উপন্যাস : রোদেলা আকাশে বৃষ্টি
লেখিকা : আনআমতা হাসান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ২৯ অক্টোবর, ২০২২ ইং
লেখিকা আনআমতা হাসানের “রোদেলা আকাশে বৃষ্টি” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের অক্টোবরের ২৯ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
রোদেলা আকাশে বৃষ্টি || আনআমতা হাসান |
১৮ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
রোদেলা আকাশে বৃষ্টি || আনআমতা হাসান (পর্ব - ১৯)
আজ অলক আর স্নিগ্ধার রিসিপশন। সেই উপলক্ষে পুরো বাড়ি খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। যদিও অনুষ্ঠান হবে কমিউনিটি সেন্টারে, তাও বাড়িটা খুব সুন্দর করে লাইটিং করিয়েছে মিষ্টার যাবেদ। একমাত্র ছেলের বিয়ে নিয়ে তারও কিছু সখ আহ্লাদ আছে। সাজানো বাড়ির দ্বিতীয় তলায় অলক আর স্নিগ্ধার রুমের খাটে চোখ বাঁধা অবস্থায় পা ঝুলিয়ে বসে আছে স্নিগ্ধা। বিন্দু তার ঠোঁটে লিপস্টিক দিচ্ছি আর অনল তার ঝুলিয়ে রাখা পায়ে জুতো পরিয়ে দিচ্ছে। আজকে তারা দুই বান্ধবী মিলে স্নিগ্ধাকে সাজাবে বলে তাকে পার্লারে নিয়ে যায়নি বা পার্লার থেকে কাউকে বাড়িতে ডাকিনি। আর স্নিগ্ধার সম্পূর্ণ সাজ শেষ হলে তাকে একবারে দেখাবে বলেই তারা তার চোখ বেঁধে রেখেছে। লিপস্টিক দেওয়া শেষ হলে বিন্দু স্নিগ্ধাকে বলল
- আমি এখন তোমার চোখের বাঁধন খুলে দিচ্ছি, মুখে মেকাপ করবো। কিন্তু আমি না বলা পর্যন্ত তুমি চোখ খুলবে না। ঠিক আছে।
স্নিগ্ধা লক্ষী মেয়ের মতো বলল
- আচ্ছা।
স্নিগ্ধার মেকাপ করা শেষ হলে অনল স্নিগ্ধার হাতে কিছু একটা দিয়ে বলল
- এটা ধর।
চোখ বন্ধ থাকায় স্নিগ্ধা দেখতে পারলো না তার হাতে অনল কি দিয়েছে। কিন্তু তাও তা অনল যেভাবে ধরে রাখতে বলেছে সে সেভাবেই ধরে রেখেছে। তারপর বিন্দু আর অনল মিলে তার দুই হাত ধরে, তাকে ড্রেসিং টেবিলের সামনে এনে দাঁড় করিয়ে দেয়। অনল স্বাভাবিক কন্ঠেই বলল
- এবার আস্তে আস্তে চোখ খোল।
স্নিগ্ধা আস্তে-ধীরে চোখ খুলে অবাক হয়ে যায়। নিজেকে নিজেই যেন আজ চিনতে পারছে না সে। ফর্সা গায়ে সাদা গাউন, মাথায় তাজের সাথে সাদা ওড়না। চুলগুলোর মাঝ বরাবর সিঁথি করে, নিচের দিকে কার্লি করে পিছনে ছেড়ে রাখা। কানে ডায়মন্ডের দুল, ডানহাতে একটা ডায়মন্ডের ব্রেসলেট। পায়ে হালকা উঁচু সাদা রঙের জুতো। মুখে মেকাপ, ঠোঁটে গোলাপি রঙের লিপস্টিক। হাতে একগুচ্ছ সাদা গোলাপ। ঠিক যেন কোন বার্বি মুভির ওয়েডিং সিন থেকে বের হওয়া বার্বি। অনল হাসিমুখে জিজ্ঞেস করল
- আমার বার্বির সাজ পছন্দ হয়েছে।
স্নিগ্ধা মিষ্টি হাসি হেসে বলল
- খুব সুন্দর হয়েছে। আমি তো চিনতেই পারছি না।
তখনই মিসেস সাবিদা রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলল
- তোদের হলো। অলক গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে।
বিন্দু মিসেস সাবিদাকে বলল
- আন্টি জননী দেখতো তোমার ছেলের বউকে কেমন সাজিয়েছি।
মিসেস সাবিদা স্নিগ্ধাকে দেখে হাসিমুখে তার কাছে এগিয়ে যায়। তারপর কপালে স্নেহের চুমু দিয়ে বলল
- একদম রুপকথার রাজকন্যার মতো।
"ছেলের বউ" কথাটা শুনেই স্নিগ্ধার লজ্জা লাগছিল। তার উপর মিসেস সাবিদার স্নেহের চুম্বন আর প্রসংশা শুনে তার লজ্জা আরও কয়েকগুণ বেড়ে যায়।

একটা অফিস রুম। রুমে কোন লাইট জ্বালানো নেই। শুধু জানালার ভারী পর্দাটা কিছুটা ফাঁক হয়ে থাকায় ভিতরটা অস্পষ্ট ভাবে দেখা যাচ্ছে। রুমের ভিতর টেবিলের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে একটা লোক। যদিও গায়ে হুন্ডি থাকায় আর উল্টো দিকে ঘুরে থাকার ফলে মুখ দেখা যাচ্ছে না। তবে এই আবছা আলোতে লোকটার ব্লাক কালারের হ্যান্ড গ্লাবস পড়া হাতে থাকা ছুরিটা চকচক করছে। লোকটা ছুরিটা সামনে দিকে লক্ষ্য করে ছুড়ে মারলো। ছুরিটা গিয়ে গেঁথে গেল সামনের বোর্ডে পিন গিয়ে লাগানো অনলের হাস্য উজ্জ্বল ছবির কপালে। সেদিকে তাকিয়ে লোকটা রাগী কন্ঠে বলল
- তুই আমার ভাইকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছিলি না। এখন আমি তোকে ফাঁসিতে ঝোলাবো।

কমিউনিটি সেন্টারে স্টেজের উপর অনল আর বিন্দুর দেখনো স্টাইলে ফটোগ্রাফার স্নিগ্ধার একের পর এক ছবি তুলে যাচ্ছে। তারা নিজেরাও স্নিগ্ধার সাথে, একা বেশ কিছু ছবি তুলেছে। আরও কিছু ছবি তোলার পর বিন্দু বলল
- অনেক তো হলো প্রিন্সেসের একা একা ছবি তোলা, এবার প্রিন্সকে নিয়ে আয়। দুজনের একসাথে কিছু ছবি তুলি।
অনল সায় দিয়ে বলল
- ঠিক বলেছিল আমি ভাইয়াকে নিয়ে আসি।
কথাটা বলেই অনল স্টেজের থেকে নেমে গিয়ে অলককে স্টেজে নিয়ে এলো। অনল অনেক বলে টলে অলককেও বার্বির মুভির প্রিন্সদের মতোই সাজিয়েছে। উজ্জ্বল ফর্সা গায়ে সাদা শার্টের সাথে সাদা সুট সেট, পায়ে সাদা সু জুতা, চুলগুলো বেক ব্রাশ করা, ক্লিন শেভ করা মুখ, চোখে চশমার পরির্রতে লেন্স পরা। রুপকথার রাজপুত্রর মতোই লাগছে তাকে। অপলক দৃষ্টিতে অলকের দিকে তাকিয়ে আছে স্নিগ্ধা। অলককে দেখে বিন্দু হেসে বলল
- পার্ফেক্ট বার্বির পার্ফেক্ট প্রিন্স চার্মিং। ঠিক না স্নিগ্ধা?
কথাটা বলেই বিন্দু স্নিগ্ধার দিকে তাকায়। অনল আর অলক স্নিগ্ধার দিকে তাকায়। স্নিগ্ধার প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য। তারা স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে দেখে সে অলকের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। বিন্দু যে তাকে কিছু বলেছে তার বিন্দুমাত্রও সে শোনেনি। অলকও অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে স্নিগ্ধার দিকে। মুচকি হেসে অনল স্নিগ্ধাকে ডাকল
- স্নিগ্ধা, এই স্নিগ্ধা।
কিন্তু তাও স্নিগ্ধার হুস ফিরে না। তবে অলককের ফিরে, নিজেকে ধাতস্থ করে অন্যদিকে চোখ ঘুরিয়ে নেয় সে। যাকে এতোদিন নিজের ছোট বোনের মতো স্নেহ করে এসেছে, তাকে বউ বলে মানাই এখন তার কাছে অস্বস্তিকর। তার উপর মেয়েটা এতো সুন্দর করে সেজেগুজে তার দিকে এভাবে হা করে তাকিয়ে থাকলে, তার এখানে দাঁড়িয়ে থাকা দুষ্কর। বিন্দু স্নিগ্ধার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল
- অলক ভাইয়াকে একদম প্রিন্সের মতো লাগছে তাই না।
স্নিগ্ধা আনমনেই বলল
- হ্যাঁ একদম প্রি,,,,,,,,,,
কথাটা পুরোটা শেষ করার আগেই স্নিগ্ধার হুস ফেরে। আর এতক্ষণ ও কি করছিল তা ভেবেই ওর লজ্জায় গাল গরম হয়ে যায়। বিন্দু পুনরায় দুষ্টমি ভরা কন্ঠে হেসে বলল
- তোমার প্রিন্সকে সারাজীবন দেখতে পারবে। এখন তোমার প্রিন্সের সাথে কয়েকটা ছবি তুলে নেও। তোমার ছবি তোলা শেষ হলে আমি খেতে যাবো। না হয় পেটের মধ্যে থাকা ক্ষুধার্ত ইদুরগুলো খাবার না পেয়ে আমাকেই গিলে খাবে।
বিন্দুর কথা শুনে লজ্জায় মাথাটা আরও নিচু করে ফেলে স্নিগ্ধা। কিন্তু পরক্ষণেই একটা কথা মনে পড়তেই তার লজ্জা রাঙা মুখটা কালো আমাবস্যায় ছেয়ে যায়। মনে মনে সে ভাবে, "সবাই তো বলল আমাকে দেখতে বার্বি প্রিন্সেসের মতো সুন্দর লাগছে। সবাই আমার কতো প্রসংশাও করল। তাহলে, অলক ভাইয়া আমার দিক থেকে চোখ ঘুরিয়ে রেখেছে কেন? কোন কারণে অলক ভাইয়া কি আমার উপর রেগে আছে? কিন্তু আজকে সকালেও তো উনি আমার সাথে হাসিখুশি মুখেই কথা বলেছিল। তাহলে এখন কি হলো? আচ্ছা আবার এমন নয়তো যে আমার এই প্রিন্সেস সাজাটাই ওনার পছন্দ হয়নি বা ওনাকে জোর করে আপুনি প্রিন্স সাজিয়েছে বলে উনি রাগ করে আছে। হ্যাঁ তাই হবে। নাহ আর কখনো প্রিন্সেস সাজবো না আর ওনাকেও সাজতে দিব না। প্রিন্সেস সেজে সবার এতো প্রসংশা শুনে আমার যতটা খুশি হচ্ছে, উনি আমার থেকে মুখ ঘুরিয়ে রাখায় আমার তার থেকে দ্বিগুণ কষ্ট হচ্ছে।"

হাতে একটা লাল রঙের ফাইল নিয়ে ছেলের রুমে ঢুকে মিসেস সুরূপা দেখে, অর্থ বইয়ে মুখ গুঁজে বসে আছে। মিসেস সুরূপা ভেবে পায় না, এতো বড় একটা হসপিটালের ডাক্তার হয়েও ছেলে কি এতো পড়ে। ছেলেকে জিজ্ঞেস করলে হাসিমুখে বলবে, "পড়ার কোন শেষ নেই মা।" তার মাথায় ডুকে না এতো পড়ে ছেলে কি করবে। যা জেনেছে তাই তো যথেষ্ট। জীবনে তো অনেক কষ্ট করল। এখন কোথায় একটু জীবনটা উপভোগ করবে। তা না বইয়ে মুখ গুজে বসে থাকে। তার কোন কথাও শুনে না। তাই তো ছেলেকে হাসিখুশি চঞ্চল একটা মেয়ে বিয়ে করাতে চান উনি, যদি ছেলের বউ তার ছেলের জীবনটা বইয়ের পাতা থেকে বাস্তবে নিয়ে আসতে পারে। একটা নিশ্বাস ফেলে মিসেস সুরূপা ছেলেকে ডাকল
- অর্থ।
মায়ের কন্ঠস্বর শুনে অর্থ বই থেকে মুখ তুলে মা'য়ের দিকে তাকিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই বলল
- হ্যাঁ মা বল।
মিসেস সুরূপা হাতে থাকা ফাইলটা ছেলের দিকে এগিয়ে দিয়ে হাসি মুখে বলল
- দেখতো বাবা কোন মেয়েটাকে ভালো লাগে।
- মা তোমাকে তো আগেই বলেছি তুমি যাকে পছন্দ করবে আমি তাকেই বিয়ে করবো।
- আমি তোকে বলছিনা তোর পছন্দ করতেই হবে, শুধু দেখ কাউকে ভালো লাগলে লাগলো, না হয় নেই।
অর্থ বুঝলো তার মা তাকে ছবি দেখিয়েই ছাড়বে তাই আর কথা না বাড়িয়ে, হাত বাড়িয়ে ফাইলটা নিতে নিতে বলল
- আচ্ছা দেও।
অর্থ ফাইলটা খুলে দেখে একটা মেয়ের ছবি আর নিচে মেয়েটার বায়োডাটা। মেয়েটার ছবি দেখে অর্থ মনে মনে ভাবে, "মেয়েটা ফর্সা। মিস বিন্দুর থেকেও ফর্সা। কিন্তু মিস বিন্দুর মতো এর চেহারায় মায়া নেই।" পাতা উল্টিয়ে পরের পাতার যায়। সেই মেয়েকে দেখে অর্থ আবার মনে মনে ভাবে, "এ মেয়েটার নাকটা মিস বিন্দুর থেকে অনেক ছোট।" পরের পাতায় যায় আর ছবিতে থাকা মেয়েটাকে দেখে পুনরায় মনে মনে ভাবে, "এই মেয়েটার চোখ দুটো মিসেস বিন্দুর মতো এতো সুন্দর, মায়াবী না।" এভাবে একটা পর একটা মেয়েদের ছবি দেখতে থাকে আর নিজের অজান্তেই তাদের বিন্দুর সাথে তুলনা করতে থাকে সে। হঠাৎ তার খেয়াল হয় যে সে কি করছে। নিজের উপর নিজেরই খুব রাগ হয় তার। বাকি ছবিগুলো না দেখেই পেজ উল্টিয়ে উল্টিয়ে মা'য়ের হাতে ফাইলটি ফেরত দিয়ে বলল
- মা আমার কাউকে পছন্দ হয়নি।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
২০ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন