উপন্যাস : ভিলেন
লেখিকা : মনা হোসাইন
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল :
লেখিকা মনা হোসাইনের “ভিলেন” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০১৯ সালে লিখেছেন।
![]() |
ভিলেন || মনা হোসাইন |
1111111111111111111111
০৬ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
ভিলেন || মনা হোসাইন (পর্ব - ০৭)
সকালে আকাশ ঘুম থেকে উঠেই মেঘলা সারাবাড়ি মাথায় করে ফেলেছে।
আকাশঃ নাহ এই মেয়েকে মানুষ করা কোনভাবেই সম্ভব না আবার কি শুরু করেছে কে জানে...
চেঁচামেচি শুনে আকাশ সেখানে গেল। গিয়ে দেখলো মেঘলা তার মার সাথে ঝগড়া করছে।
আকাশঃ কি হচ্ছে এসব? মেঘলা কি করছিস বড় দের মুখে মুখে কথা বলতে নেই জানিস না?ভদ্রতা শিখিস নি?
আকাশের মাঃ এই মেয়ে আর ভদ্রতা..??
আকাশঃ মা আমি বকা দিচ্ছি তো.. তুমি চুপ থাকো না
মেঘলাঃ আমি কি এমন করেছি? শুধু ঘরটা সাজাতে এসেছিলাম বড় মা কিছুতেই আমার মন মত করে সাজাতে দিচ্ছে না যাই করছি শুধু ভুল ধরছে আর সব উল্টাপাল্টা করে দিচ্ছে।
কথাটা শুনে আকাশের মন খারাপ হয়ে গেল...
আকাশঃ মা যে তোর কোনকিছুই পছন্দ করে না মেঘলা তোকে সেটা কি করে বলব (মনে মনে)
আকাশঃ মা তুমি ঘর গোছাচ্ছ কেন? তুমি আমার সাথে এসো তুমি আমাকে পায়েস বানিয়ে দিবে না?চলো আমরা ২ জনে একসাথে পায়েস বানাই।
আকাশের কথা শুনে আকাশের মা অনেক খুশি হল কারন আকাশ তার মার সাথে তেমন একটা মিশে না সে তার ছোট মার সাথেই সবসময় সব শেয়ার করে...তাই তিনি বেশ খুশি হয়ে বলল রাবিয়া কই গেলে দেখো দেখো আমার ছেলে আজ আমার হাতে খেতে চেয়েছে...
চল আকাশ আমি এক্ষুনি করে দিচ্ছি।
আকাশঃ হুম তুমি যাও আমি আসছি
আকাশের মা যাওয়ার পর আকাশ মেঘলার কাছে এসে বলল থাংকিউ বলবি না?
মেঘলা কিছু না বলে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়াল।
আকাশ আবার মেঘলার কাছে গিয়ে বলল,
রাগ করেছিস?
মেঘলা কথা না বলে মাথা নেড়ে নাবোধক সম্মতি দিয়ে সেখান থেকে চলে গেল।
আকাশঃ রাতের ওষুধ কাজে লেগেছে তাহলে...
কিন্তু আকাশ লক্ষ্য করল মেঘলা তার সাথে কোন কথাই বলছে না আকাশ অনেকবার চেষ্টা করেছে কিন্তু মেঘলা সবসময়েই এড়িয়ে গেছে।
আকাশ গিয়ে নাবিলের পাশে বসল,
নাবিলঃ কিছু বলবি...???
আকাশঃ মেঘলাকে একটু ডাকবি?
নাবিলঃ আরে তুই ডাক..আমাকে বলছিস কেন?
আকাশঃ আমি ডাকলে আসবে না তুই ডাক।
নাবিলঃ আচ্ছা ডাকছি...মেঘলা একটু শোন তো...
মেঘলা এসে বলল হ্যা বল...
নাবিলঃ বস গল্প করি...
মেঘলাঃ নারে আমার কাজ আছে...
নাবিলঃ তোর আবার কিসের কাজ
মেঘলাঃ পার্টিতে আমার ফ্রেন্ডদেরো আসতে বলেছি তো ওরা হয়ত এখনী আসবে আমি রেডি হব গিয়ে।
আকাশঃ একটু বস না...
মেঘলাঃ নারে ভাইয়া একদম সময় নেই বলে চলে গেল।
নাবিলঃ কি ব্যাপার আকাশ মেঘলা আজ এত ভদ্র কি করে হয়ে গেল তোকে কোন প্যারা দিচ্ছে না এমন তো কখনো হয় না রাগ করলে তো আরো বেশি প্যারা দিত।
আকাশঃ আমি ওর পাগলামিতেই অভ্যস্থ হয়ে গেছি তাই ওকে এমন চুপচাপ দেখে ভাল লাগছে নারে...
নাবিলঃ ছাড় মন খারাপ করিস না এমনি ঠিক হয়ে যাবে...
দেখতে দেখতে পার্টির সময় হয়ে গেল। আকাশের পার্টিতে ছেলেরাই বেশি নাবিল আকাশ ২ জনের বন্ধুরাই এসেছে।
আকাশ সব জায়গায় দেখল মেঘলা কোথাও নেই...খোঁজতে খোঁজতে দেখল মেঘলা এক কোণে বসে আছে।মেঘলা অন্যদিকে ঘুরে বসে ছিল।
আকাশ গিয়ে পিছন থেকে মেঘলার কাঁধে হাত রাখতেই মেঘলা চিৎকার করে উঠল।
আকাশঃ কি হল এত ভয় পাওয়ার কি আছে?আর সবাই কত মজা করছে তুই এখানে কেন?
মেঘলাঃ চারদিকে এত ছেলে তাই আর কি...
আকাশঃ তুই ছেলে দেখে ভয় পাচ্ছিস কিভাবে সম্ভব?
মেঘলাঃ জানি না আজ কেমন যেন অস্বস্তি হচ্ছে ভাল লাগছে না।বলে মেঘলা চলে গেল।
কিছুক্ষন পর আকাশ যখন কেক কাটতে গেল নাবিল,নেহা,মিলি সবাই আকাশের হাতে হাত রাখল কেক কাটার জন্য আকাশ লক্ষ্য করল মেঘলা হাত মিলায় নি।অথচ বরাবর ওর মাতামাতির জন্য অন্যরা কেউ সুযোগেই পেত না।
আকাশ নিজেই মেঘলার হাত ধরে বলল কেক কাটবি না?মেঘলা সাথে সাথে হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে বলল তোরা কাট না আমি তো আছিই...
আকাশঃ এত বড় ঝামেলা হয়ে গেল মেঘলা কি আমাকে ভয় পাচ্ছে? ওর আচারন বলছে ও রাগ করে নি বরং ভয় পাচ্ছে ও ত আমার সাথে সব শেয়ার করত কিন্তু এখন আমাকে মন খোলে কিছু বলতে পারছে না।এটা আমি কি করলাম?
আকাশ কেক কাটল মেঘলাকে খায়িয়েও দিল মেঘলাও দিল কিন্তু মেঘলার মধ্যে আগেই সেই চঞ্চলতাটা আর নেই।
আকাশ ভাবতে লাগল কি করে মেঘলার ভয় দূর করা যায়।কিছুক্ষন ভেবে বলল,
মেঘলা চল তোকে হোস্টেলে দিয়ে আসি।
মেঘলাঃ দিয়ে আসতে হবে না আমি একাই যেতে পারব।
আকাশঃ বেশি কথা বলবি না চল।।
মেঘলা আকাশের পিছু পিছু গেল।
আকাশঃ এখানে দাঁড়া আমি বাইক নিয়ে আসছি..
মেঘলাঃ ভাইয়া শোন না...
আকাশঃ হুম বল...
মেঘলাঃ আজ আমরা ট্যাক্সিতে যাই,
আকাশ কিছু বলল না। চুপচাপ গিয়ে বাইক নিয়ে এসে বলল উঠ।
মেঘলা বুঝল কিছু বলে লাভ নেই তাই উঠে বসল।
আকাশঃ এত দুরে বসেছিস কেন? ধরে বস...পড়ে যাবি তো
মেঘলাঃ আমি ঠিক আছি চল না...
আকাশঃ স্পীডে ড্রাইভ করলে ভয়ে এমনি জড়িয়ে ধরবে (মনে মনে)
যেমন ভাবনা তেমন কাজ আকাশ ফুল স্পীডে ড্রাইভ করতে লাগল।
আকাশঃ মেঘলা ধরে বস..
মেঘলাঃ একটু আস্তে চালা আমার ভয় লাগছে
আকাশঃ তোকে আমি ধরতে বল্লাম
আকাশ মেঘলার কোন সাড়া পেল না তাই পিছনে তাকল আর তাকিয়ে তার মাথা চক্কর দিয়ে উঠল কারন তার পিছনে মেঘলা নেই কিছুটা দূরে মানুষজনের একটা ভীড় দেখা যাচ্ছে। আকাশের বুঝতে বাকি রইল না যে মেঘলা পড়ে গেছে আকাশ তাড়াতাড়ি সেখানে ছুটে গেল।ভীড় ঠেলে ভিতরে গিয়ে দেখল মেঘলা কাঁদছে।
আকাশঃ বারবার বলেছিলাম ধরে বসতে।
মেঘলা কাঁদতে কাঁদতে বলল এতবার বল্লাম আমার ভয় লাগছে আস্তে চালা তুই শুনলি না।
আকাশঃ কোথায় লেগেছে দেখি।
মেঘলাঃ অনেক ব্যাথা করছে...
আকাশ মেঘলাকে কোলে নিয়ে নিল তারপর গাড়ি করে হাসপাতালে গেল।
এক্সে করে জানা গেল মেঘলার বাম হাত ভেঙে গেছে।
আকাশ একে তো মেঘলার কষ্ট সহ্য করতে পারে না আবার ব্যাথাটা পেলও তার জন্য তাই নিজের কাছে নিজেকে অপরাধী মনে হতে লাগল আকাশের।
আকাশঃ খুব ব্যাথা করছে তাই না?
মেঘলাঃ হুম...
আকাশঃ সরি রে সবটাই আমার জন্য হল...
মেঘলাঃ ছাড় তো এসব কোন ব্যাপার না কিন্তু আমি যে ব্যাথা পেয়েছি মাম্মাম কে বলিস না।বল্লেই আমাকে এখান থেকে নিয়ে চলে যাবে..
আকাশঃ না বললে তুই থাকবি কোথায় হাত ভেঙে গেছে তোর দেখাশুনা করতে হবে ত হোস্টেলে কি করে থাকবি?
মেঘলাঃ সেসব আমি যানি না কেউ যেন না জানতে পারে সেটা তোর দায়িত্ব প্লিজ...
আকাশঃ তোকে আমাদের বাসায় নিয়ে গেলেও তো ফুফি জেনে যাবে..
মেঘলাঃ তাহলে...
আকাশঃ আচ্ছা মন খারাপ করিস না আমি একটা ব্যবস্থা ঠিক করে নিব।
তুই কি একা একা থাকতে পারবি তাহলে আমি একটু বাসায় যেতাম
মেঘলাঃ আচ্ছা যা থাকতে পারব এখানে নার্স ডাক্তার সবাই তো আছে।
আকাশ একজন নার্সকে কিছু টাকা দিয়ে বলল মেঘলার খেয়াল রাখতে তারপর নিজের বাসায় গেল।আর নাবিলকে সব খুলে বলল।
নাবিলঃ তো এখন কি করবি?এটা ত সত্যি ফুফিমনি মেঘলার ব্যাপারে কোন ঝুঁকি নিবে না একমাত্র মেয়ে বলে কথা এই এক অযুহাতেই হয়ত মেঘলাকে নিয়ে চলে যাবে।
আকাশঃ হ্যা জানি তাই আমি ভাবছি এই কয়েকদিন মেঘলার দেখাশুনা আমিই করব কাউকে জানাব না।
।
।
।
পরদিন সকালে,
আকাশঃ বাবা আমাকে কিছু টাকা দাও...
আকাশের বাবাঃ তোমাকে তো প্রতিমাসে টাকা দেয়া হয়...
আকাশঃ আমার একটু বেশি টাকা দরকার আমি আজ ট্যুরে যাচ্ছি...
আকাশের বাবাঃ কিসের ট্যুর আগে ত বল নি...কোন ট্যুরে যেতে হবে না।
আকাশঃ তারমানে টাকা দিবে না তাই তো...??
আকাশের মাঃ তুমি কোথাও যাবে না...
আকাশঃ আমাকে যেতে হবেই..
আকাশের মাঃ কোথায় যাচ্ছো কার সাথে যাচ্ছো সব বল সবার নাম্বার দাও তারপর ভেবে দেখব যেতে দিব কিনা অন্যথায় টাকা বা গাড়ি কোনোটাই তুমি পাবে না।
আকাশঃ আমি কি ছোট বাচ্ছা নাকি যে এত কয়ফত দিতে হবে লাগবে না তোমাদের টাকা গাড়ি বলে আকাশ ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে পড়ল...
পিছন থেকে আকাশ কে কেউ ডাকল
এই নে টাকা আর এই হল চাবি...
কিন্তু নাবিল তর গাড়ি নিয়ে গেলে তুই চলবি কি করে?আমি ত এর মধ্যে ফিরব না ফিরতে অনেক দেড়ি হবে আর এই টাকা টা তোর ওয়ার্ল্ড কাপ দেখতে যাওয়ার জন্য জমানো তাই না?
নাবিলঃ তাতে কি...?? তোর জন্য এইটুকু পারব না? ছাড় তো এসব কথা দোয়া করি তোর ভালবাসার জয় হোক।আর দেড়ি করিস না বেরিয়ে পর সাবধানে থাকিস আর কিছু দরকার হলে আমাকে জানাস।
আকাশ নাবিলকে জড়িয়ে ধরিয়ে ধরে বিদায় নিল।
নাবিলঃ যাচ্ছিস তো ২ জন দেখিস আবার ৩ জন হয়ে ফিরিস না যেন...
আকাশঃ তুই না...
নাবিলঃ যা যা যা...
আকাশ মেঘলাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল,
অনেকটা যাওয়ার পর...
মেঘলাঃ আমরা কোথায় যাচ্ছিরে? এই রাস্তায় তো আমি কখনো আসি নি...
আকাশঃ গেলেই দেখতে পাবি...
দেখতে দেখতে তারা পৌছে গেল।
মেঘলাঃ এটা কার বাসা...??
আকাশঃ তুই যদি কাল জেদ না দেখিয়ে ধরে বসতি তাহলে আমার এই দশা হত না।
সারারাত ধরে বাসার সন্ধান করেছি পাই নি একটা ফ্রেন্ডের বাবার বাংলো দিল।
মেঘলাঃ তারমানে আমরা ২ জন একসাথে থাকব..??
আকাশঃ হুম...
মেঘলাঃ কি মজা তুই সারাদিন আমার সাথে থাকবি...
কাল তো আমাকে ভয় পাচ্ছিলি এখন ভয় করছে না?
মেঘলাঃ ছাড় ত কিসের ভয় জীবনে প্রথমবার এমন পরিস্থিতিতে পড়েছিলাম তাই একটু ঘাবড়ে গেছিলাম আর কি.
আকাশঃ মানে কি..??
মেঘলা কিছু না বলেই আকাশের গালে চুমু এঁকে দিল...
আকাশঃ কি হল এটা.
মেঘলাঃ দেখালাম শুধু তুই না আমিও পারি...
আকাশঃ কি সর্বনাশ লাজ লজ্জা কিছু নেই?
মেঘলা আকাশকে জড়িয়ে ধরে বলল আমি সত্যিই তোকে খুব পছন্দ করি...
আকাশঃ তোর কি আদো হাত ভেঙেছে নাকি ভাব নিয়েছিস বুঝলাম না তো এত লাফালাফি কি করে করছিস?
মেঘলা আকাশকে মুখ ভেংচি কেটে দিল।
আকাশঃ শুনুন ম্যাডাম আপনি সারাক্ষন বাসার ভিতরে থাকবেন আশে পাশের কেউ যেন না জানে এখানে ২ জন ছেলে মেয়ে থাকে...
মেঘলাঃ যে জায়গায় নিয়ে আসছিস আশে পাশে মানুষজন তো দূর একটা প্রানীও ত দেখতে পাচ্ছি না।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
৮ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা মনা হোসাইনের মূল নাম গাজী পিংকি হোসেন। তিনি লেখালেখির ক্ষেত্রে ছদ্মনাম হিসেবে ‘মনা হোসাইন’ নামটি বেছে নিয়েছেন। বাংলাদেশের নেত্রকোনা জেলার বাসিন্দা এই লেখিকা অনলাইন ডিজিটাল মার্কেটার ও কন্টেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে কাজ করছেন।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন