উপন্যাস       :         কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা        :         আনআমতা হাসান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল    :         
রচনাকাল     :         ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং

লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান

এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ৫৪)

কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ৫৫)

দুই ঘন্টা পঁচিশ মিনিট তূবার সাথে নিজের পেটের সব কথা বলে ফোন রাখে কুহু। ফোনটা রাখতেই খেয়াল করে তার গলাটা শুকিয়ে গেছে বকবক করতে করতে। পানি খাওয়া দরকার। টেবিলের উপর থেকে মগ নিয়ে দেখে তাতে পানি নেই। প্রয়োজনের সময় প্রয়োজনীয় জিনিসটা যেমন দুর্লভ বস্তু হয়ে যায়। হাতের কাছে পাওয়াই যায় না। বিরক্তির সাথে বিরবির করতে করতে মগ নিয়ে ড্রাইনিং রুমের দিকে পা বাড়ায় সে। কুহুর রুম থেকে ড্রাইভিং রুমে যাওয়ার আগে তার বাবা-মায়ের রুম পরে। তাদের রুমের সামনে দিয়ে যেতে নিলেই রুম থেকে আসা তার বাবার কথাগুলো শুনে তার পা থেকে যায়। বিছানায় বসা মিষ্টার সফিক বললো
- এবার মনে হয় ভাবী কাব্যের বিয়েটা করিয়েই ছাড়বে। ভাবী না কি কাব্যকে বলেছে, বিয়ে না করলে কাব্য ইউ এস এ যেতে পারবে না।

মিসেস মায়া হাতের শাড়িটা ভাঁজ করতে করতে বললো
- আমাকেও ভাবি সেদিন বলেছে। ছেলেটা তার কলিজার টুকরো। তাকে দূরে যেতে সে দিতে চায় না। কিন্তু ছেলের ইচ্ছের বিরুদ্ধে কিছু বলতেও পারে না। তার নাকি খুব ভয় হয়। তার ভায়ের ছেলের মতন তার ছেলেও যদি মাস্টার্স শেষ করে এসে, আবার পিএইচডি করতে চলে যায়। তাই বিয়ে করাবে যাতে বউ ছেলেকে ধমকিতে টমকিয়ে দেশে রাখতে পারে। তা ভাই কিছু বলেছে?


মিষ্টার সফিক কিছু না বুঝে জিজ্ঞেস করল
- কি বলবে?
মিসেস মায়া শাড়িটা আলমারিতে রাখতে রাখতে বললো
- আমাদের কুহুর কথা।
মিষ্টার এর মাথায় এবারও কিছু ঢুকলো না। সে আবার প্রশ্ন করলো
- কি বলবে কুহুর কথা?

মিসেস মায়া বিরক্ত হয়ে বললো
- মাঝে মাঝে না আমার ইচ্ছে করে তোমার মাথাটা ফাটিয়ে দেখি এর ভেতরে কি আছে। আরে আমি জিজ্ঞেস করছি কাব্যের সাথে কুহুর বিয়ের কোন কথা বলেছে কি না।
মিষ্টার সফিক অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল
- না তো, আতিক তো তেমন কিছু বলেনি। তুমি হঠাৎ কুহুর সাথে কাব্যের বিয়ের কথা বলছো কেন?

মিসেস মায়া খাটে স্বামীর পাশে বসতে বসতে বললো
- ভাবী তো কুহুকে অনেক পছন্দ করে। আর তোমার মেয়ের হাবভাবে তো মনে হয় সে কাব্যকে পছন্দ করে, তাই।
মিষ্টার সফিক শ্বাস ছেড়ে বললো
- তুমিও না। ভাবী পছন্দ করে বলেই কি নিজের ছেলের বউ বানাতে চাবে এমন তো কোন কথা নেই। তাছাড়া কাব্য বিলিয়ান্ড ছেলে। বুয়েটের মতো ভার্সিটি থেকে ফাস্ট ক্লাস ফাস্ট পেয়েছে। সে অবশ্যই তার যোগ্য কোন মেয়েকে বিয়ে করবে। আর এমন একটা ভালো প্রপোজালও এসেছে। মেয়েটা কাব্যের ফ্রেন্ড। যেমন সুন্দরী, তেমন নাকি মেধাবী। কাব্যের সাথেই ফাস্ট ক্লাস ফিফট হয়েছে। ধনী বাবার একমাত্র মেয়ে। এমন মেয়ে রেখে কুহুকে কেন বিয়ে করাবে তারা!


বাবার কথা শুনে কুহুর খুব বিরক্ত লাগছে। যেখানে তার বাবার উচিৎ ছিল জোর করে তাকে কাব্যের গলায় ঝুলিয়ে দেওয়া, সেখানে সে অন্য মেয়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। এ তার নিজের বাবা তো। ডিএনে টেস্ট করে দেখতে হবে। মিসেস মায়া মলিন কণ্ঠে বললো
- কিন্তু মেয়েটাতো কাব্যকে অনেক পছন্দ করে। সহ্য করতে পারবে তো আমার মেয়েটা, কাব্য অন্য কাউকে বিয়ে করলে।

কুহু মুখে প্রসন্নের হাসি। আহা তার মা জননী তাকে কত ভালোবাসে। ইচ্ছে করছে গিয়ে জড়িয়ে ধরে "আম্মাজান" গানটা গাইতে। মিষ্টার একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বললো
- দেখ জোর করে তো আর কিছু হয় না। আর তাছাড়া কাব্যকে শফিক, ভাবী অনেক ভালোবাসে। কাব্য যদি ঐ মেয়েকে বিয়ে করতে চায়, তারা না করবে না। আর এমন মেয়েকে না করার কোন কারনও নেই। তুমি কুহুকে বুঝিয়ে বল।

মিসেস মায়া প্রশ্ন করলো
- কাব্যের সাথে কি মেয়েটার কোন সম্পর্ক আছে?
মিষ্টার সফিক উত্তর দিল
- মেয়েটা যেহেতু কাব্যের ফ্রেন্ড সেহেতু তাদের মধ্যে সম্পর্ক থাকা স্বাভাবিক।


কুহু মুখে ভেংচি কেটে মনে মনে বলল, "কচু আছে। এই বিথী পেত্নীর চুল যদি এবার আমি না ছিড়েছি। এহ সখ কত আমার কাব্যকে বিয়ে করবে। করাচ্ছি ওকে বিয়ে। তার আগে এই বিবিসির খবর নিতে হবে। এমন একটা টাটকা নিউজ ও আমাকে এখনো দিলো না!"
কুহু পানি না নিয়েই গ্লাস হাতে আবার রুমে বেক করল। বিছানাত উপর থেকে ফোন নিয়ে কল দিল কাব্যের ফোনে। রিং হওয়ার সেকেন্ডের মাঝেই কাব্য কল রিসিভ করে বললো
- আসসালামু আলাইকুম কুহু।

কুহু শক্ত গলায় বললো
- ওয়ালাইকুম আসসালাম। আপনার আদরের ছোট ভাই কি বাসায় আছে?
কাব্য স্বাভাবিক ভাবেই উত্তর দিল
- হ্যাঁ আছে তো।

- যান তাহলে ওর রুমি গিয়ে ওকে ফোনটা দিয়ে আসুন। আমার ইম্পর্টেন্ট কথা আছে ওর সাথে।
কাব্য আর কথা বাড়ায় না। কন্ঠ শুনেই সে বুঝে, কোন কারনে কুহুর মন মেজাজ ভালো না। এখন তার কথা অনুসারে কাজ করাটাই বেটার। কাব্য কিরণের রুমের সামনে গিয়ে দেখে কিরণ পড়ার টেবিলের বই-খাতা গোছাচ্ছে। কাব্য দরজায় টোকা দিয়ে বললো
- কিরণ।

কিরণ পিছন ঘুরে ভায়ের দিকে তাকিয়ে বললো
- হ্যাঁ ভাইয়া বল।
কাব্য কিরণের কাছে গিয়ে হাতের ফোনটা এগিয়ে দিয়ে বললো
- নে কুহু তোর সাথে কথা বলবে।


কিরণ মিষ্টি হেসে কাব্যের হাত থেকে ফোন নেয়। কাব্য রুম থেকে বের হয়ে যায়। কিরণ ভায়ের যাওয়ার দিকে দৃষ্টি স্থীর রেখে ফোন কানে নিয়ে বললো
- আসসালামু আলাইকুম আপু।
কুহু রাগী কন্ঠে বললো
- ওয়ালাইকুম আসসালাম। তুই এমন একটা নিউজ এখনো আমাকে দিলি না কেন?

কিরণ অসহায় কন্ঠে বললো
- আমি তো একটু আগেই জানতে পেরেছি। ডিনার করার সময় আব্বু বলেছে।
কুহুর রাগ একটু কমলো। শান্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করল
- তো তোর ভাইয়ের রিয়েকশন কেমন ছিল?

- ভাইয়া তো অবাক। সে মনে হয় ভাবতেও পারেনি যে বিথী আপু তাকে বিয়ের প্রপোজাল দিবে।
- দেখিছিস আমি তোকে বলেছিলাম না, এই মেয়ে তোর ভাইকে পছন্দ করে। আর তোর আহাম্মক ভাই তা বুঝে না।

কিরণ কৌতুহলি কন্ঠে জিজ্ঞেস করল
- আচ্ছা ভাইয়া যেখানে এক সাথে চার চারটা বছর চলেও বুঝতে পারলো না যে, পৃথা আপু তাকে পছন্দ করে। সেখানে তুমি কিভাবে বুঝে ফেললে যে বিথী আপু ভাইয়াকে পছন্দ করে?
- মেয়েরা লাভ সাবে পারদর্শী হয় বেশি, বুঝেছিস। আচ্ছা, বাকিরা কি বলেছে?


- আম্মু ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করেছে, এই মেয়ের সাথে তার কোন সম্পর্ক আছে কি না। ভাইয়া না করেছে। বলেছে বিথী যে তাকে পছন্দ করতো, তাই তো সে জানে না। তারপর মা বাবাকে বলে কালকে বিথীর বাবাকে ফোন করে সুন্দর করে না করে দিতে। বাবাও আর দ্বিমত করেনি। 

- জানো আপি আমি তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। যদি আব্বু আম্মু রাজী হয়ে যেত, তাহলে আমার ভাবী আমার ভাবী না হয়ে অন্য কেউ আমার ভাবী হয়ে যেত। 
- ইশ এতো সহজ না কি। তোর ভাইয়ের পিছে ঘুরে ঘুরে আমার বাল্যকাল, কিশোরকাল, যৌবনকাল সব শেষ করলাম। আর মাঝখান থেকে কোথাকার কোন বিথী পেত্নী উড়ে এসে, তোর ভাইকে বিয়ে করে ফেলবে। মেরে সত্যি সত্যি পেত্নী বানিয়ে ভূতের সাথে বিয়ে দিয়ে দিব না।

- আমি আছি তোমার সাথে ভাবী।
কুহু আদরে কন্ঠে বললো
- ওলে আমার দেবরজী রে। কালকে তোকে এতো গুলো চকলেট কিনে দিব। এখন যা অনেক রাত হয়েছে। তোর ভাইকে ফোন দিয়ে ঘুমিয়ে পর। শুভ রাত্রি।


- শুভ রাত্রি 
বলে কিরণ কলটা কেটে দেয়। কাব্যকে ফোনটা দিতে যাওয়ার জন্য দরজার দিকে ঘুরে দাড়াতেই, দরজায় দাঁড়ানো মানুষটাকে দেখে ভয় দাঁড়িয়ে যায়। মনে একটা প্রশ্ন জেগে উঠে তার, মানুষটা আবার সব শুনে নেয়নি তো? শুনলে তো সর্বনাশ। ভয়ে একটা ঢোক গিলে কিরণ।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...


এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ৫৬)


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে। 

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন