উপন্যাস       :         কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা        :         আনআমতা হাসান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল    :         
রচনাকাল     :         ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং

লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান Bangla Golpo - Kobiyal - Romantic Golpo
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান

৬৭ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ৬৮)

নিচে থেকে এসে কাব্য নাস্তার টেবিলে না বসে নিজের রুমে চলে যায়। কাব্য বাসায় আসার কিছুক্ষণ পর কিরণ, মিষ্টার আতিক, মিসেস কবিতা আর কুহু বাসায় আসে। ড্রায়নিং টেবিলে কাব্যকে না দেখে মিসেস কবিতা কুহুকে বললো
- কুহু, কাব্যকে ডেকে নিয়ে আয় তো মা। ছেলেটা না খেয়ে আবার কোথায় গেল।
- আচ্ছা, মা।

কথাটা বলেই কুহু নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায়। রুমের ঢুকে আশেপাশে চোখ ঘুরতে কাব্যকে খোঁজে। কিন্তু কাব্য রুমের কোথাও নেই। যদি ওয়াসরুমে থেমে থাকে তাই, ওয়াসরুমের দরজায় করা নাড়ে। ভিতরে থেমে কোন শব্দ না আশায় ওয়াসরুমের লক ঘুরায়। ওয়াসরুমের দরজা খুলে যায়। ভিতরে কেউ নেই। ওয়াসরুমেও কাব্যকে না পেয়ে বারান্দায় দিকে পা বাড়ায়। বারান্দায় আসতেই দেখে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে কাব্য। কুহু কাব্যের কাছে গিয়ে শান্ত কন্ঠে বললো
- সরি। তখন আমি আপনার নিষেধ শুনিনি। আসলে আপনাকে কিছু বললে আমার সয্য হয় ন,,,,,

কুহু পুরো কথাটা শেষ করার আগেই কাব্য কুহুকে জড়িয়ে ধরে। খুব ক্ষীণ কন্ঠে বললো
- ভালোবাসি কুহুরানী।


সাধারণত নিশা ফজরের নামাজ পড়েই ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বের হয়ে রান্নাঘরে চলে যায়। রিশান অফিসে যাওয়ার আগে পর্যন্ত আর রুমে আসে না সে। রিশান বাসা থেকে বের হয়ে চলে যাওয়ার পর, রুমে আসে।  আবার রিশান সন্ধ্যায় বাসায় আসার পর থেকেও সে আর রুমে যায় না। একবার রাতের খাবার খেয়ে রুমে ঢুকে, ঘুমিয়ে পড়ে। বিষয়টা মিসেস শান্তি আর মিসেস শিখা খেয়াল করলেও, এই বিষয়ে তারা রিশান বা নিশাকে কিছু বলে না। কারন তারা জানে রিশান আর নিশা একে অপরকে ভালোবাসে। হয়তো কোন কারণে তাদের মধ্যে মন মালিন্য হয়েছে। কিছু সময় পর নিজেরাই সব ঠিক করে নিবে। আজকে নিশার শরীরটা ভালো না। কিছুদিন ধরেই শরীরটা তার বেশ খারাপ লাগছে। সে ভাবে হয়তো মনের কষ্টের জন্যই শরীর দূর্বল লাগছে। তাই আর এটা নিয়ে মাথা ঘামায় না সে। কিন্তু আজকে যেন শরীরটা তার একটু বেশিই খারাপ। সকালে ফজরের আজান বিছানায় শুয়ে শুয়ে শুনে আবার ঘুমিয়ে পড়েছিল। ঘুম থেকে সজাগ হয়ে চোখ মেলে ঘড়ির দিকে তাকাতেই দেখে সকাল সারে আট'টা বেজে গিয়েছে। তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে টুলে মাথার চুল আঁচড়াতে বসেছে সে। তখনই রুমের দরজা খুলে রুমের ভিতরে ঢুকে রিশান। স্বাস্থ্য সচেতন রিশান প্রতিদিন ফজরের নামাজের পর সকালে হাটতে বের হয়। আজকেও বের হয়েছে। আর এখন এসেছে। সেদিকে তাকায় না নিশা। একমনে বেনি করতে থাকে সে। রিশান আয়নার সামনে বসে থাকা নিশার কাছে যায়। হাতে থাকা কাঠগোলাপ ফুলটা নিশার বেনি করা চুলে গেঁথে দিয়ে, মিষ্টি হেসে বললো
- শুভ্র সকাল মায়াবিনী।


প্রতিদিনই সে তার মায়াবিনীর জন্য, একটা করে তার প্রিয় কাঠগোলাপ ফুল নিয়ে আসে। কিন্তু কোনদিনই বাসায় এসে নিশাকে রুমে পায়না। তাই ফুলটা ড্রেসিং টেবিলের উপর খুব যত্ন করে রেখে দেয়। প্রতিদিন সন্ধ্যায় বাসায় এসে দেখে ফুলটা নেই। সে ভাবে হয়ত তার মায়াবিনী ফুলটা নিয়ে কোথাও যত্ন করে রেখে দিয়েছে। আজকে রুমে ঢুকে তার মায়াবিনীকে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে চুলে বেনি করতে দেখে, খুব শখ করে তাকে কাঠগোলাপ ফুলটা পরিয়ে দেয় সে। নিশা কিছু সময় স্থীর হয়ে আয়নায় নিজেকে আর রিশানকে দেখতে থাকে, তারপর এক ঝটকায় মাথায় লাগানো কাঠগোলাপ ফুলটা খুলে নিচে ফেলে দেয়। ঘুরে রিশানের দিকে তাকিয়ে চিল্লিয়ে বললো
- ছোবেন না আমার। একদম ছোবেন না। না আপনি আর না এই কাঠগোলাপ। এই কাঠগোলাপ আমার কাল রাতের সাক্ষী। এই কাঠগোলাপ দেখলেই আমার সেই রাতের কথা মনে পড়ে যায়। আমি মনে করতে চাই না, সেই রাতের কথা। মনে করতে চাই না, আমি। আমি ঘৃণা করি। আমি আপনাকে ঘৃণা করি। আমি এই কাঠগোলাপ ফুলকে ঘৃণা করি। আমি ,,,,,

আর বলতে পারে না নিশা। মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যায় সে। রিশান তাড়াহুড়ো করে নিজের বাহুদ্বয়ে আবদ্ধ করে নেয় তার মায়াবিনী কে। গালে হাত দিয়ে হালকা চাপড় মেরে ডাকে
- নিশা, এই নিশা। চোখ খোল, নিশা।
কিন্তু নিশার কোন সারা শব্দ নেই। রিশান অস্থির কন্ঠে তার মাকে ডাকে
- মা, মা।


এদিকে,
রান্নাঘরে গল্প করছে আর রান্না করছে দুই বান্ধবী মিসেস শান্তি আর মিসেস শিখা। বিয়ের দু'দিন পরই দীপক, তোয়া আর রিশান মিসেস শান্তির বাড়িতে যায়। শাশুড়িকে নিজেদের বাড়িতে নিয়ে আসার জন্য। মিসেস শিখাও বান্ধবীকে ফোন করে বলেছে রিশানের সাথে তাদের বাসায় আসার জন্য। সেও যেত, কিন্তু বাসায় নিশা একা একা থাকবে ভেবে সে আর যায়নি। শুধু রিশানকেই পাঠিয়েছে। কিন্তু মিসেস শান্তিকে তোয়া জোর করে তাদের বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে এক সপ্তাহের মতো থেকে তারপর এই বাসায় আসেন তিনি। এখানে থাকছে আজ প্রায় দশ-বারোদিন। মানুষ বলে না, "কষ্টের পরে সুখ আসে" কথাটার জলজ্যান্ত প্রমাণই যেন তিনি পেলেন। যেমন ভাল তার দুই মেয়ের জামাই, তেমন ভালো তাদের পরিবার। কোন অভাব অনটন নেই। শত ব্যস্ততার মাঝেও দুই জামাই প্রতিদিন তার খোঁজ খবর নেয়। খুশিতে তার চোখে জল চিকচিক করে উঠে। তখনই তার কানে আসে রিশানের ডাক। রিশানের এমন ডাক শুনে তার পাশে থাকা মিসেস শিখার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল
- রিশান ডাকছে?

মিসেস শিখাও চিন্তিত মনে বললো
- হ্যাঁ। ছেলেটা এমন করে ডাকছে কেন?
বলে আর এক মুহুর্তেও বসে থাকে না সে। দ্রুত হেটে চলে যায় রিশানের রুমে। আর তার পিছু পিছু মিসেস শান্তিও পা বাড়ায় রিশানের রুমের দিকে।


ফর্সা গায়ে দবদবে সাদা রঙের শার্ট আর কালো রঙের প্যান্ট পরে, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে গলায় কালো রঙের টাই বাঁধছে অভ্র। তখনি রুমে ঢুকে তূবা। রুমে ঢুকে অভ্রকে টাই বাঁধতে দেখে, কপালে ভাঁজ ফেলে সে। অভ্রের পাশে গিয়ে গাল ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে সে। তূবাকে পাশে গাল ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অভ্র তূবার দিকে তাকিয়ে কপাল কুঁচকে প্রশ্ন করল
- কি হয়েছে তোর? এভাবে গাল ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?
তূবা আগের মতো মুখটা ফুলিয়ে রেখেই অভিমানী কন্ঠে বললো
- এটা কিন্তু কথা ছিল না।


অভ্র আগের মতোই কপাল কুঁচকে পুনরায় জিজ্ঞেস করল
- কি কথা ছিল না?
- তুমি এখনো নিজে নিজে টাই পরছো কেন? আমি তোমাকে বলেছিলাম না, "মা যেমন বাবাকে টাই পরিয়ে দেয়, আমিও তেমন তোমাকে টাই পরিয়ে দিবো।" কিন্তু তুমি তো নিজে নিজে পরে ফেলেছ।

- ওহ, এই কথা। 
তূবা রাগী চোখে তাকিয়ে বললো
- এই কথা মানে!

- সরি, ভুল হয়ে গিয়েছে। 
কথাটা বলে অভ্র, গলার টাই'টা খুলে তূবার দিকে এগিয়ে দিয়ে পুনরায় বললো
- এই নে ধর, পরিয়ে দে।

কিন্তু তূবা ধরে না, রাগ দেখিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। অভ্র আবার বললো
- আরে বাবা সরি বললাম তো। 

তাও তূবা টাই'টা হাতে নিচ্ছে না দেখে, অভ্র বাম হাতে নিজের বাম কান ধরে বললো
- এই দেখ কানে ধরেছি। আর কখনো নিজে নিজে টাই পরবো না। প্রয়োজনে টাই ছাড়াই বাহিরে যাবো।


 তাও নিজে নিজে টাই পরবো না, প্রমিজ।
তূবা এবার মিষ্টি হেসে অভ্রের হাত থেকে টাই'টা নেয়।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

৬৯ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে। 

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন