উপন্যাস : তুমি অন্য কারো ছন্দে বেঁধো গান
লেখিকা : রাজিয়া রহমান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল : ১১ই ডিসেম্বর, ২০২২ইং
রচনাকাল : ১১ই ডিসেম্বর, ২০২২ইং
লেখিকা রাজিয়া রহমানের “তুমি অন্য কারো ছন্দে বেঁধো গান” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। এটি মূলত লেখিকার প্রথম উপন্যাস “তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর”-এর দ্বিতীয় খন্ড। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ইং সালের ১১ই ডিসেম্বর থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
তুমি অন্য কারো ছন্দে বেঁধো গান || রাজিয়া রহমান |
1111111111111111111111
তুমি অন্য কারো ছন্দে বেঁধো গান || রাজিয়া রহমান (পর্ব - ০১)
ছোট বোন চৈতালির খাতার ভেতর একটা প্রেমপত্র পেলো নবনী।চৈতালিকে প্রেমপত্র লিখেছে কেউ,কিন্তু কোনো সম্বোধন নেই চিঠিতে। চিঠি পড়ে নবনীর মনে হলো চিঠির প্রেরকের সাথে চৈতালির সর্বদা যোগাযোগ থাকে।
খানিকক্ষণ ভেবে নবনী চৈতালিকে ডাকলো।
একটা পাকা কলা খেতে খেতে চৈতালি এলো বোনের কাছে।নবনী চোখমুখ শক্ত করে বসে আছে।ফাল্গুনী, চৈতালি এবার এসএসসি পরীক্ষা দিবে।
ছোট্ট মেয়ে দুটি আজ চোখের সামনে কতো বড় হয়ে গেছে। বড় হওয়ার সাথে সাথে দু'জন অসম্ভব রূপবতী হতে লাগলো। আর এজন্যই নবনী সবসময় দুই বোনের চিন্তায় অস্থির থাকে।
ফাল্গুনী নবনীর মেয়ে রীথিকে কোলে নিয়ে একটা সিদ্ধ ডিমের কুসুম খাওয়ানোর চেষ্টা করছে।রীথির বয়স ৮ মাস।বার্বিডলের মতো দেখতে বাচ্চাটাকে সর্বক্ষণ ফাল্গুনী আর চৈতালি নিজেদের কোলে কোলে রাখে।বাবার বাসায় এলে নবনী মেয়েকে আর কাছে পায় না।
বড় বোনের কড়া গলার স্বর শুনতে পেয়ে ফাল্গুনী চমকে গেলো। বুকের ভেতর তার হাতুড়ি পেটা শুরু হয়ে গেছে।চোরের মনে পুলিশ পুলিশ লোকে এমনি এমনি বলে না।
চৈতালি হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নবনী আবারও জিজ্ঞেস করলো, "সত্যি করে বল,কে দিয়েছে এই চিঠি? কি সম্পর্ক তোর সাথে? "
চৈতালির দুই চোখ জলে টইটম্বুর হয়ে গেলো মুহুর্তে। বড় আপা তাকে অবিশ্বাস করছে এটাই চৈতালিকে বেশি পীড়া দিচ্ছে।
এই পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসা,সম্মান যদি কাউকে করে চৈতালি তবে তা বড় আপা।শুধু চৈতালি কেনো,চৈতালি জানে তার বাকি দুই ভাই বোন ও এমন।বড় আপার সাথে চৈতালি মিথ্যা কথা বলে না এটা কি আপা ভুলে গেছে!
ফাল্গুনী রীথিকে কোলে নিয়ে রুমে এলো।কাঁপা কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করলো, "কি হয়েছে আপা?"
নবনী হুংকার দিয়ে বললো, "কি হবে আর,বড় হয়ে গেছিস যে তোরা সেটা বুঝিয়ে দিচ্ছিস।চৈতালির খাতার ভেতর প্রেমপত্র পাওয়া যাচ্ছে। কেউ তাকে লিখেছে আগামীকাল স্কুল থেকে ফেরার সময় পার্কে দেখা করবে।অথচ সে অস্বীকার করে বলছে এই চিঠি তার না।"
ফাল্গুনী মিনতিপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালো চৈতালির দিকে।ধরা পড়ে যাবার ভয়ে মনে মনে দোয়া ইউনুস পড়তে লাগলো।
গভীর অভিমান নিয়ে চৈতালি আর একটা কথা ও বললো না। দম ধরে বসে রইলো।
নবনী আরো কয়েকবার জিজ্ঞেস করে জানার চেষ্টা করলো, কিন্তু চৈতালি যেনো পাথর হয়ে গেছে।
সাব্বির হলে থেকে পড়ালেখা করছে।বৃহস্পতিবার বিকেলে বাসায় আসে,শুক্রবার রাতে চলে যায়। ফাল্গুনী ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে বসে রইলো। আজ বুধবার, আগামীকাল ভাইয়া আসবে।আপা যদি ভাইয়ার কানে এই কথা তোলে তবে নিশ্চিত চৈতালি বলে দিবে এই চিঠি তার না।তারপর?
তারপর এক কথা,দুই কথায় বের হয়ে আসবে ইদানীং ফাল্গুনী যে স্কুল থেকে চৈতালির সাথে ফেরে না।এই চিঠি ফাল্গুনীর হতে পারে। কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপ বের হয়ে আসবে।
আর তারপর ফাল্গুনীর অবস্থা কি হবে তা ভেবেই ফাল্গুনীর হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসতে লাগলো।
বড় আপা কি করবে?
অনেক আঘাত পাবে বড় আপা।কিন্তু ফাল্গুনী কি করবে?রিশাদকে দেখলেই ফাল্গুনীর বুকে কেমন তোলপাড় করে। রিশাদকে ছাড়া নিজেকে সে ভাবতে পারে না ফাল্গুনী।
কোচিং-এ যাবার পথে রিশাদের সাথে ফাল্গুনীর প্রথম দেখা হয়।
প্রথম দেখায় ফাল্গুনীর বুকের ভেতর বসন্তের কোকিল গাইতে লাগলো, "পড়েছি প্রেমে,প্রথম দেখায়....."
এরপর থেকে আড়চোখ তাকিয়ে দেখতো ফাল্গুনী রিশাদকে।উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ রিশাদের চেহারায় কেমন মায়াবী ছাপ,ফাল্গুনীর মনে হলো এই সেই রাজপুত্র। যার স্বপ্ন সে দেখেছে।
আসা যাওয়ার পথে দেখা হতে হতে রিশাদের ও ফাল্গুনীকে ভালো লেগে গেলো। একদিন ফাল্গুনী একটা চিঠি পেলো তার অংক খাতার ভেতর। সেই চিঠি পড়ে ফাল্গুনীর বুকের ধুকপুকানি বেড়ে দ্বিগুণ হলো।
চার লাইনের একটা চিঠিতে এতো ভালোবাসা জড়িয়ে থাকতে পারে তা ফাল্গুনীর জানা ছিলো না। ভালোবাসাময় সে চিঠিতে লিখা ছিলো,
"কে বলে শারদ শশী সে মুখের তুলো?
পদনখে পড়ি তার আছে কতগুলো।
আজীবনের জন্য যদি এই মুখটাকে বুকের ভেতর লুকিয়ে রাখতে পারতাম!"
সেই চিঠি বুকে নিয়ে ফাল্গুনী সারারাত ঘুমাতে পারে নি।পরের দিন রিশাদকে দেখে লজ্জায় লাল হয়ে গেলো ফাল্গুনী। এভাবেই কিভাবে কিভাবে যেনো প্রেম হয়ে গেলো চিঠি আদান প্রদানের মাধ্যমে। কেউ কারো সাথে ফোনে কথা বলে না।
তার কিছুদিন পরেই রিশাদ কোচিং সেন্টারে চাকরি নেয়।ফাল্গুনীদের অংক ক্লাস নেয় রিশাদ।
আজ মনে মনে রিশাদকে হাজারটা গালাগাল দিলো ফাল্গুনী। যেহেতু দুজনেই জমজ বোন,চেহারায় মিল থাকার কারণে রিশাদ ভুল করে চৈতালির খাতার ভেতর চিঠি দিয়ে দিয়েছে। আর সেই চিঠি এখন বড় আপার হাতে পড়েছে।
রীথিকে রাবেয়া বেগমের কোলে দিয়ে ফাল্গুনী নিজের রুমে এসে চৈতালির পাশে বসলো। চৈতালি গম্ভীরমুখে বললো, "এই চিঠি আমার না ফাল্গুন।হয়তো ভুল করে অন্য কারো চিঠি আমার খাতার ভেতর কেউ দিয়ে দিয়েছে। তুই তো অন্তত জানিস আমার কারো সাথে এরকম কিছু নেই।এসব আমি কতোটা অপছন্দ করি।"
ফাল্গুনী স্বস্তি পেলো।তার মানে চৈতালি সন্দেহ করে নি তাকে।বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ফাল্গুনী বললো, "চিন্তা করিস না চৈত্র,বড় আপাকে আমি বুঝিয়ে বলবো।"
চৈতালি মন খারাপ করে বললো, "না লাগবে না।আপার যখন আমার উপর এটুকু বিশ্বাস নেই তবে তুই আপাকে কিছু বলতে পারবি না।যদি বলিস আমি তোর সাথে জীবনেও আর কথা বলবো না। "
ফাল্গুনী চুপ হয়ে গেলো। দুই বোনের মধ্যে চৈতালি ভীষণ অভিমানী, আবেগী।অন্যদিকে ফাল্গুনীর মধ্যে এতো অভিমান নেই।
বৃহস্পতিবার সকালে চৈতালি যখন স্কুলের জন্য রেডি হচ্ছিলো নবনী এসে বললো, "আজকে তোর স্কুলে যেতে হবে না।"
চৈতালির খানিকটা অভিমান হলো । বড় আপা কি তবে এখনো বিশ্বাস করতে পারছে না চৈতালিকে?
কি ভেবেছে আপা,যে চৈতালি আজ চিঠির প্রেরকের সাথে দেখা করতে যাবে?
এতো অবিশ্বাস করছে আপা তাকে?
অশ্রু টইটম্বুর দুই নয়ন নবনীর দৃষ্টির আড়ালে মুছে নিলো চৈতালি।গম্ভীর গলায় বললো, "বেশ তো,যাবো না।"
নবনী অবাক হলো। চৈতালি এতো নিষ্প্রভ কেনো?
বাবার বাসায় এসেছে নবনী প্রায় দেড় মাস পর।দেড় মাসে বোনদের এতো পরিবর্তন হয়ে গেছে?
এই বয়সটা ভুল করার বয়স। নবনী চায় না তার বোনেরা ভুল পথে পা বাড়াক।
ফাল্গুনী একা একা স্কুলের পথে পা বাড়ালো। মনে বাঁধভাঙা আনন্দ। আজ রিশাদের সাথে দেখা করবে ফাল্গুনী। ভালোই হয়েছে একদিকে চৈতালি না থাকায়।নয়তো ওকে অনেক মিথ্যে অযুহাত দেখাতে হতো।টিনএজ বয়সের প্রথম প্রেম ফাল্গুনীর। দুচোখ ভরা স্বপ্ন, বুক ভর্তি ভালোবাসা।
জীবন যে এতো বেশি সুখের ফাল্গুনী আগে বুঝে নি।রিশাদের সাথে প্রেম হবার পর থেকে ফাল্গুনীর মনে হচ্ছে তার চাইতে সুখী বুঝি আর কেউ নেই এই পৃথিবীতে। ভালোবাসা কি মধুর অনুভূতি!
সাব্বির আজ সকাল সকাল বাসায় এলো বড় বোনের কল পেয়ে।এসে দেখে চৈতালি গম্ভীর হয়ে বসে আছে। অবাক হলো সাব্বির।সাধারণত সাব্বির বাসায় এলেই ফাল্গুনী চৈতালি এমন চিৎকার শুরু করে যে সাব্বিরের মনে হয় সে বুঝি দশ বছর পর সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশে ফিরেছে।
কিন্তু আজকে এতো চুপচাপ কেনো চৈতালি? তাছাড়া এখন তো ওর স্কুলে থাকার কথা। বাসায় কেনো?
সাব্বিরকে সকাল সকাল আসতে দেখে চৈতালির কেমন যেনো হাসি পেলো। বড় আপার এতো বেশি অবিশ্বাস হয় তাকে?
কি করেছে চৈতালি যে আপা ভাইয়াকে ও খবর দিয়ে নিয়ে এসেছে!
এতোটাই খারাপ ভাবে আপা তাকে?
কিশোরীর মনের গোপন অভিমান টের পেলো না কেউই।বুকের ভেতর যত্ন করে একটা অভিমানকে পুষতে লাগলো চৈতালি।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
০২ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা রাজিয়া রহমান বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর জেলায় জন্মগ্রহন করেন। লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন তিনি। তরুণ এই লেখিকা বৈবাহিক সূত্রে লক্ষ্মীপুরেই বসবাস করছেন। বর্তমানে তিনি একটি পুত্র সন্তানের জননী। পেশাগতভাবে তিনি গৃহিনী হলেও লেখালেখির প্রতি তার ভিষন ঝোক। আর তাই শত ব্যস্ততার মাঝেও শখের বশে ধারাবাহিকভাবে লিখে যাচ্ছেন একের পর এক উপন্যাস। ২০২২ সালের মধ্যদিকে গর্ভকালিন সময়ে লেখিকা হিসেবে হাতেখড়ি নিলেও এরই মধ্যে লিখে ফেলেছেন “তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর” ও “শালুক ফুলের লাঁজ নাই” -এর মতো বহুল জনপ্রিয় উপন্যাস।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন