উপন্যাস : ভিলেন (সিজন ২)
লেখিকা : মনা হোসাইন
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল :
লেখিকা মনা হোসাইনের “ভিলেন” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। এই উপন্যাসের প্রথম সিজনটি প্রচুর জনপ্রিয়তা পাওয়ায় লেখিকা এর দ্বিতীয় সিজন লেখার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের ২৯ নভেম্বর থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
ভিলেন (সিজন ২) || মনা হোসাইন |
১ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
ভিলেন (সিজন ২) || মনা হোসাইন (পর্ব - ০২)
দূরে ঠেলতে ঠেলতে আকাশ মেঘলাকে এতটাই দূরে ঠেলে দিয়েছে যে এখন আর মেঘলার মুখটাও তার মনে পড়ে না।পড়বেই বা কি করে সেই ছোট মেঘলা তো আর নেই বড় হয়ে গিয়েছে। পেরিয়েছে অনেকগুলো বছর। কোন এক নির্দিষ্ট কারনে আকাশ এখন মেঘলার নামটাও সহ্য করতে পারে না। সে ভুলে গেছে ছোট মেঘলাকে।
নাইট ক্লাবে বসে ড্রিংক করছে আকাশ। সে গভীর নেশায় বুঁদ হয়ে আছে। এই নেশা কি ড্রিংক্সের নাকি অন্যকিছুর জানতে ইচ্ছে হল নাবিলের কিন্তু তার এই প্রশ্নের জবার দেয়ার অবস্থায় আকাশ নেই। তাই বাধ্য হয়েই আকাশকে টানতে টানতে নাইট ক্লাব থেকে বেরিয়ে বাসায় ফিরল নাবিল। বাসায় ফিরতেই আকাশের বাবা গলা ছাড়লেন,
-"দাঁড়াও নাবিল..
নাবিল থমকে দাঁড়িয়ে পিছু ঘুরল আকাশ তার ঘাড়ে মাথা রেখে টাল মাতাল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।এমন অবস্থা যেন এখনী পড়ে যাবে।নাবিল তাড়াতাড়ি বলল,
-"বড় বাবা যা বলার সকালে বলো। আকাশ এখন কিছু বলার অবস্থায় নেই।
-"তুই তো আছিস? আর কত নাবিল?আর কত তুই ওর দোষ ঢাকার চেষ্টা করবি? তুই কি বুঝতে পারছিস না আকাশ কতটা নিচে নেমে গিয়েছে?
-"নিচে নেমেছে সেটা অস্বীকার করার কোন অবকাশ নেই কিন্তু ও আমার ভাই আমি ওকে রাস্তায় ফেলে আসতে পারি না বড় বাবা।
-"তাই বলে?
-"নিচে নেমে গিয়েছে বুঝলাম তা ওকে উপড়ে তুলার জন্য তোমরা ঠিক কি কি করেছো ? আমার জানামতে কিছুই করো নি।
-"তুই কি বলতে চাস এসব আমাদের দোষ? আকাশ কারো কথা শুনে?
-"সেটাই.. ও স্বাভাবিক অবস্থায় থাকলে ওর ব্যাপারে এসব বলা তো দূর ওর সামনে কথা বলতেও ভয় পেতে তুমি।
-"শুধু আমি না পুরো শহর ওর সামনে কথা বলতে পায়।মাস্তান হয়েছে মাস্তান...
আজাদ সাহেবের কথা শেষ হওয়ার আগেই নাবিলের ঘাড় থেকে মুখ তুলে আকাশ বলে উঠল,
-"Correction Please it's Mafia Not mastan..
Mr. Azad keep your voice down. You know I don't like Noise"
-"লজ্জা করছে না নিজের বাবার সাথে এভাবে কথা বলতে?
-"বাবা! কে কার বাবা আমি আপনাকে মিষ্টার আজাদ বলেছি শুনতে পান নি? যাইহোক সামনে থেকে সরুন ঘরে যাব।
-"একটা থাপ্পর মারব বেয়াদব ছেলে।
-"হিস...আওয়াজ নিচে আমার গায়ে হাত দেয়ার আগে নিজের কথা ভাবুন। বলতে বলতে আকাশ কোর্টের পিছন রিভলবার বের করে তাতে হাতে বুলাতে বুলাতে বলে উঠল "এখানে দুটো বুলেট অনেক আগে থেকেই আপনার এবং আপনার মিসেসের নামে বুক করা আছে যেকোন সময় বির্সজন দিয়ে দিয়ে দিতে পারি তাই একমাত্র ছেলের হাতে খুন হওয়ার চেয়ে বরং চুপচাপ থাকুন সেটাই ভাল হবে..
বলে আকাশ হেলতে দুলতে নিজের ঘরের দিকে চলে গেল আজাদ সাহেব রাগে থর থর করে কাঁপছেন ওর স্পর্দা দেখে অবাক হয়ে যাই। এমন কেউ আছে যে এমন আচারনকে ভয় পাবে না?
-" আছে অবশ্যই আছে কেউ না কেউ তো অবশ্যই আছে যে ওকে ভয় পাবে না। আর আমি তাকেই খুঁজে বের করব।
সকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা আকাশ সবে ঘুম থেকে উঠেছে।আকাশ ফ্রেশ হয়ে নিচে নামল।আকাশ নিচে নেমে বাইকের চাবি খুঁজছে তখন আকাশের মা শাহানা বেগম বললেন,
-" দুপুরে কিছু খাস নি এখন কিছু একটু খেয়ে নে।
আকাশ রুক্ষ কন্ঠে জবাব দিল,
-"খাব না আমার ক্ষুধা নেই।
বলে হাঁটা দিল পিছন থেকে তার মা বলে উঠলেন,
-"এভাবে যাস না বাবা একটু কিছু খেয়ে যা প্লিজ।
মায়ের এমন আদরমাখা অনুরোধের বিপরীতে যেখানে আকাশের খুশি হওয়ার কথা ছিল তার বদলে ডেস্কের উপড় থেকে বাইকের চাবি টা নিয়ে বেশ কড়া গলায় বলল
-" আমি বাইরে যাব বলেছি মানে এখন যাবই সেটা জেনেও আদিখ্যাতা করতে কে বলেছে?
আকাশ আর কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বেরিয়ে গেল।
শহরে মাস ব্যাপি বানিজ্য মেলার আয়োজন করা হয়েছে আকাশ সেখানে একটা প্রজেক্টের কাজ আছে তাই পার্টির কিছু ছেলে সহ মেলায় গেল। শহরের বেশির ভাগ মানুষ আকাশকে মাস্তান হিসেবে ভয় পেলেও উঠতি বয়সী ছেলেদের কাছে সে বেশ জনপ্রিয়। বেশির ভাগ ছেলেই আকাশকে নিজেদের আইডল ভাবে। কারন আকাশ রাজনীতিতে বেশ পারদর্শী তাছাড়া মারামারি কিংবা ক্ষমতা দখলেও তার প্রতিদ্বন্দ্বী পাওয়া ভাড়। তাছাড়া আকাশ উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত কিছুদিন আগেই পড়াশোনা শেষ করে ফিরেছে।
আকাশ মেলায় ঢুকতেই কিছু ছেলে ছুটে আসল তার সাথে ছবি তুলার জন্যে আকাশও বাঁধা দেয় নি। সবার সাথে ছবি তুলতে লাগল। ছবি তুলা শেষে একটা ছেলে এগিয়ে এসে বলল,
-"আকাশ ভাই আপনি তো ফটোগ্রাফিতে অনেক ভাল আমায় মেলার কিছু ছবি তুলে দিবেন । আসলে ফটোগ্রাফির একটা কম্পিটিশন আছে তাই আর কি..?প্লিজ দিন না।
আকাশ মুচকি হেসে বলল,
-"বেশ দে ক্যামেরাটা। তুলে দিচ্ছি তবে আমি একা ঘুরে ঘুরে ছবি তুলব তোরা কেউ সাথে থাকতে পারবি না।
যেমন কথা তেমন কাজ আকাশ ঘুরে ঘুরে ছবি তুলছে।ছবি তুলে সে ছবিগুলো দেখছিল হটাৎ ঠাস শব্দে চারদিক স্তব্ধ হয়ে গেল। আকাশ অবাক হয়ে তাকাল কারন কেউ একজন তার গালে থাপ্পড় স্বজরে বসিয়েছে। আকাশ প্রচন্ড রেগে চোখ থেকে ক্যামেরা নামিয়ে তাকাল আর অবাক হল।
কারন তার সামনে লাল টুকটুকে শাড়ি পড়ে দাঁড়িয়ে আছে একটি মেয়ে। গোলগাল মুখ, ডাগর ডাগর চোখ, খোলা চুল, টকটকে ঠোঁট সব মিলে তাকে একদম সদ্য ফুটা গোলাপের মত লাগছে। তবে এখন তার রুপে ভোলার সময় নয়। আকাশ হুংকার ছেড়ে বলল,
-"এই মেয়ে কে তুমি? তোমার এত সাহস আমার এলাকায় দাঁড়িয়ে আমার গালে থাপ্পর মারলে?
-"বেশ করেছি থাপ্পর মেরেছি। আপনার মত অসভ্য ছেলেকে মারাই উচিত। আপনার এত সাহস হয় কী করে? অনুমতি ছাড়া আমার ছবি তুলছেন কেন?
-"ছবি তুলেছি তাও তোমার..?
বলেই কিছু একটা ভেবে আকাশ থেমে চারদিকে চোখ বুলাল আর দেখল মেলার সবাই হা হয়ে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। আকাশের বেশ অপমান বোধ হল। যেখানে তার সাথে কথা বলতেও লোকে ভয় পায় সেখানে একটা মেয়ে তাকে মেরেছে বিষয় টা মেনে নেওয়া যায় না। তাই রেগে গিয়ে মেয়েটার হাত ধরে টানতে টানতে মেলার পিছন দিকটায় নির্জন জায়গায় চলে গেল।
মেয়েটা সাথে সাথে চেঁচাতে লাগল।
-"আহ কি করছেন? ছাড়ুন আমি ব্যাথা পাচ্ছি তো...অন্ধকারে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?
আকাশ বেশ অনেকটা এগিয়ে এসে থেমে বলল,
-"কার গায়ে হাত দিয়েছো এবার বুঝতে পারবে।
বলেই আকাশ একটানে মেয়েটার পরনের কাপড়টা খুলে নিল। মেয়েটা কিছু বুঝে উঠার আগেই আকাশ কাপড় টা ছুড়ে ফেলে দিয়ে এই অবস্থাতেই ছবি তুলতে লাগল।
মেয়েটা হাত দিয়ে নিজেকে ঢাকার চেষ্টা করতে করতে বলল,
-"কি করছেন এসব? এভাবে ছবি তুলবেন না প্লিজ। এসব কি ধরনের অসভ্যতা?
-"আমি তো অসভ্যই তুমি নিজেই বলেছো আর আমি নাকি অনুমতি ছাড়া মেয়েদের ছবি তুলি তো এখনও তুলছি তাই একদম ন্যাকামি করবা না হাত সরাও বলছি...
-"আমার সাথে এমন করবেন না প্লিজ। আমি কিন্তু এবার কেঁদে দিব...
-"কাঁদো মানা করেছে কে?
-"আমি সত্যি কাঁদব কিন্তু।
-"আজব মেয়েতো তুমি কাঁদলে আমার কী? কাঁদো যত খুশি কাঁদো এত কেবল শুরু তোমার সাথে আমি এখন আরও কতকিছু করব তুমি ভাবতেও পারছো না...
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
চলবে ...
০৩ পর্ব পড়তে এখানে ট্যাপ/ক্লিক করুন
লেখক সংক্ষেপ :
তরুণ লেখিকা মনা হোসাইনের মূল নাম গাজী পিংকি হোসেন। তিনি লেখালেখির ক্ষেত্রে ছদ্মনাম হিসেবে ‘মনা হোসাইন’ নামটি বেছে নিয়েছেন। বাংলাদেশের নেত্রকোনা জেলার বাসিন্দা এই লেখিকা অনলাইন ডিজিটাল মার্কেটার ও কন্টেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে কাজ করছেন।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন