উপন্যাস        :         ভিলেন
লেখিকা        :          মনা হোসাইন
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         

লেখিকা মনা হোসাইনের “ভিলেন” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০১৯ সালে লিখেছেন।
ভিলেন || মনা হোসাইন Bangla Golpo - Kobiyal
ভিলেন || মনা হোসাইন

৫০ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

ভিলেন || মনা হোসাইন (পর্ব - ৫১)

আকাশঃ সবসময় তো আমাকে প্যারা দিস এবার দেখ নিজের ঘাড়ে পড়লে কেমন লাগে বলে সোফায় বসে পড়ল।হাত থেকে টপ টপ করে রক্ত পড়ছে।
মেঘলাঃ আমি...
আকাশঃ চুপচাপ বসে বসে দেখ..একটাও কথা বলবি না যদি বলিস বাইরে চলে যাব।
মেঘলাঃ শেষবারের মত মাফ করা যায় না...??
আকাশঃ না....


আকাশ চোখ বন্ধ করে সোফায় বসে গা এলিয়ে দিল হাত থেকে ফোঁটা ফোঁটা রক্ত পড়ছে মেঘলা বিছানায় বসে বসে দেখছে কাঁদছে...
কিছুক্ষন পর মেঘলাঃ আমি যে কাঁদছি দেখতে পাচ্ছিস না?
আকাশঃ না তবে ঘ্যানঘ্যান করছিস সেটা বুঝতে পাচ্ছি।আচ্ছা থাক আমি যাই।
মেঘলাঃ যাস না প্লিজ আর কথা বলব না।
আকাশ উত্তর দিল না।
মেঘলাঃ ভাইয়া আমার কথা শুনবে না নাবিল ভাই কে বলতে হবে ওই একমাত্র যে এই ত্যাড়াএ রাগ ভাংগাতে পারবে মেঘলা নাবিলকে এসমেস করে দিল।কিন্তু এসমেসের আগেই নাবিল চলে আসল  কারন মিলি নাবিলকে আগেই সব বলে দিয়েছিল।
নাবিল এসে শান্তভাবে আকাশের পাশে বসল।
মেঘলাঃ এটাও ত দেখি কম ত্যাড়া না কই তাড়াতাড়ি হাতটা বেঁধে দিবে না তা না করে এত শান্তভাবে বসে আছে যেন কিছুই হয় নি( মনে মনে)
আকাশ চোখ খুলে বলল.. খবর টা কে দিয়েছে?মেঘলা?
নাবিলঃনা মিলি...
আকাশঃ তাহলে ঠিক আছে নাহলে আজ ওর খবর ছিল। মেঘলার দিকে তাকিয়ে বলল আকাশ।

নাবিলঃ সেটা নাহয় ঠিক আছে কিন্তু তুই যে একটা কাপুরষ এটা কিন্তু আমার জানা ছিল না আকাশ।
আকাশঃ মানে কি..??
নাবিলঃ একটা মেয়ে তোকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরাচ্ছে আর তুইও ঘুরছিস...??
আকাশঃ বুঝলাম না
নাবিলঃ এই যে প্রেমিকার জন্য রক্ত ঝরাচ্ছিস...
আকাশঃ মোটেও না আমি কারো জন্য কিছু করছি না রাগ কমানোর চেষ্টা করছি ও আমার সাথে যা যা করেছে সেসব মনে পড়ে গেল তাই রাগ উঠে গেছে।
নাবিলঃ হয়েছে বুঝেছি অনেক করেছিস দেখি হাত দে বলেই হাতে বেন্ডেজ করে দিল আকাশ ও বাঁধা দিল না।
বেন্ডেজ করা শেষ আকাশ আর নাবিল বসে আছে হটাৎই আকাশের উপড় একটা বালিশ এসে পড়ল। আকাশ যেই সেদিকে তাকাল মেঘলার রাগী মুখ টা দেখতে পেল ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে...
আকাশঃ আবার কি হল..??

মেঘলাঃ এতক্ষন এই বেন্ডেজের অপেক্ষাতেই ছিলাম এবার আমি বলব তুই শুনবি হারামজাদা আমাকে এত কথা শুনানোর সাহস হয় কি করে তোর।
আকাশ আর নাবিল ২ জনেই অবাক হল।
আকাশঃসাহস দেখে অবাক না হয়ে পারছি না..
মেঘলা আকাশের দিকে আবার বালিশ ছুড়ে দিয়ে বলল,সাহসের দেখেছিস এবার দেখবি।দাঁড়া সব উত্তর দিচ্ছি কি জানি বললি আমি নাকি তোকে কষ্ট দিয়েছি এই কিভাবে দিয়েছি রে..?? আমি তো ছোট বেলা থেকেই তোর পিছনে ছুটতাম কতবার প্রপোজ করেছি তুই একটি বার মুখ ফুটে বলেছিস তুই আমায় ভালবাসিস..?? সবসময় এড়িয়ে গিয়েছিস আমি যদি তোর কাছে যেতে চেয়েছি তুই সেখান থেকে চলে গেছিস।তখন কি আমার খারাপ লাগে নি?আমি তোকে কাছে পাওয়ার জন্যেই এত এত প্রেম করতাম যাতে তুই রাগে আমার কাছে আসিস তোর কি মনে হয় আমি জানতাম না যে আমার ব্রেকাপ কেন হত।যার সাথেই প্রেম করতাম কিছুদিন যেতে না যেতেই সবাই আমার সাথে ব্রেকাপ করত আর সেটা যে তুই করাতি আমি সবটাই জানতাম অস্বীকার করতে পারবি তুই এই প্রেম গুলির জন্যেই আমার কাছে আসিস নি?
বাকি রইল সেদিন ৬ তলা থেকে লাফ দেয়ার ব্যাপার টা সেটাও তোর জন্যই করেছিলাম আমি সেদিন ওখানে মরার জন্য যাই নি গিয়েছিলাম তোকে ইমোশনালি ব্লেকমেইল করার জন্য বুঝেছিস? 
তুই আরো কি কি যেন বললি আমি নিজের ক্ষতি করে তোকে প্যারা দেই। হ্যা আমি দেই গর্ব করে বলতে পারব আমি তোকে প্যারা দেই কিন্তু তুই কি দেখাতে পারবি এমন একটা মেয়ে যে তোর জন্য মরে যেতেও ২ বার ভাবে না... এটাকে ভালবাসা বলে না?
আকাশ চুপ হয়ে গেল সাথে নাবিল ও...

মেঘলাঃ তুই আমাকে বললি আমি নাকি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারব না তোকে আমি তোকে সুখ দেই নি এখন আমি তোকে প্রশ্ন করছি তুই বুকে হাত দিয়ে বলতো তুই আমাকে কখনো সুখ দিয়েছিস..?? রাগ মেজাজ ছাড়া কখনো কখনো বলেছিস আমি তোকে ভালবাসি কখনো এক ঝাঁক গোলাপ নিয়ে সামনে দাঁড়িয়েছিস অথবা কখনো বলেছিস চল মেঘলা আজ তোকে নিয়ে লং ড্রাইভে যাব...তুই সেসব কিছুই করিস নি আমারো ত ইচ্ছা করত আমার বয়ফ্রেন্ড আর ৫ জন বয়ফ্রেন্ড এর মত আমাকে ভালবাসার কথা বলুক। জানি তুই আমাকে ভালবাসতি আর ৫ জনের চেয়ে বেশিই বাসতি কিন্তু কোনদিন কারো সামনে বলতে পারিনি তুই আমার বয়ফ্রেন্ড কারন তুই আমাকে সেই স্বীকৃতি দিস নি। ভিখারির মত তোর পিছন পিছন ছুটেছি কত কত অপমান করেছিস তবুও তোর কাছেই ছুটে গিয়েছি এগুলি কষ্ট না...?? কি রে এখন চুপ কেন জবাব দে...
আকাশ কি বলবে বুঝতে পারছে না...!!!
আকাশঃ মেঘলা আসলে তুই এত ছোট ছিলি যে....
আকাশ কথা শেষ করার আগেই বলে উঠল।
মেঘলাঃ তোর আমাকে প্রেমিকা হিসেবে পরিচয় দিতে লজ্জা করত এই তো... ঠিক আছে আর পরিচয় দিতেও হবে না। তুই আমার কাছ থেকে মুক্তি চাচ্ছিলি না..??যা দিয়ে দিলাম  আমি আজকেই এখান থাকে চলে যাব। যতই কষ্ট আমি আর কখনো এখানে ফিরব না।আমাকে নিয়ে তোদের সবার তো এত সমস্যা আজ সব সমস্যা মিটিয়ে দিব বলেই মেঘলা বিছানা থেকে নেমে গেল। কাতরাতে কাতরাতে গিয়ে ব্যাগ নিল।
নাবিল গিয়ে মেঘলাকে টেনে বিছানায় বসিয়ে দিল।আকাশ ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে।
নাবিলঃ কি করছিস মেঘলা পা থেকে রক্ত পড়ছে তো।
মেঘলাঃ পড়ুক অনেক বলেছে ও আমিই অপরাধী ত শাস্তিও আমিই পাব...
নাবিলঃ দেখ মেঘলা আকাশের জায়গায় আকাশ ঠিক আবার তোর জায়গায় তুই ঠিক তোরা ২ জনেই সব কিছু নিজের ভিতরে চেপে রেখেছিলি তুই ও আকাশ কে মুখ ফোটে বলিস নি তুই কি চাস আর আকাশো নিজের কষ্ট গুলি নিজের মাঝে চেপে রেখেছিল তোকে বলেনি তাই এমন টা হয়েছে এতে কারোরেই দোষ নেই। আকাশ তোকে নিজের মত করে ভালবেসে গেছে তাই তুই বুঝতে পারিস নি দেড়িতে হলেও ২ জন ২ জনের অনুভুতিগুলি প্রকাশ করেছিস এখন সব মিটে যাবে।
আকাশ চুপ করে ছিল নাবিল যেই বলল সব মিটে যাবে তখনী আকাশ এগিয়ে এসে বলল কিছুই মিটবে না এই বলেই আকাশ মেঘলাকে কোলে তোলে নিল।
নাবিলঃ কি করছিস আকাশ...??

আকাশঃ ওকে দিয়ে আসব ও চলে যেতে চায় না..?? তো যাক চল মেঘলা তোকে রেখে আসি বলেই আকাশ মেঘলাকে নিয়ে হাঁটতে লাগল।
নাবিলঃ উফফ আমার হয়েছে যত জ্বালা এই আকাশের বাচ্চা দাঁড়া বলছি ওকে নিয়ে যাস না।
আকাশ নাবিলের কথায় কান দিল মেঘলাকে নিয়ে গাড়িতে বসাল তারপর ড্রাইভ করতে শুরু করল।
মেঘলাঃ এটা কি হল আমি তো এমনি বলেছিলাম যাতে ও আমাকে যেতে না দেয় এখন তো নিজেই দিয়ে আসতে যাচ্ছে এবার কি হবে আমি তো ওকে ছেড়ে যেতে চাই না কিছু একটা করতে হবে(মনে মনে)

মেঘলাঃ ভাইয়া তোর ত হাতে ব্যাথা গাড়ী চালাবি কি করে আজ থাক আমরা নাহয় কাল যাব কেমন
আকাশ উত্তর দিল না...
মেঘলাঃ আ আ আ আহ আমার পায়ে ব্যাথা করছে...
আকাশ ফিরেও তাকাল না।
মেঘলাঃ কি হচ্ছে টা কি ও তো আমার কথায় কানেই দিচ্ছে না এখন কি হবে ও যে একরুখা আমাকে ত এবার নিশ্চুই দিয়ে আসবে। 
বেশকিছুক্ষন যাওয়ার পর মেঘলার আর সহ্য হল না কেঁদে ফেলল।
আকাশ এবার  গাড়ী থামিয়ে মেঘলার দিকে তাকাল 
আকাশঃ সমস্যা কি নাক দিয়ে পানি পড়ছে কেন।
মেঘলাঃ এটা নাকের পানি না 😠😠
আমি কান্না করছি..
আকাশঃ ও আচ্ছা তাই বল কিন্তু কেন কান্নার কারন কি?
মেঘলাঃ আমি যাব না...
আকাশঃ একটু আগেই ত যেতে চাইলি এখন যাবি না কেন?
মেঘলাঃ আমি তো এটা এমনি বলেছিলাম।
আকাশঃ তুই যেভাবেই বল বলেছিস তো তাই না? যা চেয়েছিস তাই হবে।বলে আকাশ নেমে গেল তারপর  মেঘলার পায়ে বেন্ডেজটা ঠিক করে দিয়ে জুতা পরিয়ে দিল।
তারপর মেঘলার সীট টা বাকা করে দিয়ে বলল যেতে অনেক সময় লাগবে তুই ঘুমা।
মেঘলাঃভাইয়া....
আকাশঃ একটাও কথা বললে রাস্তায় নামিয়ে চলে যাব।
মেঘলা ভয় পেয়ে চোখ বন্ধ করে নিল।আকাশ এসে ড্রাইভ করতে লাগল।মেঘলা কিছুক্ষনের মধ্যেই ঘুমিয়ে গেল।




বেশ অনেক্ষন পর মেঘলার ঘুম ভাংগল। ঘুম থেকে মেঘলা অবাক হল। আকাশ তাকে এত বড় সারপ্রাইজ দিবে সে ভাবতেই পারে নি।
মেঘলাঃ আমরা তো আমার বাসায় যাচ্ছিলাম তাই না? তাহলে এখানে আসলাম কি করে?
আকাশঃ সারপ্রাইজ টা কেমন লাগল...??
মেঘলাঃ এসব সত্যি...?? আমি স্বপ্ন দেখছি না তো?
আকাশঃ না একদমি না সব সত্যি। এটা তোর পাওনা। মেঘলা তুই কখনো আমাকে নিজের মন মত করে কাছে পাস নি আজ আমি তোকে কথা দিলাম এবার থেকে তুই যেভাবে চাইবি আমি সেভাবেই চলব।
মেঘলাঃ আমিও তোর মন মত থাকার চেষ্টা করব আর পাগলামী করব না।
আকাশঃ পাগলামি করতে কোন বাঁধা নেই শুধু মাথা টা একটু কাজে লাগাস তাহলেই হবে।আর পড়াশুনা টা ভাল করে করিস যাতে মা তোকে তাড়াতাড়ি মেনে নেয়।আজ এখানে যা যা হল কাউকে বলিস না প্লিজ।
মেঘলাঃ কেন বলব না কেন তুই আমার জন্য এত কিছু করলি সেটা বলব না আমি ত খুব খুশি হয়েছি..??

আকাশঃ না বলবি না...কারন আমি তোকে খুশি করতেই এসব করেছি অন্য কাউকে না তাই অন্যকারোর জানার দরকার নেই।
মেঘলাঃ তুই খুব খারাপ...সব সময় এমন করিস কাউকে বলতে পারি না যে তুই আমাকে কত ভালবাসিস।সবকিছুই গোপন রাখিস এত কিসের যে আত্মসম্মান কে জানে বাবা স্মার্ট ছেলেরা কি প্রেম করে না নাকি?
আকাশঃ তোর বুঝার বয়স হয় নি তাই বুঝবি না।
মেঘলাঃ যা তোর সাথে কথা বলব না এমন ত্যাড়া ছেলে জীবনে দেখিনি।
আকাশঃ আচ্ছা চলে গেলাম তাহলে বলে চলে গেল।
মেঘলা মুখ ঘুরিয়ে বসে আছে তখন আকাশ একটা গোলাপ নিয়ে এসে মেঘলার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল এক ঝাঁক তো পেলাম আপাতত এই একটা গোলাপ কি আপনার রাগ ভাংগানোর জন্য যথেষ্ট হবে ম্যাডাম...??

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

৫২ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা মনা হোসাইনের মূল নাম গাজী পিংকি হোসেন। তিনি লেখালেখির ক্ষেত্রে ছদ্মনাম হিসেবে ‘মনা হোসাইন’ নামটি বেছে নিয়েছেন। বাংলাদেশের নেত্রকোনা জেলার বাসিন্দা এই লেখিকা অনলাইন ডিজিটাল মার্কেটার ও কন্টেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে কাজ করছেন।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন