উপন্যাস       :        প্রিয়ন্তিকা
লেখিকা        :         আভা ইসলাম রাত্রি
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ১২ আগস্ট, ২০২২ ইং

লেখিকা আভা ইসলাম রাত্রির “প্রিয়ন্তিকা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের আগস্ট মাসের ১২ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
প্রিয়ন্তিকা || আভা ইসলাম রাত্রি Bangla Golpo - Kobiyal
প্রিয়ন্তিকা || আভা ইসলাম রাত্রি

৩৫ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

প্রিয়ন্তিকা || আভা ইসলাম রাত্রি (৩৬ এবং শেষ পর্ব)

রাত তখন প্রায় একটা। ইশাকে শুয়ে পরতে বলে মাহতিম নিজের রুমের দিকে এগুয়। তার চোখেও ঘুম। অনেক আগেই মাহতিম চেয়েছিল নিজের রুমে চলে আসতে। কিন্তু ইচ্ছে করেই আসেনি। তার কারণ একমাত্র প্রিয়ন্তি। প্রিয়ন্তির সংস্পর্শ আজকাল মাহতিমের চরিত্র নষ্ট করতে উঠেপড়ে লেগেছে। নানাবাহানায় প্রিয়ন্তিকে ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করে তার। বিয়ের আগে বৈধতার বাহানা দেখিয়ে প্রিয়ন্তিকে স্পর্শ করত না। কিন্তু এখন প্রিয়ন্তি তার জন্যে বৈধ, সে প্রিয়ন্তির জন্যে বৈধ। এই বৈধতাই যেন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে মাহতিমের জন্য। নিজেকে অনেক কষ্ট করে মাহতিম সংযত করে রেখেছে। 

মাহতিম নিজের ঘরে এসে দেখে প্রিয়ন্তি বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। বারবার হাত উঁচু করে চোখের জল মুছছে। ঠান্ডায় পিঠ কাপছে। মেয়েটার কি আদৌ কখনো বুদ্ধি হবে না? এই কনকনে ঠান্ডায় বারান্দায় দাঁড়িয়ে বাতাস খাচ্ছে। এতটা কাণ্ডজ্ঞানহীন কবে থেকে হয়ে গেল তার বুঝদার প্রিয়ন্তিকা। মাহতিম আলমারি থেকে একটা শাল বের করে বারান্দায় গেল। পেছন থেকে প্রিয়ন্তির গায়ে শাল জড়িয়ে দিতেই প্রিয়ন্তি চমকে উঠল। পেছন ফেরে মাহতিমের দিকে তাকাল। প্রিয়ন্তির ভেজা চোখ দেখে স্তব্ধ হয়ে গেল মাহতিম। কেঁদেকেঁদে এ কি অবস্থা করেছে নিজের চেহারার? মাহতিম দ্রুত এগিয়ে যায়। প্রিয়ন্তির নরম গাল দুহাতের আজলায় তুলে নিয়ে ব্যস্ত কণ্ঠে বলে,
' আল্লাহ! কী হয়েছে প্রিয়ন্তিকা? এমনভাবে কাদছ কেন? কেউ কিছু বলেছে? তোমার চোখ দেখে তো আমারই ভয় লাগছে! কী হয়েছে বলো আমাকে। '

প্রিয়ন্তি নিজের গাল মাহতিমের থেকে ছাড়িয়ে নেয়। আবারো সামনে ফেরে দায়ছাড়া ভাবে বলে,
' কিচ্ছু হয়নি। আর কিচ্ছু হবেও না। আমি কালকেই বাবার বাড়ি চলে যাব। থাকব না আর এখানে। আমার ভালো লাগছে না। একটুও ভালো লাগছে না এখানে থাকতে। সবকিছু অসহ্য লাগছে। '


মাহতিম এসব কথা শোনার জন্যে মোটেও প্রস্তুত ছিল না। হঠাৎ করে আজকে প্রিয়ন্তির এমন অদ্ভুত ব্যবহারের সঙ্গে সে একটুও পরিচিত নয়। মাহতিন প্রিয়ন্তির হাত ধর হেচকা টান দেয়। প্রিয়ন্তি টাল সামলাতে না পেরে সোজা মাহতিমের বুকের উপর এসে পরে। প্রিয়ন্তির ঘন চুল ছড়িয়ে লেপ্টে যায় মাহতিমের বুকের উপর। মাহতিম খুব আলগোছে প্রিয়ন্তির চুল গুছিয়ে দিয়ে গলার স্বর নরম করে জিজ্ঞেস করে,
' কেউ কিছু বলেছে আমার প্রিয়ন্তিকাকে? আম্মা কিছু বলেছে? বা আব্বু? ওরা কিছু বলে থাকলে ওদের হয়ে আমি মাফ চাইছি। তবুও বাবার বাড়ি যাবার কথা বলো না। এ কদিন তুমি আমার অভ্যাস হয়ে গেছো, জানো না? '

প্রিয়ন্তি আর নিজেকে সামলে রাখতে পারে না। মাহতিমের বুকের উপর মাথা রেখে হাউমাউ করে কেঁদে উঠে। মাহতিম আচমকা এমন শব্দ কান্নায় হকচকিয়ে যায়। আজ এই প্রথমবার প্রিয়ন্তিকে এমনভাবে কাদতে দেখছে মাহতিম। প্রিয়ন্তি মাহতিমের বুকের শার্ট দুই আঙ্গুলের মুঠোয় পুড়ে নিয়ে কেঁদেই যাচ্ছে। থামছে না একদম। মাহতিম কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না। আর নাইবা প্রিয়ন্তি নিজে থেকে কিছু বলছে। 

মাহতিম কাপা কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে, ' তুমি এভাবে কাদছ কেন প্রিয়ন্তিকা? আমার তোমার কান্না দেখে বুকের ভেতর কেমন যেন লাগছে। এভাবে কেঁদো না প্লিজ। থামো এবার। '
প্রিয়ন্তি এবার কিছুটা সরে দাঁড়ায়। দুহাতে চোখ মুছে। আবারো ভরে যায় চোখের ভেতর। মাহতিম এখনো অবাক চোখে চেয়ে আছে প্রিয়ন্তির দিকে। প্রিয়ন্তির এমন কান্না দেখে সে নিজেও বিচলিত। প্রিয়ন্তি কিছুক্ষণ মাহতিমকে দেখে। তারপর হঠাৎ করেই প্রিয়ন্তি মাহতিমের কলার চেপে ধরে তাকে নিজের দিকে টেনে নিল। মাহতিমের চোখে বিস্ময়। প্রিয়ন্তি নত হয়ে আবারও নিশব্দে কেঁদে উঠে। মাহতিম হতভম্ব হয় প্রিয়ন্তির কান্নায়। প্রিয়ন্তি আচমকা পায়ের পাতার উপর ভর করে মাহতিমের গলা জড়িয়ে তার কাধে মুখ গুঁজে দেয়। এখনো কেঁদেই যাচ্ছে। কাদতে কাদতে হাপাচ্ছে সে। মাহতিম এখন অবাকে কথা বলাই ভুলে গেছে। এ কি করছে প্রিয়ন্তিকা? মাহতিমের লোমে লোমে যে কাপন ধরিয়ে দিল। এবার কি করে সামলাবে মাহতিম নিজেকে। প্রিয়ন্তি এখনো তার গায়ের সঙ্গে লেপ্টে মিশে। প্রিয়ন্তি মাহতিমকে আরো একটু জোড়ে জড়িয়ে ধরে বলল,
' আমি তোমাকে ভালবাসিনি বলে ওই মেয়ের কাছে চলে যাবে? খারাপ লোক। এতদিন আমার পেছনে ভালোবাসি ভালোবাসি বলে ঘুরঘুর করেছ। আর এখন আমি তোমাকে ভালো….! '


প্রিয়ন্তি আবারও লম্বা করে নিঃশ্বাস নেয়। কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবারও বলে,
' ওই মেয়ে কেউ না তোমার। আমি তোমার সব, সব আমি। ওই মেয়ে তোমার কাছে কেন ঘেঁষবে? আমার বরের কাছে রাতভর ঘেঁষাঘেঁষি করার অনুমতি আমি তাকে মোটেও দেইনি। তুমি..তুমি যদি আর ওই মেয়ের কাছে গেছো, আমি তোমার বুক কেটে কুচিকুচি করে ফেলব।'

মাহতিম এবার মৃদু হাসে। সে যা শুনতে চাইছে প্রিয়ন্তি তাই বলছে আজ। সুখের আকাশে মাহতিম যেন উড়ে বেড়াচ্ছে। মাহতিম প্রিয়ন্তির কোমরে হাত রেখে ওকে নিজের সঙ্গে মিশিয়ে ফেলল। প্রিয়ন্তি আরো গভীরভাবে লেপ্টে গেল মাহতিমের দেহের সঙ্গে।  মাহতিম ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করে
' ভালোবাসো আমায়? যদি উত্তর হ্যাঁ হয়, তবে ওর কাছে আর যাব না, প্রমিজ। '

প্রিয়ন্তি মাথা তুলে একবার মাহতিমের দিকে তাকায়। চোখ পিটপিট করে মাহতিমকে দেখে। ঢোক গিলে আবারও মাহতিমের ঘাড়ে মুখ গুঁজে দেয়। হাপিয়ে উঠে বলে,
' ভালো না বাসলে আজ ওই মেয়ের কাছে যাওয়া নিয়ে এতোটা পুড়তাম না। নিজে জোর করে প্রেমে ফেলে এখন আমার থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছ। খারাপ লোক। আজ সারাদিন আমি অপেক্ষায় ছিলাম তোমার জন্য। অথচ ওই মেয়ে ছাড়া আজকাল তোমার চোখে তো কিছুই পরে না। ভালোবাসা ফুরিয়ে গেছে, না? '

মাহতিম হাসে। হাসতে হাসতে তার চোখ পানি চলে আসে। নিজের হাসি সামলে প্রিয়ন্তিকে আরো জোড়ে জড়িয়ে ধরে। প্রিয়ন্তির ঘাড়ে চুমু খেয়ে বলে,
' ভালোবাসা ফুরায় নি। শুধু ভালোবাসাটা যেন তোমার মনে ক্ষত তৈরি না করে সেইজন্যেই দূরে দূরে ছিলাম। '
প্রিয়ন্তি বুঝতে পারে না মাহতিমের কথা। ঘাড় থেকে মুখ তুলে মাহতিমের দিকে তাকায়। জিজ্ঞেস করে,
' ক্ষত বলতে? '

মাহতিম প্রিয়ন্তির ডান গালে হাত রেখে নরম কণ্ঠে বলে,
' ভালোবাসাটা প্রথমে মনের দিক থেকে শুরু হলেও, ধীরে ধীরে সেটা শরীরের সঙ্গেও জড়িয়ে যায়। এটাই বাস্তব। কেউ অস্বীকার করতে পারবে না এটা। বিয়ের আগে নিজেকে বাঁধা দিলেও, বিয়ের পর আর সেই বাঁধা মন মানতে চায়না। তোমাকে নিজের সঙ্গে মিশিয়ে ফেলতে মন চাইত মাঝেমধ্যে। কিন্তু তুমি তো ভালোবাসো নি আমায়। তোমার মন না পেয়ে শরীর পাওয়ার স্পর্ধা কি করে করতাম? তাই তোমার মনে ক্ষত তৈরি না করার আগেই সরে গেলাম। সামান্য দুরত্ব যদি তোমাকে আমার করে দেয়, বিশ্বাস করো প্রিয়ন্তিকা এমন দুরত্ব আমি সারাজীবন চাইব। '


প্রিয়ন্তি মাহতিমের কথা শুনে মুগ্ধ হয়। একটা মানুষের মনের ভাবনা এতোটা পবিত্র কি করে হতে পারে? প্রিয়ন্তি মৃদু হাসে। মাহতিম প্রিয়ন্তির কপালে চুমু খায়। অনেক সময় ধরে ঠোঁট চেপে রাখে প্রিয়ন্তির কপালে। যেন হাজার বছরের তৃষ্ণা মেটাচ্ছে মাহতিম। প্রিয়ন্তি মাহতিমের স্পর্শ উপভোগ করে। চোখ বুঁজে খামচে ধরে মাহতিমের কাধের টিশার্ট। মাহতিম সরে আসে। প্রিয়ন্তির দিকে চেয়ে বলে,
' ঘুমাবে না? '

প্রিয়ন্তি এখনো চোখ বুজে আছে। মাহতিমের কথা শুনে প্রিয়ন্তি ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকায়। পরপরই লজ্জায় হাসফাস করে উঠে। প্রিয়ন্তি মাহতিমের ঘাড়ের দিকে চোখ রেখে মৃদু স্বরে বলে,
' শ-শুনো, স-স্পর্ধাটা করে ফ-ফেললে আমি এখন মোটেও কষ্ট পাব না। '
মাহতিম চমকে উঠে। প্রিয়ন্তির দিকে বিষ্ময় নিয়ে তাকায়। কম্পিত কণ্ঠে বলে,
' আ-আর ই-ইউ শ-শিউর, প্রিয়ন্তিকা? 

প্রিয়ন্তি চোখ বুজে মাথা দুলায়। লজ্জায় আর চোখ তুলে তাকাতে পারে না। মাহতিম এই প্রথম প্রিয়ন্তির লজ্জা পাওয়া মুখ দেখে নেশায় আচ্ছন্ন হয়ে পরে। ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় প্রিয়ন্তির দিকে। মাহতিমের নেশা দৃষ্টি প্রিয়ন্তির তিরতির করে কাপা ঠোঁটের দিকে। প্রিয়ন্তি মাহতিমকে এগুতে দেখে আগেই চোখ বন্ধ করে ফেলেছে। মাহতিম এবার নিজেকে আর আটকাতে পারে না। ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁইয়ে প্রিয়ন্তির কোমড় চেপে নিজের সঙ্গে আরও গভীর ভাবে মিশিয়ে ফেলল। 


বেশ সময় নিয়ে শান্ত হয় মাহতিম। প্রিয়ন্তিকে ছেড়ে এক ঝটকায় ওকে কোলে তুলে নেয়। প্রিয়ন্তির চোখ মাহতিমের চোখের দিকে। মাহতিম সম্মোহনের ন্যায় প্রিয়ন্তির দিকে চেয়ে আছে। প্রিয়ন্তিকে ধীরে বিছানায় শুইয়ে দেয়। প্রিয়ন্তির কপালে আবারও চুমু খায় মাহতিম। তারপর পুরো মুখে চুমু খেয়ে নিজে এতদিনের তৃষ্ণা মেটায়। অতঃপর নেমে আসে গলায়। প্রিয়ন্তির গলায় অসংখ্য চুমুতে ভরিয়ে দেয়। প্রিয়ন্তি বেপরোয়া মাহতিমের বেপরোয়া ভালোবাসা অনুভব করে শিউরে উঠে। খামচে ধরে মাহতিমের ঘাড়। বাতি নিভে যায়। শাড়ির আঁচল সরে যায়। জানালার পর্দা ডিঙিয়ে শীতল বাতাস ছুঁইয়ে যায় এই যুগলের দেহ। প্রথমবারের মত মাহতিম উন্মাদের মত উপভোগ করে প্রিয়ন্তির দেহের উষ্ণতা, দেহের আনাচে কানাচে থাকা ভাঁজ। নিজেকে এই মুহূর্তে সবচেয়ে ভাগ্যবান পুরুষ মনে হচ্ছে মাহতিমের। 


ভালোবাসা-বাসিতে কেটে যায় আরো কটা দিন। দুজনের মধ্যে ভালোবাসার বন্ধন আরো শক্ত হয়েছে। ধীরে ধীরে মাহতিম আরো গভীরভাবে প্রিয়ন্তিকে নিজের সঙ্গে মিশিয়ে নিয়েছে। এখন প্রিয়ন্তি চাইলেও মাহতিমকে ছেড়ে যেতে পারবে না। দুজন যেন দুজনের অস্তিত্বে পরিনত হয়েছে। 

মাহতিম সবে অফিস থেকে ফিরেছে। ছেলেটা বিয়ের পর যেন আরো দায়িত্ত্বশীল হয়ে উঠেছে। দক্ষ হাতে সংসার সামলে বাইরেরটাও সামলায়। কে বলবে একদিন এই বেপরোয়া মাহতিমকে নিয়ে প্রিয়ন্তি কি অবাস্তব চিন্তাই না করেছে। এখন এসব ভাবলে হাসি পায় প্রিয়ন্তির। আজকে প্রিয়ন্তি একটা খুশির খবর পেয়েছে। এতেই মেয়েটা ক্ষণে ক্ষণে কেমন খুশিতে ঝলমল করে উঠছে। মাহতিম বাসায় আসতেই তাকে নয়না খাইয়ে দিয়ে রুমে পাঠিয়ে দিল। প্রিয়ন্তিকে আসার পর থেকে এখনো চোখের দেখা দেখেনি মাহতিম। সে এইজন্যে মনেমনে কিছুটা রেগে আছে। কতবার বলেছে সে প্রিয়ন্তিকে, বাসায় এলে যেন সবার আগে প্রিয়ন্তি তার সামনে এসে দাঁড়ায়। পানির গ্লাস এগিয়ে দেয়। এতদিন তাই করে এসেছে প্রিয়ন্তি। কিন্তু আজকে আসার পর থেকে প্রিয়ন্তিকে দূরবীন দিয়েও খুঁজে পাচ্ছে না মাহতিম। এই মেয়ে একদিন পাগল করে দেবে মাহতিমকে। 


মাহতিম ঘরে আসতেই চমকে যায়। ঘরের মধ্যে অসংখ্য মোমবাতি জ্বালানো। এনার্জি বাতি নেভানো ঘরে মোমবাতির আলো বড্ড আকর্ষণীয় লাগছে। মাহতিম সম্মোহনের ন্যায় এগিয়ে যায়। অফিসের ব্যাগ কাধ থেকে নামিয়ে ড্রয়ারের উপর রাখে। চারপাশে খুঁজে নিজের সবচেয়ে প্রিয় মানুষকে। পেয়েও যায় বারান্দায়। সে ব্যস্ত পায়ে এগিয়ে যায় সেদিকে। শাড়ি পড়া প্রিয়ন্তিকে পেছন থেকে ঝাপটে ধরে মাহতিম। প্রিয়ন্তি একটুও অবাক হয়না। খুব করে চেনে প্রিয় মানুষের স্পর্শ। প্রিয়ন্তি পেটের উপর থাকা মাহতিমের হাতের উপর হাত রাখে। মাহতিমের বুকের উপর মাথা হেলিয়ে বলে,
' একটা সুখবর, আরেকটা খারাপ খবর আছে। কোনটা শুনবে? '

মাহতিম প্রিয়ন্তির ঘাড়ের মধ্য ঠোঁটের স্পর্শ দিতে দিতে বলে,
' সুখবরটা আগে বলো। '
প্রিয়ন্তি পেটের উপর থাকা মাহতিমের হাত পেটের উপর আরেকটু চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে বলে,
' বাবা হচ্ছ, মিস্টার বেপরোয়া মাহতিম ইয়ান। '

মাহতিম চমকে যায়। ঝট করে সরে যায় প্রিয়ন্তির থেকে। হা করে চেয়ে থাকে প্রিয়ন্তির পেটের দিকে। প্রিয়ন্তি খিলখিল করে হেসে উঠে মাহতিমের এমন চেহারা দেখে। মাহতিম এখনো হা হয়ে আছে। একটু পর নিজেকে সামলে মাহতিম জিজ্ঞেস করে,
' ম-মজা করছ? নাকি সত্যি সত্যি? '
প্রিয়ন্তি কিছু বলে না। রুমের দিকে এগিয়ে যায়। আলমারি থেকে প্রেগন্যান্সি রিপোর্ট বের করে মাহতিমের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে,
' নিজেই দেখে নাও, সত্যি নাকি মিথ্যা। '

মাহতিম রিপোর্ট আগাগোড়া দেখে। প্রিয়ন্তি লক্ষ্য করে, মাহতিমের হাত কাপছে। বুকের উঠানামা বেড়ে গেছে তার। প্রিয়ন্তি মৃদু হাসে। মাহতিম রিপোর্ট পড়ে এবার যেন কথা বলাই বন্ধ করে ফেলে। প্রিয়ন্তির দিকে আনমনে চেয়ে থাকে। অতঃপর হঠাৎ করে দ্রুত এগিয়ে এসে প্রিয়ন্তিকে জড়িয়ে ধরে তার কাঁধে মুখ গুঁজে দেয়। প্রিয়ন্তি আচমকা আক্রমনে দু কদম পিছিয়ে যায়। পরপরই নিজেকে সামলে মাহতিমের পিঠের উপর হাত রাখে। হঠাৎ প্রিয়ন্তি অনুভব করে নিজে ঘাড়ে গরম জলের স্পর্শ। প্রিয়ন্তি বুঝতে পারে, অতি সুখে মাহতিম কাদছে। প্রিয়ন্তি হেসে উঠে। পাগল একটা! 


মাহতিম সরে আসে বেশ সময় পর। চোখের জল মুছে জিজ্ঞেস করে,
' ক মাস হল সে এসেছে? '
প্রিয়ন্তি আঙুল দিয়ে দেখায়, ' দুই মাস। '
মাহতিম ভেজা চোখে হেসে ফেলে। প্রিয়ন্তির কপালে চুমু দিয়ে প্রশান্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল, ' থ্যাংক ইউ, জান। থ্যাংক ইউ সো মাচ। খুব খুশি আমি। খুব বেশি খুশি আজকে আমি। '
প্রিয়ন্তি রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। পেছনে মাহতিম জড়িয়ে রেখেছে তাকে। দুজন বাইরের শীতল বাতাস উপভোগ করছে। মাহতিম একসময় বলল,
' সেদিন অনুরাগকে তোমাকে কেড়ে নেবার ভয় না দেখালে, হয়ত আমার ভেতর কখনোই তোমাকে নিজের করার জেদ চাপত না। তুমি সারাজীবন আমাকে এভাবেই অবহেলা করতে। আর আমি এভাবেই তোমার পিছু ঘুরঘুর করে বেড়াতাম। অন্যরকম হত তখন আমাদের জীবন, তাইনা? '

প্রিয়ন্তি মৃদু হাসে। মাহতিমের বুকে উপর মাথা চেপে হেলায়। শান্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,
' আমার কপালে তুমি ছিলেই। তাই এত বাধা পেরিয়েও আজ আমরা একসঙ্গে। এটা হবারই ছিল। আমাদের ভাগ্যে এটাই লেখা ছিল। '
মাহতিম একসময় বলে,
' অনুরাগের খবর জানো? '
প্রিয়ন্তি দায়ছাড়া ভাবে উত্তর দেয়,
' না, আমার জানার কথা নাকি? '
মাহতিম টিপ্পনী কেটে বলল,
' যেভাবে আগে সারাক্ষণ অনুরাগ অনুরাগ করতে। এখন ও কোথায় জানো না? '

প্রিয়ন্তি রেগে যায়। মাহতিমের বুকের শার্ট খামচে ধরে হিড়হিড় করে বলে,
' মেরে ফেলব কিন্তু। কোনো খোঁচা দিয়ে কথা বলবে না। ও আমার লাইফে কখনো ছিলোই না। আমার লাইফে একমাত্র সত্য, তুমি আর আমাদের অনাগত সন্তান। আর কিচ্ছু না। '
মাহতিম হো হো করে হেসে উঠে। প্রিয়ন্তির কপালে চুমু খেয়ে মিষ্টি হেসে বলে,
' জানি আমি। ভালোবাসি, খুব খুব খুব বেশি। '
প্রিয়ন্তি মাহতিমের বুকে মাথা রেখে মৃদু স্বরে বলে,
' আমিও। '
' কি আমিও? '

' ভালোবাসি। তোমার মত নয়। তবে একটু আকটু। '
' একটু আকটু? '
প্রিয়ন্তি লজ্জা পেয়ে যায়। মাহতিমের বুকের মধ্যে মুখ ঘষে বলে,
' একটু আকটু থেকেও বেশি, অনেক বেশি। '


মাহতিম হেসে উঠে। আরো গভীর ভাবে নিজের সঙ্গে মিশিয়ে নেয় তার প্রিয়ন্তিকাকে। তার প্রিয়ন্তিকা, শখের প্রিয়ন্তিকা, হাজার বছরের সাধনার প্রিয়ন্তিকা, অনেক কষ্টের ফল প্রিয়ন্তিকা, তার একমাত্র দোয়া প্রিয়ন্তিকা।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।

...সমাপ্ত...


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আভা ইসলাম রাত্রি সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে তা অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হবে। তবে তিনি তার ফেসবুক পেজে নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, “গল্প লেখে সে, কলমের কালিতে কল্পনার চিত্র আঁকিবুকি করা তার নেশা! অক্ষরের ভাজে লুকায়িত এক কল্পপ্রেয়সী!”

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন