উপন্যাস       :        প্রেমের জোয়ারে ভাসলো দুকূল
লেখিকা        :         আরশি আয়াত
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ১২ই ডিসেম্বর, ২০২২ ইং

লেখিকা আরশি আয়াতের “প্রেমের জোয়ারে ভাসলো দুকূল” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশ করা হলো। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের ১২ই ডিসেম্বর থেকে লেখা শুরু করেছেন।
প্রেমের জোয়ারে ভাসলো দুকূল || আরশি আয়াত - Bangla Golpo - Kobiyal
প্রেমের জোয়ারে ভাসলো দুকূল || আরশি আয়াত

১৫ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

প্রেমের জোয়ারে ভাসলো দুকূল || আরশি আয়াত (পর্ব - ১৬)

নিরিবিলি পার্কের একধারে হাতে হাত রেখে ঝিনুক আর রেহান হাঁটছে।ঝিনুক আজ ভিষণ খুশি।এভাবে নিজের স্বপ্নের পুরুষ'টি ধরা দেবে এটা সে কল্পনাও করে নি কখনো।খুশিতে বুকের ভেতর উথাল-পাতাল ঢেউ খেলছে।এমন দিনের স্বপ্ন দেখছে আরও বহু বছর আগে থেকে।এতদিন রেহান ওকে পাত্তা না দিলেও আজ যে নিজে থেকে ধরা দেবে সেটা ওর ভাবনায়ও ছিলো না।ওরা পার্কের খালি একটা বেঞ্চে গিয়ে বসলো।রেহান পাখির হাত নিজের হাতে শক্ত করে ধরে বলল,'তোকে কিছু বলার আছে আমার।'

ঝিনুক আগ্রহী শ্রোতা হয়ে বলল,'বলো না!'
'আমি একটা বিপদে পড়েছি।মন ভালো নেই একদম।'
ঝিনুক উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলল,'কি হয়েছে তোমার?'

'আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।আমি যদি ম/রে যাই তখন তো আর তোকে বলতে পারবো না তোকে কত ভালোবাসি।তাই আজই বলে দিলাম।'
রেহানের এমন করুণ মিথ্যা শুনে ঝিনুক চিন্তায় অস্থির হয়ে উঠলো।ব্যাকুল কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,'কি হয়েছে বলো আমাকে।আমি চিন্তায় শেষ হয়ে যাচ্ছি।'

'আমার থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা ঠকিয়ে নিয়েছে ব্যাবসার কথা বলে।এখন টাকার কথা বললে দেয় না।উল্টো মে/রে ফেলার হুমকি দেয়।'
'কি বলো!তুমি পুলিশকে জানাও নি কেন?'


'জানালে ও আমাকে শেষ করে দেবে।আমার পরিবারকে শেষ করে দেবে।অনেক খারাপ ও।'
'এখন কি করবে?'
'একটা বুদ্ধি আছে বাঁচার।কিন্তু তোর সাহায্য লাগবে।'

'আমি জীবন দিয়ে হলেও সাহায্য করবো তোমাকে।তুমি শুধু বলো কি করতে হবে আমাকে।'
'তুই ওর বাসায় কাজের বুয়া হয়ে যাবি।ওর সব তথ্য আমাকে দিবি।ওই বাসায় ওর সাথে একটা মেয়েও থাকে।ও ওকে জোর করে আঁটকে রেখেছে নিজের বউ বানিয়ে।ওর সাথে কেমন অত্যাচার করে সেটা বলবি আমাকে।তারপর একদিন আমি ওকে পুলিশ নিয়ে গিয়ে হাতে নাতে ধরবো।তুই শুধু একমাস এগুলো করবি আমার জন্য।পারবি না?'
ঝিনুক মাথা নেড়ে বলল,'হ্যাঁ,আমি তোমার জন্য সব পারবো।'

রেহানের মিথ্যা ফাঁসানোর গল্প শুনে ঝিনুক গলে গেলো মোমের মত।একটু যাচাই করেও দেখলো এতে সত্যি কতটুকু।আর রেহান এটাই চেয়েছিলো।
অফিস থেকে ফেরার পথে দু'টো গোলাপ আর দু'টো চকলেট নিয়ে শয়ন বাসায় ফিরলো।আজ ফিরতে দেরি হয়ে গেছে অফিস থেকে অভার টাইম করার ফলে তবুও যেন ক্লান্ত লাগছে না।শুধু আনমনেই বাসায় যাবার জন্য তাড়া অনুভব করছিলো।এটা শুধু আজ না বেশ কিছুদিন ধরেই হচ্ছে।নিজের মধ্যে এমন ছোটো-খাটো পরিবর্তন যেন ওর চোখে পড়েও পড়ছে না।

বাসায় ফিরতেই পাখি বলল,'আজ এত দেরি হলো যে?'
শয়ন একদম বাধ্যগত স্বামীর মত কৈফিয়তের সুরে বলল,'আজ হাফ বেলা নেওয়ায় কাজ জমে গিয়েছিলো।শেষ করে আসতেই এত দেরি হলো।'
একটু থেমে হাত বাড়িয়ে ফুল আর চকলেট গুলো দিয়ে বলল,'ফুলগুলো ঘ্রাণ সুন্দর।খোঁপায় গুঁজে রাখো।আমি সেখান থেকে ঘ্রাণ নেবো।'


এমন কথায় পাখি যেন চমকে উঠলো কিছু বলার আগেই শয়ন মুচকি হেসে নিজের ঘরে গেলো পোশাক পাল্টাতে।পাখি কিছুই বুঝলো না।দিনদিন লোকটা কেমন যেনো পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে।একটু একটু করে যেন কাছে আসছে।এভাবেই যদি কোনোদিন গভীর ভাবে ছুঁয়ে দেয় তখন কি করবে পাখি?লজ্জা রাঙা মুখটা কোথায় লুকোবে?যে লজ্জা দিবে তার বুকে?
স্বামীর কথা মত পাখি খোঁপায় গুঁজে রাখলে গোলাপ গুলো।ফ্রেশ হয়ে খেতে এসে শয়ন পাখির খোঁপায় ফুল দেখে স্মিত হাসলো।দু'জনে একসাথে খাওয়া শেষ করে কিছুক্ষণ গল্প করলো।এরপর ঘুমাতে গেল যার যার মত।আজকের পরীক্ষা ভালোই হয়েছে।এখন চান্স পেলেই হয়।এরপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা।কিন্তু রাজশাহী কিভাবে যাবে?এসব শুয়ে শুয়ে ভাবছিলো পাখি।কাল কথা বলতে হবে শয়নের সাথে এই ব্যাপারে।

সকালে শয়ন অফিসে যাবে আর পাখি ওকে বিদায় দেবে এমন সময়ে এক মেয়ে এসে দাঁড়িয়েছে ওদের ফ্ল্যাটের সামনে।দেখতে কাজের লোকের মতই মনে হচ্ছে তবুও চেহারায় একধরনের আভিজাত্য দেখা যাচ্ছে।মেয়ে গ্রাম্য ভাষায় টেনে টেনে বলল,'আফা,আফা গো!মুই অসহায় একখান মাতারি মোরে আমনে গো বাইত্তে কামে লন।নাইলে মুই ম/ইরা যামু গো আফা।'
মেয়েটা এমন করুণ গলা শুনে শয়নের মায়া হলো।এমনিতেই সারাদিন পাখি একা থাকে।ওর ও একটা সঙ্গী হয়ে যাবে।শয়ন পাখির দিকে তাকিয়ে বলল,'কি বলো রাখবে?'
'না কাজ তো অল্পই।আমিই করতে পারবো।'

'তবুও তোমার এখন পরীক্ষা চলছে।এখন সময় নষ্ট না করাই ভালো।'
পাখি আর অমত করলো না।শয়ন মেয়েটিকে বলল,'আচ্ছা আপনি আপার সাথে কথা বলেন।আমি যাচ্ছি।'

মেয়েটি মাথা হেলিয়ে সায় দিলো।শয়ন পাখির দিকে একবার তাকিয়ে একটু হেসে ইশারায় বোঝালো ও কল করবে আর সাবধানে থাকতে।পাখিও ইশারায় বোঝালো 'আপনিও সাবধানে থাকবেন আমার প্রাণের স্বামী।'

ঝিনুকের এদের দু'জনকে দেখে মনেই হলো না।এরা কোনো খারাপ কাজ করতে পারে বরংচ মনে হচ্ছে এদের থেকে সুখী দম্পতি আর নেই।তখনই মনে পড়লো অমানুষগুলো দেখতে মানুষের মত হয়।হতে পারে এই ভালোমানুষির পেছনেই অমানুষ লুকিয়ে আছে।ওর মিশন এখন সেটাই সবার সামনে আনা আর নিজের ভালোনাসার মানুষকে বাঁচানো।অথচ বোকা ঝিনুক বুঝলো না কে মানুষ আর কে অমানুষ!


আসলেই অমানুষগুলো দেখতে হুবহু মানুষের মতই।তাই চেনা যায় না আর আমরা তাদের মানুষ ভেবে ভূল করে ফেলি।সেই ভূলের মাশূল সারাজীবন দিতে হয়।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

১৭ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:

তরুণ লেখিকা আরশি আয়াত সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে অবশ্যই তা কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হইবে।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন