উপন্যাস : রোদেলা আকাশে বৃষ্টি
লেখিকা : আনআমতা হাসান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ২৯ অক্টোবর, ২০২২ ইং
লেখিকা আনআমতা হাসানের “রোদেলা আকাশে বৃষ্টি” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের অক্টোবরের ২৯ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
রোদেলা আকাশে বৃষ্টি || আনআমতা হাসান |
11111111111111111111111
১০ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
রোদেলা আকাশে বৃষ্টি || আনআমতা হাসান (পর্ব - ১১)
মেইন দরজা দিয়ে বাসায় ঢুকে অনল। ফর্সা গায়ে হালকা গোলাপি পাড়ের হলুদ শাড়ি। বাম হাতে একটা ব্রেসলেট, মাথার চুলগুলো খোপা করে তাতে তিনটা হলুদ রঙের গোলাপ লাগানো, ঠোঁটে হালকা গোলাপি রঙের লিপস্টিক। এই অল্প সাজেই তাকে খুব সুন্দর লাগছে। যদিও তার এইটুকু সাজারও ইচ্ছা ছিল না৷ বিন্দু সকাল সকাল এসে তাকে জোর করে টেনে হিচড়ে নিয়ে যায় পার্লারে। সেখান থেকে বিন্দু, সিগ্ধা আর অনল একসাথে সাজে। সাজা শেষ হলে অনলকে বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে তারা সিগ্ধাদের বাড়ি যায়। সিগ্ধা আর অলকের হলুদের অনুষ্ঠান একসাথে হবে কমিউনিটি সেন্টারে। বাসায় থেকে তারা আবার রওনা দিবে কমিউনিটি সেন্টারের উদ্দেশ্য। মেয়েকে দেখে মিসেস সাবিদা হাসি মুখে বললো
- মাশাল্লাহ। দেখতো শাড়ি পরলে তোকে কতো সুন্দর দেখায়। আর তুই শাড়ি পরতে চাস না।
অনল ভ্রু কুঁচকে বললো
- সুন্দর লাগছে! আমার তো নিজেকে তিপ্পান্ন বছরের বুড়ি বুড়ি লাগছে।
- পছন্দ ভালো হলেই সে না ভালো লাগবে।
- আমার পছন্দ ভালো না!
- না ভালো না। এবার যা তো উপরে গিয়ে দেখ, তোর ভাই এখনো রেডি হয়ে নিচে নামছে না কেন? সেই কখন ওকে রেডি হতে বলছি এসেছি।
অনলও আর কথা বাড়ায় না। ওর ভায়ের সাথে কথা আছে। তাই মা'কে ছোট করে বললো
- আচ্ছা যাচ্ছি।
বলেই সিঁড়ি দিকে হাটা লাগায় সে। সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে ভাইয়ের রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়ায় সে। অলকের রুমের দরজা পুরো খোলা। অনল তাই আর নক না করে রুমে ঢুকে যায়। রুমে ঢুকে দেখে অলক রুমে নেই। বিছানার উপর পরে আছে গায়ে হলুদের পাঞ্জাবি পায়জামা। কান পেতে শোনার চেস্টা করে ওয়াসরুমে পানির শব্দ হচ্ছে না কি। কিন্তু না ওয়াসরুমে কোন শব্দ নেই। বারান্দায় আছে নাকি দেখেতে, বারান্দায় পা দিতেই দেখে অলক বারান্দায় দাঁড়িয়ে মলিন মুখে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। অনল অলকের পাশে দাঁড়িয়ে শান্ত কন্ঠে বলল
- ভাইয়া তুই এখনো রেডি হোসনি।
অলক ঘাড় ঘুরিয়ে বোনের দিকে তাকায়। তারপর আবার সামনে দিকে তাকিয়ে মলিন করে বললো
- মেয়েটা ফোন করে সেদিন বলেছিল, সবকিছুই ঠিক করে দিতে। মেয়েটা তো আর জানে না সবকিছু উলোটপালোট হওয়ার জন্য আমিই দায়ী। যদি আমি সেদিন সিগ্ধার কথা না বলতাম তাহলে আজকে ওর সাথে আমার বিয়ে হতো না। তোর কথাই ঠিক। আমার এসবের মাঝে সিগ্ধাকে টানা একদম ঠিক হয়নি।
অনল স্বাভাবিক কন্ঠে বললো
- তবে এখন আমার মতামত ভিন্ন ভাইয়া।
অলক অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল
- মানে?
অলন ভায়ের পাশে গিয়ে বারান্দায় রেলিং ধরে দাঁড়ায়। এই বারান্দায় থাকে সামনের বড় রাস্তা। তারপর আরও অনেক বাড়ি। তিন কাঠা যায়গার উপর তাদের এই দোতলা বাড়ি। পুরো যায়গা জুড়ে বাড়িটা হওয়ার, নিচে বাগান নেই। যদিও ছাদের উপর সিমেন্টের বড় বড় টপ করা আছে গাছ লাগানোর জন্য। সেখানে মিসেস সাবিদার শখ করে লাগানো কিছু সবজির গাছ আর সিগ্ধার লাগানো দু'চারটে ফুল গাছ আছে। অনল আর অলকের এসব গাছ টাছ নিয়ে কোন মাথা ব্যথা নেই। কিন্তু সিগ্ধার গাছ ফুল খুব পছন্দ। নিজেদের ফ্লাটের দুটো বারান্দা পুরো ভর্তি করে রেখেছে। নানা রকম ফুলের গাছ দিয়ে। ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে অনল বললো
- জানিস সিগ্ধাকে নিয়ে আমার কেন এতো ভয়।
- ওকে তুই অনেক ভালোবাসিস তাই।
ভাইয়ের কথা শুনে অনল এক গাল হেসে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো
- কারণ সিগ্ধা তুলি আপুর মতো। শুধু পার্থক্য এতোটুকুই যে, সিগ্ধা শান্ত, সৃষ্ট আর তুলি আপু ছিল চঞ্চল, দুষ্ট।
"তুলি আপু" অনলের মুখে এই শব্দ দুটো শুনে অলকের বুকটা কষ্টে চিন চিন করে উঠে। অনল একটু থেমে আবার বললো
- ভেবে দেখ ভাইয়া। তুই যদি সিগ্ধাকে বিয়ের কথা না বলতিস, তাহলেও আমার বিয়ের পর মা আর খালামনি মিলে ওর অন্য কোথাও বিয়ে দিয়ে দিত। যদিও তখন সিগ্ধার বিয়ে আমার বিয়ে পর হত, এখন আগে ইচ্ছে। কিন্তু অন্য যায়গায় বিয়ে হলে, কেমন না কেমন বর হতো। শশুড় বাড়ির মানুষ কেমন হতো। যদিও জানি মা আর খালামনি অনেক দেখে শুনেই সিগ্ধার বিয়ে দিত। কিন্তু তাও। দুনিয়ায় মানুষ চেনা বড্ড কঠিন। উপরে দেখায় এক ভিতরে আরেক। যদি খারাপ মানুষের কাছে গিয়ে পড়ে। মেয়েটা যেই শান্ত, কেউ কিছু বললেও কিছু বলতে পারবে না। চুপচাপ সব সহ্য করে নিবে। আর তাছাড়া তুই যে জন্য বিয়ে করতে চাস না। সিগ্ধাকে বিয়ে করলে, সে চিন্তা নেই।
- কিন্তু ও আমার ফুফাতো বোন, তাই উপর ও আমার থেকে অনেক ছোট।
- তুই ই তো সেদিন বলেছিলি পৃথিবীতে অনেকেই ফুফাতো বোনকে বিয়ে করে।
- ওটাতো মাকে এমনেই বলেছিলাম।
অনল এবার ঘুরে অলকের দিকে তাকিয়ে বললো
- কিন্তু ঠিক কথাই বলেছিলি। আর সিগ্ধা এখন পারফেক্ট এইজে আছে। এখন যদি তুই ওকে নিজের ভালোবাসা দিয়ে নিজের করে নিতে পারিস, তাহলে তোদের একটা সুখের সংসার হবে।
অলক বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকে বললো
- মা'র মতো কি তোর মাথাও নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ওকে আমি স্নেহ করি। নিজের ছোট বোন হিসেবে ভালোবাসাবো কি করে!
- বিয়ের সব কিছু রেডি হয়ে গিয়েছে, এখন সিগ্ধাকে তো তোর বিয়ে করতেই হবে। আর কবুল বলার পর চাইলেও তুই ওকে বোন ভাবতে পারবি না।
অলক চুপ করে থাকে, কিছু বলে না। বলার মতো কোন কথা তার কাছে নেই। রেলিং ছেড়ে দাঁড়িয়ে অনল বললো
- অনেক সময় হয়ে গিয়েছে। এসব চিন্তা বাদ দিয়ে এখন রেডি হয়ে নিচে আয়। মা ডাকছে।
কথাটা বলেই অনল বারান্দা থেকে চলে যায়। অলকও আর বেশিক্ষণ না দাঁড়িয়ে রুমে চলে যায়।
পিচঢালা রাস্তা দিয়ে চলছে একটা কালো রঙের প্রাইভেট কার। যার ড্রাইভিং সিটে বসে ড্রাইভ করছে নিশির। পরনে নীল শার্ট আর কালো জিন্সের প্যান্ট। তার পাশে পেসেঞ্জার সিটে বসে আছে কালো রঙের জামদানী শাড়ি পরা ইতি। বেনি করা চুল, চোখে কাজল আর ঠোঁটে লাল লিপস্টিকে খুব মায়াবী লাগছে এই শ্যামারঙা মেয়েটাকে। পিছনের প্যাসেঞ্জার সিটে বসে আছে মিষ্টার শওকত আর মিসেস সাবনাজ। গাড়িটা পিচঢালা রাস্তা থেকে গ্রামের বড় মাটির রাস্তায় নামতেই, ইতি তার পাশে বসে গাড়ি ড্রাইভ করতে থাকা নিশিরের দিকে তাকিয়ে বললো
- গ্লাসটা খুলে দেওনা।
পিছন থেকে মিসেস সাবনাজও বললো
- হ্যাঁ রে বাবু গ্লাসটা খুলে দে। বাহিরের বাতাস আসুক। এই এসির বাতাস ভালো লাগে না।
নিশির এসি অফ করে, সব গ্লাস খুলে দেয়। হুড়মুড় করে গ্রামের বিশুদ্ধ বাতাস ঢুকে গাড়ির ভিতর। মিষ্টার শওকত মিসেস সাবনাজকে বললো
- আচ্ছা তুমি যে এখনও নিশিরকে বাবু ডাকো। দুটিন পর যখন নিশিরের সন্তান হবে, তখন তুমি তাকে কি বলবে?
ইতি মুখ ফোসকে বললো
- ছোট বাবু।
গাড়িতে থাকা সবাই ইতির দিকে বড় বড় চোখ করে তাকায়। সবার তাকানো দেখে ইতি মুখ ফসকে কি বলে ফেলেছে তা বুঝতে পেরে, মাথা নিচু করে ফেলে ইতি। যতই মিষ্টার শওকত আর মিসেস সাবনাজ তাকে মেয়ের মতন আদর করুন না কেন, সম্পর্কে তো তারা তার শশুড় শাশুড়ী হয়। তাদের কথার মধ্যে এমন কথা বলা তার একদম উচিত হয়নি। মুখ খুলে সরি বলতে যাবে, তার আগে মিষ্টার শওকত হো হো করে হেসে বললো
- একদম ঠিক বলেছ মা।
ইতি ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকায়। ইতিকে পিছনে তাকাতে দেখে মিসেস সাবনাজ তাকে উদ্দেশ্য করে বললো
- দিন দিন বাপের মতনই হচ্ছ তুমি।
ইতি চোখ নামিয়ে নেয়। মিসেস সাবনাজ পুনরায় বললো
- তবে ভালো একটা বুদ্ধি দিয়েছ। বিষয়টায় নিয়ে আমিও চিন্তিত ছিলাম। ছেলেকে বাবু ডাকতে ডাকতে অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। এখন যত চেষ্টাই করি না কেন, অন্য কিছু ডাকতে পারি না।
আবারও হেসে উঠে মিষ্টার শওকত। সাথে মিসেস সাবনাজও হেসে উঠে। ইতি লাজুক হাসি মুখে সামনে ঘাড় ঘুরিয়ে আড় চোখে পাশে নিশিরের দিকে তাকায়। নিশির সামনে তাকিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে, মুখে লেগে আছে মুচকি হাসে।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
১২ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন