উপন্যাস       :        প্রিয়ন্তিকা
লেখিকা        :         আভা ইসলাম রাত্রি
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ১২ আগস্ট, ২০২২ ইং

লেখিকা আভা ইসলাম রাত্রির “প্রিয়ন্তিকা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের আগস্ট মাসের ১২ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
প্রিয়ন্তিকা || আভা ইসলাম রাত্রি Bangla Golpo - Kobiyal
প্রিয়ন্তিকা || আভা ইসলাম রাত্রি

1111111111111111111111

২৫ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

প্রিয়ন্তিকা || আভা ইসলাম রাত্রি (পর্ব - ২৬)

মাহতিম এবং তার পুরো পরিবার বসে আছে প্রিয়ন্তিদের বসার ঘরে। প্রিয়ন্তির বাবা হাবিব গল্প করছেন তার দুই ছাত্রের সঙ্গে। প্রিয়ন্তি যখন শুনেছে তার বাড়িতে মাহতিম এসেছে, তখন থেকেই নিজের ঘরে ঘাপটি মেরে বসে ছিল। এক পা-ও হেলে নি নিজ জায়গা থেকে। প্রিয়ন্তির মা রান্নাঘরে যেতে পারছেন না। চুলোর আঁচ তার সহ্য হয়না। শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যায়। তাই তিনি মেয়েকে বুঝিয়ে শুনিয়ে রান্নাঘরে নিয়ে এলেন। প্রিয়ন্তির রাগের কারণ তিনি জানেন না। তবে যাদেরকে প্রিয়ন্তির বাবা বেশ খুশিমনে ঘরে নিয়ে এসেছে, তাদের অ্যাপায়নের ত্রুটি হলে তাদেরই বদনাম। প্রিয়ন্তি রান্না করছে। কড়াইতে হলুদ লবণ মেশানো মাছ কটা রেখে সেটা ভাজা শুরু করে। মাছ উল্টাচ্ছে আর বিড়বিড় করছে, ' এসেছে কেন ও? আসবে যখন খেয়ে যাবে কেন? সেদিনের কথা ভুলে গেছে? ও ভুললেও আমি ভুলিনি। ইচ্ছে করছে খাবারে…'

আর কথা বলল না প্রিয়ন্তি। বিবেকে বাঁধলো বাকি কথা বলতে। চুপ করে মাছের শেষ টুকরো চুলো থেকে নামিয়ে চুলোর আঁচ কমিয়ে দিল। ভাত চড়াল চুলোয়।
রান্নার ফাঁকে ফাঁকে বারবার উকি দিয়ে দেখছে। মাহতিম বেশ হাসিখুশি। কথা বলছে প্রিয়ন্তির বাবার সঙ্গে। কি বিনয়-ই না দেখাচ্ছে। অভিনেতা কোথাকার। কিন্তু প্রিয়ন্তি জানে, মাহতিম কতবড় বেয়াদব একটা ছেলে। জীবনটা জাহান্নাম বানিয়ে দিয়েছে প্রিয়ন্তির। প্রিয়ন্তির চোখে আবার জল জমছে। প্রিয়ন্তি চোখের জলটুকু মুছে নিল আড়ালে।

সীমান্ত চায়ের কাপ হাতে নিয়ে বেশ হাস্যোজ্জ্বল চেহারায় তাকাল স্যারের দিকে। বলল, 'স্যার, একটা আবদার আছে আপনার কাছে। আপনি অনুমতি দিলে তুলব এখন। '
হাবিব ভ্রু কুঁচকে চাইলেন। আবদারটা কি সেটা তিনি বুঝতে পারছেন না। তাই হাবিব মৃদু হেসে বললেন, ' বলে ফেল। সাধ্যে থাকলে রাখার চেষ্টা করব। '
সীমান্ত তার বাবার দিকে তাকাল। বলল, ' বাবা তুমি বলো। '

মাহতিমের বাবা কথা বলতে প্রস্তুত হলেন। সুন্দর সাবলীল এবং নম্র ভাষায় প্রথম কথাটা তুললেন প্রিয়ন্তির বাবার সামনে, ' স্যার, আমাদের পরিবার চাইছে আপনার সঙ্গে সম্পর্ক আরো গভীর করতে। সীমান্তের মায়েরও তাই মত। আপনার মেয়ের কথা আর কিইবা জানব। গুনবতী, বড্ড ভালো স্বভাবের মেয়ে আজকাল পাওয়া যায় না। আমরা ঠিক প্রিয়ন্তি মায়ের মতই একজন পাত্রী খুঁজছি আপনার ছাত্র মাহতিমের জন্য। মাহতিম এবং প্রিয়ন্তি একে অপরকে পছন্দ করে। যেখানে ছেলে মেয়েরা নিজেদের জীবনসঙ্গী পছন্দ করে রেখেছে, সেখানে আমাদের উচিত তাদের পছন্দকে গ্রহন করে নেওয়া। মাহতিমের জন্যে আমরা আপনার মেয়ে প্রিয়ন্তির হাত চাইতে এসেছি আজ। অনুগ্রহ করে আমাদের খালি হাতে ফেরাবেন না। আমরা অনেক আশা নিয়ে এসেছি আপনার কাছে। '

হাবিব এসব শুনে একদিকে যেমন অবাক হোন, অপরদিকে তেমন খুশিও হোন। মাহতিমদের পরিবার সর্বদাই বেশ গণমান্য। তাদের পরিবারের প্রত্যেক সদস্য সুশীল এবং ভদ্র। তাছাড়া ইয়ান ছোটবেলায় দুরন্তপনা করলেও, ছেলে হিসেবে সে বড্ড ভালো। প্রিয়ন্তিকে পাগলের মত পছন্দ করে সেটা তিনি তার আচরণ থেকেই বুঝতে পেরেছেন। তবুও হাবিব নিজের খুশি প্রকাশ করেন না তাদের সামনে। তিনি বলেন, ' এটা তো অতি উত্তম প্রস্তাব। ইয়ানকে ছেলে হিসেবে আমি খারাপ বলব না। তবে প্রিয়ন্তিকে একবার জিজ্ঞেস করতে হবে। তার মতামত না জেনে আমি বিয়েতে হ্যা বলতে পারছি না। '

মাহতিম এবার কথা তুলে, ' স্যার, প্রিয়ন্তির সঙ্গে কদিন আমার অভিমান চলছে। ও আমাকে বিয়ে করতে আপাতত রাজি নাও হতে পারে। স্যার বুঝেনিই তো, মেয়েদের মন। কখন কি চায়, এরা নিজেরাও জানে না। আপনি একটু বুদ্ধি করে ওকে জিজ্ঞেস করবেন। আশা করি, ও মানা করবে না। '

হাবিব বুঝতে পারেন। মেয়ে এমনিতেই একটু রাগি তার। একটুতেই মেজাজ চড়ে যায়। তাই মাহতিমের কথা নেহাৎ ফেলে দেবার মত নয়। তাই হাবিব বলেন, ' আচ্ছা, আমি দেখছি বিষয়টা। ভেতর থেকে জেনে আসছি। আপনারা একটু অপেক্ষা করুন। '
হাবিব উঠে পরেন নিজের জায়গা থেকে। ভেতরে যান। প্রিয়ন্তির মাকে ডেকে বলেন সম্পূর্ন ব্যাপার। প্রিয়ন্তির মায়েরও আপত্তি নেই এতে। এবার প্রিয়ন্তি কি বলে তাই দেখার পালা। হাবিব বলেন, ' মেয়েকে ডেকে আনো। দেখি কি বলে। '

প্রিয়ন্তির মা রান্নাঘর থেকে প্রিয়ন্তিকে ডেকে আনেন। প্রিয়ন্তি ওড়নার অগ্রাংশে ভেজা হাত মুছতে মুছতে বাবার কাছ আসে।
' কি বলবে বাবা? '
হাবিব গম্ভীর হবার চেষ্টা করেন। এসব গুরুত্তপূর্ণ বিষয়ে গম্ভীর হওয়াটা হচ্ছে প্রধান বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য। হেসে অবহেলা করা হচ্ছে বোকামি। হাবিব বলেন, 'তুমি কি কাউকে পছন্দ করো? '

প্রিয়ন্তি হকচকিয়ে যায়। বাবা আজই কেন এসব জিজ্ঞেস করছেন? প্রিয়ন্তি নার্ভাস হয়ে যায়। অনুরাগের কথা বলবে সেটাও সম্ভব না। কারণ অনুরাগকে প্রিয়ন্তি এখনো ততটা ভালোবাসতে পারেনি। প্রিয়ন্তির ধারণা, অনুরাগ শুধুমাত্র প্রিয়ন্তির একটা আকর্ষন। তাছাড়া আর কিছুই নয়। তাছাড়া, অনুরাগও তো প্রিয়ন্তিকে ভালোবাসার কথা জানায় নি। তাই একটা নাম না জানা সম্পর্কের কথা প্রিয়ন্তি বাবার সামনে তুলবে কি করে? হ্যাঁ, সেদিন মাহতিমের সামনে তাকে অনুরাগের সঙ্গে তুলনা করেছে প্রিয়ন্তি। কিন্তু সেটা শুধুমাত্রই মাহতিমকে তার আচরণ বুঝানোর জন্যেই করা। এছাড়া অনুরাগের সম্পর্কে প্রিয়ন্তি একটা ভালো লাগা অনুভব করে, তবে সেটা ভালোবাসা কি না জানে না সে। প্রিয়ন্তি অনেক চিন্তা করে বলে, 'না বাবা, তেমন কেউই নেই। '

হাবিব প্রশ্ন করেন, ' মাহতিম ইয়নকে চেনো? কেমন ছেলে সে? তুমি তাকে ছেলে হিসেবে কত নাম্বার দেবে? '
প্রিয়ন্তি এবার যেন আকাশ থেকে পরে। বাবার এইসব প্রশ্ন করার হেতু এবার তার কাছে পরিষ্কার হয়ে যায়। মাহতিমরা সপরিবারে তাহলে বিয়ের প্রস্তাব দিতে এসেছে। প্রিয়ন্তি বাবার দিকে তাকায়।
' প্রেমিক হিসেবে নয়, তাকে ছেলে হিসেবে তুমি কত মার্ক দেবে? বাবার দিকে চেয়ে সত্যি করে বলবে! '

এবার প্রিয়ন্তি কিছুটা দ্বিধায় পরে যায়। প্রেমিক হিসেবে মাহতিমকে প্রিয়ন্তির সহ্য না হলেও, ছেলে হিসেবে মাহতিম অনন্য। এ কথা মিথ্যা নয়। প্রিয়ন্তি কি উত্তর দেবে এখন? মিথ্যা বলবে? বাবা শিক্ষক হবার সুবাদে মিথ্যা চট করে ধরে ফেলতে পারেন। তাছাড়া প্রিয়ন্তি সবার সামনে মিথ্যা বললেও, বাবার সামনে কখনোই মিথ্যা কথা বলে না। মাহতিমকে ছেলে হিসেবে খারাপ বলা মানে মাহতিমকে বদনাম করা। সেটা কিভাবে করবে প্রিয়ন্তি? যতই হোক, মাহতিমের প্রতি প্রিয়ন্তির আলাদা একটা টান আছে। সেটা একেবারেই অগ্রাহ্য করতে পারে না প্রিয়ন্তি। আর ভালো বললেই তো আর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে না। অনেক চিন্তা ভাবনা করে প্রিয়ন্তি উত্তর দেয়, ' সে ছেলে হিসেবে ভালো। '
' কিরকম ভালো? খুব নাকি অল্প? '
প্রিয়ন্তি কিছুটা দ্বিধা নিয়ে উত্তর দেয়, 'খুব ভালো। '
' তার সাথে তুমি সংসার করতে পারবে? সে কি সেটার যোগ্য? '
প্রিয়ন্তি এবার আর সহ্য করতে পারে না। রাগ নিয়ে বলে, ' মোটেও না। আমি তাকে বিয়ে করব না, বাবা। তুমি আমাকে প্লিজ জোর করো না। '
' কেন? তোমাদের ঝগড়া হয়েছে? '
' না, বিষয়টা এমন নয় বাবা। তুমি বুঝতে পারছ না। তার সঙ্গে আমার যায় না। '

হাবিব বুঝতে পারেন, মেয়ের সত্যি সত্যিই ঝগড়া হয়েছে ইয়ানের সঙ্গে। তাই হাবিব আর কথা বাড়ান না। বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ান।
যেতে যেতে পেছন ফেরে প্রিয়ন্তিকে বলেন, ' আশা করি, বাবার সিদ্ধান্ত তোমার জন্যে সবচেয়ে উত্তম হবে। একসময় এই সিদ্ধান্তের জন্যেই আমাকে ধন্যবাদ জানাবে। বাবা কখনোই তোমার অমঙ্গল চাইব না, প্রিয়ন্তি মা। তৈরি থাকো।'

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

২৭ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আভা ইসলাম রাত্রি সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে তা অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হবে। তবে তিনি তার ফেসবুক পেজে নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, “গল্প লেখে সে, কলমের কালিতে কল্পনার চিত্র আঁকিবুকি করা তার নেশা! অক্ষরের ভাজে লুকায়িত এক কল্পপ্রেয়সী!”

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন