উপন্যাস : প্রিয়ন্তিকা
লেখিকা : আভা ইসলাম রাত্রি
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১২ আগস্ট, ২০২২ ইং
লেখিকা আভা ইসলাম রাত্রির “প্রিয়ন্তিকা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের আগস্ট মাসের ১২ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
প্রিয়ন্তিকা || আভা ইসলাম রাত্রি |
1111111111111111111111
১০ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
প্রিয়ন্তিকা || আভা ইসলাম রাত্রি (পর্ব - ১১)
বইপোকা লাইব্রেরীর সামনে এসে রিকশা থামে। প্রিয়ন্তি রিকশা থেকে নেমে ভাড়া মেটায়। এদিক ওদিক চেয়ে খুঁজে চলে মাহতিমকে। মিনিট খানেক পরই মাহতিমের মোটরসাইকল এসে থামে প্রিয়ন্তির ঠিক বরাবর। প্রিয়ন্তি দু কদম পিছিয়ে যায়। মাহতিম সজোড়ে ব্রেক কষে শুধরানোর ভঙ্গিতে বলে, 'ওহ, সরি,সরি। ব্যথা পেয়েছ কোথাও? '
প্রিয়ন্তি চোখ পাকিয়ে তাকায়। জামার নিচের ভাগ থেকে ধুলো হাত দিয়ে ঝেড়ে বলে, 'না। শুধু মনে হয়েছে বালতি করে ধুলো ছিটিয়েছ। '
মাহতিম মৃদু হাসে। মোটরসাইকেল পার্কিং স্থানে রেখে নেমে দাড়ায়। প্রিয়ন্তির দিকে চেয়ে মৃদু হেসে বলে, 'প্রেমের ধুলো ছেটানোর চেষ্টা করেছিলাম বটে। তবে কই! আমাতে অন্ধ হলে না তো। '
' কখন হবও না। '
' হলে কি হয়? গায়ে ফোসকা পড়ে? আমি মানুষটা এতটাও খারাপ না। ট্রাই করে দেখতে পারো। '
মাহতিমের কথা শুনে প্রিয়ন্তি চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে। ঘৃণায় গা জ্বলেপুড়ে যাচ্ছে যেন। বলে, 'ছিঃ, ট্রাই করবে মানে? '
মাহতিম প্রিয়ন্তির কথার অর্থ বুঝতে পেরে যায় ক্ষনিকেই। ভুল জায়গায় সে ভুল কথা বলে ফেলেছে। প্রিয়ন্তি এসব ডিপ্লোম্যাটিক কথাবার্তায় ভীষন সেনসেটিভ। কখন কোন কথার কোন অর্থ বের করে ফেলে, বোঝা মুশকিল। এই যে এখন এক সাধারণ কথার অদ্ভুত অর্থ বের করে ফেলল! এসব ভেবে কিন্তু মাহতিম কথাটা বলেনি। মাহতিম থেমে যায়। প্রিয়ন্তির দিকে ফেরে দ্রুত বলে, 'আরে, আমি সেটা মিন করে বলিনি। ওকে, না বুঝে বলার জন্যে সরি। আর বলব না। এবার যাওয়া যাক। '
মাহতিম বড্ড করুন স্বরে সরি বলল। পুরো ঠোঁট উল্টে, মাথার চুল চুলকে, অসহায় ভঙ্গিতে মাহতিমের কথা বলার ধরন দেখে না চাইতেও হেসে ফেলল প্রিয়ন্তি। মাহতিম কেমন মাতাল চোখে সে হাসির পানে চেয়ে থাকল। মাথা ঝিম ধরে গেল। পায়ের পাতা মুচড়ে যেতে চাইল। হাত কাপছে স্পষ্ট লক্ষ্য করছে মাহতিম। মাহতিম কেমন করা চোখে নির্দ্বিধায় চেয়ে থাকল প্রিয়ন্তির হঠাৎ ফলিং স্টারের ন্যায় উদিত হওয়া হাসির পানে। মাহতিমের এমন নেশা নেশা চাওনি লক্ষ্য করতে পেরে প্রিয়ন্তি থতমত খেয়ে গেল। চট করে হাসি থামিয়ে স্বাভাবিক হবার চেষ্টা করল। ইতি ওতি চেয়ে বলল, 'দেরি হচ্ছে, চলো। '
মাহতিম মাথা নত করে দুবার ঝাঁকাল। স্বাভাবিক হবার ক্ষুদ্র চেষ্টা। পরিস্থিতি বড্ড বিদঘুটে ঠেকল। ক্ষুব্ধ অনুভূতির গন্ধ ছড়াল মনের আনাচে-কানাচে। মাহতিম বড়বড় নিঃশ্বাস ছেড়ে হাত দিয়ে ইশারা করে সামনে, 'ল্যাডিস ফার্স্ট। '
প্রিয়ন্তি মাহতিমের এসব নাটক দেখে মুখ ভেংচায়। তবে অযথা কথা বাড়ায় না। এগিয়ে যায় সামনে। মাহতিম দ্রুতপদে প্রিয়ন্তির পাশে এসে হাঁটে।
লাইব্রেরীতে প্রিয়ন্তি বই দেখছে। কি কিনবে, লিস্ট করে এনেছে। দোকানদারকে বইয়ের নাম বলেছে। দোকানদার সেলফে বই খুঁজছে। মাহতিম এতক্ষণ শুধু ফাঁকফোকর খুজেছে কথা বলার। প্রিয়ন্তি এবার নিজে থেকেই কথা তুলল, 'কিছু বলবে বলেছিলে। বলো, শুনছি। '
মাহতিম এতক্ষণে আকাশের চাঁদ হাতে পায়। সহসা হেসে ভ্রু কুঁচকে বলে, 'বললে রাগ করবে না তো? '
প্রিয়ন্তি স্পষ্ট কণ্ঠে বলে, 'রাগের কথা বললে অবশ্যই রাগ করব। '
মাহতিম ফুস করে নিঃশ্বাস ছাড়ে। মাহতিমের কথায় প্রিয়ন্তি রাগ করবে না, এটা তো রীতিমত আকাশ কুসুম চিন্তাভাবনা। প্রিয়ন্তি রাগ করবে, অবশ্যই রাগ করবে। প্রিয়ন্তির রাগকেও মাহতিম ভালোবাসবে। প্রিয়ন্তি রাগ করে বলেই তার ব্যক্তিত্ব মাহতিমের এত পছন্দ। এতদিন অবশ্য প্রিয়ন্তির রাগ সহ্য করার ক্ষমতা মাহতিমের হয়ে গেছে। মাহতিম মাথার ঘন চুল খামচে ধরে। ভীষন নার্ভাস লাগছে। প্রিয়ন্তিকে কথাটা বলা ঠিক হবে কি না, প্রিয়ন্তি যেমন প্রতিক্রিয়া দেখাবে, আবার না চ''ড় মেরে বসে। উফ! মাথা ধরছে মাহতিমের। প্রিয়ন্তি মাহতিমকে উশখুশ করতে দেখে নিজেই কথা বলে, 'পানি খাবে? ঘেমে যাচ্ছ। '
মাহতিম চট করে হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে কপালের ঘাম মুছে ফেলে। অতঃপর নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করে চোখ মুখ বন্ধ করে ঝটপট বলে ফেলে, 'আমরা দুজন কি বন্ধু হতে পারি? '
প্রিয়ন্তির ভ্রু চপাট করে কুঁচকে যায়। বিস্ময় সহ্য করতে না পেরে মৃদু স্বরে চেঁচিয়ে উঠে, 'কি? '
মাহতিম চোখ খুলে। অসহায় ছেলেটির ন্যায় ঠোঁট উল্টে বলে, 'প্রেমিকা না হও, ভালো বন্ধু হতে তো দোষ নেই! তাছাড়া বন্ধু হলে আমি এসব পাগলামি আর করব না। কথা দিচ্ছি। তোমাকে পুরোটা না পাই, কিছুটা পেলেই আমি খুশি। প্লিজ প্রিয়ন্তিকা, এবার অন্তত ফিরিয়ে দিও না। '
প্রিয়ন্তি নিচের ঠোঁট দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরে মাহতিমের দিকে চোখ সরু করে চায়। মাহতিম একবুক আশা নিয়ে প্রিয়ন্তির দিকে চেয়ে আছে। প্রিয়ন্তি ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করে , ' বন্ধু হলে এসব পাগলামি করবে না, সত্যি তো? '
' হ্যাঁ, তিন সত্যি। '
' এই যে বললে, কদিন পর সেটা ভুলে যাবে নাতো? '
' একদম না। '
' আমার আরেকটা শেষ শর্ত আছে। বন্ধু হলে সারাক্ষন ভালোবাসার নামে আমাকে অপ্রস্তুত করতে পারবে না। '
' এবার বেশি হয়ে যাচ্ছে। তোমাকে ভালবাসতে মানা করলে আমি শুনতে চাইলেও পারব না। ইউ আর ম্যাই অ্যাডিকশন, না? '
'ভালোবাসবে। তবে মনে মনে। বারবার কানের সামনে ভালোবাসি, ভালোবাসি বলে প্যানপ্যান করতে পারবে না। '
মাহতিম চোখ বুজে শ্বাস ফেলল। অতঃপর চোখ খুলে হতাশ ভাবে বলল, 'ঠিকাছে, আমি রাজি। এবার বন্ধু হয়ে যাও, প্লিজ। '
প্রিয়ন্তি আবারও কিছু একটা ভাবল। অতঃপর বলল, 'ঠিকাছে, হলাম। '
মাহতিমের খুশি আর দেখে কে? মৃদু স্বরে জয়ী শব্দে চেঁচিয়ে উঠে। প্রিয়ন্তি দ্রুত মাহতিমকে সতর্ক করার ভঙ্গিতে বলে, 'আরে আস্তে, আস্তে। লাইব্রেরী এটা। '
মাহতিম সঙ্গেসঙ্গে চুপ হয়ে যায়। ফিসফিস করে বলে, 'সরি, মনে ছিল না। খুশী প্রকাশ করতে চেঁচিয়ে ফেলেছি। আর চেঁচাব না, প্রমিজ! '
প্রিয়ন্তি ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ছেড়ে বই কেনায় মন দিল। বই কিনে বইয়ের ভারী ব্যাগ হাতে নিলে মাহতিম সেটা জোড়পূর্বক নিজের হাতে নিয়ে নেয়। প্রিয়ন্তি দেখে। তথাপি কিছু বলে না। ছেলেটা খুশিতে পাগল হয়ে গেছে। চোখে মুখে খুশী উপচে পড়ছে। ভালো লাগছে দেখতে।
প্রিয়ন্তি রিকশা নিতে চায়। কিন্তু মাহতিম বাঁধা দেয়। বলে, 'আমার বাইক থাকলে রিকশা কেন? আমি সসম্মানে বাসায় পৌঁছে দেব তোমায়। '
প্রিয়ন্তি কিছুক্ষণ চেয়ে থাকে মাহতিমের দিকে। অতঃপর বলে, 'বাইক চালানোর সময় ডিসটেন্স রাখবে। মনে থাকে যেন। '
'হ্যাঁ, রাখব, রাখব। চলো তো এখন। '
মাহতিম প্রিয়ন্তিকে টেনে নিয়ে যায় মোটরসাইকেলের দিকে।
মাহতিম সত্যি মোটরসাইকেল চালানোর সময় বেশ দূরত্ব রেখেছে দুজনের মধ্যে। প্রিয়ন্তি এতে বেশ প্রসন্ন হয়েছে। মাহতিম একবার বলেছে, তার পিঠে ধরার জন্যে। নাহলে বাইক থেকে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। তবে প্রিয়ন্তি শুনেনি সে কথা। মাহতিমও আর জোড় করে নি। প্রিয়ন্তি যেভাবে চাইছে, সেভাবেই থাকুক না। আজ যা পেয়েছে, তাতে মাহতিম বড্ড সুখ সুখ অনুভব করছে।
ভাবনার মধ্যে হঠাৎ সামনে গাড়ি চলে আসে। মাহতিম সঙ্গেসঙ্গে ব্রেক কষে। বাইকের হঠাৎ ব্রেক কষায় প্রিয়ন্তি অপ্রস্তুত হয়ে খামচে ধরলো মাহতিমের শার্টের কাঁধের অংশ। অনিচ্ছাকৃতভাবে প্রিয়ন্তির পাতলা ঠোঁট এসে ঠেকল মাহতিমের গালের খোঁচা দাড়িতে। মাহতিম এবং প্রিয়ন্তি দুইজনেই হতভম্ব হয়ে পরল। মাহতিমের মুখ 'হা' আকৃতি ধারণ করেছে। সে চোখ বড়বড় করে সামনে তাকিয়ে আছে। প্রিয়ন্তি নিজেও বড্ড অপ্রস্তুত হয়ে গেছে। কানের পেছনে চুল গুজে সোজা হয়ে বসে রইল। বুকের ভেতর অস্থির বোধ হচ্ছে। কি এক বিব্রতকর পরিস্থিতি! ইশ! চুমু তাও কি না সোজা গালে? উফ! লজ্জায়, অপমানে ম"রে যেতে ইচ্ছে করছে প্রিয়ন্তির।
মাহতিমের বিস্ময় ভাব কেটে উঠল ক্ষণিকেই। সে ঠোঁট কামড়ে ধরে কৌতুক স্বরে বলল, 'পিঠ জড়িয়ে ধরতে বলেছিলাম শুধু। আর তুমি কি না সোজা চুমু খেয়ে বসলে, প্রিয়ন্তিকা? ইশ! বুকের ভেতর ছটফট করেছে যে। লোভ বাড়িয়ে দিলে কেন? এমনিতেই তোমাকে দেখলে আমার মাথা ঠিক থাকে না। আবার আজকে নিজে থেকে চুমু খেলে? কেন? মারার প্ল্যান করছ নাকি? '
প্রিয়ন্তি লজ্জায় বোধ হল মাটির সঙ্গে মিশে যায়। প্রিয়ন্তি কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। তাই সে বলল, ' প্রমিজ ভাঙচ তুমি। তোমার এই ফালতু বাইক থামাও। আমি আর যাব না এটায় করে। থামাও বলছি। '
মাহতিম বাইক থামালো না। বরং টিপ্পনি কেটে বলল, 'এখন সব দোষ আমার বাইকের? নিজেই তো চু...'
'চুপ, একদম চুপ। আর একটা কথা বললে এক্ষুনি লা"থি দিয়ে বাইক থেকে ফেলে দেব।'
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
১২ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আভা ইসলাম রাত্রি সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে তা অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হবে। তবে তিনি তার ফেসবুক পেজে নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, “গল্প লেখে সে, কলমের কালিতে কল্পনার চিত্র আঁকিবুকি করা তার নেশা! অক্ষরের ভাজে লুকায়িত এক কল্পপ্রেয়সী!”
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন