উপন্যাস : তুমি অন্য কারো ছন্দে বেঁধো গান
লেখিকা : রাজিয়া রহমান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল : ১১ই ডিসেম্বর, ২০২২ইং
রচনাকাল : ১১ই ডিসেম্বর, ২০২২ইং
লেখিকা রাজিয়া রহমানের “তুমি অন্য কারো ছন্দে বেঁধো গান” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। এটি মূলত লেখিকার প্রথম উপন্যাস “তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর”-এর দ্বিতীয় খন্ড। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ইং সালের ১১ই ডিসেম্বর থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
তুমি অন্য কারো ছন্দে বেঁধো গান || রাজিয়া রহমান |
1111111111111111111111
০৪ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
তুমি অন্য কারো ছন্দে বেঁধো গান || রাজিয়া রহমান (পর্ব - ০৫)
ফাল্গুনী রিশাদের দরজা নক করতেই রিশাদ লাফিয়ে উঠে গেলো দরজা খুলতে।
এতো দিনের স্বপ্ন আজ সত্যি হবে তার।ফাল্গুনী ভীত চোখে এদিক ওদিক তাকালো।
কাউকে দেখতে পাচ্ছে না রিশাদ ছাড়া।
কিছুটা ভয় পেলো ফাল্গুনী। নিজের অজান্তেই মন কু ডাক ডাকলো।ফাল্গুনী জানতো এই মেসে আরো অনেকেই আছে।
রিশাদ ফাল্গুনীর এক হাত ধরে চেয়ারে বসিয়ে দিলো।ঘুমের ঔষধ মেশানো আগে থেকেই করে রাখা শরবতের গ্লাসটা এনে ফাল্গুনীর হাতে দিলো।
ফাল্গুনী মাথা নেড়ে বললো, "আমি কিছু খাবো না।আমি শুধু আপনাকে দেখতে এসেছি এক নজর।আপনি তো এখন দেখছি সুস্থ আছেন।"
মুচকি হেসে রিশাদ ফাল্গুনীর গালে হাত রেখে বললো, "সুস্থ তো হবই।আমার সকল অসুস্থতার একমাত্র ঔষধ যে তুমি ফাল্গুনী।তোমাকে দেখেছি এখন আমার সব অসুখ সেরে যাবে।"
ফাল্গুনী লজ্জা পেলো শুনে।নিজের ফোন নিয়ে রিশাদ বললো, "একটা রিকুয়েস্ট রাখবে?"
ফাল্গুনী জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই রিশাদ বললো, "তোমার সাথে আমার কিন্তু একটা ছবি ও নেই।একটা ছবি তুলি?"
ভয় পেয়ে ফাল্গুনী বললো, "না না।বড় আপা যদি কোনো দিন দেখে তাহলে খুব খারাপ হবে।আপা ভীষণ কষ্ট পাবে।"
রিশাদ মলিন মুখ করে বললো, "আমাকে তোমার বিশ্বাস হয় না বুঝতে পেরেছি। এতো দিন ধরে আমাদের সম্পর্ক অথচ তুমি আমাকে আজও এটুকু বিশ্বাস করতে পারছো না।আমি আসলেই একজন ব্যর্থ প্রেমিক।আমার বন্ধুরা ঠিকই বলে। "
ফাল্গুনীর কথায় রিশাদ এভাবে রিয়েক্ট করবে তা ফাল্গুনী স্বপ্নে ও ভাবে নি।রিশাদের হাত চেপে ধরে বললো, "আপনি ভুল বুঝছেন আমাকে।আমি আপনাকে বিশ্বাস করি।তা না করলে কি আজ এখানে আসতাম?"
কপট অভিমান দেখিয়ে রিশাদ বললো, "কতোটুকু বিশ্বাস করো তা এখনই প্রমাণ হয়ে গেছে ফাল্গুনী। বাদ দাও।সবার কপালে ভালোবাসা থাকে না।বিশেষ করে আমার মতো এতিম ছেলে যারা তারা শুধু করুণা পাওয়ারই যোগ্য। ভালোবাসা নয়।"
ফাল্গুনী ভীষণ কষ্ট পেলো রিশাদের এসব কথায়।রিশাদের বাবা মা নেই এই কথা শুরুতেই বলেছে রিশাদ।আর এই কথা শুনার পর রিশাদের প্রতি ফাল্গুনীর ভালোবাসা বহুগুণ বেড়ে গেছে।
ফাল্গুনীর দুই চোখ ভিজে গেলো। উঠে দাঁড়িয়ে রিশাদের হাত ধরে বললো, "কিভাবে বিশ্বাস করবেন আমি আপনাকে সত্যি ভালোবাসি?"
অন্যদিকে তাকিয়ে রিশাদ বললো, "লাগবে না আর।যাও তুমি। "
ফাল্গুনী এবার সত্যি আহত হলো। মন খারাপের সুরে বললো, "আপনি একবার বলুন আমার কি করতে হবে?আমি সত্যি বলছি আমি প্রমাণ করে দিবো আমি আপনাকে সত্যি ভালোবাসি।"
রিশাদ ফাল্গুনীর গাল চেপে ধরে বললো, "সত্যি তো?পারবে সত্যি প্রমাণ করে দিতে পারবে?"
ফাল্গুনী জবাব দিলো পারবে।
রিশাদ বললো, "আমাকে বিশ্বাস করো তো,তাহলে বিশ্বাসের পরীক্ষা দাও।"
ফাল্গুনী কিছু বলার আগেই রিশাদ টেনে নিলো ফাল্গুনীকে নিজের বুকে।তারপর ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো। ফাল্গুনী নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলো তার আগেই রিশাদ যেনো হিংস্র পশু জেগে উঠলো। এক হাত ছুটে গেলো ফাল্গুনীর শরীরের বিভিন্ন অংশে।
হতভম্ব হয়ে গেলো ফাল্গুনী রিশাদের কর্মকান্ডে। নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে লাগলো।এই কাকে দেখছে সে?যাকে সে বিশ্বাস করতো এতো সে কিনা তার দেহের প্রতি হাত বাড়িয়েছে! তবে কি এই ছিলো প্রেম প্রেম খেলার মূল উদ্দেশ্য!
পুরুষালি হাতের বন্ধন ছিড়ে বের হতে পারলো না ফাল্গুনী ।
নিজের চূড়ান্ত সর্বনাশ হওয়ার ভয়ে ফাল্গুনীর বুকের ভেতর হাতুড়ি পেটা হতে লাগলো। নিজেকে মনে হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বোকা।কেনো এরকম ফাঁদে পা দিলো সে!
দরজায় ধুপধাপ শব্দ শুনে রিশাদ চমকে উঠলো। বাহিরে তারস্বরে চৈতালি চিৎকার করছে।চিৎকার করে বলছে,"রিশাদ ভাই দরজা খোলেন এক্ষুনি। না হলে আমি এখন লোক জড়ো করবো।আমি দরজা ভে//ঙে ফেলবো লোক এনে।আমার বোনের এক চুল ক্ষ//তি হলে আমি আপনাকে খু//ন করে ফেলবো।আল্লাহর কসম রিশাদ ভাই আজ আপনি আমার হাতে খু//ন হবেন।"
ভয়ে রিশাদ ফাল্গুনীকে ছেড়ে দিলো।ধাক্কা দিয়ে ফাল্গুনী রিশাদকে ফেলে দিয়ে দরজা খুলে বের হয়ে এলো।
চৈতালিকে এক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে থাকতে না দিয়ে ফাল্গুনী বোনের হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে এলো।
কিছুদূর আসার পর ফাল্গুনী দাঁড়ালো। চৈতালির প্রচন্ড রাগ উঠলো।একা একটা মেয়ে হয়ে একটা ছেলের মেসে চলে যেতে লজ্জা করলো না!
নিজের রাগ কন্ট্রোল করে একটা থাপ্পড় বসালো বোনের গালে খুব জোরে।দাঁত কিড়মিড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো, "লজ্জা করলো না তোর আমাকে মিথ্যে বলে যেতে?"
ফাল্গুনী কাঁদতে লাগলো চৈতালিকে জড়িয়ে ধরে। রাগে চৈতালি ফুঁসতে লাগলো।
বাসায় আসতে দুই বোনের বেশ দেরি হলো। এসে দেখে নবনী চলে গেছে। এসেই ফাল্গুনী বাথরুমে ঢুকে গেলো।এই কনকনে ঠান্ডা পানি মগের পর মগ গায়ে ঢালতে লাগলো।
বাহিরে থেকে চৈতালি শুনতে পেলো ভেতরে ফাল্গুনীর কান্না শোনা যাচ্ছে। জানালার পাশে দাঁড়িয়ে চৈতালি নিজেও কাঁদতে লাগলো।
ফাল্গুনী যখন তাকে রেখে নিপার সাথে দেখা করতে যাবে বলে চলে গিয়েছিল চৈতালি পিছু নিয়েছিল বোনের।নিপার সাথে এতো সখ্যতা তো ফাল্গুনীর কখনো ছিলো না। আচমকা চৈতালির মনে পড়লো ফাল্গুনী ওই ছেলেটার সাথে দেখা করতে যাচ্ছে না-কি?
সন্দেহের বশে পিছু নেয় চৈতালি।ফাল্গুনীকে একটা ছেলেদের মেসে ঢুকতে দেখে অবাক হয়ে যায়।কোচিং এর রিশাদ ভাই যে এই মেসে থাকে তা সবাই জানে। তবুও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে সে।ফাল্গুনীকে না বের হতে দেখে চৈতালির মন কু ডাক ডাকে।হয়তো রিশাদ ভাই-ই সেই ছেলে।সন্দেহের বশে চৈতালি রিশাদের নাম ধরে ডাকে।
ফাল্গুনী অনেকক্ষণ পরে বাথরুম থেকে বের হলো। নিজেকে তার বড্ড অশুচি মনে হচ্ছিলো। আপার কথা যদি মেনে চলতো তাহলে আজ এই দুর্ঘটনা ঘটতে যেতো না।আপা সবসময় বলতো এই বয়সটা হচ্ছে সংযমের বয়স।নিজেকে কন্ট্রোল করার বয়স,যে এই বয়সে নিজেকে সামলে নিতে জানে জীবনের প্রতিটি ধাপে,সব বিপদেআপদে সে নিজেকে সামলাতে পারবে।এই বয়সের আবেগে যে ভেসে যাবে,রঙিন দুনিয়া দেখে যে মজে যাবে সে একবার ডুবলে আর উঠে দাঁড়াতে পারবে না।
আপার কথা কেনো শুনলো না সে?কেনো এই ভুল পথে পা বাড়িয়েছে?কেনো ভুলে গেছে আপা কতো কষ্ট করে তাদের পরিবার দাঁড় করিয়েছে। বাবা মায়ের সম্মানের কথা ও তো মনে ছিলো না তার।এসব ভাবতে ভাবতে ফাল্গুনী সিদ্ধান্ত নিলো এই জীবন সে রাখবে না।
চৈতালি বোনকে পাশে বসিয়ে বললো,"শোন ফাল্গুন,যা হবার তা হয়ে গেছে। তোর এতে কোনো দোষ নেই। তুই ভুল মানুষকে বিশ্বাস করেছিলি।ভালোবাসা অন্যায় না। তবে এই বয়সে ভালোবাসাটার ব্যাপারে আপা আমাদের সবসময় সতর্ক করেছে কেনো তা নিশ্চয় এখন বুঝতে পেরেছিস।প্রেম কি আপা করে নি ফাল্গুন?
মেঘ ভাইয়ের মতো কি সবাই হয়?এখনো আমরা এতটা বড় হয়ে যাই নি যে মেঘ ভাইয়ের মতো সঠিক মানুষ খুঁজে পাবো।তাছাড়া আপাকে পেতে মেঘ ভাইকে কতো কষ্ট করতে হয়েছে।
জীবনে সব অভিজ্ঞতার দরকার আছে।এটাও একটা অভিজ্ঞতা ভেবে নে।এর থেকে আজ শিক্ষা নে আর কখনো এই পথে পা বাড়াবি না।জীবন অনেক সুন্দর ফাল্গুন। দেখিস না,আপা আমাদের জীবন কতো সুন্দর করে দিয়েছে। আমাদের ও তো আপার জন্য, বাবা মায়ের জন্য অনেক কিছু করতে হবে।"
ফাল্গুনী চৈতালির দিকে তাকিয়ে বললো, "তুই অনেক বড় হয়ে গেছিস চৈত্র! একেবারে আপার মতো লাগে তোকে।কতো সুন্দর করে সব বুঝিস তুই,বুঝাতে পারিস।আমি কেনো এতো বোকা হলাম?'
রিশাদের মাথা গরম হয়ে আছে।এতো কাছে থেকে তার শিকার হাত ছাড়া হয়ে গেলো!
রাগে মাথার চুল খামচি দিয়ে ধরলো রিশাদ।পর মুহূর্তে মুখে হাসি ফুটে উঠলো। নিজেকে ডিফেন্স করার জন্য কি কি বলতে হবে তা মুহূর্তেই সাজিয়ে নিলো রিশাদ।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
০৬ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা রাজিয়া রহমান বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর জেলায় জন্মগ্রহন করেন। লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন তিনি। তরুণ এই লেখিকা বৈবাহিক সূত্রে লক্ষ্মীপুরেই বসবাস করছেন। বর্তমানে তিনি একটি পুত্র সন্তানের জননী। পেশাগতভাবে তিনি গৃহিনী হলেও লেখালেখির প্রতি তার ভিষন ঝোক। আর তাই শত ব্যস্ততার মাঝেও শখের বশে ধারাবাহিকভাবে লিখে যাচ্ছেন একের পর এক উপন্যাস। ২০২২ সালের মধ্যদিকে গর্ভকালিন সময়ে লেখিকা হিসেবে হাতেখড়ি নিলেও এরই মধ্যে লিখে ফেলেছেন “তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর” ও “শালুক ফুলের লাঁজ নাই” -এর মতো বহুল জনপ্রিয় উপন্যাস।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন