উপন্যাস : রোদেলা আকাশে বৃষ্টি
লেখিকা : আনআমতা হাসান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ২৯ অক্টোবর, ২০২২ ইং
লেখিকা আনআমতা হাসানের “রোদেলা আকাশে বৃষ্টি” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের অক্টোবরের ২৯ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
রোদেলা আকাশে বৃষ্টি || আনআমতা হাসান |
১৯ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
রোদেলা আকাশে বৃষ্টি || আনআমতা হাসান (পর্ব - ২০)
বুক সেলফের সামনে দাঁড়িয়ে "Veterinary and comparative ophthalmology" বইটা নিতেই যাচ্ছিল অর্থ। তখনই টেবিলের উপর থাকা তার ফোনটা ট্রিং ট্রিং শব্দ করে বেজে উঠে। অর্থ বইটা না নিয়ে, টেবিলের কাছে গিয়ে ফোনটা হাতে নিল। স্কিনে ভেসে উঠা নাম্বারটা দেখে কলটা রিসিভ করে স্বাভাবিক কন্ঠে অর্থ বলল
- আসসালামু আলাইকুম কে বলছেন?
ফোনের ওপাশ থেকে মিষ্টি কন্ঠস্বরে একটা মেয়ে বলল
- ওয়ালাইকুম আসসালামু। আমার কন্ঠস্বর শুনেও কি আমাকে চিনতে পারেননি?
অর্থের সোজাসাপ্টা উত্তর
- না। কে আপনি?
মেয়েটি মোহনীয় কন্ঠে বলল
- আমিই সেই, যে প্রথম দেখায় আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছে। আমিই সেই, যে প্রথম চাহনিতেই আপনার চোখের মায়ায় পড়ে গিয়েছে। আমি সেই, যে,,,,,,
মেয়েটির কথা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই অর্থ ফোনের লাইন কেটে ফেয়। কথার ধরন শুনে অর্থের আর বুঝতে বাকি থাকে না যে মেয়েটা বিন্দু। তাই সে খট করে লাইনটা কেটে দিয়ে, নাম্বারটা ব্লাক করে দেয়। রাগ, বিরক্তি নিয়ে ফোনটা টেবিলের উপর রেখে মনে মনে সে ভাবতে থাকে, কিভাবে বিন্দুর এই পাগলামি বন্ধ করবে। তার ভাবনার মাঝেই দরজা থেকে মায়ের কন্ঠস্বর শুনতে পায় সে। মিসেস সুরূপা রুমে ঢুকতে ঢুকতে ছেলেকে ডাকছে
- অর্থ।
অর্থ মায়ের দিকে ঘুরে তাকিয়ে বলল
- হ্যাঁ মা, বল।
মিসেস সুরূপা ছেলের কাছে গিয়ে তার দিকে একটা কাগজ এগিয়ে দিয়ে বলল
- বাবা দেখ তো একে কেমন লাগে?
অর্থ কাগজটার দিকে তাকিয়ে দেখে একটা মেয়ের ছবি আর তার নিচে মেয়েটার বেয়ো ডাটা। মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে গেল তার। একমাত্র সে বিয়ে করে ফেললেই বিন্দু তার পিছু ছাড়বে। তাছাড়া এই মেয়েটার গোলগাল মুখে থাকা মোটা গোল ফ্রেমের চশমা আর মেয়েটা একটা বেসরকারি মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের পড়ে এটুকু থেকেই বুঝা যাচ্ছে মেয়েটা বেশ পড়ুয়া। এমন মেয়েকে বিয়ে করলে খুব একটা খারাপ হবে না। তাই মাকে বলল
- মা এই মেয়েকে আমার পছন্দ হয়েছে।
মিসেস সুরূপা ছেলের কথা শুনে হাসিমুখে বলল
- তাহলে আমি ঘটককে ফোন করে বলে দিচ্ছি তাদের সাথে কথা বলতে।
বলেই উনি উল্লাসিত ভাবে রুমের থেকে বের হয়ে গেল। সে এখন আর সময় নষ্ট করতে চায় না। পরে যদি ছেলে মত বদলে ফেলে। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ছেলেকে বিয়ে করাতে চান তিনি। অর্থ এসব নিয়ে আর মাথা না ঘামিয়ে বুক সেলফের কাছে গিয়ে "Veterinary and comparative ophthalmology" বইটা হাতে নিল।

সকাল সাতটা বেজে দুই মিনিট। স্নিগ্ধার রুমের খাটে সোজা হয়ে শুয়ে ঘুমাচ্ছে অলক। তার পাশেই অলকের হাত জড়িয়ে বাচ্চাদের মতো গুটিশুটি মেরে ঘুমাচ্ছে স্নিগ্ধা। প্রতিদিন সকাল সাতটায় ঘুম থেকে উঠে সে। তাই আজও স্বাভাবিক ভাবেই ঘুম ভেঙে যায় তার। ঘুম ভাঙতেই সে বুঝতে পারে যে সে কোন কিছুকে আঁকড়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে। চোখ খুলে নিজেকে অলককের ডানহাত জড়িয়ে থাকতে দেখে লজ্জায় প্রায় সাথে সাথেই ছিটকে দূরে সরে যায় স্নিগ্ধা। সে তো এক কোণে গুটিশুটি হয়ে ঘুমিয়েছিল। তাহলে অলকের এতো কাছে গিয়ে তার হাত জড়িয়ে ধরলো কখন! সব দোষ তার খাটের। এই খাটটা এতো ছোট যে দুজন শোয়ার পর আর কোন বাড়তি জায়গা থাকে না। অলকের রুমের খাটটা তাদের দুজনের ঘুমানোর জন্য ঠিক আছে। ইস ভাগ্যিস সে আগে উঠে গিয়েছে। অলক আগে উঠে এই দৃশ্য দেখলে তাকে কি ভাবতো। অলক ঘুমাচ্ছে তো? কথাটা ভেবেই ঘুমন্ত অলকের মুখের দিকে তাকায় স্নিগ্ধা। অলকের দিকে তাকিয়ে দেখে সে ঘুমাচ্ছে। মুগ্ধ নয়নে ঘুমন্ত অলকের দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবে সে, "সকালের স্নিগ্ধ আলোয় ঘুমন্ত অলক ভাইয়াকে ঠিক স্লিপিং বিউটির মতো লাগছে।" পরক্ষণেই মাথায় একটা চাটি মেরে পুনরায় ভাবে সে, ছেলে মানুষকে কি বিউটি বলে, তাদের বলে হ্যান্ডসাম। অলক ভাইয়া হলো স্লিপিং হ্যান্ডসাম।" হঠাৎ অলক ঘুমের মধ্যে একটু নড়েচড়ে উঠলেই স্নিগ্ধা এক দৌড়ে ওয়াসরুমে চলে যায়। ওয়াসরুমের দরজা লক করে বুকে হাত দিয়ে ভয়ে দ্রুত গতিতে চলতে থাকা তার হৃদপিণ্ডটাকে শান্ত করার চেষ্টা করে। যদি অলক ঘুম থেকে জেগে দেখতো যে সে তার দিকে এমন হা করে তাকিয়ে আছে তাহলে কি লজ্জায়ই না পড়তে হতো তাকে। কথাট ভেবে আনমনে সামনের দিকে তাকাতেই ওয়াসরুমের আয়নায় নিজের লজ্জায় লাল হয়ে যাওয়া মুখটা চোখে পড়ে তার। নিজের টুকটুকে লাল হয়ে যাওয়া মুখটা দেখে তার মাথায় একটা কথা আসে, লাল টুকটুকে বউ। মনে মনে সে ভাবে, "নতুন বউরা লজ্জা পেয়ে লাল হয়ে থাকে দেখেই, মনে হয় এই লাল টুকটুকে বউ কথাটার উৎপত্তি হয়েছিল।"

অনল শো-রুমের ভিতর ঢুকতেই সবাই তাকে গুড মর্নিং উইস করে। একাউন্টের কাছে যেতেই রাহাত তার পাশে দাঁড়ানো বছর একুশ বাইশের ফর্সা, শুকনা, লম্বায় কতোটুকু হবে পাঁচফুট আট কি নয়, আকাশী রঙের একটা শার্ট সাথে কালো রঙের প্যান্ট পরা ছেলেটাকে দেখিয়ে বলল
- ম্যাম এ ফয়সাল আমাদের নতুন স্টাফ।
ফয়সাল নামের ছেলেটা নম্র কন্ঠে অনলকে বলল
- আসসালামু আলাইকুম ম্যাম।
অনল হাসিমুখে ছেলেটাকে বলল
- ওয়ালাইকুম আসসালাম। কেমন আছো?
ফয়সাল হাসিমুখে বলল
- জ্বি ম্যাম ভালো।
রাহাত একটা ফাইল অনলের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল
- ম্যাম এটা ফয়সালের ফাইল।
এখানে চাকরি করতে ইচ্ছুক এমন পাঁচ ছয়জন ছেলে-মেয়েদের সিভি দেখে আর তারা কাজ কতোটুকু করতে পারবে তা পরীক্ষা করে অলকের বিয়ের দু'দিন আগে রাহাত ফয়সালকে কাজে নিযুক্ত করে। অনল রাহাতকে বলেছিল সে সিভি চেক করবে না। তবে তাকে যেন ফয়সালের সম্পর্কে প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য দেয়। সেই কথা অনুযায়ী ফয়সালের সম্পর্কে কিছু তথ্য লিখে অনলকে দেয় রাহাত। ফাইলটা খুলে, লিখাগুলো পড়ে অনল জানতে পারলো, ফয়সালের বাবা-মা নেই। সে তিতুমীর কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। অনল ফয়সালকে জিজ্ঞেস করল
- তোমার আর কেউ আছে? কোন গার্জিয়ান?
ফয়সাল ম্লান কন্ঠে বলল
- না ম্যাম আমার কেউ নেই।
ফয়সালের কথা শুনে অন্য একজনের কথা মনে পড়ে যায় অনলের। ফয়সালের জন্য খুব মায়া হয় তার। মিষ্টি হেসে ফয়সালকে বলল
- তুমি তো এখনো স্টুডেন্ট। তোমার পরীক্ষা থাকলে তুমি চাইলে ছুটি নিতে পারবে।
ফয়সাল খুশি হয়ে বলল
- ধন্যবাদ ম্যাম।
তখনই অনলের কানের কাছে কেউ ক্ষীণ কন্ঠে বলল
- সবার জন্য তুমি দয়াশীল শুধু আমার ক্ষেত্রেই কেন তুমি এতো কঠোর?
কন্ঠস্বরটা শুনে অনল মোটেও চমকায়নি। কারণ এই সেই কন্ঠস্বর যেটা সে শুনতে না চাইলেও, তাকে বার বার শুনতে হয়। পিছনে না ঘুরেই বিরক্তিতে কপালে ভাঁজ ফেলে সে বলল
- আপনি এখানে কি করছেন?
কথাটা বলে গম্ভীরমুখে প্রবাহের দিকে তাকায় সে। প্রবাহ সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে মুখে দুষ্ট হাসির রেখা টেনে ফিসফিসিয়ে বলল
- প্রেম করতে এসেছি। তোমার ভাইয়ের বিয়ের জন্য এতোদিন তোমার সাথে প্রেম করতে পারিনি। শরীরে ভিটামিন প্রেমের অভাব দেখা দিচ্ছে। দেখ কেমন শুকিয়ে যাচ্ছি।
অনল গম্ভীর কন্ঠে বলল
- দেখুন ফালতু কথা না বলে, সোজা ভাবে বলুন আপনি এখানে কেন এসেছেন?
অনল দুষ্টমি ভরা কন্ঠে বলল
- তোমার শাশুড়ি তোমাকে কিডন্যাপ করতে বলেছে। আমি তাই করতে এসেছি। আমি আবার মামুনির লক্ষী ছেলে, তাই সব কাজ ফেলে তার আজ্ঞা পালন করতে চলে এলাম।
অনল বিরক্তি ভরা কন্ঠে বলল
- ঠিক ভাবে উত্তর দিন না হয় আমি আপনার সাথে কোথাও যাবো না।
অনল অবাক হওয়ার ভান করে বলল
- কিডন্যাপ কি তাও তুমি বুঝো না! নাকি আমার মতো ইয়াং, হ্যান্ডসাম ছেলে দেখে সব ভুলে গিয়েছে।
ফয়সাল নিচু কন্ঠে রাহাতকে প্রশ্ন করল
- রাহাত ভাই উনি কে?
রাহাতও নিচু করে উত্তর দিল
- আমাদের ম্যামের ফিঁয়ান্সে।
ফয়সাল ছোট করে বলল
- ওহ।
অনল রাগে, বিরক্তিতে সেখান থেকে অফিস রুমের দিকে চলে যেতে নিলে প্রবাহ তাড়াতাড়ি অনলের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলল
- আরে অগ্নিকন্যা রাগ করে না। আচ্ছা ভালো করে বলছি। তোমার শাশুড়ি তোমাকে যেতে বলেছে কিছু ড্রেস পছন্দ করার জন্য।
প্রবাহকে অনলের বিরক্ত লাগলেও মিসেস সাথী মানে প্রবাহের মামুনিকে অনলের খুব ভালো লাগে। মহিলাটা কি সহজ সরল আর হাসিখুশি। তাই তার কথা শুনে অনল আর না করে না, পিছনে ঘুরে রাহাতকে ডেকে বলল
- রাহাত, তুমি সবকিছুর খেয়াল রেখ আমি বিকেলের দিকে আসবো।
রাহাত স্বাভাবিক ভাবেই বলল
- আচ্ছা ম্যাম।
অনল প্রবাহের দিকে না তাকিয়ে, প্রবাহের উদ্দেশ্যে বলল
- চলুন।
কথাটা বলেই প্রবাহের জন্য অপেক্ষা না করে, গটগট করে হেটে শো-রুম থেকে বের হয়ে যায় সে। প্রবাহও মুচকি হেসে দ্রুত পায়ে তার অগ্নিকন্যার দিকে এগিয়ে যায়।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
২১ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন