগামীকাল গাইনির আইটেম বলে সে বিষয়ে ওয়ার্ডের এক কোনে বসে আলোচনা করছে তারা। আলোচনার মাঝেই মিম শপিং ব্যাগটা হাতে নিয়ে উঠে এলো। গতকাল আদ্রিশ যে জ্যাকেট দিয়ে গিয়েছিলো তা দেওয়া এবং নেওয়ার কথা কারোরই মনে ছিলো না। তাই আজ মিম সকাল হতেই শপিং ব্যাগে জ্যাকেটটা নিয়ে ঘুরছে। এতোক্ষণ যাবত সে চাতক পাখির ন্যায় আদ্রিশের অপেক্ষা করছিলো। ক্লাসের মাঝেই ঘাড় ঘুরিয়ে এদিক ওদিক দেখছিলো, এই বুঝি আদ্রিশ চলে আসবে। মাঝে সবার চোখে ফাঁকি দিয়ে আড়চোখেও দেখছিলো আদ্রিশের আনাগোনা। অপেক্ষা ছিলো শুধু ক্লাস শেষ হওয়া। এজন্য ক্লাস শেষ হতেই মিম শপিং ব্যাগ নিয়ে আদ্রিশের দিকে এগিয়ে গেলো। আদ্রিশ তখন স্টেথোস্কোপ দিয়ে পেশেন্টের হার্টবিটের গতি দেখছিলো। মিম গিয়ে তার ঠিক পিছনটায় দাঁড়ালো। সে রোগীর দিকে মনোযোগী হওয়ায় মিমকে ঠিক লক্ষ্য করলো না। আদ্রিশের কাজ শেষ হতেই সে স্বভাবত পিছনে ফিরতেই চমকে উঠলো। ফলস্বরূপ কয়েক কদম পিছিয়ে পেশেন্টের বেডের সাথে ধাক্কা খেতে নিলো। কিন্তু এর পূর্বেই মিম তার হাত আঁকড়ে ধরে এ পরিস্থিতি হতে তাকে উদ্ধার করলো। অতঃপরে দুজনে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে উপনিত হলে আদ্রিশ বোকাসোকা হাসি দিলো। তা দেখে মিম স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করেও পারলো না। ফলে নিকাবের আড়ালে ঠোঁট টিপে হেসে নিলো সে। তাদের এ মুহূর্তটা বেশ ভালোভাবেই উপভোগ করলো উপস্থিত নার্স, পেশেন্ট ও স্টুডেন্টরা। ভীষণ লজ্জায় পড়ে গেলো মিম। সে তৎক্ষনাৎ জিজ্ঞেস করলো,
" ওয়ার্ডের এক কোনায় গিয়ে কথা বলতে পারি?"
আদ্রিশ উৎফুল্ল মুহূর্তেই বলে উঠলো,
" হ্যাঁ হ্যাঁ। অবশ্যই। ঐ পাশের বেডটা খালি আছে। ওখানে দাঁড়িয়ে কথা বলি চলো।"
আদ্রিশ ও মিম বিপরীত দিকের একটা খালি বেডের কাছে এসে দাঁড়ালো। মিম কাল বিলম্ব না করে আদ্রিশের দিকে শপিং ব্যাগটা এগিয়ে দিয়ে বললো,
" আপনার জ্যাকেটটা কাল আনতে ভুলে গিয়েছিলেন। "
আদ্রিশ কিছুক্ষণ শপিং ব্যাগটার দিকে চেয়ে রইলো। ভাব এমন, সে ভুলে বসেছে যে গতকাল মিমের শীত কমানোর জন্য এই জ্যাকেটটা দিয়েছিলো। তার এমন ভঙ্গি দেখে মিম জিজ্ঞেস করলো,
" ভুলে গিয়েছেন নাকি জ্যাকেটের কথা?"
আদ্রিশ তৎক্ষনাৎ শপিং ব্যাগটা নিয়ে বললো,
" না না ভুলবো কেনো। "
" ভালো হলো, ভুলে যাননি। তা না হলে দেখা যেতো, বিয়ের পর আমাকে কোথায় ঘুরতে নিয়ে গিয়েছেন ঠিকই। তবে আমাকে ফেরত নিয়ে আসতে ভুলে গিয়েছেন। "
" হ্যাঁ? কি বললে এই মুহূর্তে?"
আদ্রিশ হকচকিয়ে জিজ্ঞেস করলো। মিম মৃদু হেসে বললো,
" যা শুনেছেন তাই বলেছি আমি।"
আদ্রিশের চোখজোড়া বিস্ময়ে বৃহদাকার হয়ে এলো। সে নিজের কানকে বিশ্বাস করাতে পারলো না মিম বিয়েতে রাজি হয়েছে। এ যেনো একপ্রকার অবিশ্বাস্যকর এক সংবাদ। এ অবিশ্বাস্যকর সংবাদটা যেচে নিতে সে পুনরায় জিজ্ঞেস করলো,
" মানে তুমি বিয়েতে রাজি হয়েছো?"
" আমার আগের কথাগুলো শোনার পর আপনার কি মনে হয়?"
আদ্রিশ খানিক দ্বিধাদ্বন্দে বললো,
" মনে হয় হ্যাঁ?"
মিম মুচকি হেসে বললো,
" জি হ্যাঁ।"
মিমের মুখে 'হ্যাঁ' শোনামাত্র আদ্রিশ যেনো তার একটা হৃৎস্পন্দন হারিয়ে ফেললো। খুশিতে আত্মহারা হয়ে এলো সে। এই বুঝি সে পা'গ'ল হয়ে যাবে। অবশেষে মিম রাজি হলো তবে!
আদ্রিশের এ খুশি দেখে মিম ভীষণ অবাক হলো। তবে খুশিও হলো বটে।
এদিকে ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটতে দেখে উপস্থিত শিক্ষার্থীগণ তাজ্জব বনে গেলো। বিস্ময়ে মুখ হা হয়ে এলো। তাদের বিস্ময় আকাশচুম্বী হলো তখন যখন ফারাহ এর কাছে শুনলো, আদ্রিশ ও মিমের বিয়ে ঠিক হয়ে আছে এবং এ সপ্তাহের শেষেই তাদের বিয়ে।
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
৫ম পর্ব পড়তে এখানে ট্যাপ/ক্লিক করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা সারা মেহেকের মূল নাম সারা জাহান মেহেক। তিনি লেখালেখির ক্ষেত্রে শর্ট নাম হিসেবে ‘সারা মেহেক’ নামটি বেছে নিয়েছেন। এই লেখিকার ব্যাপারে এর বেশি কিছু এখন অবদি জানা যায়নি। জানতে পারলে অবশ্যই তা কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন