উপন্যাস        :         তুমি অন্য কারো ছন্দে বেঁধো গান
লেখিকা        :          রাজিয়া রহমান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         ১১ই ডিসেম্বর, ২০২২ইং
রচনাকাল     :         ১১ই ডিসেম্বর, ২০২২ইং

লেখিকা রাজিয়া রহমানের “তুমি অন্য কারো ছন্দে বেঁধো গান” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। এটি মূলত লেখিকার প্রথম উপন্যাস “তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর”-এর দ্বিতীয় খন্ড। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ইং সালের ১১ই ডিসেম্বর থেকে লেখা শুরু করেছেন। 
তুমি অন্য কারো ছন্দে বেঁধো গান || রাজিয়া রহমান
তুমি অন্য কারো ছন্দে বেঁধো গান || রাজিয়া রহমান

1111111111111111111111

০৩ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

তুমি অন্য কারো ছন্দে বেঁধো গান || রাজিয়া রহমান (পর্ব - ০৪)

কথায় আছে মাঘের শীত বাঘের গায়ে।প্রকৃত অর্থেই এবার প্রচন্ড শীত পড়ছে।নিতু স্কুলে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিলো। ছেলেকে নাশতা খাইয়ে বাড়ির হেল্পিং হ্যান্ড লিপির কাছে রেখে রওয়ানা হলো স্কুলের উদ্দেশ্যে। 

পিটি শুরু হওয়ার পর নিতু মাঠে গিয়ে দাঁড়ালো মেয়েদের একটা সারির পিছনে। এখানে কিছুটা রোদ লাগছে।যদিও আজকে বেশ কুয়াশা,কুয়াশার আস্তরণ ভেদ করে রোদ তেমন গায়ে লাগছে না।যেটুকু লাগছে সেটুকুতেই নিজেকে সন্তুষ্ট রাখতে হবে।

সকালে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করেছে নিতু।এজন্য ভেজা চুলগুলো আসার সময় খোপা করে এসেছে। মাঠে রোদের চিলতে দেখে ভেজা চুলগুলো খুলে দিলো।কোমর  ছাড়িয়ে নিচে নেমে গেলো চুল।বেরিয়ে এলো হিজাবের বাহিরে।

মেয়েদের সারি ঠিক করতে নিতু সামনের দিকে এগিয়ে গেলো তখনই গুঞ্জন উঠলো মেয়েদের সারিতে।নিতু শুনতে পেলো মেয়েরা একে অন্যকে বলছে,"এই দেখ দেখ,ম্যামের চুল কতো লম্বা আর কি সিল্কি!ওয়াও!"

হুট করে মন খারাপ হয়ে গেলো নিতুর।এই চুলের প্রশংসা করতো যে সে আজ কোথায়? 
কতো সময় পেরেছি গেছে এর মধ্যে? 
নিতু হিসেব রাখতে চায় না কখনো। কিন্ত মন!সে তো বেহায়া । যাকে ভীষণ ঘৃণা করে তাকেই ঘৃণার চাইতে বেশি ভালোবাসে।
সে ঠিকই হিসেব রেখেছে তামিম দেশ থেকে বিদেশ গিয়েছে আজ আড়াই বছর। বুকের ভেতর একটা চিনচিনে ব্যথা জন্ম নিলো সেই মানুষটার নাম মনে পড়তেই।
মুখ থেকে বের হলো দুইটা শব্দ,"বেইমান প্রেমিক! "

কেউ জানে না এই শব্দ দুটোর মধ্যে কতো ভালোবাসা, কতো না পাওয়া, কতো অভিমান জমে আছে।
পাথরের ভেতরে ও যে কোমল একটা প্রাণ থাকে তার খবর কেউ কি জানে?
জানলে বুঝতে পারতো নিতুর নামের মেয়েটার সকল কঠোরতার আড়ালে লুকিয়ে আছে একটা কোমল প্রাণ। 

পিটি শেষ হতেই নিতু দ্রুত হাতে খোপা করে নিলো চুলে।তারপর টিচার্স রুমে চলে গেলো ক্লাসের প্রিপারেশন নিতে।
এক ফাঁকে লিপিকে কল দিয়ে জেনে নিলো তিশান কি করছে।
টিচার্স রুমে রুবেল স্যার ঢুকে নিতুর পাশের চেয়ারে বসলো। নিতুকে হেসে হাই জানালো।
নিতু ভদ্রতাসূচক হেসে নিজের কাজে মন দিলো।
এই লোকটাকে কেনো জানি নিতুর খুব একটা সুবিধার মনে হয় না।কেমন ধান্ধাবাজ ধান্ধাবাজ মনে হয়। চেহারায় কেমন যেনো! 

সবসময় গায়ে পড়ে কথা বলতে চায়।নিতু এজন্য এরকম লোকদের থেকে দূরে থাকতে চায়।
রুবেল রেজিস্ট্রার খাতা গুছিয়ে বের হতে গিয়ে থমকে দাঁড়ালো। নিতুর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে আস্তে করে  বললো, "গাম্ভীর্য ও যে কারো সৌন্দর্য হতে পারে আপনাকে না দেখলে জানা হতো না।"
নিতু দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করলো। কথা না বাড়িয়ে চলে গেলো ক্লাসরুমের দিকে।
রুবেল আপনমনে হাসলো। অস্ফুটস্বরে বললো, "সরি।"

-------------- 

২ সপ্তাহের বিজনেস ট্রিপ শেষ করে মেঘ দেশে ফিরেছে গতকাল রাতে। রাতটা বাসায় থেকে সকালেই ছুটে এসেছে শ্বশুর বাড়ি। এসেই কলিজার টুকরো মেয়েকে বুকে জড়িয়ে নিলো। নবনী ভেংচি কেটে বললো,"এখন মেয়েই সব,আমাকে মনে পড়ে না।"
মেঘ মেয়েকে কোলে তুলে নিয়ে বললো, "মেয়ে তো আমার প্রাণ আর তুমি আমার অস্তিত্ব। তোমাকে কি না মনে পড়ে বলো?"

নবনীর চোখ ভিজে এলো। মেঘকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। খুব জোরে শব্দ করে শ্বাস নিলো। মনভরে মেঘের ঘ্রাণ নিলো।
কেমন অদ্ভুত প্রশান্তিতে মন ভরে গেলো নবনীর।বিয়ের এতো দিন হয়ে গেলো অথচ এখনো এই মানুষটাকে কাছে পেলে নবনীর কেমন বুক ধুকপুক করে, লজ্জায় লাল হয়ে যায়। 
রাবেয়া বেগম ছুটলেন নাশতা বানানোর জন্য।  মুহুর্তেই সারা বাসায় কেমন উৎসব উৎসব আমেজ চলে এলো। 

সবাই যখন নাশতার টেবিলে আড্ডা দেওয়ায় ব্যস্ত,ফাল্গুনী তখন ব্যস্ত চিঠি লিখায়।আজ রিশাদের সাথে দেখা করবে সে।
মেঘ ফাল্গুনীকে নাশতা করতে আসতে না দেখায় নবনীকে জিজ্ঞেস করলো, "ফাল্গুন কই?"
নবনী পুডিং বের করছিলো মোল্ড থেকে।চৈতালির দিকে তাকিয়ে বললো, "ফাল্গুনকে ডাক না।"

চৈতালি গলা চড়িয়ে ডাকলো।ফাল্গুনী জবাব দিলো এখন খাবে না।পরে খেয়ে নিবে।
মেঘ কিছুটা অবাক হলো। কখনো তো এরকম হয় না।বিশেষ করে ফাল্গুনী, চৈতালি সবসময় একই সাথে খেতে বসে মেঘ এলে।
সবাইকে টেবিলে রেখে মেঘ উঠে গেলো। ফাল্গুনীর পিছনে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো, "কি করছো ফাল্গুন?"

ভুত দেখার মতো চমকে উঠলো ফাল্গুনী। দ্রুত খাতা বন্ধ করে উঠে দাঁড়িয়ে বললো, "ওহ ভাইয়া,হোমওয়ার্ক করছিলাম।"
মেঘ অবাক হলো আরো বেশি। ফাল্গুনীকে বুঝতে না দিয়ে বললো, "আগামী মাসে এক্সাম এখনো কিসের হোমওয়ার্ক? "
ফাল্গুনী হেসে বললো, "ও-ই ছিলো আরকি।চলুন ভাইয়া।"
মেঘ ও চলে গেলো ফাল্গুনীকে নিয়ে নাশতা করতে।ভয়ে ফাল্গুনীর আত্মারাম শুকিয়ে যাচ্ছে। নাশতা শেষ করে চৈতালি উঠে গেলো। বই খাতা ব্যাগে ঢুকাতে গিয়ে ভুল করে ফাল্গুনীর চিঠি লিখা খাতাটা ব্যাগে ঢুকিয়ে নিলো। 
নাশতা শেষ করে ফাল্গুনী এসে দেখলো তার খাতা নেই।
চৈতালিকে ডেকে ব্যাগ থেকে খাতা বের করে নিলো ফাল্গুনী।

চৈতালি মুচকি হাসলো। ভেতরে ভেতরে চিন্তা তার ও হচ্ছে। ফাল্গুন ভুল কাজ করছে না তো!
ফাল্গুন না বুঝলেও চৈতালি আরো আগেই টের পেয়েছে ফাল্গুনী কারো সাথে সম্পর্কে আছে।কিন্তু ভয়ে কাউকে কিছু বললো না। 
কাকে বলবে সে?আপা জানলে যদি ফাল্গুনীকে খারাপ ভাবে?
অথবা ফাল্গুনী যদি আজীবনের জন্য চৈতালির উপর রাগ করে? 
সবচেয়ে বড় কথা, ফাল্গুন কার সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছে তা চৈতালি এখনো জানে না। বাসায় জানালে যদি ফাল্গুনী অস্বীকার করে বসে!

যদি সে চৈতালির দোষ দিয়ে দেয়!
সত্য বলার হলে তো ফাল্গুন সেদিনই স্বীকার করে নিতো যেদিন তার খাতায় চিঠি পেয়েছিল। ফাল্গুন যে অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে তা চৈতালি টের পাচ্ছে ভীষণভাবে।
তবুও চিন্তা করলো আজকে হাটতে হাটতে ফাল্গুনীকে ইঙ্গিত দিবে কিছু বলে। 
ক্লাস শেষ করে চৈতালি বললো, "চল, ফুসকা খাবো।"
ফাল্গুনী বিরক্ত হয়ে বললো,"তুই আমার জন্য একটু অপেক্ষা কর।আমার কাজ আছে।একটু নিপার কাছে যাবো।"

চৈতালি আর কিছু বললো না। দুরুদুরু বুকে ফাল্গুনী রিশাদের বাসার দিকে পা বাড়ালো। নিপা আর চৈতালি একে অন্যকে ভীষণ অপছন্দ করে ফার্স্ট পজিশন নিয়ে কম্পিটিশন করে।  ফাল্গুনী জানে নিপার নাম বললে চৈতালি আর সাথে আসবে না।
চৈতালি বললো, "আমি অপেক্ষা করছি।তাড়াতাড়ি আসিস।"

ফাল্গুনী দ্রুত পায়ে ছুটে গেলো। বুকের ভেতর তার দামামা বাজছে।রিশাদের সাথে দেখা হয় না কয়েকদিন। খবর পেয়েছে রিশাদ অসুস্থ। শেষ চিঠি পাঠিয়েছে রিশাদ ৩ দিন আগে ক্লাসের একটা ছেলেকে দিয়ে।তাতে লিখেছে ফাল্গুনী যাতে একবার যায় তার মেসে।ভীষণ ইচ্ছে করছে তার ফাল্গুনীকে দেখতে। 

৩ দিন ধরে চিন্তা ভাবনা করে ফাল্গুনী সিদ্ধান্ত নিলো সে যাবে রিশাদের মেসে।
বন্ধুদেরকে বলে মেস খালি করিয়ে নিলো।রিশাদ।ভেতরের নরপশুকে এতো দিন অনেক কষ্টে পোষ মানিয়ে রেখেছিলো রিশাদ।কিন্তু এবার সিদ্ধান্ত নিলো আর না।এটাই সুযোগ তার।
কাঁপতে কাঁপতে ফাল্গুনী রিশাদের বাসার দরজায় নক করলো। যথাস্থানে ক্যামেরা সেট করে রিশাদ দরজা খুলতে গেলো।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

৫ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা রাজিয়া রহমান বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর জেলায় জন্মগ্রহন করেন। লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন তিনি। তরুণ এই লেখিকা বৈবাহিক সূত্রে লক্ষ্মীপুরেই বসবাস করছেন। বর্তমানে তিনি একটি পুত্র সন্তানের জননী। পেশাগতভাবে তিনি গৃহিনী হলেও লেখালেখির প্রতি তার ভিষন ঝোক। আর তাই শত ব্যস্ততার মাঝেও শখের বশে ধারাবাহিকভাবে লিখে যাচ্ছেন একের পর এক উপন্যাস। ২০২২ সালের মধ্যদিকে গর্ভকালিন সময়ে লেখিকা হিসেবে হাতেখড়ি নিলেও এরই মধ্যে লিখে ফেলেছেন “তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর” ও “শালুক ফুলের লাঁজ নাই” -এর মতো বহুল জনপ্রিয় উপন্যাস।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন