উপন্যাস        :         তুমি অন্য কারো ছন্দে বেঁধো গান
লেখিকা        :          রাজিয়া রহমান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         ১১ই ডিসেম্বর, ২০২২ইং
রচনাকাল     :         ১১ই ডিসেম্বর, ২০২২ইং

লেখিকা রাজিয়া রহমানের “তুমি অন্য কারো ছন্দে বেঁধো গান” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। এটি মূলত লেখিকার প্রথম উপন্যাস “তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর”-এর দ্বিতীয় খন্ড। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ইং সালের ১১ই ডিসেম্বর থেকে লেখা শুরু করেছেন। 
তুমি অন্য কারো ছন্দে বেঁধো গান || রাজিয়া রহমান
তুমি অন্য কারো ছন্দে বেঁধো গান || রাজিয়া রহমান

1111111111111111111111

১ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

তুমি অন্য কারো ছন্দে বেঁধো গান || রাজিয়া রহমান (পর্ব - ০২)

জানুয়ারি মাসের আজকে ৫ তারিখ।ঠান্ডা পড়ছে বেজায়।ফাল্গুনীর সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে। আজকে রিশাদের সাথে দেখা করবে ও এই কথা ভাবতেই ফাল্গুনীর সারা দেহ মন কেঁপে উঠে অজানা শিহরণে। বারবার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। 

এসএসসি পরীক্ষার আর বেশি দেরি নেই।ফাল্গুনীদের এখন ক্লাস হচ্ছে না রেগুলার। শুধু বিভাগ ভিত্তিক ক্লাসগুলোর রিভিশন হচ্ছে, মডেল টেস্ট হচ্ছে বারবার। 
ফাল্গুনীর আজ ক্লাসে মন বসছে না।জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে ফাল্গুনী শুকনো পাতার ঝড়ে পড়ে যাওয়া দেখছে।সময় যাচ্ছে আর ফাল্গুনীর হার্টবিট বাড়ছে তার সাথে পাল্লা দিয়ে। 
দুপুরে স্কুল ছুটির পর ফাল্গুনী স্কুল থেকে বের হতে গিয়ে টের পেলো তার সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে। সকাল থেকেই এই কাঁপুনি কিন্তু এই মুহূর্তে তা যেনো চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়ছে।
একবার ভাবলো যাবে না দেখা করতে।কিন্তু পরক্ষণেই আবার মনের ভেতর থেকে কেউ যেনো বিদ্রোহ করে উঠলো। 

বান্ধবীদের থেকে আলাদা হয়ে ফাল্গুনী এগিয়ে গেলো নির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে। 
রিশাদ আগেই এসেছে।একটা লাল কালো চেক শার্ট পরনে রিশাদের। হাতে একটা টকটকে লাল গোলাপ।ফাল্গুনীকে দেখে এগিয়ে এলো রিশাদ।ফুলটা এগিয়ে দিলো ফাল্গুনীর দিকে।
ফুল নিতে গিয়ে রিশাদের হাতের সাথে আলতো ছোঁয়া লেগে গেলো ফাল্গুনীর। 
চমকে উঠে সরে গেলো ফাল্গুনী। নিজের খাতা শক্ত করে চেপে ধরে রাখলো। 
রিশাদ মুচকি হেসে বললো, "আইসক্রিম খাবে ফাল্গুনী? "
ফাল্গুনী অবাক হয়ে তাকালো রিশাদের দিকে।এই শীতের মধ্যে আইসক্রিম! 
আমতাআমতা করে রিশাদ বললো,"সরি,আমি ভুলে গিয়েছিলাম এখন যে শীত কাল।চলো ফুসকা খাই।"

ফাল্গুনী মাথা নেড়ে অসম্মতি জানালো।একটা বেঞ্চে দুজন বসলো। ফাল্গুনীর বুক কাঁপছে ভয়ে।নিজেকে হঠাৎ করে ভীষণ অপরাধী মনে হচ্ছে। মা,বাবা,আপা,ভাইয়া সবাই ওকে কতো বিশ্বাস করে। অথচ সে কি-না একটা ছেলের সাথে এখন পার্কে বসে আছে। আপা যদি জানতে পারে তাহলে কি হবে?
পরক্ষণেই আবার ভেতর থেকে কে যেনো বিদ্রোহ জানিয়ে বললো, ভালোবাসলে এতো কিছুর পরোয়া করতে নেই ফাল্গুনী। ভালোবাসা এতো কিছু হিসাবের ধার ধারে না।সে যখন আসে তখন ঝড়ের মতো এসে মনকে এলোমেলো করে দেয় ।
রিশাদ ফাল্গুনীর একটা হাত নিজের হাতের মধ্যে টেনে নিলো। লজ্জায় ফাল্গুনী কুঁকড়ে গেলো। এক ভালো লাগার শিহরণ ফাল্গুনীকে আচ্ছন্ন করে রাখলো।
রিশাদ ফাল্গুনীর চোখের দিকে তাকিয়ে বললো, "আমি তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি ফাল্গুনী।"
ফাল্গুনী কি জবাব দিবে এর?
লজ্জায় লাল হয়ে গেলো ফাল্গুনী। তাকিয়ে রইলো নিচে ঘাসের দিকে। গভীর মনযোগ দিয়ে ঘাস দেখতে লাগলো যেনো এই মুহূর্তে ঘাস দেখার চাইতে গুরুত্বপূর্ণ আর কিছু নেই। 
এই যে রিশাদ পাশে বসে আছে, রিশাদের গায়ের ঘ্রাণ পাচ্ছে ফাল্গুনী। ফাল্গুনীর কেমন সুখ সুখ অনুভব হচ্ছে। ভালোবাসা কি এমনই হয়?


চৈতালি অপেক্ষা করতে লাগলো কখন তার ডাক আসবে আপার রুম থেকে। দুপুর হতেই রাবেয়া বেগম ডাকলেন চৈতালিকে খাওয়ার জন্য। আজকে সারা দিন চৈতালি রুমে এক জায়গায় স্থানুর মতো বসে আছে। 
খাবারের সময় চৈতালি খেতে ও গেলো না। 
হাশেম আলী মেয়েকে টেবিলে যেতে না দেখে নিজে এলেন মেয়ের রুমে।বিছানার এক কোণে মেয়েকে বসে থাকতে দেখে তার সামনে বসে কোমল গলায় জিজ্ঞেস করলেন,"কি রে মা,কি হয়েছে তোর?শরীর খারাপ করছে নাকি?খেতে আসছিস না কেনো?"
বাবার এমন কোমল স্বর শুনে চৈতালির ভেতরটা হুহু করে কেঁদে উঠলো। হাশেম আলী মেয়ের হাত ধরে টেবিলে নিয়ে গেলেন।
নবনী চুপচাপ খাচ্ছে। সাব্বির মুরগির কলিজা ভেঙে একটু একটু করে রীথির মুখে দিচ্ছে আর গল্প করছে। 

বুঝদার মানুষের মতো রীথি মামার গল্প শুনছে আর হাসছে।রীথির দাঁত উঠেছে চারটি। চিকন চিকন দাঁত বের করে যখন সে হাসে মনে হয় যেনো চাঁদের হাসি।কি যে আদুরে লাগে তখন তাকে!
চৈতালির মনে পড়ে গেলো আপার ডেলিভারির দিনের কথা। 
প্রচন্ড বৃষ্টির মধ্যে মেঘের কল এলো নবনীর লেবার পেইন উঠেছে।৭ দিন ধরে টানা বৃষ্টি হচ্ছে, রাস্তায় কোমর সমান পানি।
ঝড়,জল উপেক্ষা করে সবাই ছুটলো হাসপাতালের উদ্দেশ্যে। ওটি রুমে নবনীকে নিয়ে যাওয়ার পর মেঘ বাচ্চাদের মতো কান্না করতে শুরু করে দিলো। 
মেঘের কান্না থামলো ভেতর থেকে নার্স যখন রীথিকে তার কোলে দিলো।রীথির চেহারা অবিকল মেঘের মতো। মেয়েকে কোলে নিয়ে মেঘ নিজে মেয়ের কানে আজান দিলো।
নবনীকে যখন পোস্ট অপারেটিভ রুমে দেওয়া হলো,সবার সামনে মেঘ নবনীর কপালে চুমু খেয়ে বসলো। 
আজ কতো দিন হয়ে গেলো অথচ মনে হয় যেনো সেদিনের ঘটনা। 
চৈতালি ভেবে পায় না একটা মানুষ কাউকে কিভাবে এতো বেশি ভালোবাসতে পারে। মেঘকে না দেখলে চৈতালি কখনো জানতো এরকম উন্মাদের মতো ও কাউকে কেউ ভালোবাসতে পারে। 
ভাবতে ভাবতে চৈতালির দুই চোখ ভিজে উঠলো। 
খাওয়া শেষ করে চৈতালি নিজের রুমে গিয়ে বই নিয়ে বসলো। সাব্বির নবনীর সাথে চৈতালির রুমে এলো তার কিছুক্ষণ পর। 
চৈতালির পাশের চেয়ার টেনে নিয়ে বসে সাব্বির সরাসরি বললো, "চৈতালি,আপা যা বলেছে তা কি সত্যি?"
কান্নাভেজা গলায় চৈতালি বললো, "তুমি ও আমাকে অবিশ্বাস করো ভাইয়া?"
সাব্বির চুপ করে থেকে বললো, "আচ্ছা, কে লিখেছে সেই চিঠি,এটা বল।"
চৈতালি চুপ করে থেকে বললো, "আমি জানি না ভাইয়া।সত্যি জানি না।আমাকে বিশ্বাস করো।আমি কখনোই এরকম কিছু করবো না যাতে তোমাদের অসম্মান হয়।"
সাব্বির বড় আপার দিকে তাকিয়ে বললো, "আপা,চৈতালি মিথ্যা বলছে বলে মনে হয় না। অন্তত তোমাকে ও মিথ্যা কথা বলবে না।"

নবনী চৈতালির কাঁধে হাত রেখে বললো, "আমাকে ভুল বুঝিস না চৈত্র।এই বয়সটা ভীষণ খারাপ।আর এই বয়সের আবেগ,এই আবেগের বশে নেওয়া সিদ্ধান্তের চাইতে হঠকারী সিদ্ধান্ত আর দ্বিতীয় কিছু নেই।এই বয়সে চোখে রঙিন চশমা থাকে এজন্য যা দেখে তাই রঙিন লাগে।১৩-১৯ বছর বয়সটা যখন পার হয়ে যায় আস্তে আস্তে সেই চশমা তার রঙ হারায়।বাস্তবতা কঠোর ভাবে ধরা দেয়।কখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে আপাকে একবার জানাস।"
চৈতালি বোনের হাত জড়িয়ে ধরে বসে রইলো। 
ফাল্গুনী বাসায় ফিরলো একবুক অস্থিরতা নিয়ে। বুকের ভেতর কেমন তোলপাড় করছে।বারবার মনে পড়ছে রিশাদের কথা। কেমন শক্ত করে রিশাদ ফাল্গুনীর হাত চেপে ধরে রেখেছিলো। হাতটা নাকের কাছে নিয়ে ফাল্গুনী ঘ্রাণ শুঁকে।এখনো রিশাদের ঘ্রাণ পাচ্ছে যেনো। 

স্কুল ড্রেস চেঞ্জ করে খাবার খেয়ে নিলো ফাল্গুনী। 
চৈতালি হায়ার ম্যাথ বই নিয়ে বসেছে।ফাল্গুনী সটান হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো। সেদিকে এক নজর তাকিয়ে চৈতালি বললো, "কাজটা ঠিক করিস নি ফাল্গুন।"
চমকে উঠে বিছানায় ধড়মড়িয়ে বসলো ফাল্গুনী। ভয়ে গলা শুকিয়ে গেলো। জড়ানো স্বরে বললো, "কি কাজ?"
চৈতালি মুচকি হেসে বললো, "বলবো, আগে ম্যাথটা সলভ করে নিই।"
ফাল্গুনীর হার্টবিট বেড়ে দ্বিগুণ হলো। কি বলবে চৈতালি?সে কি বুঝে গেছে কিছু?

রিশাদ বাসায় ফিরে কল দিলো একটা নাম্বারে। মুচকি হেসে বললো, "অনেক দূর এগিয়েছি বস।এবার বেশ ভালো ইনকাম হবে।প্রায় ৬-৭টা পাখি শিকার করেছি একইসাথে  বস।সবগুলোই তাজা ফুল বস আর তার মধ্যে একটা আছে একেবারে ফুলের রাণী। একবার দেখলেই বুঝবেন আপনি কি জিনিস ম্যানেজ করেছি এবার।এই ফুলের টানে দেখবেন কতো মালদার ভ্রমর আসবে,লিখে রাখেন শুধু আপনি আমার এই কথা। "
ওপাশ থেকে কেউ কিছু বললো। রিশাদের হাসি প্রশস্ত হলো তা শুনে।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

০৩ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা রাজিয়া রহমান বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর জেলায় জন্মগ্রহন করেন। লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন তিনি। তরুণ এই লেখিকা বৈবাহিক সূত্রে লক্ষ্মীপুরেই বসবাস করছেন। বর্তমানে তিনি একটি পুত্র সন্তানের জননী। পেশাগতভাবে তিনি গৃহিনী হলেও লেখালেখির প্রতি তার ভিষন ঝোক। আর তাই শত ব্যস্ততার মাঝেও শখের বশে ধারাবাহিকভাবে লিখে যাচ্ছেন একের পর এক উপন্যাস। ২০২২ সালের মধ্যদিকে গর্ভকালিন সময়ে লেখিকা হিসেবে হাতেখড়ি নিলেও এরই মধ্যে লিখে ফেলেছেন “তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর” ও “শালুক ফুলের লাঁজ নাই” -এর মতো বহুল জনপ্রিয় উপন্যাস।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন