উপন্যাস : প্রিয়ন্তিকা
লেখিকা : আভা ইসলাম রাত্রি
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১২ আগস্ট, ২০২২ ইং
লেখিকা আভা ইসলাম রাত্রির “প্রিয়ন্তিকা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের আগস্ট মাসের ১২ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
প্রিয়ন্তিকা || আভা ইসলাম রাত্রি |
1111111111111111111111
১১ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
প্রিয়ন্তিকা || আভা ইসলাম রাত্রি (পর্ব - ১২)
মাহতিম বাদাম খাচ্ছে। একটা একটা বাদাম হাতে তুলে আকাশের দিকে ছুঁড়ে ফেলে আবার মুখ দিয়ে সেটা ক্যাঁচ করে নিচ্ছে। ওয়াহিদ অলস ভঙ্গিতে পাশে বসে আছে। হঠাৎ হঠাৎ বিরক্তপূর্ণ চোখে মাহতিমের দিকে চেয়ে বিড়বিড় করে কিছু একটা আওড়াচ্ছে। মাহতিমের নজরে ওয়াহিদের ভাবভঙ্গি সব চোখে পরছে। অথচ সে কেমন নিশ্চুপ হয়ে বাদাম খেলা উপভোগ করছে। ওয়াহিদ একসময় বিরক্ত হয়ে বলল, 'প্রিয়ন্তিকে বন্ধু বানিয়ে সকল রাস্তা তুই বন্ধ করে দিলি? ওই মেয়ে তোকে বস্তা ভরে শর্ত দিল আর তুইও সব মুখ বুজে মেনে নিলি? গাধা তুই? '
মাহতিম শেষবারের ন্যায় বাদাম খেলে মুখে নিয়ে চিবুতে লাগল। মাহতিমের মোটরসাইকেলে তেল ভরা হচ্ছে। মাহতিম সেদিকে একবার চেয়ে আবারও মুখ ফেরাল ওয়াহিদের দিকে। অতঃপর মৃদু হেসে বলল, 'প্রিয়ন্তিকাকে কাছে টানার এর চেয়ে ভালো প্ল্যান মাথায় আসেনি। '
' তুলে নিয়ে বিয়ে করে নিচ্ছিস না কেন? '
' কয়বার বলেছি, এমন করলে প্রিয়ন্তিকার মনে আর কখনোই জায়গা করতে পারব না। মেয়েটা আমাকে দেখলেই ঘৃণায় বমি করে বসবে।'
' বমি করুক। প্রেম করতে পারিস আর বমি পরিষ্কার করতে পারবি না? '
' ধুর শালা। বিষয়টা এমন না। আমি বমি বলতে ঘৃণার অতিরিক্ত পরিমাণ বুঝিয়েছি। '
' হ, আমার আর পরিমাণ বুঝে কাজ নেই। তোর প্রেমের পাগলামি দেখলে দেখবি আমি কোনদিন তোর মুখে বমি করে দিয়েছি। ওই মেয়ে তোকে ডিজার্ভই করে না। শুন, আমার কাছে একটা মেয়ে আছে। দেখতে খুব সুন্দর। প্রিয়ন্তির মত আগুন রাগ নেই। তোর সঙ্গে ভালো মানাবে। ট্রাই করবি? '
মাহতিম বাদাম খাওয়া বন্ধ করে ওয়াহিদের দিকে সূক্ষ চোখে তাকাল। ভেতর ভেতর রাগে ফুসে উঠছে সে। তবুও বেশ শান্ত স্বরে বলল, 'কি বললি? প্রিয়ন্তিকার মত রাগ নেই? '
' না, একদম শান্ত শিষ্ট মেয়ে। এককথায় শান্তির মা। '
মাহতিম আবার বাদাম খেতে লাগল। বাদামে টুকুর-টাকুর আওয়াজ করে দাঁত বসাতে বসাতে বলল, 'মামা, তাহলে হচ্ছে না। আমি প্রিয়ন্তিকার আগুন আগুন রাগকেই বেশি ভালোবাসি। উফ! ওর রাগী চেহারা একবার দেখলেই আমার হার্টবিট মিস করে। ওসব তুই বুঝবি না। কারণ তুই একটা আনরোমান্টিক গর্দভ। '
ওয়াহিদ ক্ষেপে গেল। বসা থেকে দাড়িয়ে মাহতিমের চোখে চোখ রেখে বলল, 'আমি আনরোমান্টিক? নিপা যদি আজ আমার হইত তাহলে আমি আর ও এতদিনে বিয়ে করে বাচ্চার মা বাবা হয়ে যাইতাম। তুই কি করসস ভালোবেসে? শুধু চড় থাপ্পড়ই খাইলি সারাজীবন।'
মাহতিম কথা বলে না আর। ওয়াহিদকে কে বোঝাবে, প্রিয়ন্তিকার চড় থাপ্পড় খাবার অজুহাতে সে প্রিয়ন্তির হাতের ছোঁয়া পায়। এটাই বা কম কিসের?
' ভাই, তেল ভরা শেষ। '
পেছন থেকে কথাটা শুনে মাহতিম ওয়াহিদের কাধে হাত এক সেকেন্ডের জন্যে রেখে চলে যায় সামনে। তেলের টাকা দিয়ে ওয়াহিদকে নিয়ে মোটরসাইকেলে চড়ে বসে। ওয়াহিদ ঠিকঠাক বসতে বসতে বলে, ' ভাই, এবার বাইক ঠিকঠাক মত চালাইস। পায়ের ভাঙ্গা হাড় এখনও ভালো করে জোড়া লাগে নাই। '
মাহতিম কথাটা সম্পূর্নই অগ্রাহ্য করে বলে, ' ওয়াহিদ, আমরা এখন কোথায় যাচ্ছি?'
' কেন, বাসায়। '
মাহতিম মৃদু হাসে। বলে, ' না, আমরা এখন পেটাতে যাচ্ছি। লিমনের লোকেদের ধরে রেখেছি একজায়গায়। এদের পিটিয়ে লিমনের সকল ইনফো বের করে মেন্টালি টর্চার করব একে। অনেক হয়েছে মারামারি, আর প্রতিশোধ। এখন এমন করে টর্চার করব যেন শালার বাচ্চা আর কাউকে মুখ ফুটে বলতে না পারে কিছু। কিছু করা তো দূরের কথা। '
ওয়াহিদ হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকে মাহতিমের দিকে। মাহতিকের উদ্দেশ্য বুঝতে এটুকু বিলম্ব হল না ওয়াহিদের।
সেদিনের কথা ভুলেনি মাহতিম। লিমনকে শান্তি দেবে সে। তবে মাঝপথে প্রিয়ন্তির শর্তের কথাও মাথায় রেখেছে সে। মাহতিম ভেবে রেখেছে, এখন থেকে এমনভাবে কাজ করবে যেন সাপও মরে আর লাঠিও না ভাঙ্গে। মাহতিম প্রিয়ন্তির আড়ালে সকল মারামারি করবে। কিন্তু প্রিয়ন্তি জানতেও পারবে না কে করেছে এসব। মাহতিম নিজের অকল্পনীয় বুদ্ধিতে নিজেই গর্বিত। আজকাল প্রিয়ন্তির ভালোবাসা তাকে বুদ্ধিমান করে দিচ্ছে। প্রিয়ন্তির ভালোবাসায় নিশ্চয়ই ম্যাজিক আছে।
সম্পূর্ন নীরব এক রাস্তা বেছে নিয়েছে মাহতিম। সেই রাস্তার মধ্যে চারজন উঠতি বয়সী ছেলেকে বাঁশ দিয়ে পে'টাচ্ছে। অদূরে ওয়াহিদ পাহারা দিচ্ছে। সন্দেহজনক কাউকে দেখলে সঙ্গেসঙ্গে 'চিকু, চিকু, চিকু ' বলে সাংকেতিক আওয়াজ করবে সে। যেন মাহতিম আওয়াজ শুনলে সতর্ক হয়ে যেতে পারে।
ছেলেগুলোকে ভীষন নির্দয় হাতে একের পর এক বাশের আঘাত করে যাচ্ছে মাহতিম। মাহতিমের গৌড় বর্নের চেহারা রাগে রক্তিম। কাপছে তার প্রশস্ত দেহ। হাত চলছে ক্রমাগত। ছেলেগুলোকে মেরেও তার শান্তি হচ্ছে না। যখনই চোখের সামনে প্রিয়ন্তির গলার আঁচড়ের দাগ ভেসে উঠছে, আরো জোড়ে আঘাত করে বসছে সে। বাঁশ ফেলে এবার পা দ্বারা লাথি লাগল ছেলেদের। ছেলেরা বারবার হাত জোড় করে ক্ষমা চাইছে। এমন দোষ আর করবে না বলে আকুতি জানাচ্ছে। মাহতিম ক্লান্ত হল একসময়। ছেলেদের শেষবারের ন্যায় পা কর্তৃক আঘাত করে রাস্তার ফুটপাথে বসে পড়ল। আঙ্গুল দিয়ে কপাল, গলার ঘাম মুছে আগুন চোখে চাইল রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা ছেলেদের পানে।
ছেলেগুলো হামাগুড়ি দিয়ে এসে ঝাঁপিয়ে পরল মাহতিমের পায়ের উপর। মাহতিম তাদের দিকে তাকাল। ছেলেগুলো বলতে লাগল, ' আমরা প্রিয়ন্তি দিদিরে কিছু করি নাই, সত্যি কইতাছি দাদা। ওই লিমন ভাই এসব করেছে। আমরা নির্দোষ, দাদা। বিশ্বাস করেন। '
মাহতিম কিছুক্ষণ থেমে অতঃপর বলল, ' সত্য বলছিস প্রুভ করতে পারবি? '
ছেলেগুলো সঙ্গেসঙ্গে বলে উঠল, ' হ ভাই পারমু। কি করতে হবে কন। এক্ষুনি করে দিচ্ছি। '
' লিমনের কিছু ইনফো দিবি আমারে। ইনফো বলতে গোপন তথ্য। '
তারপরের অংশ মাহতিম ছেলেদের কানেকানে বলে দিল। ছেলেগুলোর মুখের রক্ত বোধ করি শুকিয়ে গেছে। তারা ঢোক গিলে বলল, ' ভাই, এমন নাউজুবিল্লাহ মার্কা কাজ করলে লিমন ভাই আমাদের ধইরা পিটিয়ে মাইরা ফেলবে। '
মাহতিম বাঁশ হাতে নেওয়ার ভান করে বলল, ' তাহলে লিমন কেন, আমিই মাইরা ফেলি? '
ছেলেগুলো পরল বিপাকে। কোনো উপায় না পেয়ে অগ্যতা বলল, ' করমু ভাই। আপনি যা বলবেন তাই করমু। আমাগো দুইদিন সময় দিয়েন। আমরা আপনারে সকল তথ্য জোগাড় কইরা পাঠাইতাসি। '
মাহতিম হাসে। বিজয়ের হাসি!
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
১৩ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আভা ইসলাম রাত্রি সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে তা অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হবে। তবে তিনি তার ফেসবুক পেজে নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, “গল্প লেখে সে, কলমের কালিতে কল্পনার চিত্র আঁকিবুকি করা তার নেশা! অক্ষরের ভাজে লুকায়িত এক কল্পপ্রেয়সী!”
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন