উপন্যাস : রোদেলা আকাশে বৃষ্টি
লেখিকা : আনআমতা হাসান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ২৯ অক্টোবর, ২০২২ ইং
লেখিকা আনআমতা হাসানের “রোদেলা আকাশে বৃষ্টি” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের অক্টোবরের ২৯ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
রোদেলা আকাশে বৃষ্টি || আনআমতা হাসান |
11111111111111111111111
১১ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
রোদেলা আকাশে বৃষ্টি || আনআমতা হাসান (পর্ব - ১২)
ফর্সা গায়ে টকটকে লাল পাড়ের হলুদ শাড়ি, গা ভর্তি তাজা ফুলের গহনা। চোখে কাজল, ঠোঁটে গাঢ় লাল লিপস্টিক, হাতে তাজা ফুলের গহনার সাথে দুমুঠো লাল কাচের চুড়ি আর মুখে হালকা মেকাপে পুরো একটা হলুদ শাড়ি পড়া পুতুল লাগছে সিগ্ধাকে। তার পাশে বসে আছে অলক। গায়ে হলুদ রঙের পাঞ্জাবি আর সাদা পায়জামা। চলছে তাদের গায়ে হলুদ। পাশাপাশি দুজনকে খুব মানিয়েছে। ছেলে মেয়ে যেহেতু নিজেদেরই, তাই হলুদের অনুষ্টানও হচ্ছে একসাথে। প্রথম মিসেস সাবিদা আর মিষ্টার যাবেদ সিগ্ধা আর অলককের গায়ে হলুদ লাগায়। পরে মিসেস সাইদা আর মিষ্টার মুস্তাফা দেয়। এমন করে এক এক করে সবাই বর কনের গায়ে হলুদ ছুড়িয়ে যাচ্ছে। কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে একদৃষ্টিতে অলক আর সিগ্ধাকে দেখছে অনল। মনে মনে দোয়া করছে, তার ভাই আর সিগ্ধার যেন খুব সুখের একটা সংসার হয়। হঠাৎ পাশ থেকে একটা পুরুষালি কন্ঠ বললো
- আমাদের হলুদও একসাথে করবো। খুব ভালো হবে তাই না।
অনল চমকে পাশে তাকিয়ে দেখে তার পাশে কাঠালি রঙের পাঞ্জাবি পরে, মুখে মিষ্টি হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে প্রবাহ। প্রবাহের মুখের এই মিষ্টি হাসি দেখে মেয়েরা যেখানে তার উপর ক্রাশ খেয়ে যায়। সেখানে অনল প্রবাহের হাসি মুখ দেখে বিরক্ত হয়। আর কিছুক্ষণ আগে প্রবাহের বলা কথা বুঝতেই চোখ দুটো রাগে বড় বড় করে প্রবাহের দিকে তাকায়। অনলের তাকিয়ে থাকা দেখে প্রবাহ বুকে হাত দিয়ে বললো
- এভাবে তাকায় না বউ। এমনিতেই তোমাকে শাড়িতে দেখে আমার অর্ধেক হার্ট বের হয়ে আছে। এভাবে তাকালে পুরোটাই বের হয়ে যাবে।
অনল কপাল কুঁচকে প্রশ্ন করল
- আপনি এখানে কি করছেন?
প্রবাহ অবাক হওয়ার ভঙ্গি করে বললো
- এমা! আমার একমাএ বউয়ের একমাএ ভাইয়ের একমাএ গায়ে হলুদ বলে কথা, আমি না আসলে হয়!
অনল স্বল্পভাষী। বেশি কথা সে যেমন বলে না, তেমন শুনতেও পছন্দ করে না। আর ছেলেদের মুখ থেকে তো মোটেও না। তার মতে ছেলেরা হবে গম্ভীর। প্রয়োজন ছাড়া তারা কথা বলবে না, খুব বেশি হাসির কিছু না হলে হাসবে না। সেখানে এই লোক কথায় কথায় মুখে হাসির রেখা টানে, অকারণেই কথা বলে। কিভাবে যে ঘটককে এই শর্তগুলো দিতে ভুলে গিয়েছিল। এখন নিজের গালে নিজেরই একটা থাপ্পড় মারতে ইচ্ছা করছে। অনল প্রবাহের সামনে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে রাগী কন্ঠে বললো
- শুনুন যার হলুদের অনুষ্টানে এসেছেন তাকে গিয়ে হলুদ দিবেন। তারপর খেয়েদেয়ে চুপচাপ চলে যাবেন। আমাকে একদম ডিসটার্ব করবেন না।
- এই হলুদ দেওয়াটাই তো সমস্যা।
- কেন?
- দেখেছো সবাই জোড়ায় জোড়ায় হলুদ দিচ্ছে। আমি একা একা হলুদ দিলে কেমন দেখায় না।
- তো আপনিও কাউকে যোগাড় করে নিয়ে গিয়ে হলুদ দিন।
- তোবা, তোবা। নিজের হবু বরকে এমন কথা বলতে কষ্ট হয় না তোমার!
- না, একদম হয় না। আমি আরও খুশি হই আপনি আমার পিছু ছেড়ে, অন্য কারো পিছনে পড়লে।
প্রবাহ কিছু বলবে তার আগেই মিসেস সাবিদা সেখানে এসে, প্রবাহকে জিজ্ঞেস করল
- প্রবাহ বাবা কখন এসেছো?
প্রবাহ নম্র, ভদ্র ছেলের মতো উত্তর দিল
- এই তো মা একটু আগে।
মিসেস সাবিদা আশেপাশে চোখ ঘুরিয়ে দেখতে দেখতে বললো
- ভাই ভাবিকে যে দেখতে পাচ্ছি না। ওনারা আসেনি?
প্রবাহ শান্ত কন্ঠে বললো
- আসলে মা আমি অফিস থেকে সোজা এখানে চলে এসেছি। মামুনি পাপা বাসায় বাসা থেকে আসছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসবে হয়তো।
প্রবাহের নিজের বাবা-মাকে মামুনি পাপা ডাকা নিয়েও অনলের খুব বিরক্ত লাগে। বুইড়া দামড়া ছেলে মা বাবা না ডেকে, ঢং করে ছোট বাচ্চাদের মতো মামুনি পাপা ডাকে। মিসেস সাবিদা পুনরায় বললো
- ওহ আচ্ছা। চলো, তুমি কিছু খাবে।
প্রবাহ মন খারাপের করে বললো
- আমি ভেবেছিলাম হলুদ দিয়ে খাব, কিন্তু হলুদই তো দিতে পারছি না।
মিসেস সাবিদা প্রশ্ন করল
- কেন বাবা?
প্রবাহের ফটাফট উত্তর
- দেখুন না মা, আমি সেই কখন থেকে আপনার মেয়েকে বলছি চল হলুদ দিয়ে আসি। কিন্তু ও যাচ্ছেই না।
মিসেস সাবিদা অনলের দিকে তাকিয়ে বললো
- যা প্রবাহের সাথে গিয়ে হলুদ দিয়ে আয়।
অনল ম্লান কন্ঠে বললো
- মা আমি পরে ,,,,,
অনলের কথা শেষ হওয়ার আগেই মিসেস সাবিদা শক্ত কন্ঠে বললো
- অনল আমি আর কোন কথা শুনতে চাই না।
অনল আর কোন কথা না বলে, রাগে গটগট করে একাই স্টেজের দিকে হাটা লাগায়।
শ্যামলা গায়ে কালো কোট টাই পরা, পাঁচ ফুট দশ ইঞ্চি লম্বা, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী তামিম লিষ্ট ধরে একজন পেসেন্টকে নিয়ে যাচ্ছিল। তখনি পিছনে থেকে কেউ মিষ্টি সরে ডেকে উঠলো
- তামিম ভাইয়া।
ডাকটা তামিমের কানে যেতেই সেখানেই স্থীর হয়ে দাঁড়িয়ে যায় সে। মেয়েলি এই কন্ঠস্বরটা মিষ্টি হলেও তার কাছে আতঙ্কের। মনে মনে দোয়া পড়তে পড়তে মানত করে ফেলে, কণ্ঠে স্বরটা যদি সে যার ভাবছে তার না হয়, তাহলে সে তার গার্লফ্রেন্ডকে ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার জন্য রাখা টাকাটা ফকিরকে দিয়ে দিবে। না পুরোটা না অর্ধেক টাকা দিবে। না হয় আবার গার্লফ্রেন্ড তার মুন্ডপাত করবে। এই জন্যই বলে মেয়ে মানুষ মানেই ঝামেলা। তার ভাবনার মাঝেই সেই কন্ঠ স্বরটা তার পাশে থেকে আবার ডেকে উঠে
- তামিম ভাইয়া।
তামিম পাশে তাকিয়ে দেখে তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে বিন্দু। গায়ে কাচা হলুদ রঙের শাড়ি, দুই হাত ভর্তি হলুদ রঙের চুড়ি, মাথার চুলগুলো খোপা করে তাতে তিনটা হলুদ রঙের গোলাপ লাগানো, চোখে কাজল, ঠোঁটে হালকা গোলাপি রঙের লিপস্টিক আর হালকা মেকাপে একদম হলুদ পরির মতো লাগছে তাকে। তামিম বিন্দুর দিক থেকে চোখ সরিয়ে আশেপাশে তাকিয়ে দেখে আশেপাশের সবাই ঘুরেফিরে বিন্দুকে দেখছে। বিন্দু আবার ডাকে
- তামিম ভাইয়া।
তামিম বিন্দুর দিকে তাকিয়ে বললো
- জ্বী ম্যাম।
বিন্দু কপালে ভাঁজ ফেলে বললো
- আবার ম্যাম!
তামিম তাড়াহুড়ো করে বললো
- সরি, ভাবি।
বিন্দু মিষ্টি করে হেসে বললো
- হুম, এবার ঠিক আছে। আচ্ছা শুনুন না ভাইয়া, আমার না অ্যাপোয়েন্টমেন্ট ছিল আজকে বিকেল পাঁচটায়। ওটা আপনি চেন্স করে একটু এখন দেখিয়ে দিতে পারবেন। গায়ে হলুদের অনুষ্টান থেকে এসেছি। আমি ওয়েট করতে পারবো না। তাড়াতাড়ি যেতে হবে। বেশি সময় নিব না। যাস্ট দশ মিনিট টাইম নিব, প্লিজ ভাইয়া।
তামিম তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মধ্যে বয়স্ক লোকটার দিকে তাকিয়ে বললো
- এখন তো ওনাকে নিয়ে যাচ্ছি।
বিন্দু লোকটার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে বললো
- প্লিজ আংকেল আপনি যাস্ট দশ মিনিট ওয়েট করবেন।
এতো সুন্দরী একটা মেয়ে এভাবে বললে রাজী না হয়ে কেউ পারে। লোকটা হাসি মুখে বললো
- কোন সমস্যা নেই তুমি যাও। আমার এতো তাড়া নেই।
লোকটার মুখের কথা শুনে তামিমের মুখ হা হয়ে যায়। এই লোক এই কথা বলছে। অথচ গত এক ঘন্টা ধরে তার সিরিয়াল আসছে না কেন, এতো দেরি হচ্ছে কেন হ্যান ত্যান বলতে বলতে তামিমের মাথা খাচ্ছিল। বিন্দু মিষ্টি হেসে লোকটাকে বললো
- থ্যাংক ইউ।
তারপর তামিমের দিকে তাকিয়ে বললো
- চলুন ভাইয়া।
তামিম মাথা নেড়ে কেবিনে চলে যায়। অর্থের সামনে তার জন্য বরাদ্দকৃত চেয়ারে বসে ভয়ে শুকনো ঢোক গিলছে আর নিজেকে বকছে সে। তার সম্পূর্ণ বিশ্বাস যে সে পুরো টাকা মানত না করে, হাফ টাকা দিবে বলেছে দেখেই তার মানত কাজে দেয়নি। গার্লফ্রেন্ডের মতো বিড়ালের হাত থেকে বাঁচার জন্য সে কিভাবে বাঘের ডেড়ায় ঢুকলো। তামিম এসেও কিছু বলছে না দেখে বিচক্ষণ অর্থ বুঝে যায় যে বিন্দু এসেছে, তাই তামিম ভয়ে চুপ করে আছে। একটা নিশ্বাস ফেলে পেসেন্টের সিটের দিকে তাকায় সে। বিন্দুকে এই সাজগোজে দেখে অর্থের বরক্তিটা বেরে যায় কয়েকগুণ। নিজেকে যতটা সম্ভব শান্ত রেখে শান্ত কন্ঠে বিন্দুর উদ্দেশ্যে বললো
- দেখুন আমি আবারও আপনাকে ভালো করে বলছি। এটা হসপিটাল কোন পার্ক না, যে আপনি ইচ্ছা মতো এসে ঘুরে যাবেন। আপনার অনেক টাকা আছে, সময় আছে। কিন্তু এখানে যারা ওয়েটিংএ বসে আছে তাদের মধ্যে হাতেগোনা কিছু লোক ছাড়া বাকি সবাই খুব ব্যস্ত। কেউ কেউ হয়তো অফিস থেকে একদিনের ছুটি নিয়ে ডাক্তার দেখাতে এসেছে। আবার কেউ কেউ হয়তো হাফ বেলা ছুটি নিয়ে এসেছে। ডাক্তার দেখিয়ে তারা আবার অফিসে যাবে। তাই নিজের সময়ের মূল্য না থাকলেও অন্যের সময়ের মূল্য দিন। কোন সমস্যা না থাকলে প্লিজ আসবেন না।
বিন্দু মনোযোগ দিয়ে অর্থের সম্পূর্ণ কথা শুনে বললো
- সমস্যা আছে তো।
অর্থ স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন করল
- কি সমস্যা বলুন?
বিন্দু মলিন কন্ঠে উত্তর দিল
- আমার হবু বর না চোখে দেখে না। না দেখে, তবে যা দেখার দরকার তা দেখে না। এই যেমন, আমি শাড়ি পরে এতো সুন্দর করে সাজগোছ করে শুধু মাএ তাকে দেখানোর জন্য তার কাছে ছুটে আসলাম। সে তা দেখে মুগ্ধ না হয়ে উল্টো আমাকে সময়ের মূল্য রচনা পড়াচ্ছে।
রাগে চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলে অর্থ। কিছুক্ষণ পর চোখ দুটো খুলে, তামিমের দিকে তাকিয়ে রাগী কন্ঠে বললো
- তামিম একে ভালোয় ভালোয় বের কর, না হয় আমি কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটিয়ে ফেলবো।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
১৩ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন