উপন্যাস         :         শরম 
লেখিকা          :         তসলিমা নাসরিন
গ্রন্থ               :         শরম 
প্রকাশকাল      :       

জনপ্রিয় লেখিকা তসলিমা নাসরিনের বহুল আলোচিত উপন্যাস 'লজ্জা'। ১৯৯৩ সালে এটি বাংলাদেশে প্রথম প্রকাশিত হয়। প্রকাশের প্রথম ছয় মাসেই বইটি পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি বৈধ কপি বিক্রি হয়। এরপর ধর্মীয় মৌলিবাদিদের একতরফা বিতর্কের মুখে উপন্যাসটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে তৎকালিন বাংলাদেশ সরকার। পরবর্তীতে 'লজ্জা' উপন্যাসটি বিভিন্ন ভাষায় বিভিন্ন দেশে প্রকাশিত হয়। উপন্যাসটি লেখার কারণে দেশ ছাড়তে হয়েছিল লেখিকা তসলিমা নাসরিনকে। 

পরবর্তীতে 'লজ্জা' উপন্যাসের নায়কের সঙ্গে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে দেখা হয়েছিলো লেখিকা তসলিমা নাসরিনের। সেই অনুভূতিকে পুজি করে তিনি লিখলেন নতুন উপন্যাস 'শরম'। এ উপন্যাসটি কবিয়াল পাঠকদের জন্য ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরা হলো।
শরম || তসলিমা নাসরিন
শরম || তসলিমা নাসরিন

২৩ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

শরম || তসলিমা নাসরিন (পর্ব - ২৪)

বুকের ভেতরটা কাঁপে। আমি ঠিক বুঝিনা সুরঞ্জনের প্রতি আমার এই আকর্ষণ যেটিকে নিরস্ত্র করা যায় না, সেটি কেন? আমি নিঃসঙ্গ বলে? নাকি তার ক্রোধ নিয়ে ঘৃণা নিয়ে প্রচণ্ড আশা আর হতাশা নিয়ে বিভ্রান্তি আর ভ্রান্তি নিয়ে সমস্ত ব্যর্থতা নিয়ে নিস্পৃহতা নিয়েও মানুষটা ভেতরে খুব সৎ বলে?

- আমার জীবন নিয়ে আমি কী করবো, সম্পূর্ণ আমার ব্যাপার। আমার আর জুলেখার। এগুলো নিয়ে প্লিজ কিছু লিখবেন না। কী লিখতে গিয়ে কী লিখবেন। পরে কী না কী ঝামেলা হয়।
- আমার লেখার জন্য ঝামেলা? 
- ঝামেলাই তো। 
- ঝামেলাকে ভয় পাও বুঝি? আমার সবিস্ময় প্রশ্ন। 
- কী ভেবেছেন আমাকে? মহামানব? মোটেই কিন্তু তা নই। ভয় না থাকলে দেশ ছেড়েছি নাকি? এখানে ভয় করি না? এখানেও মুসলিম ফান্ডামেন্টালিস্টদের ভয় করি। অ্যাজ ওয়েল অ্যাজ হিন্দু ফান্ডামেন্টালিস্টদের। যে কটা দিন বাঁচি, নিজের মতো করে বাঁচতে চাই।

কিরণময়ীর হাতটি ধরে বুকের কাছে একটু টেনে নিল। এই আদরটুকু, এই ভালোবাসাটুকু, হৃদয়ের উত্তাপটুকু প্রকাশ করতে সবাই জানে না। দেখে কী যে ভালো লাগে। বললাম, - গাড়ি নিয়ে যাও। তরুণকে বলেও দিয়েছিলাম ওদের পৌঁছে দিতে। সুরঞ্জন কিছুতে গাড়ি নিল না। বললো, রাস্তায় ট্যাক্সি ধরে নেবে।


বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকি। হু হু হাওয়া আমাকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায়। আমি কে ওদের কাছে? কেউ নই। শুধু একজন লেখক। কিরণময়ী সাধারণ অসাধারণের কথা বলছিলেন। ওঁরা নাকি সাধারণ আর আমি নাকি অসাধারণ। অসাধারণ একবার যদি কেউ কাউকে ভেবে ফেলে, তাকে কেবল দূরেই ঠেলে। অসাধারণদের দূর থেকে দেখতে ভালো লাগে। নাগালে এসেও দূর থেকে দেখার মতোই তাদের তারা দেখে। জাতপাত না মানলে হিন্দু মুসলমানে প্রেমের সম্পর্কও হয়। কিন্তু সাধারণ মানুষ যাকে একবার অসাধারণ ভাবে, তাকে সত্যিকার আপন কোনওদিনই করতে পারে না। তাদের সঙ্গে আসলে কোনও সম্পর্ক গড়ে ওঠে না। কিরণময়ী আর সুরঞ্জন যখন বেরিয়ে যাচ্ছিল, দুজনের চোখেই আমি কৃতজ্ঞতা দেখেছি, ভালোবাসা দেখিনি। খুব ব্রাত্য বোধ করি। খুব নিঃসঙ্গ।

কিরণময়ী বিধবা হয়েছেন। শুধু শাঁখা সিঁদুর খুলেছেন। সাদা শাড়িও পরেন না, মাছ মাংসও বাদ দেননি। সুধাময় বলতেন, আমি মারা গেলে তোমাকে অনুরোধ করে বলছি ভুলেও যেন বিধবার সাজ সেজো না। যেমন আছো এখন, তেমনই থেকো। যা ইচ্ছে করে, কোরো। স্বামীর অনুরোধ তিনি রাখেননি, গায়ে সাদা থান জড়ালেন, হবিষ্যি খাওয়া শুরু করলেন, কিন্তু বাদ সাধলো সুরঞ্জন, বললো, তুমি যদি এইসব বন্ধ না কর, আমি সোজা বাড়ি থেকে চলে যাবো। এর চেয়ে বড় হুমকি জীবনে আর কীইবা থাকতে পারে কিরণময়ীর। স্বামী চলে গেছে, মায়া চলে গেছে, এখন সবেধন নীলমণি সুরঞ্জনও যদি চলে যায়, তবে আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোনও উপায় থাকবে না তার। আর সুরঞ্জন মাথা খারাপ ছেলে, সে যদি সত্যিই চলে যেতে চায়, তাকে বাধা দেবার সাধ্য যে কিরণময়ীরও নেই, তা তিনি জানেন। কিরণময়ী রঙিন কাপড় পরছেন, সবই খাচ্ছেন। কিন্তু সাধ মিটিয়ে পুজো করার স্বাধীনতা তিনি বলে দিয়েছেন, যেন কেউ কেড়ে না নেয়। এত লোক পুজো করছে, এত লোক ধর্ম মানে, নিশ্চয়ই ভগবান বলে কেউ আছে কোথাও, কিরণময়ী ভাবেন। আর আজকাল সময় নিয়ে হয়েছে মুশকিল, এত সময় দিয়ে করবেন কী তিনি জানেন না। সংসারের সব কাজ শেষ হওয়ার পর ভয়াবহ এক একাকিত্ব তাঁকে জাপটে ধরে। যত বয়স বাড়ছে, তত তিনি একা হয়ে যাচ্ছেন। তাঁকে সময় দেওয়ার সময় কারও নেই। 


সুরঞ্জন যখন ঘরে থাকে, একা একাই থাকে, তার নিজের ঘরে, হয় কিছু পড়ে, নয় ছাত্রছাত্রী পড়ায়, নয় বন্ধু বা জুলেখা এলে তাদের নিয়ে কাটায়। খুব কম হঠাৎ হঠাৎ কিরণময়ীর বিছানায় এসে সে উপুড় হয়ে শোয়। মা হয়তো ছেলের মাথায় পিঠে একটু হাত বুলিয়ে দিলেন, ওই আদরটুকু শরীর পেতে ছেলে গ্রহণ করে। কিরণময়ী পান ধরেছেন, মায়ের কাছে পান খাবার আবদার ছেলের। পান চিবুতে চিবুতে জাবর কাটার মতো ফেলে আসা সুখের দিনগুলোর কথা বলেন কিরণময়ী। দিন তো সবই ফেলে আসা। কিরণময়ীর মনে হয়, এই জীবনটা অর্থহীন এবং অতিরিক্ত একটা জীবন। অন্ধকার গলির মধ্যে স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে বাস করে জগতের সমাজের পরিবারের নিজের কীইবা লাভ করছে কে। না সুরঞ্জন। না তিনি। ব্যক্তিজীবন যাপন করার যে আনন্দ, দুজনের কারওরই নেই। কিরণময়ী বোঝেন, জুলেখার জায়গায় যে কোনও হিন্দু মেয়ে যদি হত, সুরঞ্জন হয়তো বিয়ে করে ঘরে তুলতো। তাঁর এও মনে হয়, তার পক্ষে যদি সম্ভব হত জুলেখাকে ত্যাগ করা, করতো সে। কিন্তু ওকে ঠিক কেন ত্যাগ করা যায় না, তার তিনি কিছু জানেন না। সম্ভবত এই কারণে যে মেয়েটার মধ্যে যা আছে, তা আর কারও কাছে সে পাবে বলে মনে করে না। অথবা এই বাজারে খুব সুলভ নয় বান্ধবী পাওয়া, বিশেষ করে হাতে যখন টাকা কড়ি অত থাকে না। প্রেমও, অপ্রিয় সত্য, যে, বেচাকেনার ব্যাপার হয়ে উঠেছে। গরিবের প্রেম গরিবের সঙ্গে আর বড়লোকের প্রেম বড়লোকের সঙ্গেই হচ্ছে। প্রেম তো আগে এমন শ্রেণী মেনে চলতো না। কিরণময়ী তার শৈশব কৈশোরে দেখেছে বড়লোক মেয়ে গরিব ছেলের সঙ্গে প্রেম করছে। বিরাট ধনী ছেলে এক অন্ধ-অনাথ মেয়ের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। কোথায় সেসব এখন! সিনেমা থিয়েটারেও সমাজের সেসব উঁচু নিচু শ্রেণীর প্রেম অহরহ দেখাতো। এখন সেসব প্রাচীন ব্যাপার। প্রেম এখন হিসেব করে হয়। বাবা মা যেরকম মানানসই পাত্র পাত্রী খোঁজেন, ছেলে মেয়েরাও প্রেম করার জন্য তেমনই মানানসই কাউকে খুঁজে নেয়। ধর্ম গোত্র সামাজিক অর্থনৈতিক অবস্থা সব দেখে নিয়ে তবে প্রেম। কিরণময়ী চেষ্টা করেও অনুমান করতে পারেন না সুরঞ্জন কেন জুলেখাকে বা জুলেখা কেন সুরঞ্জনকে পছন্দ করলো। 

বেলঘরিয়ায় থাকা হিন্দু ছেলে পার্ক সার্কাসের মুসলমান মেয়ের দেখা কী করে পায় তার রহস্য আজও তিনি জানেন না। ছেলেকে জিজ্ঞেস করে কোনওদিন উত্তর মেলেনি। জুলেখার কাছেও জানতে চেয়েছিলেন, এড়িয়ে গেছে মেয়ে। মেয়েটা মনে হয় না সুরঞ্জনের কোনও ক্ষতি করার জন্য এসেছে। তবে খুব ঘরোয়া, ঘর সংসারের জন্য উদগ্রীব বলে তাকে মনে হয়নি তাঁর। সুরঞ্জনের এলোমেলো ঘরে যখন মেয়ে ঢোকে, ঝুলে থাকা মশারি, চায়ের কাপ, ছাই-এ ঠাসা ছাইদানি, খাটের রেলিং-এ টেবিলে চেয়ারে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শার্ট প্যান্ট তোয়ালে এসব নিজ হাতে গোছায়নি বা পরিষ্কার করেনি কোনওদিন। সুরঞ্জনকে শুনিয়ে শুনিয়ে কিরণময়ী বলেছেন, কী মেয়ে বাবা, এত অগোছালো থাকে, কোনওদিন তো ঘরটা একটু গোছালো না! সুরঞ্জন একদিন শুধু বলেছে, ও আমার চাকর নাকি? কথাটা কিরণময়ীর খুব লেগেছিল, তাহলে তিনি যে গোছান, তিনি কি চাকর? একবার মুখ ফসকে বেরিয়েও যাচ্ছিল, আমি কি চাকর নাকি? সুরঞ্জনের এই মন্তব্য শুনে কষ্ট হবে ভেবে প্রায় বেরিয়ে আসা কথাকে তিনি আটকে দিলেন। 


কিরণময়ী এই অভিযোগ কেন করতে যাবেন, ছেলের ঘরটা গুছিয়ে তিনি যে স্বস্তি পান, তা তো অন্য কিছুতে পান না। ছেলে অপদার্থ হোক, রোজগার না করুক, সংসারী না হোক, তবু সে তো ছেলে, মাকে তো ভালোবাসে। বুকে জড়িয়ে ধরে হৃদয়ের উত্তাপ তো মাঝে মাঝে দেয়। নিজের সুখ-দুঃখগুলো মাঝে মাঝে তো ভাগ করে নেয়। একবার মায়ের কোলে মাথা রেখে কাঁদলো বাবার জন্য, বইপত্র, ঘাঁটতে গিয়ে একটা ছবি বেরিয়ে এসেছিল সেটি নিয়ে, সুধাময়, মায়া আর সুরঞ্জন, ঢাকার বাড়িতে। এত জীবন্ত সেই ছবি যেন সেদিনের। সুরঞ্জনকে এমনিতে আবেগাপ্লুত হতে কোনওদিন দেখেননি কিরণময়ী। পাথর পাথর একটা মুখ। আগে ঢাকায় এমন ছিল না। রাগ হলে ভাঙতো, তছনছ করতো। এখন কী রকম ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। কিছুতেই কিছু যায় আসে না। কিরণময়ীর মনে হয় না জুলেখাও খুব খুশি ওকে নিয়ে। আশংকা হয় কবে না জানি মেয়েটি ওকে ছেড়ে চলে যায়। এমনিতে কারও সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠভাবে মেশে না, কিন্তু মিশলে তাকে ভালোবেসেই মেশে। তারপর ভালোবাসার মানুষ যখন ঠকিয়ে চলে যায়, সেটা বুকে খুব বাজে। তাছাড়া যাকে সে আপন বন্ধু বলে বরণ করেনি ভেতরে, সে ঠকাতে চাইলে বা ঠকালে গা করে না সুরঞ্জন।

তসলিমা, কিরণময়ীর বিশ্বাস, সুরঞ্জনের জন্য চাইলে কিছু করতে পারে। ওর প্রতি আগ্রহ তার প্রচণ্ড। ছেলেটি, চায়, দায়িত্ববান হোক, সচ্ছল হোক, সুখী হোক। ওর মতো উদাসীন ছেলেকে কারও সাধ্য নেই মানুষ করে। বয়স হয়েছে, কে বুঝবে। এখনও কেমন বাইশ তেইশ বছর বয়সীদের মতো জীবন নিয়ে রোমান্টিকতা। এঁদো গলিতে এনে তুলেছিস তুই, বলে যতবার কিরণময়ী অভিযোগ করেছেন, ততবারই সুরঞ্জন হেসে বলেছে, এঁদো গলিতে কোনওদিন থেকেছো বাপের জন্মে? কী রকম লাগে এরকম জীবন, চল না একবার অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করি। না। রোমান্টিকতা অবশ্য বলা যেত, যদি লাখপতি বা কোটিপতির এমন আহলাদ হত। কিন্তু এঁদো গলি ছাড়া কি সুরঞ্জন আর কিরণময়ীর দুজনের উপার্জন জোড়া দিয়ে ত্রিগুণ করলেও কোনও রাজপথ জুটবে? তসলিমা ধনী। বেহিসেবির মতো টাকা ওড়ায়। সে তো পারে সুরঞ্জনকে কোনও একটা ব্যবসা করার জন্য টাকা দিতে? কোথাও একটা ফার্মেসি করতে পারে। ওষুধ পত্রের সঙ্গে তো যোগ জন্ম থেকে। আর তা যদি নাই হয়, কত বড় বড় লোকের সঙ্গে তার পরিচয়। ছেলেটাকে ঢুকিয়ে তো দিতে পারে কোনও কোম্পানিতে বা কোনও কলেজে। কিরণময়ী ভাবেন ঢুকিয়ে দেওয়া না হয় সহজই হল, কিন্তু সুরঞ্জন কি ঢুকবে, কোনও নিয়ম মানবে? অদ্ভুত একটা পুরুষ। স্বাধীনতা একবার পেয়ে গেলে তা ছাড়া মুশকিল হয়। কিছু না করার স্বাধীনতা। ঘর সংসার না করার স্বাধীনতা। 

কিরণময়ীর ইচ্ছে তসলিমাকে একবার তিনি অনুরোধ করবেন তার ছেলেটাকে একটু মানুষ করার জন্য। জুলেখাই বা কেন সুরঞ্জনের সঙ্গে জড়াবে! অল্প বয়স মেয়ের। লেখাপড়া শিখেছে। এখন যেমন হোক একটা চাকরি করছে, চার পাঁচ হাজার টাকা মাইনে পায়। কী আছে সুরঞ্জনের যে চাইবে বিয়ে করতে। নিজের গোত্রের লোকেরা ওকে ত্যাগ করবে। সে কী সুখী হতে পারবে আত্মীয়স্বজনদের অসুখী করে? সুরঞ্জন কি পারবে সুখী হতে মায়াকে কাঁদিয়ে? নিজের বোনকে? নিজের মাকে? সেই বন্ধনে তার চেয়ে না জড়ানোই ভালো, যে বন্ধন স্বস্তি দেয় না। সুদেষ্ণার সঙ্গে যে জীবন ছিল সুরঞ্জনের সেখানেও কোনও সুখ ছিল না। সুদেষ্ণা যত নিজের করে পেতে চাইতো সুরঞ্জনকে, সে তত বাঁধন আলগা করে বেরিয়ে যেত। ছেলে তো বাঁধন মানার নয়! কিরণময়ী চেয়েছিলেন যেমনই হোক সম্পর্কটা টিকে থাকুক। কিন্তু সুদেষ্ণা কিছুতেই রাজি হল না। বিয়ে ভাঙলোই। সুধাময়ের সঙ্গে যে দাম্পত্য জীবনযাপন করেছেন কিরণময়ী, স্বস্তি ছিল। সুখ ছিল। পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ছিল। কিন্তু দুজনের দুই সন্তানের জীবনে কোনও সুখ হল না। মাঝে মাঝে সংসারহীনতাও বুঝি ভালো। মায়ার সংসারের চেয়ে কি সুরঞ্জনের সংসারহীনতা ভালো নয়! ভালো। প্রতিদিন মায়াকে যন্ত্রণা পোহাতে হয়। সুরঞ্জনকে নয়। সে দিব্যি দায়িত্ব কর্তব্যবিহীন ঘুরে বেড়াচ্ছে। মায়া এমন যে ওই সম্পর্কের সুতোটা ছিঁড়তে পারে না। ছিঁড়তে চেয়েও যারা না পারে, তাদের কষ্ট অনেক, যারা অত কিছু না ভেবে ছিঁড়ে ফেলে, তারাই হয়তো ভালো থাকে।


কিরণময়ীর মনে হয়, শুধু মনেই হয় না, তিনি বিশ্বাসও করেন, যে, সংসারে পুরুষের চেয়ে নারীর কষ্ট অনেক বেশি। তসলিমা ভালো আছে, কোনও ঝুটঝামেলা নেই, একা থাকে। একা থাকতে যদি মায়াও পারতো। একা একা কিরণময়ী এসব ভাবেন। ভাবনাগুলো ঘুড়ির মতো উড়িয়ে দেন ঘরের হাওয়ায়। ঘর ছেড়ে ভাবনাগুলোয় বাইরেও বেরোয়, তাঁর সঙ্গে। বাইরে স্যাঁতসেঁতে একটি উঠোন। উঠোনে ন্যাংটো বাচ্চা, নেড়ি কুকুর। এদের পেরিয়ে তিনি চটের ব্যাগে কয়েকটা শাড়ি আর সালোয়ার কামিজ নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। বাড়ি থেকে বেরোলেই কিছু সোনার দোকান। জগন্নাথ জুয়েলার্সে কিরণময়ী তাঁর সোনার চেইন বিক্রি করে দিয়েছে খুব বেশিদিন আগে নয়। মায়াকে জানালে বাড়ি মাথায় করবে, তাই সুরঞ্জনকে জানিয়েছেন। টাকা তাঁর শাড়ির ব্যবসায় খাটিয়েছেন। বেনেপুকুর রোডের দুটো পরিচিত বাড়িতে তিনি কাপড়গুলো দেখান। দুটো বিক্রি হয়। টাকা সামনের সপ্তাহে দেবে বলে দেয়। আর পার্ক স্ট্রিটের ওপর একটি বাড়িতে পাওনা টাকার অর্ধেকটা ফেরত পেয়ে চলে যান শিয়ালদা স্টেশনে। স্টেশন থেকে দমদমের দিকে তিনটে স্টপেজ পরেই বেলঘরিয়া। তার পুরোনো পাড়ায় কজনকে বাকিতে শাড়ি দিয়েছিলেন, সেই কজনের কাছে গিয়ে টাকা তোলেন, আর নতুন কজনকে শাড়ি কাপড়গুলো দেখান। কারও পছন্দ হয়, রাখেন তিনটে। বাকি যা আছে, তা নিয়ে দুতিনটে পুরোনো প্রতিবেশীর বাড়িতে কিছুক্ষণ বসে চা খেতে খেতে আশা আর হতাশার গল্প বলে ফিরে আসেন ট্রেনে করে শিয়ালদা আর বাসে করে এন্টালি, এন্টালি থেকে রিকশায় জাননগর। গলির ভেতর কিরণময়ীর বাড়ির দেয়ালে এক টুকরো টিনে লাল রঙে লেখা মায়াবন। এই নামটিই তিনি রেখেছেন তাঁর অদৃশ্য শাড়ির দোকানের।

সকালে বেরিয়ে তাঁর ফিরতে ফিরতে বিকেল। বিকেলে ফিরে তাঁর আর ইচ্ছে করে না রান্না চড়াতে। না খেয়েই শুয়ে পড়েন। সুরঞ্জন ঘরে না থাকলে তার আর রান্নার ইচ্ছে আজকাল করে না। রান্নার জোগাড় করাটাই ঝামেলা। মঙ্গলা নামের একটা দুঃস্থ মেয়ে আসে ঘর মোছা আর কাপড় ধোয়ার কাজ করতে। ওকে দিয়েই কাটা বাছা করিয়ে নেন তিনি। সব দিন ভালো লাগে না। বয়স হচ্ছে। বয়স হচ্ছে এটা ওপরে না বোঝা গেলেও ভেতরে তো হচ্ছে। এই বেলঘরিয়া যাওয়া আসা কিরণময়ীকে কাহিল করে ফেলে। এই কাজগুলোর দায়িত্ব সুরঞ্জন কোনওদিন নেবে? নেবে না। ঘরদুটোর ভাড়াও আজকাল কিরণময়ীকেই দিতে হয়। কী করে মা তাঁর ওই টাকা কটা রোজগার করছেন। 


কিরণময়ী শিউরে ওঠেন যদি তিনি হঠাৎ সুধাময়ের মতো চলে যান কোথাও, কী হবে ছেলের! জুলেখা কি তখন কোনও দায়িত্ব নেবে? না, তাঁর বিশ্বাস হয় না দায়িত্ব নেবে বলে। জুলেখা, কিরণময়ী যতদূর জানেন স্বামী পরিত্যক্তা, তার ওপর একটা ছেলে আছে। দেখতে শুনতে ভালো, এই মেয়ে নিশ্চয়ই পেয়ে যাবে কোনও সহৃদয় ধনবান। সুরঞ্জন কে, কী আছে তার যে মেয়ে তার সঙ্গে সেঁটে থাকবে! ভালোবাসার কথা অনেকে বলে। ভালোবাসা জিনিসটির আদৌ কোনও অস্তিত্ব আছে বলে তার বিশ্বাস হয় না। সুরঞ্জন, তিনি লক্ষ্য করেছেন, মুসলমান বন্ধুবান্ধব জুটিয়েছে। মুসলমানগুলো কি ওই তপসিয়া থেকে আসে, সন্দেহ হয়। ওই এলাকাটায় সন্ত্রাসীদের বাস।

ছেলেটাকে নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই। এই দুশ্চিন্তা সব তাঁর একার। স্বামী বেঁচে থাকলে তাঁকে কিছু ভাগ দেওয়া যেত। আত্মীয়রা ছড়িয়ে ছিটিয়ে যারাই আছে, কেউ খবর নেয় না। তাদের বাড়িতে যাওয়া আসাও নেই এখন আর। কেউ কারও জন্য আর ভাবে না। সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। নিঃসঙ্গতা কিরণময়ীকে ছিঁড়ে খায়। তাঁর ইচ্ছে করে কোনও একদিন এই দুঃসহ জীবন থেকে বাঁচতে তিনি আত্মহত্যা করবেন।

সারাদিনের না খাওয়া শরীরে ভাবনাগুলো পোকার মতো পিলপিল করে হাঁটে আর কামড়ায়। মঙ্গলা একসময় খোঁজ নিতে এসে দুটো রুটি বানিয়ে আর একটা ডিম ভেজে দিয়ে যায়। খাবে যখন, তখনই সুরঞ্জন ঢোকে। ছাত্র পড়িয়ে এলো। ক্লান্ত। কিছু খাবি রে? বলতেই বললো খাবো। কিরণময়ী মঙ্গলার বানানো ওই রুটি ডিমই খেতে দেয় সুরঞ্জনকে। কী ব্যাপার, ভাত নেই? হঠাৎ রুটি ডিম কেন? কিরণময়ী উত্তর দিলেন না। সুরঞ্জন গোগ্রাসে খেয়ে নিল রুটি ডিম। থাকলে আরও খেত। কিরণময়ী নিজে চা আর এক বাটি মুড়ি খেয়ে নিলেন।

- কিছু একটা কর সুরঞ্জন, এভাবে আর চলছে না। কথা শুরু করলেন কিরণময়ী।
- কী চলছে না শুনি?
- এ পাড়ায় কোনও ভদ্রলোক থাকে?
- শহরের মধ্যিখানে তুমি কম টাকা ভাড়ায় আর বাড়ি কোথায় পাবে বলো তো। এ পাড়ায় কি আর মানুষ থাকছে না? ওদের তুমি মানুষ বলে মনে করো না?
- তোর বাবা একজন ডাক্তার ছিলেন। কোনও ডাক্তার ফ্যামিলি এ পাড়ায় থাকে?
- বাবা তো বেঁচে নেই। এখন টিউশনি করে চলা আর শাড়ির বিজনেস করা তাও বাড়িতে বসে, তাদের পক্ষে এর চেয়ে বেশি আর স্ট্যান্ডার্ড আশা কর কেন।
- ভালো চাকরি টাকরি কিছু কর। কিছুর জন্য তো চেষ্টা করছিস না।
- করছি না চাকরি? এই যে টিউশনি করছি, এ কি কিছুই না? তোমার কাছে এর কোনও মূল্য নেই? শুধু টাকা হলেই মূল্য আছে? কাড়ি কাড়ি টাকা আনতে পারলেই মূল্য? টাকা কি পাচ্ছি না আমি? আমি তো বেকার বসে নেই। রোজগার তো করছি।


এবার কিরণময়ী তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন। - কী রোজগার করছিস? দু হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া তো আমাকেই দিতে হচ্ছে। গত তিন মাস ধরে দিচ্ছি। সে খেয়াল করেছিস?
- তাতে কী হয়েছে? তুমি দিয়েছো। বিজনেস করছো। দেবে না? 
- বিজনেস করছো বলতে লজ্জা করে না তোর? বিজনেসে কিছু সাহায্য এ পর্যন্ত করেছিস? বুড়ো হয়েছি, তারপরও রোদে পুড়ে পুড়ে লোকের বাড়ি বাড়ি দৌড়াতে হয়। গায়ে ফুঁ দিয়ে বেড়াচ্ছিস তুই। মুসলমানদের অত্যাচারে জীবন শেষ হয়ে গেল ফ্যামিলির সবার। তোর বাবা মরেছে। মায়ার জীবনে এক ফোঁটা শান্তি আছে? তোর মুখ চেয়ে আমি বেঁচে আছি। কী রকম বেঁচে থাকা এটা? আর তুই কিনা চোখের সামনে একটা মুসলমান মেয়ে নিয়ে যা ইচ্ছে তাই করছিস? ওকে নিয়ে তুই বেড়াতে গেলি। আমি যে কত কত দিন বলেছি, একবার পুরী নিয়ে যা। কই কোনওদিন তো নিয়ে গেলি না! মা বলে মনে করিস? মায়ের কষ্টের দিকে কোনওদিন ফিরে তাকাস? বলে হু হু করে কাঁদতে থাকেন কিরণময়ী।

সুরঞ্জন কিছুক্ষণ চিৎ হয়ে শুয়ে থেকে পেছনে ক্রন্দনরত কিরণময়ীকে রেখে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যায়। তার ভালো লাগে না কিছু। কাকে সে দোষ দেবে, নিজেকে নাকি কিরণময়ীকে, বুঝে পায় না। জুলেখার খোঁজ করা, বা কোনও বন্ধুর সঙ্গে আড্ডায় বসা, কিছুই করে না সে। পার্ক স্ট্রিটে একটা বারে বসে একা একা মদ খেতে থাকে। জুলেখার ফোন এসেছিল, কেটে দিয়েছে। অন্য দু একজন বন্ধুর ফোন ধরেনি। চার পেগ খাওয়ার পর নিজে সে সোবহানকে ফোন করে।

- কী খবর?
- আর খবর?
- ভালো আছো তো?
- আছি। এই থাকাকে ভালো থাকা বলে কি না জানি না।
- মাসিমা ভালো?
- সবাই একইরকম। জীবন এরকমই। সুখ আসে, দুঃখ আসে। সুখ যায়, দুঃখ যায়।
- অনেকদিন পর ফোন করলে। তোমাকে তো পাওয়া যায় না ফোন করে। ফোন অফ করে রাখো।
- ফোন ব্যাপারটাই বিচ্ছিরি লাগে।
ওপাশে সোবহান হাসে।
- তোমাকে খুব মিস করছি সোবহান।
- তাই?
- হ্যাঁ খুব।
- তাহলে ফোন টোন তো করো না।
- ফোনে কথা বলে খবরাখবর জানা এসব আমার কাছে খুব সুপারফিসিয়াল লাগে। মুখোমুখি বসে কথা বলতে হয়। চোখের দিকে তাকিয়ে স্পর্শ করতে হয়।
- তুমি কোথায় আছো বলো, আমি চলে আসি।
- চলে এসো।


সোবহান ধর্মতলার দিকে ছিল। বেলঘরিয়ায় ফিরে যাওয়া বাদ দিয়ে পার্ক স্ট্রিটে সুরঞ্জনের কাছে চলে আসে। দুজন মুখোমুখি বসে। অনেকদিন পর। হ্যাঁ অনেকদিন পর। কতদিন? দুমাস পর দেখা। দুমাসকে দুজনেরই মনে হচ্ছে বুঝি দু বছর।

সোবহান মদ খাবে না।
- তোমাদের মুসলমানদের এই একটা বাজে স্বভাব। মদ খাবে না। গরু খাবে। আমাদের দেবতাগুলোকে খেয়ে সর্বনাশ করে দিলে। সুরঞ্জন বলে।
সোবহান জোরে হেসে ওঠে।
- মুসলমানরা আমার সর্বনাশ করেছে সোবহান। আমার নিজের দেশ গেছে। একটা লাইফ ছিল আমার আমার দেশে। আমার প্রেমিকা, আমার কেয়ারিং ফ্রেন্ডস ছিল। সব গেছে। এখন কোথায় আছি, কেন আছি, জানি না। কী রকম আছি? বলো তো। এই দেশটা তোমার দেশ। আমার দেশ না। তুমি এদেশে জন্মেছো, তোমার চৌদ্দ পুরুষ এ দেশে জন্মেছে। আমার কেউ এ দেশে জন্মায়নি। এই মাটিতে কেউ না। এ দেশটায় তোমার শত্রু  আছে বন্ধু আছে, এ দেশটা এ মাটিটা তোমার। আমি তোমার ল্যান্ডকে নিজের ল্যান্ড বলে মনে করছি। মুসলমানের কারণে আমার সর্বনাশ হয়েছে। তাদের কারণে আজ জীবন আর মৃত্যুর মধ্যে আমি কোনও পার্থক্য দেখি না। আমার পুরো ফ্যামিলি শেষ। বুঝলে তো, শেষ। আমার বাবা শেষ, বোন শেষ, আমার মা শেষ হয়ে যাচ্ছে। আর আমি তো...

সোবহান বলে, - তুমি তো কী?
- আমি তো সেই কবেই শেষ। এই যে তুমি দেখছো আমাকে। এটা আসলে আমি নই। এ আমার ডেডবডি।
সুরঞ্জন আরও একটা লার্জ রয়েল স্টেগ এর অর্ডার দেয়। সোবহান ঠাণ্ডা জল চায়।
- বুঝলে সোবহান, এখানে মাঝে মাঝে দেখি যে বাবা তার ছেলেমেয়ে বউকে মেরে তারপর নিজে মরে। দেখ না? দেখ না এমন খবর?
- হ্যাঁ। দেখি। দেখি না শুধু, পড়িও।
- পড়। পড়বেই তো। আমার এসকেপিস্ট বাবা সেটা করেনি। বুঝলে তো, আমার বাবা পালিয়েছে। একা একা পালিয়েছে। এমন জায়গায় পালিয়েছে যে তাকে তার শার্টের কলার ধরে টেনে হিঁচড়ে পার্ক সার্কাসের কানা গলিতে বা সচিন সেন নগরের বস্তিতে যদি ফেলতে পারতাম। ধরো চার নম্বর ব্রিজের বস্তিতেই যদি ফেলতে পারতাম, তাহলে তো কথাই ছিল না। পালিয়েছে মানুষটা। এতকাল সেকুলারিজম, কমিউনিজম, সোশালিজম, একজিসটেনশিয়ালিজম, পেট্রিয়াটিজম এইইজম, সেইইজমের গপ্প শুনিয়ে ব্যস ফুড়ুৎ। শালা স্বার্থপর। আমার বাবাটা ছিল একটা শিশুর মতো, আবার শয়তানের মতো।

সোবহান বসে বসে শুনতে থাকে সুরঞ্জনের কথা আর বলতে থাকে মদ আর না খেতে। বাড়ি যেতে। সুরঞ্জন বলে দেয় বাড়ি আজ সে ফিরবে না। ও বাড়িতে ফিরতে তার ভালো লাগে না। ও বাড়ি কিরণময়ীর বাড়ি। অপদার্থ ছেলেকে মায়েরও আর সহ্য হচ্ছে না। ছেলে যদি টাকা দিতে না পারে, তাহলে ছেলেও আর ছেলে থাকে না।

- বুঝলে সোবহান। তোমার মতো একটা ইঞ্জিনিয়ার হলে, দেদার টাকা কামালে দাম থাকতো। তোমাকে তো আবার কার্তিক পুজোর চাঁদা দিতে হয়। হা হা হা।

- আমি হলে কী করতাম জানো, ওদের একটা বোনকে রেপ করে আসতাম। আমি আবার রেপটা ভালো জানি। কারও ওপর রাগ হলে আমি তার বোনকে বা বউকে রেপ করি। বুঝলে সোবহান, রেপ করি। বাংলাদেশে একটা মুসলমান মেয়েকে করেছিলাম। জানো তো সে খবর। জানো না? পুরো পৃথিবী জানে। পৃথিবী জানে যে একটা হিন্দু ছেলে একটা মুসলমান মেয়েকে রেপ করে প্রতিশোধ নিয়েছে। আমি একটা রেপিস্ট। তাই নামকরণের সার্থকতার জন্য আমি রেপ করে বেড়াচ্ছি, বুঝলে? হিন্দু মেয়েদের সঙ্গে যা করি আমি, তার নাম লাভ মেকিং, আর মুসলমান মেয়েদের করি রেপ। একটি মুসলমান মেয়ের সঙ্গে আমার সম্পর্ক...। বুঝলে, সম্পর্ক.....

সোবহান মাথা নাড়ে । সে জানে ।
- ওটা আসলে মেয়েটাকে ধোঁকা দেওয়া। আসলে আমি রেপ করি। জুলেখার সাথে আমার রেপ-এর সম্পর্ক, বুঝলে? আর কিছু না। মুসলমানের ওপর ক্ষোভ আমার আজও যায়নি। মুসলমানরা আমার বাবাকে মেরেছে। বোনের লাইফটা শেষ করে দিয়েছে। মাটাও কী জঘন্য অবস্থায় কাটাচ্ছে। কজ কী? কারণ কী? মুসলমান।

এবার থামো সুরঞ্জন সোবহান ঠাণ্ডা গলায় বলে।

- থামবো কেন? খারাপ লাগছে? বলো যে সুরঞ্জন মুসলমানবিদ্বেষী। দুনিয়ার সব লোক তো জানে এ কথা। রেপিস্ট। মুসলিম হেটার। জানে আমি হিন্দু ফান্ডামেন্টালিস্ট। জানে না? হ্যাঁ আমি তাই। কিন্তু আমি তোমার ওই অচিন্ত্যর মুখে মুতে দিই। বুঝলে সোবহান। অচিন্ত্যর মুখে মুতি আমি।

- রাখো তো এসব কথা। সোবহান বলে।
- পার্ক সার্কাসে থাকি। মুসলমানগুলোর লাইফ বুঝলে তো? পভারটি লাইনের নিচে বাস করে ওরা। কীটের মতো। কেঁচোর মতো। দৌড়ে যায় নামাজ পড়তে। ওটাই ওদের আইডেনটিটি। শুক্রবার মসজিদ উপচে পড়ে লোকে। ফুটপাতেও কুলোয় না, রাস্তা বন্ধ করে গরিবগুলো নামাজ পড়ে। আরবিতে বিড়বিড় করে। কী বলে, ওরা জানে? শালাদের একটাও জানে না কী বিড়বিড় করে। কটা মুসলমানের সাথে খাতির করেছি। এদের একটা একটা করে যদি জবাই করতে পারতাম। হোমো হলে আবশ্য রেপ করতাম। হা হা হা ।

- এবার ওঠো সুরঞ্জন। অনেক হয়েছে। সোবহান বলে।
- না, উঠবো না। খাবো। আরও মদ খাবো। ক্ষিদে আছে পেটে। খাবার খাবো।

সোবহান খাবার অর্ডার দেয়। নান, চিকেন ভর্তা, তন্দুরি চিকেন। সুরঞ্জন আরও এক পেগ-এর অর্ডার দেয় সোবহানের বাধা মানে না।

- আরে আমাকে নিয়ে দুশ্চিন্তা করো না তো। হুইস্কি খেয়ে মাতলামো করেছি কখনও? কখনও না। বুঝলে সোবহান, তোমার মতো অনেক বন্ধু আমার ছিল দেশে। ওদের মুখে আমি মুতে এসেছি। আজ তুমি আমার বন্ধু, কাল শালা তুমি তেড়িবেড়ি করো, তোমাকে আমি আস্ত রাখবো না।
- ভয় দেখাচ্ছো?
- হ্যাঁ, ভয় দেখাচ্ছি। আমাকে কেউ ভয় পায় না। জানে না আমি কী করতে পারি। মুসলিমরাই টেররিস্ট হয়। আমি যে হিন্দু। জাত হিন্দু। চৌদ্দগোষ্ঠী হিন্দু আমার। আমি বোমা মেরে উড়িয়ে দিতে পারি। আমি তপসিয়া তিলজলা খিদিরপুরে মোটিয়াবুরুজ পার্ক সার্কাস বোমা মেরে উড়িয়ে দেব। দেখে নিও।

- আর ড্রিংক করো না সুরঞ্জন। থামো এবার। সোবহান হাত বাড়িয়ে গ্লাস টেনে নিতে চায়। সুরঞ্জন এক হাতে সোবহানের হাতটি শক্ত করে ধরে রাখে। আরেক হাতে গ্লাসে চুমুক দেয়। 
- আমাকে, বুঝলে সোবহান, অনেকে ভাবে, বোধহয় আমি ইন্টেলেকচ্যুয়াল একটা। হা হা হা। হাবিজাবি কথা বললে লোকে ভাবে এরকম। আমি একটা বোকা। বোবা হয়ে থাকি। বোকা বলে বোবা হয়ে থাকি। তুমিতো বোঝো সে কথা। বোঝো না সোবহান?

খাবার এসে যায়। সুরঞ্জনের থালায় রুটি আর চিকেন উঠিয়ে বলে, এবার খাও। মদটা ছাড়ো সুরঞ্জন। মদটা ছাড়তে চেষ্টা করো। 
- আমি যদি বলি মদ আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে শোনাবে দেবদাসের মতো। রোমান্টিক যুবক মদ খেয়ে ফিলোসফি আওড়ায়। ওই বড়লোকদের যদি মারতে চাই, বলবে শ্রেণিশত্রু খতম করতে চাই। না সোবহান, আমি চাই রাগ মেটাতে। আমার কেন হলো না, ওদের কেন হলো, সে কারণে আমি যদি বড়লোক হই, আমার মতো ভিখিরিদের আমি গুলি করে মারবো। বুঝলে, গুলি।

সুরঞ্জন আঙুলে তাক করে সোবহানের বুকের দিকে, তার হাতের অদৃশ্য রিভলভার।

সোবহান খাবার খেতে থাকে। সুরঞ্জনকে বলে বলে খাওয়ায়। খেতে গিয়ে সে ছড়িয়ে ফেলে সব। আরও মদ খাবে গোঁ ধরে। সোবহান ওয়েটারদের আর কোনও মদ দিতে বারণ করে দেয়। বিল মিটিয়ে সে ওঠে সুরঞ্জনকে জড়িয়ে ধরে নিয়ে ট্যাক্সিতে ওঠায়।
- বাড়ি যাবে তো?
- না। সুরঞ্জন বলে, বাড়ি আমি যাবো না।
- তাহলে যাবে কোথায়?
- তুমি যেখানে যাও, সেখানে যাবো।
- আমি তো বাড়ি যাবো।
- তোমার সাথে যাবো আমি।
- কেন, বাড়ি যাবে না কেন?
- আই হেইট মাই মাদার।
- বাজে কথা বলো না। বাড়ি চলো।
- অত ভালো মানুষ সেজো না সোবহান। তোমার সঙ্গে আমার ফ্রেন্ডশিপ। হোল ফ্যামিলি নিয়ে আমি তোমার ফ্রেন্ড হইনি। আমাকে টেক কেয়ার কর। গুল্লি মারো ফ্যামিলি। মাসিমাকে একটা ফোন করে দাও যে বাড়ি ফিরবে না। 


- বাড়িতে ফোন নেই। চিন্তা করবেন তো।
- করুক। আই কুডনট কেয়ার লেস। আমার কিছু যায় আসে না। সোবহান আরও কিছুক্ষণ অনুরোধ করে। কিছুতেই আজ সুরঞ্জন বাড়ি যাবে না। অগত্যা ডানলপের মোড়ে যেতে বলে ট্যাক্সিকে। না ট্যাক্সি ওদিকে যাবে না। শ্যামবাজার অবধি যাবে। তাই সই। শ্যামবাজার থেকে ট্যাক্সি নিয়ে বাড়ি। পথে সোবহান এক হাতে ধরে রাখে সুরঞ্জনকে। আবার পড়ে না যায়। আগে তাকে দেখেছে মদ খেয়ে অর্থহীন কথা বলতে। কিন্তু আজ সীমা ছাড়িয়ে খিস্তি করছে সুরঞ্জন। যেতে যেতে সুরঞ্জন বলে, জানো সোবহান, মন দিয়ে শোনো। তোমাকে একটা কথা বলছি। কাউকে বলবে না। এটা খুব সিক্রেট। সিক্রেট, বুঝলে তো!

- হ্যাঁ বুঝলাম। বল। সোবহান বলে। তসলিমা নাসরিনের নাম শুনেছো?
- হ্যাঁ, নিশ্চয়ই।
- ও আমার প্রেমে পড়েছে।
- তাই নাকি?
– হ্যাঁ, তাই। ও ভেবেছে আমি বোধহয় একটা সাংঘাতিক কিছু। ও জানে না যে আমি একটা অপদার্থ। ঢাকায় তো আমাকে পাত্তাই দেয়নি। আর আমাকে নিয়ে বই লিখেছে। এখন সে সেলিব্রিটি। সেলিব্রিটি বুঝলে তো? বিরাট সেলিব্রিটি। এখন এমন পাত্তা দিচ্ছে যে আমি ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি বলছি।

- কী করে বুঝলে যে প্রেমে পড়েছে?
- তোমার প্রেমে যদি কেউ পড়ে সোবহান। বলো তো, তুমি বুঝবে না? বুঝবে। চোখ দেখেই বুঝেছি। আমি তসলিমার চোখ দেখেই বুঝেছি। এত লোক থাকতে আমাকে তার পছন্দ কেন, বুঝলাম না। বড়লোকের খেয়াল। আমি অত সহজে ভিড়তে চাই না। খেলাতে চাই। সে আমাকে নিয়ে খেলেছে কাগজে। আমি খেলতে চাই তাকে নিয়ে জীবনে।
- কী ভাবে খেলবে?
- জানি না এখনও। তুমি একটা অ্যাডভাইস দাও তো।

- আমি তো আবার ভালো প্লেয়ার নই। ঢাকার না হিন্দু না মুসলমান না খ্রিস্টান কোনও মেয়েই তো চাইলো না আমাকে। সুদেষ্ণা ও মাধবী এসেই বলে যাই এর মতো চলে গেল। আর এ বাড়ি ও বাড়ির সেক্স স্টার্ভড বৌদিগুলোও আর চাইলো না। নোবডি লাভড মি। জুলেখা ভালোবাসে? জুলেখা অাঁকড়ে আছে আমাকে। কারণ তাকে সুখ দেওয়ার জন্য কোনও মুসলমান ছেলে অবশিষ্ট নেই বলে। কোনও হিন্দু ছেলেও কোন মুসলমান মেয়ের সঙ্গে জড়াবে না। তাই সুরঞ্জন নামে একটা জাত নেই ধর্ম নেই একটা বখে যাওয়া মরে যাওয়া অপদার্থের গলাতেই ঝুলে থাকা ভালো। সেক্সটা ভালো জানি তো সোবহান, আর যাই হোক রেপটা তো ভালো জানি। ফ্রি সেক্স আজকের বাজারে কে পায় বলো? বৌদিরা তো কিছু উপঢৌকন অন্তত দিত।

সোবহান এবার ধমক দেয়। - অনেক বকেছো, এবার চুপ করো।
- তসলিমা খুব লোনলি। বুঝি আমি। তা না হলে আমার মতো ছেলের প্রেমে ও পড়ে। আমার কী আছে বল? কিচ্ছু নেই। আমি শুধু রেপটাই তো পারি করতে। ও জানে না? ওর চেয়ে ভালো কে জানে? ও তো আমার রেপটার কথাই লিখে দিয়েছে। ওকে একদিন, বুঝলে সোবহান, আমার খুব রেপ করতে ইচ্ছে করে। 
সোবহান আবার ধমক দেয়। শান্ত হও তো।

সুরঞ্জন বলে, - হ্যাঁ ইচ্ছে করে। ওকে রেপ করেই বোঝাতে চাই রেপ কাকে বলে। আর আমাকে যে রেপিস্ট বানিয়েছে, তাকে আমি রেপ না করে ছেড়ে দেব কেন, বল। যদি কেউ হোল ওয়ার্ল্ডে জানিয়ে দেয় যে ইউ সোবহান, ইউ সান অব মিস্টার সামবডি, আর অ্যা গ্রেট রেপিস্ট। তাহলে তুমি কি রেপ করবে না তাকে? সেই বিচকে?
- হোল ওয়ার্ল্ড তো জানছে না সেই সুরঞ্জন তুমি। সোবহান বলে।
- না জানুক। জানছে তো আমার সঙ্গে যে মানুষই পরিচিত হচ্ছে, ঘনিষ্ঠ হচ্ছে। জানতো সুদেষ্ণা। জানে জুলেখা। জানে মা বাবা মায়া, যারাই আমাকে চেনে তারাই। আমার তো একটা জগৎ আছে। সেই জগৎটা তো জানে। এই জগৎ ছেড়ে যে জগতেই যাই না কেন, সবাই জানবে। মুক্তি আছে আমার?

ট্যাক্সি হু হু করে ছুটছে। সুরঞ্জনের সব কথা সোবহান শুনতেও পাচ্ছে না। কাঁধ ধরে কানটা এগিয়ে এনে সে শোনাচ্ছে। তুড়ি দেখিয়ে বললো সে, - আই ক্যান ফাক দ্যাট বিচ এনি টাইম।
- সাট আপ। সোবহান রুষ্ট কণ্ঠে বলে।
- আমাকে সাট করে কিছু হবে না ভাইয়া। আমি ছেড়ে দেব না। আমি রেপ করেছি, আমার পারসোনাল ব্যাপার এটি। মায়া রেপড হয়েছে, এটাও তার পারসোনাল ব্যাপার। নিজেকে প্রতি মুহূর্তে আমার রেপিস্ট বলে মনে হয়। ‘লজ্জা’র সবকটা অক্ষর আমাকে হন্ট করে। মায়াকে করে। মায়ার নিজের শরীরটাকে মায়া ঘৃণা করতো। তাই তো বেচতে যেতো। বেচতো, তোমাদের ওই ডানলপের মোড়েই ওকে আমি দেখেছি দাঁড়িয়ে থাকতে। একবার তো ওখান থেকে টেনে ওকে বাড়িতে নিয়ে মেরে আধমরা করে রেখেছিলাম। বুঝলে, নিজের ওপর যদি রেসপেক্ট না থাকে। তাহলে তুমি গন। তুমি একটা গন কেস।

সুরঞ্জনের মুখ এভাবেই অশ্লীলতায় অশোভনতায় অমার্জিত শব্দ উচ্চারণ করতে থাকে। সোবহান হাল ছেড়ে দেয়। পাঠানপুরে তার বাড়িতে এনে ওকে শুইয়ে দেয় একটা সাজানো সুন্দর ঘরে ধবধবে সাদা চাদর বিছানো পরিচ্ছন্ন বিছানায়। খাটের পাশে ছোট টেবিলগুলোয় টেবিল ল্যাম্পের হালকা আলো, আর ফুলদানিতে এক থোকা লাল গোলাপ। হাসনুহানার ঘ্রাণ ঘরে। জানালার কাছে রাখা টবে ফুল ফুটেছে। সুঘ্রাণ ছড়িয়ে আছে ঘরটায়। কী রকম যেন স্বর্গ স্বর্গ মনে হয় সুরঞ্জনের। ঘরে মদ আছে কি না জিজ্ঞেস করে সে। সোবহানের সোজা উত্তর, নেই। সোবহান বরং এক বোতল ঠাণ্ডা জল আর একটা গ্লাস এনে রাখে টেবিলে।

- সবার ওপর তোমার খুব রাগ। কেন এত রাগ? সোবহান জিজ্ঞেস করে।
শার্ট খুলে মেঝেয় ছুড়ে দিয়ে জোরে হেসে ওঠে সুরঞ্জন। সোবহান দুটো বালিশ খাটের রেলিং-এ ঠেকিয়ে বসে। ঠিক বসা না, আধশোয়া।
সুরঞ্জন উপুড় হয় বুকের ওপর বালিশ নিয়ে। ঘরে এসি চলছে। আরামে চোখ বুঝে আসে। সুরঞ্জন উত্তর দেয় সোবহানের প্রশ্নের, - রাগ কারও ওপর না সোবহান। রাগ আমার নিজের ওপর। এর চেয়ে বেশি সত্য আমার কাছে নেই। আই নো নাথিং মোর।

- ঘুমোও। ঘুমোও তুমি। সোবহান সুরঞ্জনের চুলে হাত বুলিয়ে দেয়। হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় ধরে সুরঞ্জন বলে, আই উইশ আই কুড কুইট ইউ।
- কী বললে?
- বললাম, আই উইশ আই কুড কুইট ইউ।
- কেন বললে, কুইট করতে চাইলেই তো পারো কুইট করতে। পারো না?
- পারি।
- তাহলে বললে কেন?
সুরঞ্জন ভাঙা গলায় বলে, এটা একটা সিনেমার ডায়লগ।
- ও।

সুরঞ্জনের ঘুমিয়ে থাকা মুখের দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থেকে সোবহান ঘুমোতে যায়। বাড়িতে বউ বাচ্চা, বাবা মা। সকলে খুব অবাক। এত রাতে একটা মাতালকে নিয়ে বাড়ি ফিরেছে সে। ঘটনা কি? বাবা মাকে শুধু বলেছে, বন্ধু, বিপদে পড়েছে। কেমন বন্ধু, কী নাম, বলেনি। ড্রইংরুমের সোফায় শুয়ে পড়ে। বাচ্চা নিয়ে বউ শোয় অন্য ঘরে। বাড়ি থমথমে।


চলবে.......

২৫ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ: 
জনপ্রিয় প্রথাবিরোধী লেখিকা তসলিমা নাসরিন ১৯৬২ সালের ২৫ আগষ্ট ময়মনসিংহ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৬ সালে ময়মনসিংহ রেসিডেন্সিয়াল স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও ১৯৭৮ সালে আনন্দ মোহন কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন তিনি। এরপর ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ থেকে ১৯৮৪ সালে এমবিবিএস পাস করেন। তসলিমা নাসরিন ১৯৯৪ সাল অবদি চিকিৎসক হিসেবে ঢাকা মেডিকেলে কর্মরত ছিলেন। 

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে লেখালেখি নয়তো চাকুরি ছাড়তে বললে তিনি লেখালেখি ছাড়েন নি। বরং সরকারি চিকিৎসকের চাকুরিটিই ছেড়ে দেন তিনি। তখন এই লেখিকাকে কেন্দ্র করে উগ্র মৌলবাদীদের আন্দোলনে উত্তাল ছিলো পুরো দেশ। বেশ কিছু মামলাও হয়েছিলো তার বিরুদ্ধে। শেষে এককথায় বাধ্য হয়েই দেশত্যাগ করেন নারীমুক্তির অন্যতম অগ্রপথিক তসলিমা নাসরিন। এরপর তিনি নির্বাসিত অবস্থায় বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছেন। 

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন