উপন্যাস       :         কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা        :         আনআমতা হাসান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল    :         
রচনাকাল     :         ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং

লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান

11111111111111111111111111111111111

এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ১৭)

কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ১৮)

গ্রামের মাটির রাস্তা দিয়ে পাশাপাশি হাটছে শুভ্র আর অনু। গন্তব্য মেলা। গ্রামে অবস্থিত এক মাজারকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর মেলা হয়। শুভ্র এই বাড়িতে আসার পর থেকে সেই অনুকে এই মেলায় নিয়ে যায়। হাটতে হাটতে শুভ্র জিজ্ঞেস করল
- আগে না হয় আমি চাচির কাছে কিছু চাইতে সংকোচ করতাম। কিন্তু এখনো তো আমি নিজেই ইনকাম করি। ভালোই ইনকাম করি। তাও তুই কেন আমার জন্য টাকা রাখিস।
অনু খুব ভালো করেই জানে, তার চাচা যে ফ্লাট কিনার জন্য টাকা জমিয়েছিল, সেই টাকা দিয়েই ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে শুভ্র। সরকারি ভার্সিটিতে চান্স না পেয়ে বাবার জমানো টাকা দিয়ে প্রাইভেট ভার্সিটিতে এডমিট হয়ে, নিজেকে কতো অপরাধী ভাবে শুভ্র। আর শুভ্র যে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেই টাকা জমিয়ে ফ্ল্যাট কেনার জন্য রাতদিন পরিশ্রম করে তাও জানে সে । অনুর কোন ইনকাম নেই, তাই হাত খরচের জন্য মা তাকে যে টাকা দেয় তা থেকে শুভ্রের জন্য জমায় সে। শান্ত নম্র স্বভাবের অনু, শান্ত কন্ঠে উত্তর দিল
- আমার এতো টাকা লাগে না, তাই।
- মিথ্যেটা তোর সাথে যায় না অনু।
শুভ্র কথাটা শেষ করার সাথে সাথে পিছন থেকে একটা মেয়েলি কন্ঠ বললো
- আরে শুভ্র ভাই না এটা।
অনু আর শুভ্র দুজনেই দাঁড়িয়ে পিছনের তাকিয়ে দেখে গ্রামের স্কুলের মাস্টারের লায়লা দাঁড়িয়ে। সুন্দর মিষ্টি মুখটা দেখলে কেউ বলবে না, এই মেয়েটা এতো ঝগড়াটে আর গায়ে পড়া। কিন্তু স্যারকে সম্মান করে তার মেয়েকে কেউ কিছু বলে না। লায়লা হাসি মুখে জিজ্ঞেস করল
- কবে এসেছেন শুভ্র ভাই?
শুভ্র মুখে জোর করে হাসি এনে বললো
- এইতো কালকে।
লায়লা অবাক হওয়ার ভঙ্গি করে বললো
- কালকে এসেছেবন আর আমাকে বলেনওনি!
তারপর অনুর দিকে তাকিয়ে আবার বললো
- এই অনু তুই তো অন্তত আমাকে বলতে পারতি। বলিসনি কেন?
অনু জানে এই মেয়ে শুভ্রকে পছন্দ করে। তাই ইচ্ছে করেই বলেনি। শান্ত কন্ঠে বললো
- খেয়াল ছিল না।
লায়লা বিরক্তি নিয়ে বললো 
- এটা কোন কথা হলেই! তোর সাথে দেখা হলেই তো আমি বলি শুভ্র ভাইয়া বাড়িতে আসলে আমাকে বলতে। আর তুই ভুলে গেলি? আচ্ছা বাদ দে সে কথা এখন কোথায় যাচ্ছো তোমরা?
শুভ্র স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দেল
- মেলায়।
লায়লা খুশি হয়ে বললো 
- আমিও তো যাচ্ছি। ভালোই হল চল একসাথে যাই। চল, চল।
শুভ্র হাটা শুরু করলে, লায়লাও পাশে হাটতে হাটতে কথা বলতে থাকলো। শুভ্র স্বাভাবিকভাবেই কথা শুনতে শুনতে হাটতে লাগলো। কিন্তু তার সম্পূর্ণ খেয়াল পিছনে চুপচাপ হেটে আসা শান্ত অনুর দিকে। 

বাগানের মধ্যে রাখা লোহার উপর সাদা রং করা চেয়ার টেবিল বসে বসে চা খাচ্ছে আর গল্প করছে মিসেস রোমানা আর বৃষ্টি। তখনি মিসেস রোমানার ফোনে রোদের ফোন থেকে কল আসে। এমন টাইমে রোদ কখনো কল করে না। তাই কিছুটা চিন্তা নিয়ে মিসেস রোমানা কল রিসিভ করে বললো
- হ্যালো রোদ বল।
ওপাশ থেকে একটা মেয়েলি কন্ঠ বললো
- হ্যালো মা, আসসালামু আলাইকুম।
রোদের ফোন থেকে একটা মেয়ের কন্ঠে তাকে মা সম্বোধন করার অবাক হয়ে যায় মিসেস রোমানা। কান থেকে ফোন সরিয়ে চোখের সামনে এনে ফোনের স্কিনে তাকিয়ে আবার কলারের নামটা দেখলো সে। না নামটা তো সে ঠিকই দেখেছে। রোদই তাকে ফোন করেছে। তাহলে রোদের কন্ঠস্বর মেয়েদের মতো শোনাচ্ছে কেন? সে ভুল শুনেছে মনে হয়? ফোনটা আবার কানে দিয়ে সে আবার বলল
- হ্যালো রোদ।
মেয়েটি উত্তর দিলো
- না মা, আমি আপনার ছেলের বউ।
মিসেস রোমানা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল
- কি! রোদ বিয়ে করেছে! কবে? কখন? আমাদের কিছু বলেনি তো?
বৃষ্টি মাএ তার চায়ে চুমুক দিতে যাচ্ছিল। মিসেস রোমানার কথা শুনে চায়ে চুমুক না দিকে মায়ের কথা শুনতে থাকলো সে।
ফোনের ওপরে থাকা মেয়েটি কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললো
- পাঁচ বছর আগে রোদের সাথে আমার ফেসবুকে পরিচয় হয়। বছরখানেক আগে যখন রোদ দেশে আসে তখন রোদ আমাকে বিয়ে করে।
মিসেস রোমানা অবাক হয়ে বললো
- কিহ! কিন্তু রোদ তো আমাকে এই সম্পর্কে কিছুই বলেনি।
মেয়েটা অপরাধীর কন্ঠে বললো
- আসলে, মা আমার বাসা থেকে আমার বিয়ে ঠিক করেছিল। তাই আমরা তাড়াহুড়ো করে বিয়েটা করে ফেলি। প্লিজ মা রাগ করেন না। কষ্ট নিয়েন না। আমরা বিপদে পরেই কাজটা করতে বাধ্য হয়েছি। প্লিজ মা আমাদের ক্ষমা করে দিন। প্লিজ মা।
মিসেস রোমানা খুশি হয়ে বললো
- আমি রাগ করিনি মা। আমি তো খুব খুশি হয়েছি। জানো আমি রোদকে দুই বছর ধরে বিয়ের কথা বলছি। কিন্তু ও রাজিই হচ্ছে না। ওকে ফোনটা দেও এখনি ওর খবর নিচ্ছি।
মেয়েটি আকুতি করে বললো
- না, না মা। প্লিজ আমি যে ফোন করেছি তা ওকে বলেন না।
মিসেস রোমানা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল 
- কেন? 
মেয়েটি ভীত কণ্ঠে বললো 
- উনি আমাকে না করেছে আপনাদের এখন জানাতে। কিন্তু কেন করেছে তা জানি না। উনি বলেছে সময় বুঝে উনি আপনাদের জানাবেন। কিন্তু অনেক দিন হয়ে গিয়েছে উনি আপনাদের জানায় না। তাই উনি আজকে ভুলে ফোনটা ফেলে গেলে আমি আপনাকে ফোন করি। প্লিজ মা ওনাকে বলবেন না। উনি আমাকে অনেক বকাজকা করবে। মা আমি এখনো রেখে দেই উনি ফোন নিতে যে কোনো সময় চলে আসবে।
বলেই ফোনটা কেটে দেয় মেয়েটা।

সন্ধ্যা সারে সাতটা অভ্রদের বাসার তূবার রুমে বসে একমনে পড়ছিল তূবা। হঠাৎ আকাশের গর্জন শুনে বাহিরের দিকে তাকায় তূবা। বাহিরে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টিতে ভিজতে তার অনেক ভালো লাগে। কিন্তু এই অবেলাতে খালামনি তাকে বৃষ্টিতে ভিজতে দিবে না। তাই সে পা টিপে টিপে আসতে আসতে রুম থেকে বের হয়ে নিচে নামে। মাথা আর চোখ দুটো এদিক ওদিক ঘুরিয়ে তার খালামনিকে খুঁজে সে। রান্নাঘরের দিকে উঁকি দিতেই দেখে তার খালামনি কাজের মহিলা জরিনা বেগমের সাথে রাতের রান্নায় ব্যস্ত। সে কোন শব্দ না করে আবার আস্তে আস্তে পা টিপে টিপে গিয়ে দরজার খুলে। বাহিরে বাগানে গিয়ে বৃষ্টিতে ভিজার জন্য। দরজা খুলতেই সে অবাক হয়ে যায়। কারণ দরজার সামনে অভ্র ভ্রু কুঁচকে দাঁড়িয়ে আছে।
অভ্র মাএই হসপিটাল থেকে বাসায় এসেছে। বাসায় এসে দরজার সামনে দাড়াতেই তূবা চুপিচুপি দরজা খুলে দেয়। অভ্র এক ভ্রু উঁচু করে জিজ্ঞেস করল
- কি বেপার তুই চোরের মতো এই বৃষ্টির মধ্যে কোথায় যাচ্ছিস?
দরজা খুলেই সামনে যমরাজের মত দাঁড়ানো অভ্রকে দেখে ভয় পেয়ে যায় তূবা। নিজেকে সামলে তার হালকা গোলাপি রঙের ঠোঁট দুটো প্রসারিত করে, মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে উত্তর দিল
- তুমি এসেছো তাই তোমাকে নিতে এলাম।
অভ্র ভালো করেই জানে তূবা ঠিক কি উদেশ্যে এখন বাসা থেকে বের হচ্ছে। তাই সে চোখ দুটো ছোট ছোট করে তূবাকে জিজ্ঞেস করল
- সত্যি তাই?
তূবাও ভালোই বুঝতে পারে যে, অভ্র বুঝে গেছে যে সে বৃষ্টিতে ভিজার জন্য বের হচ্ছিল। আর অভ্র তাকে এই সময়ে বৃষ্টিতে ভিজতে দিবে না। কিন্তু বাহিরে এতো সুন্দর বৃষ্টি হচ্ছে তাকে তো ভিজতেই হবে। যে করেই হোক। এতো সুন্দর বৃষ্টিতে ভিজা মিস করা যাবে না। কি করা যায় ভাবতেই তার মাথায় একটা দুষ্ট বুদ্ধি আসে। তাই সে মুখে একটা মিষ্টি হাসি ফুটিয়ে অভ্রের হাত ধরে টেনে, ভিতরের দিকে টেনে আনতে আনতে বলল
- হসপিটাল থেকে মাএ এসেছ। অনেক টায়ার্ড হবে। চল ভিতরে চলো।
বলেই এবার অভ্রের পিছনে গিয়ে, অভ্রের পিঠে হাত দিয়ে তাকে ভিতরে দিকে ধাক্কাতে থাকে সে। অভ্র তূবার ধাক্কার তাল সামলাতে সামলাতে বলল
- আস্তে আস্তে। যাচ্ছি তোও।
অভ্র নিজেকে সামলে দুই পা বাসার ভিতরে এগিয়ে দিতেই পিছন থেকে তূবা দেয় এক দৌড়। এক দৌড়ে একেবারে বাগানে চলে যায় সে। অভ্র তূবার পিছন পিছন দৌড়ে বাগানে দিকে যেতে যেতে বলল
- এই তূবা এই অবেলাতে ভিজলে ঠান্ডা জ্বর আসবে।
তূবা দৌড়াতে দৌড়াতে পিছনের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল
- ঘরে ডাক্তার আছে কি করতে?
পিছনের দিকে তাকিয়ে সামনে দিকে দৌড়ানোর ফলে। সামনের দিকে দেখে না। আর ফল সরুপ একটা ইটের টুকরোতে পা লেগে পরে যেতে নেয় সে। ঠিক তখনি অভ্র গিয়ে তাকে দৌড়ে ধরে ফেলে। অভ্রের এক হাত তূবার কোমড়ে অন্য হাত তূবার পিঠে। অভ্র আর তূবা একজন অন্যজনের দিকে একদৃষ্টতে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর অভ্র ফিক করে হেসে দেয়। অভ্রের হাসির শব্দে তূবার ধ্যান ভাঙে। সে অভ্রের হাসার কারণ বুঝতে না পেরে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে অভ্রের দিকে তাকায়। অভ্র তাকে সোজা করে দাড় করিয়ে আবার হাসতে থাকে। তূবা কৌতুহল নিয়ে অভ্রকে জিজ্ঞেস করল
- কি হয়েছে? তুমি এভাবে হাসছো কেন?
অভ্র হাসতে হাসতে তূবার হাত ধরে বাসার দিকে নিয়ে যেতে যেতে বললো
- চল তোকে আজকে একটা জীবন্ত পেত্নী দেখাবো।
তূবা অভ্রের কথা শুনে অভ্রের পিছনে হাটতে হাটতে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল
- জিবন্ত পেত্নী মানে?
অভ্র তূবার হাত ধরে বাসার ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে বললো
- চল গেলেই দেখতে পাবি।
অভ্র তূবাকে বাসায় ভিতরে নিয়ে ড্রায়নিং রুমের বেসিনের আয়নার সামনে তূবাকে দাড় করিয়ে বললো
- দেখ জীবন্ত পেত্নী। 
কথাটা বলেই আবারো হাসতে থাকে সে। আর এদিকে তূবা আয়নায় নিজেকে দেখে জোড়ে একটা চিৎকার দেয়।
তূবার চিৎকার শুনে রান্নাঘর থেকে মিসেস মিতালী আর জোরিনা বেগম একপ্রকার দৌড়ে বের হয়। রান্নাঘর থেকে বের হয়ে ড্রয়িং রুমে এসেই চোখ বড় বড় হয়ে যায় মিসেস মিতালীর। অভ্র আর তূবা দুজনেই কাক ভিজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আর কিছুক্ষণ আগে তূবার শখ করে দেওয়া কাজল বৃষ্টির পানিতে লেপ্টে ফর্সা মুখে ভরে গেছে।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...


এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ১৯)


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে। 

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন