উপন্যাস : প্রিয়ন্তিকা
লেখিকা : আভা ইসলাম রাত্রি
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১২ আগস্ট, ২০২২ ইং
লেখিকা আভা ইসলাম রাত্রির “প্রিয়ন্তিকা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের আগস্ট মাসের ১২ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
প্রিয়ন্তিকা || আভা ইসলাম রাত্রি |
1111111111111111111111
২৪ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
প্রিয়ন্তিকা || আভা ইসলাম রাত্রি (পর্ব - ২৫)
অনুরাগ প্রাপ্তবয়স্ক যুবক। বিয়ের বিষয়ে সে একাই সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম। তাই প্রিয়ন্তিকে বিয়ে করার সিদ্ধান্তে অনুরাগের বাবা মা কোনরূপ দিরুক্তি করেন নি। ছেলের ইচ্ছেকেই প্রাধান্য দিয়েছেন তারা। অনুরাগ যথেষ্ট ম্যাচিউর একজন ছেলে। নিজের জীবনসঙ্গীর ব্যাপারে সে কোনো ছেলেমানুষী করবে না, এটা অনুরাগের বাবা মা জানেন বলেই হয়ত তারা এই বিয়েতে রাজি হয়েছেন। অনুরাগের কথামত তার বাবা মা একজন ঘটক ধরেছেন। ঘটক প্রিয়ন্তির বাবার সঙ্গে কথা বলে তাদের জানিয়েছে, তারা আগামীকাল যেতে পারে। কিন্তু অনুরাগ শুনেনি ঘটকের কথা। তার মন এমনিতেই কু ডাকছে। কোনো অঘটন ঘটতে যাচ্ছে বোধ হচ্ছে। প্রিয়ন্তিকে এখনো নিজের ভালোবাসার কথা জানায় নি অনুরাগ। একদম সোজা বিয়ের প্রস্তাব দেওয়াটাই যুক্তিযুক্ত মনে হয়েছে। কিন্তু এখন মাহতিমের কথা শুনে মনে হচ্ছে, এটা ঠিক হয়নি। প্রপোজ করেই বিয়ের কথাটা তুললে বোধহয় ভালো হত। প্রপোজ করলে প্রিয়ন্তির রাজি হবার সম্ভাবনা কম হলেও, নেহাৎ অসম্ভব নয়। প্রিয়ন্তিকে নিজের করে নেওয়ার অর্ধেক শিউরিটি পাক্কা করে তারপর বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া গেলে বোধহয় বেশি ভালো হত। কিন্তু যা হবার হয়েছে। এখন এসব ভাবা বোকামি। অনুরাগ ঘটককে স্পষ্ট বলে দিল, 'মেয়ে দেখতে যাচ্ছি, খেতে নয়। তাই আজই যাব। আগামীকাল হবার আগেই যদি অনিশ্চিত কিছু ঘটে যায়, এটার রিস্ক আমি নিতে পারব না।'
ঘটক নিজের কথা বলেন, ' বাবা, সবকিছুরই একটা নিয়ম আছে। নিয়ম মেনেই আগালে বোধহয় বেশি ভালো হয়। '
' নিয়ম ভাঙব না। নিয়ম মেনেই সবকিছু হবে। কিন্তু আমি চাই, বিয়েটা যতদ্রুত সম্ভব পাকা হোক। বাকি সবকিছুর নিয়ম মেনেই হবে। চিন্তা করবেন না। '
অনুরাগের বাবা মায়েরও অনুরাগের সিদ্ধান্তই মেনে নিয়েছেন। ঘটক আর কি বলবেন? পাত্র যেখান নিজেই বিয়ে করার জন্যে উতলা হয়ে আছে, সেখানে উনি মানা করার কে? তবে পাত্র বড্ড অদ্ভুত আচরণ করছে। বিয়ের জন্যে বাবা মায়ের থেকে বেশি পাগল পাত্র, এমন নির্লজ্জ পাত্র খুব কমই চোখে দেখেছেন ঘটক মশাই। তাই তিনি অনুরাগের বিষয়ে আর মাথা ঘামালেন না। ছাতা হাতে করে কেটে পরলেন।
' ওরা আজ আসবে? '
মাহতিমের তীক্ষ্ম কণ্ঠের প্রশ্ন শুনে কেমন যেন আঁটসাঁট হয়ে গেল তার ছেলেপেলে। তারা নির্মল কণ্ঠে বলল, 'জ্বি, ভাই। একটু পরই বেরুবে। '
'ওহ, ফাইন। আমরাও এখন বের হব। শোন, তোরা পাই পাই করে পাহারা দিবি তাদের। প্রিয়ন্তিদের বাড়ি আসার সমস্ত পথ যাতে বন্ধ থাকে। একচুলও যেন খালি না থাকে রাস্তা। খালি রাস্তা পেলেই গ্যা"ঞ্জাম লাগিয়ে দিবি। পুলিশ আমি ম্যানেজ করব ভাইকে বলে। ডোন্ট ওয়ারি। '
ছেলেপেলে সব মাথা দুলাল। যেন মাহতিম ভাইয়ের আদেশই শিরোধার্য। দুনিয়া এফোঁড় ওফোঁড় হয়ে যাবে কিন্তু মাহতিম ভাইয়ের আদেশের কোনো নড়চড় হবে না। এই বিষয়ে তারা যেন বদ্ধ পরিকর। মাহতিম মৃদু হাসে। শার্টের উপর দুটো বোতাম খুলে গলার দিকটা আলগা করে দেয়। বাইরের বাতাস ঝরঝর করে ছুঁইয়ে দেয় মাহতিমের গৌড় বর্নের গলদেশ। ঘাম শুকিয়ে যেতে থাকে। মাহতিম শার্টের কলার ধরে শার্ট পেছনে ঠেলে দেয়। কপালে পরে থাকা চুল আঙুলের ফাঁকে পেছনে ঠেলে দিয়ে সহাস্যে বলে, 'অনুরাগের বাচ্চা। ঘুঘু দেখেছিস। ফাঁদ দেখিস নি। এবার ফাঁদও দেখবি। জাস্ট ওয়েট অ্যান্ড সি। '
ছেলেপেলে কিছু একটা আন্দাজ করে। আগ্রহ সহকারে মাহতিমকে জিজ্ঞেস করে, ' ভাই, অনুরাগ দাদাকে সামনে পেলে কি করবে? জানতে ইচ্ছে করছে খুব। '
মাহতিমের চেহারায় হিংস্রতা দেখা যায়। সে বড্ড কঠোর হয়ে জবাব দেয়, ' দুই কা"মড়ে ওর কলিজা খেয়ে লম্বা এক ঢেঁকুর তুলে হজম করে বাথরুমে ছেড়ে দিয়ে আসব। '
ছেলেপেলে মাহতিমের কথার ধরন দেখে হা হা করে হেসে উঠে। মাহতিমও সকল রাগ একপাশে রেখে হাসিতে তাল দেয়।
গাড়িতে গরমে একপ্রকার সিদ্ধ হয়ে যাচ্ছে অনুরাগ। গাড়ির এসিটা দুদিন হল নষ্ট। কাজ করতে করতে এখন অবসর নিয়েছে হয়ত। জ্যাম লেগেছে রাস্তায়। যাকে বলে ভয়াবহ জ্যাম। ছাড়ার নামগন্ধ নেই। মেইন পয়েন্টে নাকি ছোটখাটো একটা অ্যা"ক্সিডেন্ট হয়েছে। সেটাকে ঘিরে পুলিশ ফোর্স দাড়িয়ে আছে। অনুরাগ বেশ খানিকক্ষণ অপেক্ষা করে তারপর গাড়ি ঘুরাল। সরু গলি দিয়ে যাবার চেষ্টা করল। কিছুদূর যাবার পর সেখানে আরেক বিপদ দেখল। রাস্তার মোড়ে কিছু উঠটি বয়সী ছেলেরা মারামারি করছে। এলাকার লোকেরা মা"রামা"রি থামানোর চেষ্টা করছে। সেই দৃশ্য দেখার জন্যে পুরো গলির মানুষ এসে ভিড় করে দাড়িয়েছে রাস্তার মোড়ে। অনুরাগের এবার রাগ হল ভীষন। এসব মা"রামা"রি, এ"ক্সিডেন্ট করার আর সময় পেল না। আজই এসব হতে হল? অনুরাগ আবার গাড়ি ঘুরাল। এটাই শেষ রাস্তা। এটার মোড়ে আসতেই দেখল একই মা"রামা"রির দৃশ্য। অনুরাগ হতভম্ব হয়ে গেল। এই মা"রামা"রির ঠেলাও সম্ভব না। শেষে দেখা যাবে, সবাই মিলে অনুরাগকেই উত্তম মধ্যম দিয়ে দিচ্ছে। কি করবে? আজকেই এসব হতে হল? অনুরাগের মেজাজ চড়ে যাচ্ছে। পেছন থেকে অনুরাগের বাবা বললেন, ' আজ থাক আব্বা। আমরা আগামীকাল যাব। নিয়ম ভাঙলে এমনই হবে। আল্লাহ চায়নাই আজ আমরা যাই। তাই এতসব বিপদ দিতাসে। আজ যাই, আমরা নাহয় কাল আসব। '
অনুরাগ কথা বলে না। শুধু ভ্রু কুচকে চেয়ে থাকে সামনের মারামারির দিকে। গভীর কিছু একটা চিন্তা করছে সে। অনুরাগের মা বললেন, ' অনু, তোর আব্বার শরীর গরমে কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে। আজ থাক না বাপ। কাল যাই আমরা? '
অনুরাগ পেছনে তাকায়। তার বাবা গরমে লাল হয়ে যাচ্ছে। খুব কষ্ট হচ্ছে তাদের বোঝা যাচ্ছে। অনুরাগ দীর্ঘশ্বাস ফেলে। গাড়ি ঘুরায়। এসি ঠিক করে আগামীকাল আসবে সে। তবুও এত কিছু হয়ে গেল। অনুরাগের কোথায় যেন একটা সংকোচ থেকে গেল। কেন হল এসব? বুঝতে পারছে না অনুরাগ। চিন্তা করছে আর আনমনে গাড়ি চালাচ্ছে।
' কাজ কমপ্লিট? '
' হ ভাই। এরা ফেরত যাইতাসে। '
' ওহ, ভেরি গুড জয়। এটার জন্যেই তোরে কোনো কাজ দিলে তুই আমাকে নিরাশ করিস না। ব্রেভ ম্যান। '
' এটা কি কইন ভাই। আপনার কাম করতে পারলে এটা তো আমার সৌভাগ্য। '
জয় হয়ত লজ্জা পেল। তার এই লজ্জা ফোনের মধ্যে ঠিকঠাক বুঝা গেল না। তবে কথার ধরনে হালকা বুঝতে পেরেই মৃদু হাসল মাহতিম। মাহতিম ফোন রেখে দেয়। গাড়ির স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে সীমান্ত ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করে, ' ফোনের মধ্যে কিসের কাজের কথা বলছিলি? '
মাহতিম ফোন পকেটে রাখে। তারপর হেসে বলে, ' চাকরির ফাইলের কথা, ভাইয়া। কাউকে বলেছিলাম,ফাইলটা যেন ডিলেট করে দেয়। সম্পূর্ণ অদরকারি একটা ফাইল। ডিলেট করা খুব প্রয়োজন ছিল। কাজ হয়েছে। সেটাই বলছিলাম ফোনে। আর কিছু না। '
সীমান্ত আর কথা বাড়ায় না। মৃদু নিঃশ্বাস ছেড়ে গাড়ি চালানোয় মন দেয়।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
২৬ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আভা ইসলাম রাত্রি সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে তা অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হবে। তবে তিনি তার ফেসবুক পেজে নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, “গল্প লেখে সে, কলমের কালিতে কল্পনার চিত্র আঁকিবুকি করা তার নেশা! অক্ষরের ভাজে লুকায়িত এক কল্পপ্রেয়সী!”
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন