উপন্যাস       :         কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা        :         আনআমতা হাসান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল    :         
রচনাকাল     :         ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং

লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান

11111111111111111111111111111111111

এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ৩১)

কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ৩২)

অফিসে এসে নিজের কেবিনে ঢুকে নীলা। কেবিনের টেবিলে চোখ পরতেই ছোট একটা নিশ্বাস ফেললো নীলা। প্রতিদিনের মতো আজকেও কেউ তার টেবিলের উপর একগুচ্ছ সাদা গোলাপ রেখে গিয়েছে। এই অফিসে জয়েন করার দুইদিন পর থেকেই, কে জানি প্রতিদিন সকালে তার আসার আগে তার টেবিলের উপরে কখনো একগুচ্ছ লাল গোলাপ, কখনো একগুচ্ছ সাদা গোলাপ, কখনো কতোগুলো অর্কিডের ডাল, কখনো কতোগুলো রজনীগন্ধার ডাল আবার কখনো একটা বেলি ফুলের মালা বা বকুল ফুলের মালা রেখে যায়। কে রেখে যায় কেউ বলতে পারে না। সে দীপককে সন্ধেহ করে। মেয়েদের চোখ খুব তীক্ষ্ণ হয়। তারা খুব সহজেই বলে দিতে পারে কোন ছেলে তাকে কি নজরে দেখে। কিন্তু দীপক তাকে এখনো সরাসরি কিছু বলেনি। আর দীপক যে এই ফুলগুলো দেয় তার কোনো প্রমানও তার কাছে নেই। তাই সে কিছু বলতেও পারছে না। তার বস ছাড়াও আরও তার কিছু কলিগের তার উপর নজর আছে। যদিও দীপকের জন্য তারা তার আসেপাশে ঘেসতে পারে না। কিন্তু চুপিচুপি ফুল তো তাদের মতো কারোর দেওয়ার সম্ভাবনাও একবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তাই চুপচাপ সে প্রতিদিন সেই ফুল তার মেয়ে কলিগদের দিয়ে দেয়। সে ভেবেছিল সে যদি ফুলগুলো না নেয় তাহলে আর তাকে ফুল দিবে না। কিন্তু তার সেই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণ করে, কেউ তাকে প্রতিদিন ফুল দেয়। প্রতিদিন অফিসে এসে এই ফুল বিতরণ করতে করতে সে বিরক্ত হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এতো সুন্দর ফুলগুলো নষ্ট করতেও ইচ্ছা করে না। একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে কাধের ব্যাগটা টেবিলের উপর রাখে। টেবিলের সাদা গোলাপ ফুলগুলো হাতে তুলে নিয়ে কেবিন থেকে বের হয়ে যায়, তার মেয়ে কলিগদের মাঝে ফুলগুলো বিতরণ করার জন্য।

ফর্সা গায়ে কলাপাতা রঙের একটা থ্রিপিস। মাথার চুলগুলো পনিটেল করে বেধে, মাথাসহ পুরো গায়ে খুব সুন্দর করে ওড়না দেওয়া। এই সাজ। না আছে চোখে কাজল আর না আছে মুখে কোন প্রসাধনী ছোঁয়া। এই সাজেই পাএ পক্ষের সামনে গিয়ে বসে চন্দ্রা। চোখে মুখে বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট। সে মোটেও রাজী ছিল না, পাএপক্ষের সামনে আসার। সে আগে জানতোও না কিছু। একটু আগেই দীপ্তির কাছ থেকে বাসায় এসেছে। বাসায় এসে ফ্রেস হতেই তার মা বলে নিচে তাকে দেখতে কিছু লোক এসেছে। দীপ্তির বিয়ের দিন নাকি তাকে দেখে পছন্দ করেছে ছেলের বাবা-মা। তাই এখন দেখে কথা বলতে এসেছে তারা। সে যেতে রাজী না হলে, তাকে তার মা হুমকি দেয়। যে তাকেও তাহলে এখন, দীপ্তির মতো ধরে বেধে বিয়ে দিয়ে দিবে। বাধ্য হয়ে সে পাএপক্ষের সামনে আসে। অবশ্য তার একটু কৌতুহলও হয়েছে যে যারা দীপ্তির বিয়ের দিন অনুষ্ঠান বাদ দিয়ে ছেলের বউ খুঁজে বেরিয়েছে, তাদের দেখার। শান্ত ভাবে হেটে পাএ পক্ষের সামনে এসে বসে সে। মাথা এখন নিচু করে আছে। সামনের কারোর দিকে এখনো তাকায়নি সে। চন্দ্রা গিয়ে পাএ পক্ষের সামনে বসতে একটা পরিচিত কন্ঠ বললো
- চন্দ্রা তুমি!
কন্ঠটা শুনে চন্দ্রা মাথা তুলে সামনে তাকিয়ে দেখে, তার ঠিক সামনে সোফাতে ফর্সা গায়ে সাদা পাঞ্জাবি পায়জামা পরে বসে আছে তার ক্রাশ আহান। অবাক হয়ে কিছুক্ষণ আহানের দিকে তাকায়। তারপর পাশ ফিরে আহানের বাবা-মা'র দিকে তাকায়। এখন সে বুঝতে পারে কেন তারা তাদের ছেলের জন্য তাকে দেখতে এসেছে। সে দীপ্তির বিয়ের দিন তাদের খুব খেয়াল রেখেছিল। আহানের বাবা-মা তার ভবিষ্যৎ শশুড়-শাশুড়ী বলে কথা। তাই আগে থেকেই পটিয়ে রাখতে চেয়েছিল। তার তো এখন খুব খুশি হচ্ছে। খুশিতে নাচতে ইচ্ছে করছে তাকে দেখতে এসেছে তার ক্রাশ। ভালো পালিয়ে না গিয়ে পাএ পক্ষের সামনে এসেছিল। সেখানে উপস্থিত মিসেস রুচি, মিষ্টার আব্রাহাম, মিষ্টার আফরান, মিসেস আফিফা আর মিষ্টার মুস্তাফা কৌতুহলী হয়ে একবার আহান তো একবার চন্দ্রার দিকে তাকায়। মিসেস রুচি আহানের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল
- আহান তুই ওকে চিনিস?
আহান মা'য়ের দিকে তাকিয়ে উত্তর দিল
- হ্যাঁ মা ও আমার ভার্সিটিতে পড়ে। আমার জুনিয়র।
মিষ্টার আব্রাহাম বললো
- তাহলে তো ভালোই হলো, মেয়ে যখন তোমার চেনা জানা।
আহান হাসি মুখে বললো 
- হ্যাঁ বাবা রুচি অনেক ভালো মেয়ে।
ক্রাশের মুকজে নিজের এমন প্রশংসা শুনে লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে চন্দ্রা। আহান একটু থেমে আবার বললো
- ভাইয়ার সাথে বেশ ভালো মানাবে ওকে।
আহানের কথা শুনে চন্দ্রা আবার মাথা তুলে প্রশ্নবোধক চোখে আহানের দিকে তাকায়। তাকে তার ভায়ের সাথে খুব ভালো মানাবে মানে? তাহলে কি তারা তাকে আহানের জন্য না, তার বড় ভাই আয়ানের জন্য দেখতে এসেছে! হাসি খুশি লাজুক মুখটা মুহূর্তেই মলিন হয়ে যায়। কিছুক্ষণ আগে আনন্দে ঝলঝল করা চোখ দুটো, এখন জলে ছলছল করছে। কিন্তু সেদিকে কারো খেয়াল নেই। কারো না, এমনকি তার ক্রাশ তার ভালোবাসার মানুষ আহানেরও না। মিষ্টার আব্রাহাম বললো
- তাহলে বিয়ের ডেট ফিক্সড করা যাক।
মিষ্টার আফরান স্বাভাবিক কন্ঠে বললো
- হ্যাঁ অবশ্যই।
সামনে রাজনৈতিক কিছু কাজে মিষ্টার আব্রাহাম এই মাসের পঁচিশ তারিখে দিয়ে দিন ঠিক করে। সবাই হাসি মুখে তাতে সম্মতি জানায়। শুধু হাসি নেই চন্দ্রা মুখে। সে মাথা নিচু করে ভাবছে, এতোদিনেও কি আহান তার মনের কথা বুঝতে পারেনি? এতোটা বোকা তো আহান না। তাহলে কেন তার সাথে এমন করছে আহান? কেন তাকে এতো কষ্ট দিচ্ছি!

বিছানায় শুয়ে আছে দোলা। বন্ধ চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ছে। দুহাত দিয়ে বুকে চেপে ধরে আছে একটা চিঠি। তার অতুল স্যারের লেখা চিঠি এটা। আজকে পড়িয়ে যাওয়া সময় অতুল তাকে দেখিয়ে একটা চার ভাঁজ করা কাগজ, তার হোমওয়ার্ক খাতার ভিতর রাখে এবং তাকে বলে সে যেন সময় করে একা কাগজটা খুলে পড়ে। নিজের কৌতুহল দমাতে না পেরে অতুল যাওয়ার সাথে সাথে নিজের রুমে হোমওয়ার্কের খাতাটা নিয়ে এসে দরজা লক করে দেয় সে। বিছানায় বসে হোমওয়ার্কের খাতা থেকে কাগজটা বের করে খুলে দেখে, এটা অতুলের লেখা একটা চিঠি। যাতে লেখা -
দোলা,
তুমি কি জানো, সেদিন পার্কে তোমাকে থাপ্পড় দেওয়ার পর থেকে অনুশোচনা ভুগছিলাম আমি। কতদিন সেই পার্কে গিয়েছি, তোমাকে খুঁজতে। রাস্তার ফুটপাত দিয়ে হাটার সময়, বাসে, রিকশায় বসে এই চোখ দুটো গোপনে শুধু তোমাকে খুঁজে বেড়াতো। চোখ বন্ধ করলেই ভেসে উঠতো তোমার কান্নারত সেই মুখটা। এমনেই আপু তার জন্য বাবার ব্যাংকে জমানো কাটা আমার লেখাপড়াতে খরচ করবে বলে, বিয়েটা ক্যানসেল করে দিল। তার উপর একটা প্রাণোচ্ছল হাসিখুশি মেয়েকে এভাবে কষ্ট দেওয়ার অনুসচনা। নিজের উপর আগের অনেক রাগ হতো। তবে তোমার উপরও প্রচুর বিরক্ত লাগতো। মাঝে মাঝে তো ভাবতাম, দূর ক্লাস ফাঁকি দিয়ে ছেলেদের প্রপোজ করা ফাজিল মেয়ের জন্য আমি এতো ভাবছি কেন। এরইমধ্যে একদিন স্যার তার স্টুডেন্টকে পড়ানোর জন্য বললো। সত্যি বলতে, তোমাকে পড়ানোর ইচ্ছা আমার ছিল না। ভেবেছিলাম সুযোগ বুঝে তোমাকে সরি বলে চলে যাব। কিন্তু স্যারের রিকোয়েস্টে পারলাম না। আস্তে আস্তে তোমাকে পড়াতে পড়াতে, দুষ্ট মিষ্টি তোমাকে চিনতে পারলাম। আর কখন যেন তোমার প্রেমে পড়ে গেলাম নিজেও জানি না। হয়তো জানতেও পারতাম না, সেদিন তুমি এভাবে অজ্ঞান হয়ে না গেলে। জ্ঞানহীন তোমাকে দেখার পর আমি উপলব্ধি করতে পেরেছি। তুমি আমার জন্য ঠিক কি। যদিও এখন আমি তোমার যোগ্য না। তবে আমি তোমার যোগ্য হয়ে উঠবো। তারপর তোমাকে নিজের করে তুলবো। ততোধিক আমার জন্য অপেক্ষা কর, আমার প্রণয়িনী।
ইতি
তোমার অতুল।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...


এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ৩৩)


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে। 

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন