উপন্যাস : কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা : আনআমতা হাসান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং
লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান |
11111111111111111111111111111111111
এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ১৬)
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ১৭)
রাতের খাবার খেয়ে নিজের রুমে ঢুকে শুভ্র। কাল রাত তিনটায় কাজ শেষ করে ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওনা হয় সে। নিজের বাইক দিয়ে দেড় ঘন্টায় বাড়িতে আসে সে। এসে বাইকটা বাড়িতে রেখে চাচির সাথে দু এক কথা বলেই চলে গিয়েছিল মসজিদে। সেখান থেকে বাবা-মা'র কবরস্থানে। তারপর বাসায় এসে খাওয়া দাওয়া করে, সবার সাথে টুকটাক কথা বলেই চলে যায় বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে। সারাদিন বন্ধুদের সাথে আড্ডা, ঘুরাঘুরি করে রাতে বাসায় এসেছে সে। এসে খাওয়া দাওয়া করে এখন মাএ রুমে ঢুকে সে। এটা তার বাবার রুম ছিল। এই বাড়িতে আসার পর থেকে সে এই রুমেই থাকে। রুমটা বেশ বড় না। তবে আবার অতো ছোটও না। রুমের ফার্নিচার গুলোও সব তার দাদা বানিয়েছিল তার বাবার জন্য। সেগুন কাঠের খুব সুন্দর কারুকার্য করা একটা খাট, একটা ড্রেসিং টেবিল, একটা স্টিলের আলমারি, একটা পড়ার টেবিলে আর একটা চেয়ার। শুভ্র গিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। খুব ক্লান্ত লাগছে তার। চোখ জোড়া ঘুমে লেগে যাচ্ছে। ফট করে চোখ জোড়া খুলে ফেলে সে। তাড়াতাড়ি সোয়া থেকে উঠে গিয়ে আলমারির খুলে, আলমারির বাম পাশের ড্রয়ার খুলে সে। ড্রয়ার খুলে দেখে তাতে দুইটা এক হাজার টাকা নোট, কাঠের ডিজাইন করা একটা কলম আর ছোট একটা বক্স ভর্তি বড়ইয়ের আচার। এটা প্রথম না। শুভ্রর এখনো মনে আছে প্রথম যেদিন এই ড্রয়ারে সে দুইশো টাকা আর দুই পেকেট মটর ভাজা পায়। ড্রয়ারে এগুলো দেখে ভেবেছে তার চাচি দিয়েছে। কিন্তু চাচিকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলে সে না করে দেয়। সে তার চাচিকে টাকাটা দিতে চায়। কিন্তু তার চাচি তা নেয় না, তাকে দিয়ে দেয়। বেশ কয়েক মাস পড়ে আবার এমন দুইশো টাকা আর একটা চকলেট পায়। কয়েক মাস পর আবার। এভাবে কয়েকমাস পরে পরে সে পেতে থাকে। কিন্তু কে দেয় তা জানতে পারে না। একদিন দুপুরে সে পুকুরে গোসল করতে যাচ্ছিল। জামা প্যান্ট নিয়ে বাড়ি থেকে বের হতেই, তার খেয়াল হয় সে গামছা নিতে ভুলে গিয়েছে। তাই আবার বাড়িতে যায় গামছা নিতে। রুমে ঢুকে দেখে অনু তার আলমারির খুলে কিছু একটা করছে। এই দৃশ্য দেখে শুভ্র অবাক হয়ে যায়। অনু তো প্রয়োজন ছাড়া তার রুমেই আসে না। আরও একটু কাছে যেতেই দেখে অনু তার আলমারির ড্রয়ারে পটেটো চিপ্সের প্যাকেট রাখছে। সে জিজ্ঞেস করেছিল কেন এগুলো তাকে দিচ্ছে, অনু কোন উত্তর দেয়নি। সে না করেছিল এগুলো তাকে দিতে, অনু শোনে না। এখনো তার এই ড্রয়ারে তার জন্য এটা সেটা রেখে দেয়।
নিজের কেবিনে বসে আছে রোদ। এই ভার্সিটির সব দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই প্রায় সময়ই সে ভার্সিটিতে আসে। আর এখানে আসলেই তার সাথে একটা না, একটা কিছু ঘটে। কোনদিন গাড়ির টায়ার ফুটো থাকে, তো কোনদিন গাড়ির উপর ময়লা ভর্তি থাকে, কোনদিন তার লাঞ্চে লবন, না হয় মরিচ বেশি থাকে, কোনদিন তার কেবিনের দরজা খুললে মাথার উপর সাদা চকের গুড়ো পড়ে। সিসিটিভি ক্যামেরাতে দেখা যায় কালো হুন্ডি পরা একটা লোক এসব কাজ করে। তা দেখে লোকটিকে ধরতে গোপনে লোক লাগায় সে। তার লোক কালকে বিকেলে লোকটিকে ধরে তার কাছে নিয়ে আসে। তখন সে জানতে পারে কে এই বাচ্চাদের মতো কাজগুলো তার সাথে করছে। কেবিনের দরজাটা হালকা ধাক্কা দিয়ে অল্প একটু খুলে দীপ্তি হাসি মুখে জিজ্ঞেস করলো
- মে আই কাম ইন স্যার?
রোদ উত্তর দিল
- ইয়েস কাম ইন, কাম ইন মিস দীপ্তি আহাম্মেদ।
দীপ্তি কেবিনে ঢুকলে রোদ হাসি মুখে বললো
- প্লিজ হেভ এ সিট।
দীপ্তি চেয়ার টেনে বসলো। রোদ ল্যাপটপে একটা ভিডিও প্লে করে দীপ্তির দিকে ল্যাপটপটা ঘুড়িয়ে দেয়। দীপ্তি ল্যাপটপে তাকিয়ে ভিডিও দেখতে থাকে। ভিডিওতে সেই লোকটি শিকার করছে যে, সে দীপ্তির কথা মতো এই কাজ গুলো করেছে। ভিডিওটি দেখা শেষ হলে রোদ দীপ্তিকে স্বাভাবিক জিজ্ঞেস করল
- কেন এগুলো করিয়েছেন মিস দীপ্তি?
দীপ্তি মিষ্টি হেসে বললো
- যেমন কর্ম তেমন ফল। আপনি দীপ্তি আহাম্মেদ কে সেইদিন অপমান করেছিলেন তার ছোট শাস্তি ছিল এগুলো। চিন্তা করবেন না, বড় শাস্তি এখনো বাকি আছে।
রোদ ভ্রু উঁচু করে বললো
- তোমার সাহস দেখে আমি অবাক হচ্ছি। আমার ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্ট হয়ে তুমি আমাকে ,,,,,,, । তুমি জানো আমি তোমাকে টিসি দিতে পারি।
দীপ্তি অবাক হওয়ার ভাব করে বললো
- ওমা তাই! আমি জানি না তো! সত্যিই দিতে পারেন বুঝি? তাহলে দেন দেখি।
রোদ কিছু না বলে, টেবিলের উপর থেকে টেলিফোন নিয়ে কাউকে ফোন করে বললো
- এমএসসি'র স্টুডেন্ট মিস দীপ্তি আহাম্মেদের টিসির ব্যবস্থা কর রাইট নাও।
ফোনের ওপাশের ব্যাক্তিটি নম্র কন্ঠে বললো
- সরি স্যার। মিস দীপ্তিকে টিসি দেওয়া সম্ভব না।
রোদ অবাক হয়ে বললো
- হোয়াট! কিন্তু কেন?
ফোনের ওপাশের ব্যাক্তি উত্তর দিলো
- মিস দীপ্তি অনেক ভালো স্টুডেন্ট। তিনিই প্রথম মেয়ে স্টুডেন্ট যে বিএসসিতে সিএসসি ডিআপার্টমেন্ট থেকে সিজিপিএ ফোর আউট অফ ফোর পেয়েছে। তাছাড়া মিস দীপ্তি বড় স্যারের বিজনেস ফ্রেন্ড আফরান আহাম্মেদের মেয়ে। তাই স্যার ওকে স্পেশাল কেয়ারে করে।
রোদ আর কোন কথা না বলে রেগে ফোন কেটে দেয়। দীপ্তি উঠে দাঁড়িয়ে বললো
- স্যার এখন আমি যাই। আমার ক্লাস আছে। বাই।
বলেই দীপ্তি বিজয়ীর হাসি হেসে কেবিন থেকে বের হয়ে চলে যায়।
স্কুল ছুটি হয়ে গিয়েছে বেশ কিছুক্ষণ আগে। কিছু কাজ থাকায় তিথির আজকে দেরি হয়ে যায়। কাজ শেষ করে তাড়াতাড়ি নিজের টেবিলের সব কাগজ পএ গুছিয়ে রেখে, টেবিলের উপর থেকে নিজের ব্যাগটা কাধে নেয় সে। স্কুল গেইট দিয়ে বের হয়ে রাস্তার পাশে দাড়াতেই তিথির দেখে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে বছর তিরিশের প্রিয়া আর ছাব্বিশ বছরের মিতা। তিথি মিষ্টি করে জিজ্ঞেস করলো
- তোমরা এখনো যাওনি?
প্রিয়া টিপনি কেটে বললো
- আমাদের জন্য তো আর তোর মতো গাড়ি এসে বসে থাকে না। যে কাজ শেষ হতেই ফটাফট চলে যাবো।
তিথি বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করলো
- মানে?
মিতা তাচ্ছিল্যের সুরে বললো
- বা বা এমন ভান করছিস যেন ভাজা মাছটা উল্টে খেতে পারিস না। কচি খুকি। তা বলি কি দেখিয়ে পটালি? সে তো আর কোনো সাধারণ লোক না। মন্ত্রী আব্রাহাম খানের ছেলে, আয়ান খান বলে কথা।
প্রিয়া মুখ বাকিয়ে বললো
- কি দেখিয়ে আবার ওর এই মন বুলানো রুপ দেখিয়ে।
তিথি ঘৃণায় চোখ মুখ কুঁচকে বললো
- ছিঃ ছিঃ কি সব আজেবাজে কথা বলছো তোমরা।
প্রিয়া আবার বললো
- হ্যাঁ আমরাই তো খারাপ। তাই খারাপ কথা বলি। আর তুই তো দুধে ধোঁয়া তুলসীপাতা।
তখন বাস এসে রাস্তার পাশে দাড়াতেই প্রিয়া আর মিতা ওর দিকে হেয় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বাসে উঠে যায়। তিথি দাঁড়িয়ে সে বাস যাওয়া দেখছে আর ভাবছ, "যাদের ও নিজের বোনের মতো সম্মান করে আর ভালোবাসে, তারাই আজ ওর নামে এসব কথা বলে গেল। অবশ্য দোষ তারই, যেখানে বাবা-মা'র মৃত্যুর পর নিজের আত্নীয়-স্বজনই রঙ বদলিয়েছে, সেখানে এরা তো দুদিনের চেনা অতিথি মাএ।"
- হায় মিস তিথি। আজকে এতো দেরি হলো যে?
একটা পুরুষালি কন্ঠে শুনে পাশে তাকিয়ে দেখে, তার পাশে মিষ্টি হেসে আয়ান দাঁড়িয়ে আছে। খুব রাগ হয় তার। প্রিয়া আর মিতা এই আয়ানের জন্যই তাকে একতোগুলো কথা শুনিয়ে দিয়ে গিয়েছে। রাগী কন্ঠে সে বললো
- আমার যখন খুশি আমি তখন বের হবো তাতে আপনার কি।
এইদিন তিথি সরি বলার পর থেকে তাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। তাই তিথির থেকে এমন উত্তর সে কিছুটা অবাক হয়। শান্ত কন্ঠে বললো
- না মানে ,,,,,,, গাড়িতে উঠে তোমায় পৌঁছে দেই।
তিথি দ্বিগুণ রেগে বললো
- কেন? কেন জাবো আমি আপনার সাথে? কে হন আপনি আমার? কেউ না? তাহলে?
আয়ান স্বাভাবিক ভাবেই বললো
- আমরা খুব ভালো বন্ধু এখন। আর তাছাড়া তুমি জানো, যে আমি তোমাকে ভালোবাসি।
তিথি তাচ্ছিল্যের সুরে বললো
- দুইদিন আপনার সাথে গিয়েছি বলে আমি আপনার খুব ভালো বন্ধু হয়ে গিয়েছি! আর ভালোবাসা। আপনাদের মতো বড়লোকদের ভালোবাসা মানে দুইদিন নিয়ে ফুর্তি করে চাহিদা মিটাবেন তারপর,,,,,
তিথি আর কিছু বলার আগেই রাগে আয়ান চোখমুখ শক্ত করে চিল্লিয়ে বললো
- তিথি!
আয়ানের ধমকে তিথি কেপে উঠলেও নিজেকে সামলে নিয়ে আয়ানকে সসম্পূর্ণ ইগনোর করে সামনে থাকা রিকশায় উঠে শক্ত কন্ঠে রিকশা চালকের উদ্দেশ্যে বললো
- মামা চল।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে …
এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ১৮)
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন