উপন্যাস : নয়নে লাগিল নেশা
লেখিকা : মৌসুমি আক্তার মৌ
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ২৫ ডিসেম্বর, ২০২২ ইং
লেখিকা মৌসুমি আক্তার মৌ'র “নয়নে লাগিল নেশা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি তার ফেসবুক পেজে ২০২২ সালের ২৫ ডিসেম্বর থেকে লেখা শুরু করেছেন। এই উপন্যাসে গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক।
![]() |
নয়নে লাগিল নেশা || মৌসুমি আক্তার মৌ |
নয়নে লাগিল নেশা || মৌসুমি আক্তার মৌ (পর্ব - ০১)
অসহ্য পেট ব্যথার কারণে কলেজ থেকে ছুটি নিয়েছে রজনী। কিছুক্ষণের মধ্যেই হয়তো তার পিরিয়ড শুরু হবে। প্রতিবার পিরিয়ড শুরুর খানিক আগে থেকেই মাত্রাতিরিক্ত ব্যথা শুরু হয় তার। এটা বুঝতে পেরেই সে কলেজ থেকে অগ্রিম ছুটি নিয়ে চলে এসেছে । কলেজ থেকে বের হওয়ার পর থেকেই সে লক্ষ করছে একটা ছেলে তার পিছু নিয়েছে। ছেলেটা তাকে কিছু বলছেও না আবার তার কাছেও আসছে না। রজনী থেমে গেলেই ছেলেটাও থেমে যাচ্ছে। রজনী পেছনে তাকালে ছেলেটা অন্যদিকে তাকাচ্ছে। রজনীর কাছে ভীষণ অবাক লাগছে– ছেলেটা এইভাবে তাকে ফলো করছে কেন? এরই মাঝে রাস্তায় একটা ইজিবাইক পেল। রজনী ইজি বাইকে উঠেই নিশ্চিন্ত হলো যে, ছেলেটা আর তার পিছু নিতে পারবে না। ইজি বাইক দশ মিনিট পরে গিয়ে থামল খেয়া ঘাটের কাছে। ইজি বাইক থেকে নেমে রজনী খেয়ায় উঠল। অবাক করা ব্যাপার অন্য আরেকটা নৌকায় সেই ছেলেটাও উঠেছে। রজনী কৌতুহলী হয়ে ছেলেটাকে দেখছে। এইভাবে তার পিছু নেওয়ার কারণ কী? খারাপ উদ্দেশ্য থাকলে তো নদীর ওপার থেকে উদ্দেশ্য সাকসেস করতে পারত। কিন্তু এখন তো তার নিজের গ্রামে প্রবেশ করবে। নিজ গ্রাম থেকে ছেলেটা কী বলবে? নৌকা পার হয়েই একটি দোকান। ছেলেটা দোকানে বসল আর রজনী ভ্যানের জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু ভ্যান নেই। দাঁড়িয়ে থেকে অধৈর্য হয়ে হাঁটা শুরু করল। তাদের গ্রাম থেকে কলেজে যেতে নদী পার হতে হয়। নদীর ওপারেই তাদের বিশাল শহর। রজনীদের গ্রামটাও অনেক বড়ো। বলা যায় চার গ্রামের সমান একটা গ্রাম। এক পাড়ার মানুষ অন্য পাড়ার মানুষদের ঠিকমতো চিনে না। বিশেষ করে– মেয়ে বা বাড়ির বউরা চিনে না। গ্রাম হলেও রাস্তাঘাট ভালো; ভ্যান এবং অটো চলাচল করে সারাক্ষণ। এক পাশ থেকে অন্য পাশে মানুষ যানবাহনেই যাতায়াত করে। রজনী খেয়াল করল– ছেলেটা এবার আর তার পিছু হাঁটছে না। নিশ্চিন্ত মনে এবার বাড়ির দিকে পা বাড়াল। রাস্তার পাশের সেই দোকানের ছাউনির নিচে দাঁড়িয়ে কেরাম খেলছে কয়েকজন ছেলে। রজনী সেখান থেকেই যাচ্ছিল। ফাঁকা রাস্তা আশেপাশে কাউকে না দেখে ছেলেগুলো খুব বাজে ভাবে টোন করা শুরু করল। একটা ছেলে বলে উঠল,
“মালডা ক্যাডারে?”
অন্য একটি ছেলে বলল, “উত্তর পাড়া থেইকা আসে। এইবার ফার্স্ট ইয়ারে ভর্তি হইছে মনে হয়।”
“আরে ভাই, এমন মাল তো দেহি নাই আগে।”
“হ ভাই, পুরাই আ*গুন। একদমই কচি।”
“লাগব নাকি?”
অন্য একটি ছেলে বলে উঠল,
“লাগলে ওস্তাদরে কও। বাড়ি থাইকা তুইলা আইনা দিব। ওস্তাদ এসব কাজে ভালাই পটু আছে।”
“লাগব মানে! এমন মাল হাতছাড়া করি কেমনে? একদম টলমলে; ভাবখানা দেইখা মনে হইতেছে– অহোনো মোড়ক খোলা হয় নাই।”
“হ ভাই, ওস্তাদরে আগের দিনই কইছিলাম এই মালের কথা।”
“ফোন লাগা তাইলে। ওস্তাদ এই মালডা আমার লাইগা তুইলা আইনা দিক।”
“তোর একার লাইগা ক্যান? সবাই মিলামিশা ভাগ কইরা নিই। মজা সবাই নিই।”
ছেলেগুলো পৈচাশিক হাসিতে গড়িয়ে পড়ল। কেউ বলছে– আমি আগে, কেউ বলছে– না আমি আগে। একের পর এক বিশ্রী কথা বলেই যাচ্ছে। রজনী একটা বারের জন্য পেছনে ফিরে তাকাল না।দোকানের সামনে থেকে আসার সময় শুধু একটা ছেলের মুখ নজরে পড়েছিল।বাকি ছেলেগুলোর মুখও দেখেনি; শুধু তাদের কথা শুনেছে। রজনী হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিতেই অন্য একটা ছেলে বলে উঠল, “আরে ভাই! দ্যাখ, দ্যাখ লাল রং করা পেছনে।”
আরেকজন বলল, 'আরে ওইডা রং না।”
সাথে সাথে রজনী তার জামার পেছনে তাকিয়ে দেখল। ইতোমধ্যেই তার পিরিয়ড শুরু হয়ে গিয়েছে। জামার পিছনে দাগ ভেসে উঠেছে। ছেলেগুলো বিশ্রীভাবে হেসে উঠল। ওদের হাসিতে রজনীর সমস্ত শরীর ঘৃণা আর ভ*য়ে থরথর করে কেঁপে উঠল। ভীষণ অপমানে লাগল। তার আত্মসম্মানে এমনভাবে আঘাত লাগল ভেতর থেকে বাঁধভাঙা কান্না উপচে এসে পড়ছে। একটা মেয়ের জীবনের সব থেকে আত্মসম্মানে লাগা কথাগুলো আজ সে শুনেছে। মেয়েরা কতটা আনসেফ তার নিজের দেশে! মেয়েদের ফাঁকা রাস্তায় পেলে ছেলেরা ভোগের বস্তু মনে করে এইভাবে উপহাস করে। রজনী বুঝতে পারল এই মুহূর্তে তার জীবনে সব থেকে বড়ো অঘটন ঘটতে চলেছে। আশেপাশেও কেউ নেই সাহায্য করার জন্য। মাথাটা ভনভন করে ঘুরছে। তার বাবা বারবার বলে দিয়েছিলেন– সে যেন এদিক দিয়ে একা আসা-যাওয়া না করে। এ পাড়ার ছেলেগুলো খুব একটা ভালো নয়। প্রয়োজনে সারাদিন দাঁড়িয়ে থাকবে তবুও যেন একা না আসে। বাবা তাহলে মিথ্যা বলেননি। ভ'য়ে রজনী আল্লাহকে ডাকছে আর মনে মনে দোয়া ইউনুস পড়ছে। এই মুহূর্তে কেউ যেন ফেরেশতার মতো আসে আর তাকে এই ছেলেগুলোর হাত থেকে রক্ষা করে। বুকের ভেতর কেমন হাতুড়ি দিয়ে বাড়ি দেওয়ার মতো হচ্ছে। পেছন থেকে ছেলেগুলোর বিশ্রী কথার পরিমাণ আরও বহুগুণ বেড়ে গেল।ভ*য়ে চোখ-মুখ শুকিয়ে এসেছে। এখনি মাথা ঘুরে পড়ে যাবে এমন একটা অবস্থা।
তৎক্ষনাৎ একটা বাইক তার সামনে এসে দাঁড়াল। রজনী সাথে সাথে কেঁপে উঠল। ভাবল– খারাপ ছেলেগুলো তার কাছে চলে এসেছে। এখন কী করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। যদি কোনো অঘটন ঘটে তাহলে কী হবে! চোখ দু'টো পানিতে টলমল করে উঠল। আর মন শক্ত করল আজ যদি তার কোনো স'র্ব'না'শ হয় তাহলে সে আজ চুপচাপ মেনে নেবে না। একটা খু*ন করে প্রয়োজনে সে নিজে খু* ন হবে। সে চায় না– হেড লাইনে মানুষ এটা দেখুক যে, কয়েক জন যুবকের হাতে কলেজছাত্রী গনধর্ষণের স্বীকার। সে চায় মানুষ দেখুক– ধর্ষিত হয়ে ধর্ষকদের খু*ন করেছে কলেজছাত্রী। তার সামনে এসে দাঁড়ানো কালো রঙের বাইকটার দিকে সে তাকাল। বাইকে দু'জন ছেলে বসে আছে। পেছনে সেই ছেলেটা বসে আছে যে, কলেজ থেকে আসার সময় রজনীকে ফলো করছিল। আর সামনে হেলমেট মাথায় একটি ছেলে বসে আছে। এরই মাঝে পিছনের ছেলেটি বলে উঠল,
“ওস্তাদ, এই সেই মেয়ে।”
ওস্তাদ শব্দটি রজনীর কর্ণকুহরে কেমন বিশ্রী শোনাল। কিছুক্ষণ আগেই এই ওস্তাদ শব্দটা কয়েকবার শুনেছে সে। সামনে বসে থাকা ছেলেটি মাথার হেলমেট খুলল।এলোমেলো চুলগুলো হাতের আঙুল দিয়ে আঁচড়ে ঠিক করে নিল। রজনীর বুঝতে অসুবিধা হলো না যে এই ছেলেই তাদের ওস্তাদ। যে ওস্তাদকে দিয়ে তাকে তুলে আনার কথা বলা হয়েছে।
তৎক্ষনাৎ তার মনের মধ্যে একরাশ ঘৃণা জমে গেল এটা ভেবে যে, ছেলেটা এই গ্যাঙের লিডার । ছেলেটার নাম প্রান্তিক চৌধুরী। এই গ্রামেরই ছেলে; তবে ফ্যামিলিসহ শহরে থাকে। গ্রামে বাপ-দাদার ভিটাবাড়ি আছে। মাঝেমধ্যে গ্রামে আসে ঘুরতে। পারিবারিকভাবে রাজনীতিতে জড়িত। অত্যন্ত সাহসী, মেধাবী আর তেজী স্বভাবের একটি ছেলে। তবে তার বাবা শান্তশিষ্টভাবে রাজনীতি করেছে। কিন্তু প্রান্তিক তার ব্যতিক্রম। সেকেন্ডে সেকেন্ডে জ্বলে ওঠে তার শরীর। এমন কোনো দিন নেই যে, কারো সাথে মা**রামারি করে না।এর কারণও আছে। একবার তার বাবাকে এক পার্টির লোক অকারণে খুব মেরেছিল। তারপর থেকেই বাবার সাথে সম্পূর্ণ রাজনীতিতে মন দিয়েছে। পারিবারিক আভিজাত্য, দেখতে সুন্দর, শিক্ষাগত যোগ্যতা, ক্ষমতা সব থাকতেও ২৮ বছর বয়সি প্রান্তিক চৌধুরী সিঙ্গেল। যদিও এর পেছনে কারণ আছে। প্রান্তিক হাত ঘড়ি ঠিক করে নিয়ে টাইম দেখল। শার্টের হাতা গোটাতে গোটাতে একবার রজনীর মুখশ্রীতে দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। বিগত সাতটা দিন এই মেয়েটাকে খুঁজতে খুঁজতে পা'গ'ল প্রায় সে। বিগত সাতদিন সারা শহর খুঁজেছে; কিন্তু কোথাও পায়নি। কলেজের বসন্তবরণ অনুষ্ঠানে– “ বাতাসে বহিছে প্রেম, নয়নে লাগিল নেশা”– গানে রজনীর ডান্স পারফরম্যান্স দেখে ফিদা হয়ে যায় প্রান্তিক। মুগ্ধ হয়ে দেখেছিল রজনীকে। প্রান্তিকের নয়নেও যেন নেশা লেগেছিল; রজনীকে দেখার নেশা। নাচের মাঝে রজনীকে খুব প্রাণবন্ত দেখাচ্ছিল; হাসছিল খুব। গালে টোল পড়ছিল। কিছু মেয়ের হাসি এত সুন্দর হয় যে, একবার দেখলেই অন্তঃকরণে আজীবনের জন্য গেঁথে যায়। রজনী যখন হাসছিল তখন ওর ওষ্ঠদ্বয় দারুণ সুন্দর দেখাচ্ছিল। প্রান্তিক একধ্যানে তাকিয়ে ছিল রজনীর সেই ওষ্ঠের পানে। হরিণী চোখ আর ঠোঁট সব মিলিয়ে মনের মাঝে ভালোলাগা নামক এক সিগন্যাল দিচ্ছিল। প্রান্তিক হারিয়ে গেল দূর অজানায়। একটা মেয়ের হাসি তাকে এলোমেলো করে দিল। লাস্ট সাত দিন ঘুম হয়নি তার। হন্যে হয়ে খুঁজেছে। মেয়েটির সুন্দর ঠোঁট দু'টো সেকেন্ডে ভেসে উঠছিল তার অক্ষিপটে। যে ছেলের ধারণা ছিল –এই পৃথিবীতে এমন কোনো মেয়ের জন্ম হয়নি যাকে সে ভালোবাসতে পারে সেই ছেলেই এক মুহূর্তে প্রেম নামক ভয়ানক অসুখের অতলান্ততায় হারিয়ে গেল। বিগত সাতদিনে কেউ সন্ধান দিতে পারেনি মেয়েটির। এইভাবে যে মেয়েটিকে এখানে খুঁজে পাবে প্রান্তিক ভাবতেও পারেনি। ওষ্ঠ কোনায় মৃদু হাসি ঝুলিয়ে দ্যুলক পানে দৃষ্টি রেখে অস্ফুটস্বরে বলল, “থ্যাংকস।”
যেন একজীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ জিনিসটা সে খুঁজে পেয়েছে।
ওষ্ঠ জুড়ে সেই হাসি অব্যহত রেখে রজনীর মুখশ্রীতে দৃষ্টি দিল। রজনীর দিকে তাকিয়েই ভ-য়ে প্রান্তিকের অন্তঃকরণে কেমন কাঁপুনি দিয়ে উঠল। এই প্রথমবার ভ*য় নামক কিছু প্রান্তিকের আত্মাকে কাঁপিয়ে তুলল। রজনীর চোখে-মুখে স্পষ্ট ঘৃণার চাহনি দেখতে পেল ।রজনী রাগ আর ঘৃণাভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এতক্ষণ তাকে বিশ্রী কথা বলা ছেলেগুলোর ওস্তাদ তাহলে এই ছেলেটা। ওই ছেলেগুলো এত বিশ্রী আর জঘন্য তাহলে তাদের ওস্তাদ কতটা বিশ্রী জঘন্য হতে পারে! রজনী আজ প্রমাণ পেয়েছে শুধু সুন্দর চেহারা হলেই মানুষের মন সুন্দর হয় না। অজান্তেই সুন্দর চেহারার ছেলেদের প্রতি জঘন্য এক ধারণা তৈরি হলো রজনীর।প্রান্তিক বুঝতে পারছে না কেন রজনী এভাবে রে'গে আছে। এইভাবে পথ আটকে দাঁড়ানোর জন্যই কি রে'গে গিয়েছে? প্রান্তিক কেমন বেসামাল হয়ে পড়েছে। কী বলবে বুঝতে পারছে না। পেছনে তাকিয়ে বলল,
“শ্রাবণ, পানি দে তো।”
শ্রাবণ বাইকে বাঁধানো ব্যাগ থেকে পানি এগিয়ে দিল। প্রান্তিক রজনীর দিকে পানি এগিয়ে দিয়ে বলল, “টেক ইট।”
রজনী বিরক্তিকর চাহনিতে তাকিয়েই আছে। জু' তা মেরে গরুদান দেখে অবাক হচ্ছে।
প্রান্তিক আবার বলল, “তোমাকে নার্ভাস দেখাচ্ছে। তুমি আমার ছোটো হবে তাই তুমি করে বললাম। এই পানি কেউ খায়নি।একদম ইনটেক। আমি সবসময় সাথে পানি রাখি। তোমাকে নার্ভাস দেখে দিচ্ছি।”
রজনীর কী বলা উচিত বুঝতে পারছে না।নিজেকে কন্ট্রোল করে বলল,
“লাগবে না।”
প্রান্তিক বুঝল রজনী তার থেকে পানি নিতে চাইছেনা।নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে কিছু একটা ভেবে বলল,“তোমার বাবার নাম কী?”
রজনী সন্দিহান ভাবে প্রশ্ন ছুড়ে দিলো, “কেন?”
“আমিও এই গ্রামেরই ছেলে তাই জানতে চাইছি।”
“ওহ।”
“তোমার বাবার নাম?”
“কে - কেন?”
“ভ*য় পাচ্ছ কেন? আমি তোমার কোনো ক্ষতি করব না। আমার লাগবে তাই জানতে চাইছি।”
“কেন লাগবে?”
“আচ্ছা তোমার নাম কী?”
“কী' কী করবেন?”
প্রান্তিক এবার ঠোঁটে দুষ্টু হাসি টেনে বলল, “শ্বশুরবাড়ি বানাব।তোমার বাবার জামাই এর তো রাইট আছে তার শ্বশুর আর শ্বশুরের মেয়ের নাম জানার তাইনা?''
রজনীর এই ছেলেটার সাথে কথা বলতেও ঘৃণা করছে। শুধু মানসম্মান বাঁচানোর জন্য ভ''য়ে ভ''য়ে কথা বলছে। প্রান্তিক বুঝতে পারছে রজনী ক্রোধান্বিত। চোখ-মুখে রা'গ আর ঘৃণা উপচে পড়ছে কিন্তু ভ*য় পাচ্ছে বলে তাকে সহ্য করছে। প্রান্তিক অত্যন্ত মেধাবী ছেলে সাথে বিচক্ষণও। কেউ তার সাথে কেমন ভঙ্গিতে কথা বলছে চোখ দেখেই বলে দিতে পারে। রজনীর দিকে শান্ত চোখে তাকিয়ে বলল,
“তুমি কি কোনো কারণে আমার উপর বিরক্ত? আমি কি ডিস্টার্ব করছি তোমাকে?”
“না।”
“এই কথাটা মনের বিরুদ্ধে বললে। এই বিরক্তির কারণ খুঁজে বের করতে প্রান্তিক চৌধুরীর দু'মিনিট ও লাগবে না।”
“আমি কি যেতে পারি?”
“অফ কোর্স। বাট নামটা বলতে হবে। নাম বললেই যেতে পারবে।”
“র'র' রজনী আমার নাম।”
“ওয়াও! মাই ফেভারিট ফ্লাওয়ার রজনীগন্ধা!”
রজনী সেখান থেকে হাঁটা দিল। প্রান্তিক ডেকে বলল, 'এই যে, রজনীগন্ধা! এত পথ হেঁটে যাবে কীভাবে?”
রজনী পেছনে তাকাল না। প্রান্তিক শ্রাবণকে বলল, “বাইক নিয়ে যা, ইজি বাইক ডেকে নিয়ে আয়।”
শ্রাবণ চলে গেল। প্রান্তিক রজনীর জামার পেছন খেয়াল করল। গায়ের শার্ট খুলে রজনীর সামনে গিয়ে দাঁড়াল। রজনী আতঙ্কে কেঁপে উঠল শার্ট খোলা দেখে।শার্টের নিচে সাদা গেঞ্জিও আছে।।প্রান্তিকের দৃষ্টি রজনির ঠোঁটের দিকে নিবদ্ধ। রজনী বুঝতে পারল প্রান্তুিক তার ঠোঁটের দিকেই তাকিয়ে আছে। এবার প্রান্তিক হেসে দিয়ে বলল,
“এত ভ*য়! কখনো ভ*য় দেখছি, কখনো রা'গ, কখনো ঘৃণা, বাট হুয়াই?” –বলেই শার্টটা রজনীর পেছনে বেঁধে দিল। রজনী এই ঘটনার জন্য একদম প্রস্তুত ছিল না। সে ভেবেছিল– অন্য কিছু।
রজনী বিস্ময়বদনে দেখছে প্রান্তিকের ভালো সাজার অভিনয়। কতগুলো নোংরা জানোয়ার পেলে রেখেছে। তাকে বিছানায় নিতে যারা জঘন্য কথা বলছে এবং যার সাহায্যে বিছানায় নেবে তার এমন নারীদের প্রতি মারাত্মক রেস্পেক্টটা রজনীর কাছে আরও জঘন্য লাগছে। সত্যি বলতে– এসব সে হজম করতে পারছে না। থুথু ছুড়ে মারতে ইচ্ছা করছে। বলতে ইচ্ছা করছে, “অ*মানুষ জানো*য়ার, এভাবে ভালো মানুষের মুখোশ পরলেই কি ভালো হতে পারবি? আমার জীবনের দেখা সব থেকে ঘৃণিত মানুষ তুই।”
রজনী প্রান্তিকের শার্ট খুলে ফেলার চেষ্টা করতেই প্রান্তিক রজনীর হাত চেপে ধরল।প্রান্তিকের হাতের স্পর্শে ঘৃণায় ওর শরীর রি রি করে উঠল। রজনীকে স্পর্শ করা মাত্রই প্রান্তিকের শরীর ভয়ং*করভাবে কেঁপে উঠল। এর আগে কোনো নারীর স্পর্শ প্রান্তিককে এভাবে কাঁপাতে পারেনি। হাত চেপে ধরার সাথে সাথে রজনীর কোমরেও প্রান্তিকের হাত লেগে গেল অসাবধনতায়।ভয়ানক এক অনুভূতির সৃষ্টি হলো। একটা মেয়ের স্পর্শ এত ভয়ানক হতে পারে! রজনী তড়িৎ গতিতে সরে দাঁড়াল। প্রান্তিক বুঝতে পারল– তার স্পর্শ মেয়েটা ভালোভাবে নেয়নি। এটা ভেবেই প্রান্তিক মনে মনে শান্তি বোধ করল। সেই ম্যাজিশিয়ান মেয়ে সে পেয়ে গিয়েছে। কেননা প্রান্তিক চৌধুরীর কাছে আসার জন্য মেয়েরা কত সস্তা কাজ করে সেখানে একটা বাচ্চা টাইপ মেয়ে কি না তার স্পর্শতে বিরক্তিবোধ করল! আনমনে বলল, “ইউ আর রিয়েলি গ্রেট রজনীগন্ধা।”
রজনী আবারও শার্টের গিট খোলার চেষ্টা করতেই প্রান্তিক বলল,
“আই থিংক, শার্টটা খোলা ঠিক হবে না। কেন ঠিক হবে না আমি ডিটেইলসে বলতে পারছি না। এসব বিষয়ে তোমার সাথে খোলামেলা আলোচনা করলে তুমিই লজ্জা পাবে। তবুও যদি তুমি ঘাউড়ামি করে খুলতে চাও তাহলে তোমাকে আমার ডিটেইলসে বোঝাতে হবে।”
এর মাঝেই একটি অটো এসে থামল। শ্রাবণই অটোটা পাঠিয়েছে। প্রান্তিক প্যান্টের পেছন পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে অটোওয়ালাকে একশো টাকা বের করে দিল। অটোওয়ালা বলল,
“ভাঙতি নাই বাজান।”
প্রান্তিক বলল, “দিতে হবে না। নিয়ে নিন।”
অটোওয়ালার চোখ-মুখ আনন্দে চকচক করে উঠল। পনেরো টাকার পথ একশো টাকা পেলে কে না খুশি হয়। রজনী চুপচাপ দাঁড়িয়ে দেখছে আর ভাবছে, “মানুষ এত ওভার অ্যাক্টিং কীভাবে করে! শেষমেষ এই ছেলের ঠিক করা অটোতে উঠতে হবে!”
এই মুহূর্তে তার না উঠেও উপায় নেই। চুপচাপ অটোতে উঠে গেল।
রজনী অটোতে উঠে চলে গেলে শ্রাবণ চলে এলো। শ্রাবণ এসে বলল, “ভাই, ভাবি চলে গিয়েছে?"
প্রান্তিকের মুখাবয়ব এবার কঠিন রূপ ধারণ করল। গায়ে সাদা রঙের গেঞ্জি। গেঞ্জি টেনে ঠিকঠাক করে বলল, “সিগারেট আর লাইটার দে শ্রাবণ।”
শ্রাবণ লাইটার আর সিগারেট এগিয়ে দিল।প্রান্তিক সিগারেট জ্বালাল। নাক দিয়ে গলগল করে ধোঁয়া ছেড়ে হুংকার দিয়ে বলল,
“রজনীফুল আমার উপর এত ক্রোধান্বিত কেন?”
“ভাই, এটাই তো বুঝলাম না। দেখে মনে হল– অনেক আগে থেকেই চিনে আপনাকে। যেন এক জনমের শত্রুতা। চোখে-মুখে আপনার উপর বিষাক্ত কিছু দেখলাম।”
“রজনীফুলের আমার প্রতি এমন ধারণা হওয়ার কারণ কী? রজনী ফুলে তো কাঁটা নেই; আছে শুধু সুবাস। আমি রজনী ফুলের সুবাস চাই, এমন কাঁটা নয়। খোঁজ লাগা– কী কারণে রজনী ফুল এমন রেগ আছে।”
'' জি ভাই, টেনশন করবেন না। ভাবির রাগ করার কারণ খুঁজে বের করব।তবে আর একটা নিউজ ও আছে।শুনলে আপনি আ'গু'ন লাগায় দিবেন।
“এমন অঘটনের কারণই বুঝলাম না।আকাশ-পাতাল তন্নতন্ন করে খুঁজে বের করব রজনীফুলের ক্রোধান্বিত হওয়ার কারণ। সেই কারণ খুঁজে বের করে আমি দুনিয়া থেকে ভ্যানি*শ করে দেব সেই কারণ।যে কারণে রজনী গন্ধা রাগ করে। ওই ফুলে আমি সুবাস চাই। ওই সুবাসে আমি মাতোয়ারা। রজনীগন্ধা, তোমার ঘৃণা ভরা দৃষ্টিতে আমি মৃত; তোমার নেশায় আমি জীবিত।”
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
০২ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা মৌসুমি আক্তার মৌ সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে তা অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন